! "ঘড়িটা দাও তো ।" সকালে - TopicsExpress



          

! "ঘড়িটা দাও তো ।" সকালে অফিসের জন্য তৈরী হতে হতে আম্মাকে বললেন আব্বা । আম্মা ঘড়িটা এগিয়ে দিলেন ।"তোমার ঘড়ি তো চলেনা , থেমে আছে ।" আব্বা কিছু বললো না । ঘড়িটা পড়ে দরজা খুলে অফিসে জন্য চলে গেলেন । সন্ধ্যা বেলা । বাসায় বসে টিভি দেখছি । আম্মা চা নিয়ে এলেন আমার জন্য । "কয়টা বাজে রে ?" বলে আমার রুমের ডিজিটাল দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালেন । "জানিস তোর আব্বার ঘড়ি নষ্ট । একটা নতুন ঘড়ি কিনতে বললাম , কিছু বলেনা । নষ্ট ঘড়ি পড়ে কেউ অফিস যায় ?" আমি চুপ করে চা খেতে লাগলাম । আম্মা কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেলো । আমার দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম । লাল ডিজিটের পরিবর্তনে দিকে তাকিয়ে কিছুটা অতীতের ফিরে আসা হলো মনে... ক্লাস টু তে পড়ি তখন । সবাই কার্টুন ওয়ালা কালারফুল ঘড়ি পড়ে স্কুলে যায় । আমার নাই । স্কুল থেকে ফিরে সন্ধ্যায় আব্বাকে বললাম "আব্বু , আমার জন্য একটা ঘড়ি আনবা , ঠিক আছে ? কার্টুন ওয়ালা ।" "আচ্ছা এনে দিবো কালকে ।" আব্বার আশ্বাস । পরদিন স্কুল থেকে বাসায় এসে ছটফট করছি আব্বা কখন আসবে ! নতুন ঘড়ি পড়বো , কি মজা ! আব্বা এলেন , কিন্তু ঘড়ি আনেননি । ভূলে গেছিলেন । আমি কান্নাকাটি শুরু করলাম । আমাকে বললেন কাল যেভাবেই হোক কিনে আনবেন । আমি শুনছিলাম না । তিনি অপরাধীর মত মুখ করে বসে রইলেন । রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । পরদিন সকালে , আমাকে নিয়ে আব্বা স্কুলে যাচ্ছেন । আমার মুখ কান্না কান্না । বন্ধুদের বলেছিলাম আজ নতুন ঘড়ি পড়ে যাবো । ঘড়ি তো নেই । মাঝপথে কেক খাওয়াতে নিয়ে আমার স্কুল ব্যাগটা খুলে একটা বক্স বের করলেন আব্বা । বক্সের ভিতর থেকে কার্টুনওয়ালা একটা ঘড়ি আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে হেসে বললেন ,"দেখ তো বাপ , পছন্দ হয় কিনা ?" আমি কেক খাওয়া বাদ দিয়ে খুশীতে চিত্কার দিয়ে উঠলাম ! আমার নতুন ঘড়ি ! পরে জেনেছিলাম , ঐরাতে আব্বা আবার বেরিয়ে গিয়ে অনেক খুঁজে ঘড়িটা কিনে এনেছিলেন । দোকান পাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুঁজে আনতে প্রচুর কষ্ট হয়েছিল তার । অতীত থেকে ফিরে এলাম । ডিজিটের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার চোখেও কিছুটা পরিবর্তন । চোখটা ভেজা ভেজা !! বুকে কেমন একটা শূন্যতা । রাতে আব্বা ভাত খাচ্ছেন । আমি আম্মার রুমে গেলাম । -আম্মা । -হু , কিরে ? -একটা কথা । -কি ? আম্মার হাতে আমার হাতঘড়িটা দিলাম । -এইটা আব্বাকে দিও । আমার কথা বইলোনা । আমি আরেকটা কিনে নিবো পরে । আমার থেকে ঘড়ির প্রয়োজন আব্বার বেশী । আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম । আম্মা কিছুটা অবাক ! কিছুক্ষণ পর , আম্মা আব্বাকে বলছে । আমি শুনছি । -নাও ঘড়ি । -কিসের ঘড়ি ? -আমি তোমাকে দিলাম । -তুমি ঘড়ি পাইছ কই ? -ঘড়ি এনে দেয়ার লোকের অভাব আছে ? বলে আম্মা হাসতে লাগলেন । ঘড়ি পেয়ে আব্বার কেমন লাগে , সেটা দেখতে পর্দার ফাঁক দিয়ে আব্বার দিকে তাকালাম । টিভির হালকা আলোয় দেখলাম বৃদ্ধ লোকটা ঘড়ির ডায়ালটার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখের কোণে কিছু একটার ঝিলিক ! আনন্দ অশ্রু ! আমার মনটা ভরে উঠলো । এত অল্পতে মানুষ খুশী হয় ?! একটা সত্য উপলব্ধি হলো । শেষ বয়সে বাবা মায়ের শখ আহ্লাদ বলতে তেমন কিছু থাকেনা । একটি ঘড়ি , কয় টাকা আর সেটার দাম ? কিন্তু পরিবার থেকেই প্রাপ্তিটাই শেষ বয়সে তাদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ্য । তাদের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টাগুলোই আমাদের সন্তানের জন্য পূণ্যের অবলম্বন । লিখা- আসিফ জামান
Posted on: Sun, 23 Jun 2013 10:10:23 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015