--------------- বিবাহবার্ষিকী - TopicsExpress



          

--------------- বিবাহবার্ষিকী --------------- . . -হেলো জোসেফ , -হ্যা লুসি বলো । -আজ কখন আসবে ? -আজ ? আজ আসতে আসতে একটু দেরি হবে । কেন ? -এমনি । আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো । -আচ্ছা । ... ফোন রেখেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার রান্নায় মনোযোগ দিল লুসি । আজ বছরের শেষ দিন ,৩১শে ডিসেম্বর । রাত বারটায় আরেকটা বছর শেষ হবে আর শুরু হবে আরেকটা বছর । কিন্তু আজকে দিনটা জোসেফ আর লুসির জন্য আরেকটু বেশি স্পেশাল । কারণ আজ ওদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী ... . . গত বছরটাতেও ওদের এই দিনটা ভাল যায় নি । হঠাৎই জোসেফের চাকরিটা চিলে গিয়েছিল । আর ওরা পড়েছিল দারিদ্রের মহাকোপে । মোটামুটি সোণার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো লুসিও সেদিন বুঝতে পেরেছিল দারিদ্রতা কি... ওইদিনটা যে ওদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল , সেদিন হয়ত ওদের মনেই ছিল না । আর মনে থাকলেও কিছুই করার ছিল না ... ... তারপরেও লুসি জোসেফকে নিয়ে অনেক সুখি । হয়ত সে লুসিকে অনেক ধন-সম্পত্তি দিতে পারেনি , আভিজাত্য দিতে পারে নি , বিলাসিতা দিতে পারেনি ,,, কিন্তু যা দিয়েছে তা খুব কম মেয়ের ভাগ্যেই থাকে । সেটা হল ভালবাসা , যত্ন , মনোযোগ ... যা অনেক ধনীর ঘরনী যারা টাকার বিছানায় ঘুমুতে পারে তারা কল্পনাও করতে পারে না ... . . জোসেফের সাথে লুসির সাক্ষাৎটাও ছিল নাটকীয়... লুসির বিয়ের জন্য যখন চারদিকে পাত্র খোঁজা হচ্ছিল , তখন লুসির মামাই প্রথম জোসেফের প্রস্তাবটা এনেছিলেন । কিন্তু জোসেফের ব্যাপারটা সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছিলেন লুসির মা । লুসিও একমত ছিল , কারণ ওই একটাই , আভিজাত্য... কিন্তু লুসির বাবা জোসেফকে অনেক পছন্দ করেছিলেন । কারণ তিনিও জোসেফের মতই একদিন নিঃস্ব ছিলেন । সেই শূন্য অবস্থা থেকেই আজ এতোকিছু করেছেন । তিনি কেন যেন জোসেফের মাঝে সেই দ্রুতি দেখেছিলেন , তার মধ্যে কেন যেন জোসেফের প্রতি সেই আস্থা ছিল ... সেইজন্যই হয়ত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেও জোসেফকে তিনি নিজের ছেলের মতই ভালবাসতেন । বাড়িতে যেকোন অনুষ্ঠানেই জোসেফের নিমন্ত্রণ ছিল । আর জোসেফকে অবশ্যই সেগুলোতে উপস্থিত থাকতে হতো , সে যত কাজই হোক । কারণ জন্ম থেকেই বাবা-মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত জোসেফ , লুসির বাবার মাঝেই নিজের বাবার অস্তিত্য খুঁজে পেয়েছিল ... “লুসির জন্য তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে” এই মনোভাবটা কখনই তার মাঝে আসে নি । শুধু একদিনের কথাই সে মনে করে আজও... সেদিন হঠাৎই তিনি খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন । শেষে , ডাক্তারের নির্দেশ এমন ছিল যে , শুধুমাত্র একজন একজন কথা বলতে পারবে । তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি জোসেফকেই ডাকলেন সবার প্রথমে... তারপর বললেন , “দেখ বাবা , আমার তো কোন ছেলে নেই । তুমি আমার ছেলের মতই । আমাকে তোমার বাবার আসনে বসাতে পারবে না ?” ... এরপর থেকে কোনদিন জোসেফ লুসির বাবার কোন কথাই ফেলতে পারেনি... . . তারপর একসময় এক ধনীর দূলালের সাথে লুসির বিয়ে ঠিক হয়ে যায় । বিয়েটা হয়েও যায়...... সেদিন হয়ত জোসেফের একটু কষ্ট হয়েছিল । কিন্তু লুসির বাবা-মায়ের হাসিমুখ দেখে তার কষ্টটা কোথায় যেন চলে গেল সে নিজেও খেয়াল করল না । আনন্দেই কাটছিল দিনগুলো... কিন্তু আনন্দ হয়তো বেশিদিন থাকে না । হয়ত এটাই আনন্দের বৈশিষ্ট্য ... হঠাৎ একদিন শুনল , লুসির সাথে ওর স্বামীর ডিভোর্স হয়ে গেছে । ছেলেটা ভাল ছিল না । না , ভাল ছিল না বললে ভূল হবে , খারাপের সব সংজ্ঞাকেই সে হার মানিয়ে ফেলেছিল । দিনের পর দিন সে লুসিকে কষ্ট দিয়ে গিয়েছিল । লুসিও অনেক সহ্য করেছিল , ভেবেছিল একসময় সব সামলে নেবে । কিন্তু ধীরে ধীরে তার সহ্যেরও বাধ ভেঙে যায় । একদিন জানতে পারে , লুসি ছাড়াও ছেলেটার আরোও একজন স্ত্রী আছে , যাকে পারিবারিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয় নি । কিন্তু তারপরেও দিনের পর দিন লুসিকে অগ্রাহ্য করে সে তার আগের স্ত্রীর কাছে রাতের পর রাত কাটিয়েছে । একসময় লুসি আর পারল না । সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে আবার ফিরে এল বাবা-মায়ের কাছে । সেদিন জোসেফ অফিস শেষে লুসিদের বাসায় গিয়ে যা দেখেছিল , তা কোনদিনও ভূলতে পারবে কিনা তা সে নিজেও জানে না । লুসির বাবা , যিনি কিনা ছিলেন সবসময়ের ফুর্তিবাজ , তিনি বসে রইলেন একপাশে...... যেন একটা জীবন্ত লাশ... তার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে লুসি , তার মুখের দিকেও তাকানো যাচ্ছিল না । চোখের নিচে কালিমা , চুলগুলো আগোছালো , চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু সব মিলিয়ে একাকার অবস্থা... আর লুসির মা ,,, তিনিও একপাশে লুসির বাবার মত নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলেন... সেদিন কাওকেই প্রবোধ দেয়ার ভাষা ছিল না জোসেফের ... . . তারপর একদিন লুসির বাবা ডেকে পাঠালেন জোসেফকে ... জোসেফ সামনে এলে বললেন , “জোসেফ , বাবা , তুমিই আমার একমাত্র ভরসা । পারবে এই দুঃখী বাবার জন্য একটা বড় বিসর্জন দিতে?” জোসেফ অনেকটা অবাক হলেও তা প্রকাশ না করেই বলল , “ বাবা , আমার সারাজীবনটাই আপনার জন্য বিসর্জন দিতে পারি ।” তারপর লুসির বাবা হাত জোর করে একটা ছোট বাচ্চার মত জোসেফের সামনে দাড়ালেন । তারপর যেন এক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মত বলতে লাগলেন , “আমার লুসির দায়িত্ব তুমি নাও বাবা ...” সেদিন জোসেফের মধ্যে ঠিক কোন অনুভূতিটা কাজ করছিল সে নিজেও বুঝতে পারছিল না । আনন্দ-বিষাদ , সুখ-দুঃখ সবকিছু যেন মিলেমিশে একাকার হয়েছিল তার মনের মাঝে... কি বলবে না বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না । দাঁড়িয়ে ছিল বিদ্যুৎপৃষ্ট কোন গাছের মত ...... . . সেইদিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতেই দরজার সামনে এসে দাঁড়াল জোসেফ । হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা আটটা বাজে । নাহ , খুব বেশি দেরি হয়নি । তবে এতোটুকুতেই লুসি কিছুটা অভিমান করতে পারে । তবে অবশ্যই তা প্রকাশ করবে না । কারণ তার স্বামীর প্রতি আছে তার আছে অগাধ ভালবাসা আর বিশ্বাস... একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জোসেফ কলিংবেল টিপল... দরজা খুলেই লুসি একটা শুকনো হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেল । জোসেফ যে তার হাতদুটো পিছনে লুকিয়ে রেখেছিল , তা খেয়ালই করল না । কিছুটা নিরাশ হল জোসেফ । তারপর ধীরে ধীরে রান্নাঘরে গিয়েই পিছন থেকে লুসিকে জড়িয়ে ধরল সে । সাথে সাথেই লুসির সারাদিনের সব অভিমান বরফের মত গলে চোখের অশ্রু আকারে বেরুতে থাকল ... একগাদা অভিমান নিয়ে জোসেফের বুকে মাথা লুকিয়ে কাঁদতে লাগল লুসি । কাঁদতে কাঁদতেই বলল , “তুমি আমাকে একটুও ভালবাস না জোসেফ,” কিছুই বলল না জোসেফ , শুধু লুসির মুখটা সামনে এনে খুব যত্ন করে চোখের জল মুছে দিল । তারপর লুসির হাতটা নিল , অনেক ভালবাসা আর মমতা নিয়ে একটা ছোট বাক্স দিল ওর হাতে । “এটা কি?” লুসি বলল । কিছুই বলল না জোসেফ । নিজেই বাক্সটা খুলে লুসির সামনে নিয়ে দাঁড়াল । সেখান থেকে বেরুল একটা ডায়মন্ডের আংটি । তারপর বলল , “হ্যাপি ম্যারেজ এননিভারসারি লুসি ।” লুসির মুখ দিয়ে আর কোন কথাই বেরুল না । শুধু চোখ দিয়ে কিছু অশ্রু গড়িয়ে পড়ল ... এবার আর জোসেফ বাধা দিল না । কারণ সে জানে এই অশ্রু দুঃখের অশ্রু নয় , বহু প্রতীক্ষিত আনন্দের অশ্রু ............... . . লিখা: অচেনা অমিত ।
Posted on: Sat, 03 Jan 2015 02:02:56 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015