“তুমি মুখ হাত দিয়ে ঢেকে - TopicsExpress



          

“তুমি মুখ হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছো কেন” ‘স্যার ব্রাশ করি নাই’ “ব্রাশ করো নাই তো ওভার ব্রিজের উপর হাঁটাহাঁটি করছো কেন”? ‘স্যার আমার মেডিকেল এডমিশন টেস্টের রেসাল্ট দিয়েছে একটু আগে’ “তাহলে বাসায় যাও , কী খারাপ করেছো” ? ‘না স্যার আমি বরিশাল মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি’ মিরপুর ১০ নাম্বার ওভার ব্রিজের উপর জনৈক স্কুল শিক্ষকের সাথে রতনের কথোপকথন । ছুটির দিনের সকাল ১০টা । রাস্তা ঘাট ফাঁকা । মনিপুর স্কুলের বাংলার শিক্ষক সর্বজনাব রাশেদ কাঞ্চন তাঁর শিশুপুত্র এবং তাঁর পিতার সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন । পাশ দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করে একটা ছেলে ঘুরে দাঁড়াল । হড়বড় করে কী যেন বলছে । মুখ চেনা মনে হচ্ছে ,কিন্তু আচরণে অস্বাভাবিকতা আছে । “মুখের সামনে থেকে হাত সরাও ,ঐ হাতে কী” ? ‘স্যার লেবু , দুই হালি’ “যাও যাও বাসায় যাও ,বাসায় চিন্তা করবে” ‘আমার জন্যে দোয়া করবেন স্যার’ বেবিটাকে গালে একটু আদর এবং স্যারের বাবাকে সালাম দিয়ে সোজা হাঁটা ধরলাম । কোথায় যাওয়া যায় । বলে রাখি আমার ডাক নাম ভালো নাম কোনটাই রতন না । দাদা রেখেছিলেন সালেহ মুসা জঙ্গি । বাবার সাথে যুদ্ধ করে আমার এই ডিস্টিং ডিস্টিং নাম কাটিয়েছে মা । দাদা যতদিন বেঁচে ছিলেন মুসা ই ডাকতেন । চাচারা ডাকতেন সায়মন । বাবার কোন এক মটু চাইনিজ বন্ধুর নাম সায়মন । ২বছর বয়সে হামে আমার সারা গা-মুখ ফুলে চোখ ছোট ছোট চাইনিজদের মত হয়ে গিয়েছিল তাই সায়মন । মায়ের এবারো নিষেধাজ্ঞা । মহিউল হোসেন ঠিক হল কিন্তু স্কুলের খাতায় কখনোই শুদ্ধ করে লিখতে পারিনা । শেষে মহিবুর হোসেন হয়ে গেল , এটাও যে ভুল সারাজীবন টের পাচ্ছি । যে কেউ শুনে লিখতে গেলে মহিবুল বা মহিবুর রহমান লেখে । সালমান ফারসী স্যার সুন্দর আলী ডাকতেন , শখ করে মোটা হবার জন্যে আলু ভাজির তেল খাই বলে বন্ধুরা ডাকে তেলু । চেহারায় নাকি রতন রতন ভাব আছে তাই হুজুর আমাকে রতন ডাকেন । তেলু , রতন এই দুটা নাম আমার খুব প্রিয় । আজ থেকে ৫ মাসের মাথায় ফিজিওলজির ত্রাস তাহের স্যার টার্মের ভাইভায় আমাকে ০৫ দিবেন খাতায় মোহিব নীরব SHORT FORM ডিস্কো নাম লেখায়(তখন ফেসবুক ছিল না নইলে ডিস্কো না বলে অন্য কিছু বলতেন) । বাবা-মা’দের মাঝে রুটিন ঝগড়া , নতুন FAMILYতে BUILT IN সাময়িক বিচ্ছেদ , কিন্তু আদরের টুকরার জন্যে ফিরে আসা । বাবার গোপনে দেয়া নাম “সেতু” । পৃথিবীর সকল প্রথম সন্তানের নাম “সেতু” । পত্রিকায় রেসাল্ট দেখে এক ছুটে ১০নাম্বার চলে এসেছে রতন । ওভার ব্রিজের রেলিঙে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর স্যারকে দেখে । কোথায় যাওয়া যায় এখন ? সাড়ে এগারোতে যাওয়া যায় । ওখানে একটা বাসার কার্নিশে সবসময় কাক বসে থাকে । মানুষ কবুতর পালে , বাসাটায় কাক পালে কিনা কে জানে । কাকবাড়িতে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করা যায় । আজকের দিন শুভ । চেষ্টা নিব আরেক দিন । সুখবরটা কাউকে দেয়া দরকার । “কিরে POSITION কত’’ ‘কী কস POSITION মানে ? কোন রকমে এক যায়গায় নাম আসছে’ “অরিন ডিএমসিতে ৫৫তম , বাবুর সিলেট বা ময়মনসিং হইসে” ‘বরিশাল’ “মিষ্টি কই ? হাতে কিসের প্যাকেট” ‘লেবু ২হালি’ “লেবু কেন” ‘পকেটে যা টাকা ছিল হাতের কাছে যা পাইসি কিনছি’ “তুই বাইর হ শালা SHAMELESS আমার বাপে দেখলে খবর আছে ডাক্তার হইয়া গেসস আর মিষ্টি ছাড়া আইসস” হারামজাদা হিয়া মশারির ভেতর থেকে মাথা না বের করেই আমাকে তাড়ায় দিল । এমনিতেই হিয়ার বাবা আমাকে মেন্টাল কেস বলে আজ হাতে লেবু দেখলে খবর ছিল । মনে একটু JEALOUSY একটু আক্ষেপ আর অনেক বেশী স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফিরলাম । স্বস্তি কারণ সকালে ঘুম ঘুম চোখে প্রথম আলো খুলেই প্রথম পাতার বাম দিকের কলামে ADMISSION TEST এর রেসাল্টের খবর দেখলাম । ভেতরের পাতায় অনেক আশা নিয়ে প্রথম থেকেই রোল খুঁজতে থাকলাম । একটা একটা করে মেডিকেল পার হচ্ছে কিন্তু রোল খুঁজে পাচ্ছি না । আত্মবিশ্বাস উড়ে গিয়ে কান্নাকাটির দশা । অবশেষে বরিশালে পাওয়া গেল । চিৎকার দিতেই বাবার চোখে কিঞ্চিৎ অবিশ্বাস । মা বাবাকে ঐ অবস্থায় রেখেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম । ফিরলাম লেবু নিয়ে । লেবু বেশি চিপলে তিতা হয় , তখন ও জানিনা তিতা হওয়ার সবে শুরু । মানুষ খুব বেশি করে যা চায় সেটা সে নাকি পায় । এটার একটু MODIFIED VERSION বিশ্বাস করি । মানুষ খুব করে যা চায় সেটা সে পেলে তার জন্যে SUFFER করে । I AM VICTIM OF MY OWN SUCCESS । “মেডিকেলে অনেক কষ্ট , তোমার ফিগার আঁকা-হাতের কাজ তেমন ভালো না । তোমার যেহেতু ভার্সিটতে পড়ার ইচ্ছা তুমি ইংলিশে অনার্স পড় বিসিএসে অনেক আগায় থাকবা” (রতনের বাবা) “আমার ছেলেকে আমি চিনি সে ঢাকা কলেজে থাকতেই চারুকলা-বকুলতলায় বান্ধবী জুটাইছে আর ভার্সিটিতে পড়লে সারাদিন গাছতলায় কবিতা লিখবো” (রতনের মা) “সুখন আমার একছেলে রতন আরেক ছেলে , একজন ইঞ্জিনিয়ার আরেকজন ডাক্তার । বাবা-মা সন্তানের ভালো চায় , তবুও তোমার যেটা ভালো লাগে করতে পারো” । (রতনের বন্ধু সুখনের মা) “বাবা আমি সারাজীবন QUIZ করছি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , অর্থনীতি বা সাংবাদিকতা পড়তে চাই । ENGLISH এ পড়বো শুনলে মা বটি নিয়ে দৌড়ানি দিবে । কিন্তু এই সাবজেক্টগুলো বললে মা হয়ত দিতে পারেন” (রতন) “বাবা তুমি সবার বড় , এত ভালো জায়গায় চান্স পেয়েও , যদি ভার্সিটিতে পড় তোমার ছোট ভাই বোনদের জন্যে একটা BAD EXAMPLE হবে’’ (রতনের বড় খালা) অবশেষে রতন কোন BAD EXAMPLE হল না , বাবার অমতে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হল । উচ্চ শিক্ষার্থে মফস্বল গমন । চারুকলা , ফুলার রোড , পাবলিক লাইব্রেরি , টিভিতে কুইজের প্রোগ্রাম , স্পন্সর জোগাড় করেও ARRANGE না করে সব কিছু ছেড়ে চলে আসা ।পৃথিবীতে কোন কিছু ফ্রি না , SACRIFICE করতেই হয় । “নাম কী”-‘নীরব’ “নীরব কান্তি দাশ”?-‘জ্বী না মহিবুর হোসেন নীরব’ “এখানে কী”-‘মসজিদ খুঁজছি’ “মসজিদ খুঁজেন ভালো কথা এত রাতে কেন ? কোইথিকা আইসেন’’ ? ‘আমরা ঢাকা থেকে এসেছি বরিশাল মেডিকেলে’ “বরিশাল মেডিকেলে কী কাজ”?-‘ভর্তি হতে এসেছি , আমরা ছাত্র’ “আপনারা ইন্টারে কোন সাবজেক্টে পাশ করছেন” বাংলাদেশের পুলিশের IQ দেখে দুই বন্ধু রতন এবং মাসুম চোখ নাচায় । মাইগ্রেশন ফর্ম FILL UP করতে বরিশাল এসেছে । সাকুরার বাস বলা যায় উড়িয়ে এনেছে । ভোর ছটায় যে বাস পৌঁছানোর কথা রাত তিনটায় নথুল্লাবাদ নামিয়ে দিয়েছে । মাসুমের বুদ্ধিতে হালকা হতে মসজিদ খুঁজছে । বাকী রাতটুকু কাঁটিয়ে দেয়া যাবে মসজিদ পেলে । বাস স্ট্যান্ডের পেছন দিকে ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছে । পুলিশ কথায় কথায় জানায় গত রাতে বাস স্ট্যান্ডের পেছনে মাদক ব্যবসায়ীরা একজনকে রেপ করে । তারা তপন কান্তি দাস নামে একজনকে খুঁজছে । রতনের চুল দাড়ি বড় হওয়ায় তাদের সন্দেহ হয় । চট্টগ্রামে ভর্তি হবার সময়েও এই চুল দাড়ি দেখে কেমন যেন ভয়ের চোখে তাকায় তানভির-জাহিদ । রতনের প্রতিবেশী দুই রোল । জাহিদ বাসায় গিয়ে তার মাকে বলে ‘আমাদের সাথে এক সন্ত্রাসী ভর্তি হয়েছে , চুল দাড়ি দেখলে আমার ডর করে’ । সবাই মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ার স্মৃতি চারণ করছে , আমিও একটা পূরনো লেখা নোটস থেকে স্ট্যাটাসে লিখলাম ।
Posted on: Mon, 27 Oct 2014 14:34:12 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015