Opt কাল রাত সাড়ে এগারটায় টিভি খুলে দেখি জাতীয় সংসদে বক্তৃতার তুবড়ি ছোটাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। আমি মন দিয়ে তার পুরো বক্তব্য শুনলাম। নিঃসন্দেহে তোফায়েল একজন ভালো বক্তা। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে নতুন কিছু পাওয়া গেল না, দেখা গেল তিনি তাঁর নেত্রীর মতোই ভুল যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন এবং জাতিকে সেটা খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। তোফায়েলের মতে, যেহেতু হাসিনা সরকারের অধীনে পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং যেহেতু এখনকার মিডিয়া খুব স্ট্রং সেহেতু হাসিনা সরকারের অধীনেই আগামি জাতীয় নির্বাচন হলে সেটি নিরপেক্ষ হবে। উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত মারাত্মক দুটি ত্রুটি রয়েছে। প্রথমত, যে পাঁচ হাজার নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে তার সবগুলোই স্থানীয় নির্বাচন। আর কে না জানে যে, স্থানীয় নির্বাচনের তুলনায় জাতীয় নির্বাচন হাজারগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আপনারা সফল হয়েছেন বলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও আপনারা সফল হবেন, এমন গ্যারান্টি দেয়া যায় না। বিষয়টি এরকম যে এক বালক তার বাবাকে বলছে, যেহেতু আমি ভালোভাবে ক্লাস ফাইভ পাশ করেছি, সেহেতু আমি যদি আগামিকাল এমএ পরীক্ষা দেই, তাহলে ভালোভাবেই এমএ পাশ করতে পারবো। নির্বোধ বালকের কথা শুনে বাবা যেমন হাসেন, আওয়ামী নেতাদের কথা শুনেও মানুষ তেমনি হাসির খোরাক পায়। দ্বিতীয়ত, যে স্ট্রং মিডিয়ার কথা বলছেন তোফায়েল সাহেব সেই স্ট্রং মিডিয়া নিয়ে একটা ছোট ঘটনার কথা মনে পড়লো। আমাদের গ্রামে একটা কুকুর ছিল, সেই কুকুরটি সবার বাড়ির রান্নাঘরের হাড়িতে মুখ দিয়ে এটা ওটা খেয়ে বেড়াতো। গ্রামবাসী তাকে হাজার মারধোর করলেও কুকুর সোজা হয় না। একদিন গ্রামের কিছু অল্প বয়সী ছেলেপেলে কুকুরটাকে ধরে গাছের সাথে বেঁধে শাবল দিয়ে কুকুরটির সামনের কয়েকটি দাঁত দিল ভেঙ্গে। সেই থেকে বেচারা কুকুর আর কারও রান্নাঘরে ভুলেও প্রবেশ করে না। আওয়ামী লীগের স্ট্রং মিডিয়ার নমুনা হলো আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান, যমুনা টিভি, শীর্ষ নিউজ, বাশেরকেল্লা, সোনার বাংলা ব্লগ। তোফায়েল সাহেব বা তাদের নেত্রী যতই গোপন করার চেষ্টা করুন না কেন, মানুষ ঠিকই জানে যে বাংলাদেশের স্ট্রং মিডিয়া আসলেই কতটা স্ট্রং। আর এই স্ট্রং মিডিয়ার সামাণ্য স্ট্রেংথ প্রদর্শনের পরিণতিও সবার চোখের সামনে জাজ্বল্যমান। আসলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব ক্লিয়ার যে এদেশে নিরপেক্ষ রেফারি ছাড়া দুই দলের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় না। কেউ যদি একাধারে রেফারি এবং খেলোয়াড় এই দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে সেই খেলা যে খেলা থাকে না, বরং নাটকে পরিণত হয়ে যায়, তা অন্য কেউ না বুঝুক, দেশের মানুষ অন্তত ভালোভাবেই বোঝে। কিন্তু দুঃখটা এখানে যে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন দলনেতার মনোতুষ্টির জন্য চেলা-চামুন্ডারা বুঝে-শুনে মিথ্যা ও হাস্যকর যুক্তি দিয়ে দেশকে গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
Posted on: Fri, 28 Jun 2013 05:04:34 +0000
Trending Topics
Recently Viewed Topics
© 2015