বকরা ঈদ শেষে, ঈদের চতুর্থ দিনের প্রাতরাশ : আমাদের দেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ঐতিয্যবাহী প্রাতরাশের চল আছে, যা কুরবানীর ঈদের চতুর্থ দিনে করা হয়। আমি সেই গ্যাদাকাল থেকে ছুছা। রোজার ঈদের পর থেকেই আমি এই দিনটার জন্যে অপেক্ষায় থাকতাম। আমার কৈশর কেটেছে চিটাগাংএ। আমার কিরণ ফুপু আমাদেরকে প্রতি কুরবানীর ঈদের চতুর্থ দিনে প্রাতরাশের দাওয়াত দিতেন। কিরণ ফুপুর বাসা ছিল কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে। উঠোন আর তটের মাঝে কিচ্ছু ছিলনা। শান্ত, পরাবাস্তব পরিবেশ শুধু মাঝে মাঝে বিঘ্নিত হত সমুদ্রগামী জাহাজের ভোতা ভেপুতে। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে একটা স্কোডা গাড়িতে কাঠাল বোঝাই হয়ে আমরা সাত ভাই বোন আর বাবা মা পৌঁছুতাম কিরণ ফুপুর বাসায়। নি:সন্তান ফুপা ফুপু আমাদের সাদরে বরন করতেন। বিশাল গামলায় খাবার টেবিলে আসতো স্তুপকৃত ঝুরা মাংস সাথে ইঞ্চি দেড়েক পুরু চালের আটার রুটি। সাইড ডিস হিসেবে স্যুপের প্লেটে (গর্ত ওয়ালা প্লেট) ধোয়া ওঠা নিহারি আর পুদিনার চাটনি। আমরা সাত ভাই বোন, ফুপা ফুপু আর বাবা গোগ্রাসে গিলতে থাকতাম পুদিনা পাতার চাটনি সহযোগে।। মাঝে মাঝে আগুন গরম নিহারিতে চুমুক। আমার শতভাগ মৎসাশী মা নদীর পাড়ে সময়ক্ষেপণ করতেন। অনেক দেশের,অনেক রকম, অনেক স্থানের প্রাতরাশের মধ্যে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ প্রাতরাশ কর্ণফুলী তীরের কিরন ফুপুর বাড়ির কুরবানী ঈদের চতুর্থ দিনের খাবার, আজ পর্যন্ত। ——------------ আপনারা পরখ করে দেখতে পারেন। ঢাকা শহরেও উপকরন গুলো জোগাড় করা খুব বেশী কঠিন নয়: এক হাড়ি রান্না করা মাংস ফ্রিজে না রেখে দিনে তিন চার বার গরম করতে থাকুন, তিন দিন। ফ্রিজে রাখবেন না। ঈদের পরদিন প্রচুর চালের আটার রুটি বানিয়ে ভেজে রাখুন। ফ্রিজে রাখবেন না। একটি বিশাল পাতিলে পা ও বড় হাড্ডিগুলো দিয়ে তাতে আদা, লবন ও পাতিল ভর্তি পানি দিয়ে জ্বাল দিতেই থাকুন। পানি কমে গেলে আবার পানি দিতে থাকুন, তিন দিন। ঈদের চতুর্থ দিন খুব ভোরে উঠে: ১। পুদিনা পাতা, কাচা মরিচ, রসুন তেতুল ও লবন হাল্কা করে বেটে চাটনি বানান। ২। জিরা, রসুন, শুকনা মরিচ ও গোল মরিচ দিয়ে হাড্ডির জ্যুস গুলো হাড্ডিসহ বাগাড় দিন। খেয়াল করবেন যাতে পাতিল ভরা পানি কমে চার ভাগের একভাগ হয়ে গেছে ততক্ষণে। ৩। এক গামলা পানিতে এক সেকেন্ডের জন্যে একেকটি চালের আটার রুটি চুবিয়ে চার পাচটা রুটি একের পর এক সাজিয়ে কলাপাতায় মুড়িয়ে তাতানো তাওয়ায় ভাজুন, যতক্ষণ না কলাপাতা কালচে হয়ে যায়। ৪। কুরবানীর মাংস শেষ বার জ্বাল দিয়ে মাখা মাখা ঝুরাঝুরা অবস্থায় নামান। সবকিছু আগুণ গরম পরিবেশন করুন।
Posted on: Thu, 17 Oct 2013 03:57:12 +0000
Trending Topics
Recently Viewed Topics
© 2015