-এই তুমি কই ? -এইতো হলেই - TopicsExpress



          

-এই তুমি কই ? -এইতো হলেই । -তোমার না আজ আমার সাথে দেখা করার কথা ? ভুলে গেছ নাকি? -না আসব তো । -হুম । যে কাল শার্টটা দিছিলাম ঐদিন ঐটা পড়ে আসবা । -আচ্ছা ঠিক আছে । এরপর হালকা কিছু কথা বলে ফোন রেখে দেয় মোহনা । এপাশ থেকে মোহন ও তাকে বাই জানায়। বিছানা ছেড়ে বাথরুমে গিয়েফ্রেশ হয়ে নেয় মোহন । আজ মোহনার জন্মদিন । কিন্তু এখনো তাকে উইশ করেনি সে । মোহনা ও কিছু বলেনি এতে । মোহনের ইচ্ছা খুব ভাল একটা গিফট নিয়ে আছ ওকে অনেকটা চমকে দেবে । ব্যাপারটা ঠিক চমকে দেওয়া নয় । দামি কিছু কিনে দিতে চাইলে মোহনা মানাকরে দেয় । কেন সেটা মোহন ও জানে । নামের দিক থেকে যেমনতাদের মিল রয়েছে তেমনি তাদের পরস্পরের মনের দিক থেকেও রয়েছে গভীর মিলবন্ধন । একে অপরকে দূর থেকেও বুঝতে পারে ওরা । গরিব ঘরের ছেলেই বলা যায় মোহনকে । বাবা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার । বেশকিছুদিন পর অবসর নেবেন । মোহন জানে কতটা কষ্ট করে তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে তার বাবা আর মা । সে ও জীবনটাকে এভাবেই সাজিয়েছে । মোহনা তার এই জীবনেরই একটা অংশ । ওর বাবা ডাক্তার । মা সমাজকর্মী । ধানমণ্ডিতে নিজের বাড়ি ওদের । সম্পূর্ণভিন্ন মেরুর দুটি মানুষ কখনযে একই স্রোতে মিশে গেছে জানে না তারা কেউই । গতকালই টিউশন ফিগুলো পেয়েছে মোহন । টাকার অংকটা খারাপ না । এটা দিয়েই মোহনার জন্য কিছু একটা দামিজিনিস কিনবে আজ । অন্তত আজকের দিনটাতে মোহনা এটা নিতে না করবে না নিশ্চয়ই । বসুন্ধরায় চলে আসে মোহন । একটা জুয়েলারি দোকানে ঢুকে সে । হ্যা ঐ তো দুলগুলো । মোহনার খুব ফেভারিট ডিজাইন এটা । অনেক খুঁজে এটা বের করেছে মোহন । দেখা যাক কত দাম । মোবাইলটা বেজে উঠে হঠাৎ । মা এর ফোন । -হ্যালো আম্মা । -হ বাজান । ভাল আছস? তোর শরীরডা কেমন ? -ভাল আম্মা । তুমি ভাল আছ তো ? আব্বা কেমন আছে ? -আমি আছি ভালই । তোর আব্বারশরীরডা ভাল না । এই জন্যই তোরে ফোন দিলাম । -কি হইছে আম্মা ? আব্বার কিছু হইছে ? -বুকের ব্যাথাটা বাড়ছে খুব । আজতো স্কুলেই যাইতে পারল না । তুই কি একটু বাড়িতে আসতে পারবি ? আমার খুব ভয় লাগতাছে । আমার কথাতো শোনেওনা । কত কই একটা ভাল ডাক্তার দেখাও । কে শোনে কার কথা ? -আচ্ছা ঠিকআছে । তুমি চিন্তা কইর না । আমি দেখতাছি কি করা যায় । ফোনটা রেখে দেয় মোহন । খানিক ভেবে মল থেকে বেরিয়ে যায় ও । প্রফেসর আজাদ মাহমুদ হৃদরোগ স্পেশালিস্ট। তার চেম্বারে গিয়ে একটা সিরিয়াল দেয় আগামীকাল বিকালের । এরপর মা কে ফোন করে বলে যে সি বিকালের দিকেবাড়ির দিকে রওয়ানা হবে । কাল ভোরে বাবাকে নিয়ে চলে আসবে ঢাকায় । পকেটে যা আছে ডাক্তার আর ওষুধ বাবদ খরচ চলে যাবে । রকিবকে ফোন দিয়েবলে একটা টিকেট কাটতে । মোহনার জন্য দুলগুলো কেনা হল না । থাক,আগামী বছর হবে না হয় । পার্কের বেঞ্চে বসে আছে মোহনা । নীল শাড়িটা পড়েছে আজ ও । খোপায় ফুল দিলে ওকে খুব সুন্দর দেখায় । আজও তেমনটাই লাগছে । মোহনকে দেখে মিষ্টি করে হাসল সে । মোহনের হাতে একগুচ্ছ নীল গোলাপ । -কি ব্যাপার এত লেট হল কেন? কখন থেকে বসে আছি । -স্যরি । একটু কাজ ছিল । -এখন কি দাড়িয়েই থাকবে নাকিফুলগুলো দেবে ? -ও হ্যা । শুভ জন্মদিন । -thnk u.(খুব সুন্দরভাবে হাসল মোহনা) -স্যরি তোমার জন্য কোন গিফটআনতে পারলাম না । আসলে.......... -আনতে পারনি মানে !! তাহলে এগুলো কি ? আমার জন্য এটাই যথেষ্ট । -তবুও........ -বেশি বকবক করতে হবে না । শোন,আজ আমি তোমাকে কিছু দেব। না করতে পারবে না । সবসময়তো ফিরিয়ে দাও । -ফিরিয়ে তো তুমিও দাও । -কথার মাঝে কথা না বললে হয় না ?! -আচ্ছা বল । -এই নাও । এটা তোমার বাবার জন্য,একটা পাঞ্জাবী । আর এটা মা এর জন্য একটা শাড়ি । -এসব কেন ? গিফট তো আমার দেয়ার কথা । কিন্তু...... -তুমি যদি এটা নাও তাহলে এটাই হবে আমার গিফট । প্লিজনা করো না । মোহনের চোখদুটো হঠাৎ ছলছল করে উঠে । সে জানে না কেন । তবুওসে পানি আটকে রাখতে পারে না। মোহনা শাড়ির আঁচলটা দিয়ে ওর চোখ মুছে দেয় । -বোকা ছেলে । এভাবে কেউ কাঁদে নাকি । বাবা মা এর কি শরীর খারাপ হয় না ? যাও নিয়ে আস উনাকে । আর যাওয়ার সময় এটা নিতে ভুলে যেও না যেন । -তুমি জানলে কি করে ? -রকিব ভাই বলেছে । আপনার ফোনটা তো অফ । খেয়াল আছে? তাই আমি উনারটাতে কল দিলাম । উনিই বললেন । মোহন আর কিছু বলে না । মোহনার হাতটা ধরে বসে থাকে । ভাবতে থাকে, এই জীবন সংগ্রামের পথটা হয়ত সত্যিই খুব কষ্টের,কিন্তু এমন একটাহাত যদি সারাটা জীবন ধরে রাখা যায়,তাহলে এ কষ্টটুকুওসার্থক । ফুলগুলো শুকিয়ে যাক,বসন্তে আবারো হেসে উঠবে। এইতো জীবন ।। by- Iftekharul Alam MunNa
Posted on: Wed, 03 Jul 2013 04:35:23 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015