"জীবনের অনেক রঙ। ইচ্ছা - TopicsExpress



          

"জীবনের অনেক রঙ। ইচ্ছা থাকলেও সব রঙ ছুতে পারব না । আমি শুধু একটা রঙের স্পর্শ পেয়েছি । কষ্টের রঙ । জীবনটা উপভোগ করতে হয়।কিন্তু আমি তা পারিনি ।" পুরা ডায়রীটা পড়তে লিরার ইচ্ছা করল না । তার চোখ ভিজে গেছে। তনয়ের কিসের এত কষ্ট? কেন সে নিজ বোনের কাছে লুকিয়েছে? লিরার মোবাইলটা বেজে উঠল । - কিরে কখন আসবি? - এইতো আম্মু আসতেসি । তনয় অসুস্থ । মাঝে মাঝেই ওর বুকের ব্যাথাটা উঠে ।দুদিন হল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে । বাবা মা ওর কাছেই থাকে । আর লিরা সকাল বিকাল রান্না করে নিয়ে যায় । - কিরে দুষ্টুকুটু খবর কি তোর ? - এইতো আপু ভাল । - আজ তোর পছন্দের কাচ্চি বিরিয়ানি করে এনেছি । আয় তোকে খাইয়ে দি । - দে । শোন আপু কালকে আসার সময় আমার ডায়রীটা নিয়ে আসিস। আমার টেবিলের উপর আছে । - ওরে বাবা । ক্লাস এইটে পড়িস । আর এখনি ডায়রী লিখিস ? - হুম । খবরদার আমার ডায়রী পড়বিনা । - উহু । অবশ্যই পড়ব । - আপু !! - আচ্ছা বাবা ঠিক আছে । পড়বনা । রাত এগারটা বাজে । এইমাত্র বাসায় ঢুকল লিরা । বিছানায় কেবল গা এলিয়ে শুয়েছে । তখনই তনয়ের ডায়রীটার কথা মনে পড়ল । "আমি কারো সাথে মিশতে পারিনা । তাই আমার কোনো ক্লোজ বন্ধুও নেই । ওরা কত মজা করে আর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি । তবে আমার একমাত্র বন্ধু বা বান্ধবী যেটাই বলি না কেন সে হল আমার লিরা আপু । এ আপুই আমার জীবনের একটা অংশকে রঙময় করে রেখেছে । ইস আপু কত মজা করে আমার সাথে । আর মিষ্টি করে ঝগড়া করবে ।একটা তুচ্ছ কারণ নিয়ে আমি ইচ্ছা করেই খামচাখামচি করি আপুর সাথে। চোখে কাজল দিলে আপুকে যখন বলি তোকে পেত্নীর মত দেখায়, তখন আপু যে রক্তবর্ণ ধারণ করে তা দেখে আমার হাসি পায়। আপু তুই কি জানিস, তোকে আমি অসম্ভব ভালবাসি,,......." লিরা ডায়রীটা বন্ধ করে দিল । সে তনয়কে বলেছিল ডায়রীটা পড়বেনা । তাও লিরা মনের ইচ্ছাটা দমন করতে পারেনি । একটু করে পড়েই নিয়েছে । (কিছুদিন পরের কথা ) রাত বারটা বাজল । গল্পের বই পড়তে পড়তে ঢুলছিল লিরা। তখনই মোবাইল বেজে উঠল । - হ্যাপি বার্খডে আপু । - কিরে দুষ্টুকুটু আগে তো কখনো উইশ করতিনা । আজ করে দিলি? - হ্যা । কাল চলে আসিস। খুব মজা করব। পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠল লিরা । আজ ওর জন্মদিন । দুপুরে ভার্সিটি শেষে মার্কেটে গেল। তার দুষ্টুকুটু ভাইটির জন্য অনেক কিছু কিনবে সে। চকলেট কিনতে কিনতে লিরার মোবাইলটা বেজে উঠল।আব্বু কল দিসে । - হ্যা আব্বু বলো । - লিরা মা, তনয়ের অবস্থা খুব একটা ভাল না । তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় । লিরার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠে । সে মার্কেট থেকে বের হয়ে একটা সিএনজি নিল । অনেক কিছু কিনবে ভেবেছিল । এক কোটা চকলেট ছাড়া আর কিছুই কিনা হল না । হালকা সাজে সেজেছিল লিরা ।তনয়ের জন্য । চোখে কাজলও দিয়েছিল । অনেক কষ্টে চোখের পানিকে দমন করছে । তার কাজলটা নষ্ট হয়ে যাবে নাহলে । জীবনের একটা অংশকে তার দুষ্টুকুটু ভাইটা রাঙিয়ে রেখেছিল। তনয় চলে গেলে তার জীবনের একটা রঙ মুছে যাবে । এসব ভাবতে ভাবতেই সিএনজিটা কখন হাসপাতালে এসে থামল লিরা বুঝতেই পারেনি। লিরা খুব দ্রুত করিডোরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে । দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই লিরা থমকে দাড়াল। স্তব্ধ সে । সাদা কাপড়ে ছোট একটি দেহ ঢাকা । না লিরা কাঁদবেনা । নাহলে তার কাজল লেপটে যাবে। লিরাকে পেত্নীর মত দেখাবে না তখন । লিরা এগিয়ে যাচ্ছে তার দুষ্টুকুটু ভাইয়ের দিকে । মুখ থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে তার ভাইটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকল । মনে মনে বলল, "প্লিজ চোখটা খুল ভাই। দেখতো তোর আপুকে পেত্নীর মত লাগছে কিনা?তোর পছন্দের ডেইরী মিল্ক এনেছি । খোল ভাই চোখটা একবার খোল।" এবার লিরা কাঁদছে। হাউমাউ করে কাঁদছে। মা বাবাকে জড়িয়ে সে কি কান্না ! তার কাজল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যাক, কিছু করবেনা। বালিশের পাশ থেকে লিরা ডায়রীটা তুলে নিল । "কাল আপুর জন্মদিন । কোনদিন উইশ করতাম না আপুকে। লজ্জা লাগত । এবার অবশ্যই করব । রাত বারটা বাজুক খালি । আম্মু আব্বু ঘুমিয়ে গেছে । আর আমি টর্চ জ্বালিয়ে ডায়রী লিখছি । খুব আনন্দ লাগছে । ডাক্তার আংকেলকে বলব, একটি দিনের জন্য বাইরে বের হতে দিতে। আপুর সাথে কাল সারাদিন ঘুরব। আপুর ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে আপুকে অনেক চকলেট কিনে দিব । আর বলব, নে আপু তোর জন্মদিনের গিফট ।" লিরা ডায়রীটা বন্ধ করল । আর কিছু লিখা নেই। চকলেটের কোটাটি সে আরো শক্ত করে ধরল। লিরার জীবনের একটা অংশ আজ রঙহীন । ভাই বোনের ভালবাসার স্পর্শ আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ! লিখা #Rj_Kuber_Majhi
Posted on: Wed, 18 Sep 2013 13:30:31 +0000

Trending Topics



89 Forever, O
what are values in mathematics education? a question asked on my
The city is discussing Mandatory Winter Tires. I get it. How are
Aden is outside playing while Pam and I are in the room talking.

Recently Viewed Topics




© 2015