-কই তুই? -রুমে -একটু এদিকে আয়তো। -কেন? কি হয়েছে? -আরে সব বলছি। আগে তুই আয়। রাখি, বাই। বসে বসে ভাবছি কি করব? কি আর করা? যেহেতু বলেছে, যেতেই হবে! এই পাগলকে অসুস্থতার কথা বলে লাভ নেই, বিশ্বাস করবে না। কোথাও তো ওকে দেখতে পাচ্ছিনা! -কিরে হারামি! কই তুই? -দোস্ত, আর ৫ মিনিট দাড়া, প্লিইইইজ! -শালা! এই অসুস্থতা নিয়ে এখানে দাড়িয়ে আছি আর তোর ন্যাকামো দেখানো হচ্ছে? -এইতো আর ২ মিনিট। -ওকে, আয়। -ভাবছি, পড়াশোনা ছেড়ে দেব। -কি? তুই এই মহামূল্যবান কথাটা শোনানোর জন্য এখানে ডেকে নিয়ে এসেছিস? এটা ফোনে বলা গেলনা? তোর চাপাবাজি রাখ, আমি চললাম! -নীল, আমি সিরিয়াস! -মানে? -আমি সত্যিকার অর্থেই পড়াশোনাটা ছেড়ে দেব। কিছুদিন আগে একটা প্রাইভেট ফার্মে ইন্টার্ভিউ দিয়েছিলাম। তাই কিছুদিন যাবৎ তো পড়াশোনা ছেড়ে দেবার কথা বলছিলাম। আজ মনে হয় সত্যিই সেই দিনটা এসে গেছে রে! -কি সব উল্টাপাল্টা বকছিস? তোর মত ব্রাইট স্টুডেন্ট কি পড়াশোনা ছেড়ে প্রাইভেট ফার্মে জব করে? -বলে লাভ নাইরে দোস্ত! আজ আমি সিরিয়াস! কিন্তু কথাটা আমি শুধু তোকেই বলছি। তুই ছাড়া আমার এমন আর একটা বন্ধু কে আছে বল? কি বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা! সেই পিচ্চি থেকে ওর সাথে বড় হয়েছি, খেয়েছি, ঘুমিয়েছি, দুষ্টুমি, পড়াশোনা, আড্ডা দেওয়া, পরিস্থিতি গরম করা সব একসাথে করেছি। এই ১০ টা বছর একসাথে থাকার পর বলছে চলে যাবে। কি আর করা? অসীম ক্লান্তিকর একটা হাসি দিয়ে ওকে বিদায় দিলাম। ৩টা হাত বিশিষ্ট একটা প্রানী আমার ওপর ঘুরেই চলছে। শুধুই আকাশের কথা মনে পড়ছে! অনেক কাঁদলাম ওই বৃষ্টিভেজা রাতে। পরদিন কলেজ গেলাম না! আকাশের প্রিয় স্থানগুলো দর্শন করে ওকে ভেবে অনেক কাঁদলাম! এভাবেই চলেছিল আমার ১ মাস, যা কি না আমার কাছে ১ যুগের সমান মনে হচ্ছিল। প্রবাদ আছে না, Time & Tide wait for None. তাই হল! সময় কেটে গেল, আমিও আমার মত হয়ে গেলাম, ধূসর! কিন্তু হতে পারলাম না সেই আকাশের নীল হতে। আমার মাধ্যমিক রেজাল্ট হল কন্তু ধূসর, উচ্চ মাধ্যমিক এটাও ধূসর। এই দুই ধূসর মিলে আমাকে মাটিতে রূপ দিল। ইউনিভার্সিটির স্বপ্ন দেখাও এখন আমার পক্ষে পাপ। কি আর করা এই নিয়ে একটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনাটা শেষ করলাম মোটামুটি ভালভাবেই। কথায় আছে, মাটিই খাঁটি। তাইতো সেই আকাশ ছাড়াই রেজাল্ট নীল হয়ে গেল। কিন্তু এই নীলটাই আমার কাল হয়ে দাড়াল। নীলটা নীল থাকতে পারলনা, নীলাকাশ হতে চাইল। সব কিছু বাদ দিয়ে আকাশ খোঁজা শুরু করলাম। সমস্ত পৃথিবীর বুক জুড়েই আকাশ কিন্তু আয়তনের ভেতরে পাচ্ছিলাম না। তো কি আর করা সেই ধূসর জীবন নিয়েই চাকরীর খোঁজে লেগে পড়লাম। কিন্তু কপাল খারাপ, একটা চাকরিও কপালে লাগলনা। অবশেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নেবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ১১:০০ টায় ইন্টার্ভিউ। সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে অফিসের দিকে তাকাতেই খুব ভাল লাগল। প্রায় ১ ঘন্টক পর পিয়নের গলা থেকে আমার নামটা বের হল। -মি. নীল চৌধুরী আসেন। ভালভাবেই গেলাম দরজা পর্যন্ত। দেখি বস মাথা নিচে দিয়ে কি যেন লিখছেন। আমি ভদ্রতার সাথে বললাম, -May I come in, Sir. খুব মজবুত গলায় ওপাশ থেকে উত্তর আসলো। -No. -But why, Sir? Whats my fault? -I dont wanna talk to you, Just get out out before I thrown out. -Ok! কান্নার অনুভুতি হচ্ছিল কিন্তু কাঁদতে পারলাম না। স্বাভাবিকতা বজায় রেখে লিফ্ট পর্যন্ত এলাম কিন্তু লিফ্টের দরজাটা খোলার পর আর স্বাভাবিক থাকতে পারলাম না! খুব দামি স্যুট-কোট পড়ে যাকে দেখছি সে আর কেউ না! এই নীলের আকাশ। কিন্তু চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যখন দেখলাম ওই অফিসের সবাই ওকে সালাম দিচ্ছিল। আমি না দেখার ভান করে লিফ্টে উঠে পড়লাম। উঠার সাথে সাথেই শুনতে পারলাম। -Excuse me! You are Neel. Am I right? -No, Im Ovi. Not Neel. -মিথ্যে কেন বলছিস? আমি আমার নীলকেও চিনি আর অভি কেরেক্টারটাকেও জানি। চল চা খাই, আজ কিন্তু তুই বিল দিবি! -স্যরি, আপনি ভুল করছেন। আমি আসি! -আন্টি আমার বাসায়! (চমকে উঠলাম) কি এবার তো চিনতে পারলি? আচ্ছা চল কোথাও বসি! -আমি, আপনার সাথে বসব? -মারবনা দু গালে চারটা, তোর সব আপনি, আপনি চলে যাবে। আয়। অফিসে গিয়ে বসলাম। বসে তো মাথাটা আরো গরম হয়ে গেল। -এই তুই কার চেয়ারে বসেছিস? -কেন? আমার চেয়ারে! -মানে? -মানে আমি এই অফিসটার মালিক। (আমার মাথা আর কাজ করছিলোনা) -কিন্তু, কিভাবে কি করলি? -এভাবেই, আল্লাহ দিলে আর কতক্ষণ। -মানে? -মানে ঐ ৯ বছর আগে পড়াশোনা না, জীবন থেকে বিদায় নিতে চাচ্ছিলাম। একটা গাড়ি দেখে অবাধে রাস্তার মধ্য দিয়ে ঐ গাড়ির সাথে গিয়ে ধাক্কা খেলাম, ব্যাস! -মানে কি, শালা হারামি? পুরাতন বাংলা সিনেমার কাহিনী শোনানো হচ্ছে? তুই গাড়ির সাথে ধাক্কা খেলি আর এত বড় একটা কোম্পানির মালিক হয়ে গেলি। বাহ্! খুব সুন্দর। এই, ভাল কথা মনে পড়েছে। তুই আত্বহত্যা করতে চেয়েছিলি কেন? -তুই তো জানতিস, আমি শুধু প্রেম করে বেড়াতাম। কিন্তু এটা জানতিস না আমি সত্যিকার অর্থেই একজনকে ভালবাসতাম। -কাকে? -নীলাকে, ওর নীলে নীলাকাশ হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও যখন ফিরিয়ে দিয়ে বলল যে ও বড়লোক ছেলে চায় তখন কয়েকটা প্রাইভেট ফার্মে ইন্টার্ভিউও দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু না করতে পারায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। -তারপর, এই কোম্পানি? -ওইদিন এক্সিডেন্ট করার পর নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম। চারপাশে অনেকগুলো চোখ এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন হাজার জনমের পরি.. লিখা - Kamruzzaman Anik
Posted on: Sat, 30 Aug 2014 07:58:52 +0000