“মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ” - TopicsExpress



          

“মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ” (শেষ পর্ব) ----------------------------- মহাভারত আমাদের হিন্দুদের ধর্ম ও সভ্যতার উৎস। সেইজন্য মহাভারতকে বলা হয় হিন্দুর “পঞ্চম বেদ”। মহাভারতের প্রতিটি চরিত্রই আমাদের সমাজের এক একটা দিকের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছে। এখানে, ভাল ও মন্দ চরিত্রগুলোর দ্বন্দ্বের মধ্যই সত্যধর্মকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু, এই মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণ একটি সাধারণ চরিত্র নয়। মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণকে স্বয়ং ভগবানরূপেই বর্ণনা করা আছে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে গেছেন- তার সঠিক বিশ্লেষণ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য। মহাভারতে পাণ্ডবরা ছিল বীর, ধর্মপ্রাণ, ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ। সেজন্যই তাঁদের বন্ধু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সেজন্যই তাঁদের জয়লাভ। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়লাভের পর যুধিষ্ঠির সিংহাসনে আরোহণ করে শ্রীকৃষ্ণের অনুগ্রহের কথা বারবার কৃতজ্ঞচিত্তে প্রকাশ করে। ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরের রাজসিংহাসনে বসিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভারতে একটি দৃঢ় রাষ্ট্রবাবস্থা প্রবর্তন করেছেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ফলেই সত্য ও ধর্ম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। শ্রীঅরবিন্দ বলেছিলেন যে, -“কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ আসুরিক বল বিনাশ করে ব্রহ্মতেজ ও ক্ষত্রিয়তেজ উভয়কেই রক্ষা করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই ব্রহ্মতেজে অনুপ্রনিত হয়েই হিন্দুবীররা পরবর্তীতে দুই-হাজার বছর ভারতবর্ষকে বাঁচিয়ে রাখে। চন্দ্রগুপ্ত, পুষ্যমিত্র, সমুদ্রগুপ্ত, বিক্রমাদিত্য, সংগ্রাম সিংহ, রাজসিংহ, প্রতাপাদিত্য, শিবাজী এই সকল হিন্দুবীররা সেই ক্ষত্রিয়তেজের বলেই দেশের দুর্ভাগ্যর সাথে সংগ্রাম করেছে।” -“যেই দিন গুজরাট যুদ্ধে ও লক্ষ্মীবাঈয়ের চিতায় তার শেষ স্ফুলিঙ্গ নির্বাপিত হলো; তখন শ্রীকৃষ্ণের রাজনৈতিক কাজের সুফল পুণ্য ক্ষয় হয়ে গেল। ভারতকে ও জগতকে রক্ষা করবার জন্য আবারো পূর্ণ অবতারের আবশ্যকতা হলো।” মহাভারতের প্রধান মর্মবানী ধর্মের জয় ও অধর্মের বিনাশ। এই বানী আজও আমাদের হিন্দুদের জীবনে অমর হয়ে আছে। অধর্মের মাধ্যমে যে জয়, তা কোনদিন চিরস্থায়ী হয় না। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই চিরন্তন সত্যটিই আমাদের সামনে বারবার তুলে ধরেছেন। এই ধারাবাহিক লেখায় আমি চেষ্টা করেছি, একজন দক্ষ রাজনীতিজ্ঞ, দণ্ডদাতা, বীর যোদ্ধা, ধর্মপ্রচারক ও ধর্মসংস্থাপক হিসেবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে। আমার এই প্রচেষ্টা আপনাদের যদি সামান্যতমও ভাল লেগে থাকে, তাহলে আমার পরিশ্রম সার্থক। আজ সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, “আপনার সন্তানকে শিশুকাল থেকেই প্রগতিশীল শিক্ষার সাথে সাথে ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন। সন্তানকে রূপকথার গল্প না শুনিয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের গল্পের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই তার মনে ধর্মীয় চেতনার বীজ বপন করুন।” ভবিষ্যতে আপনার সন্তান মিথ্যা মোহে পা দিয়ে যেন নিজ ধর্ম ত্যাগ না করে সেজন্য আজ থেকেই সচেতনতা গ্রহন করুন। আজকের শিশুরাই যেন ভবিষ্যতে সুন্দর ও শক্তিশালী সনাতনী সমাজ গঠন করতে পারে, সেই দায়িত্ব আমাদের। তাই, আধুনিকতার নামে নিজের ধর্মীয় পরিচয় বিসর্জন দিবেন না। পরিশেষে, কুরুক্ষেত্রের রণভূমিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শ্রীশ্রীগীতার মাধ্যমে যে অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল, বর্তমান যুব-সমাজ সেই মন্ত্রেই দীক্ষিত হোক- এই কামনায় আমি আমার এই ধারাবাহিক লেখা এখানের শেষ করছি। জয় শ্রীকৃষ্ণ।। - সমাপ্ত -
Posted on: Fri, 05 Dec 2014 04:11:54 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015