_____আমার বউ লিখা:-হুম আমিই সেই ছেলে(Saidur Rahman) _____®®________®_______®®___ --এই,ওঠ না,আযান দিয়েছে তো। --আর একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ,,, --না,এত ঘুমানো চলবে না। তারাতারি উঠে নামাজে যাও... --না।একটু প্লিজ... --সত্যি,আমি মনেহয় তোমাকে নামাজে নিয়ে যেতে পারব না।একটু হতাশ হয়ে কথাটা বলে রুহি। --ওর কোন কথায় কান না দিয়ে লেপটা ভালো করে গায়ে দেই আমি।তারপর নিশ্চিন্ত মনে ঘুম দেই... একটু পরে আবার ডাকে রুহি, --উঠে পর,আট টা বাজে। অফিসে যেতে হবে তো। অফিসের কথা শুনেই ঘুমটা চোখ থেকে পালিয়ে যায়।ধরফর করে উঠে বসি বিছানায়... --কি?আট টা বেজে গেছে? --হুম।মাথা দোলায় রুহি। -- তুমি তারাতারি নাস্তা দাও,আমি গোসলটা সেরে আসি। নতুন বসটা যা কড়া না!! --নতুন কড়া বসের জন্য ঘুম হারাম করে অফিসে ছুটছ,আর যিনি তোমায় অফিসে যাওয়ার ক্ষমতাটুকু দেন,তার কৃতজ্ঞতা কোনভাবে কি প্রকাশ করেছ কখনো? --রুহির কথা শুনে আমি থমকে দাড়াই,বলি,শোন,এ ত জ্ঞানের কথা বলো না।বুঝলে.. রুহি একটু বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। আমি বাথরুমে সাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে ভাবি,সত্যিই তো,আল্লাহর কৃতজ্ঞতা তো জানানো উচিত।তার ইবাদত করা উচিত। পরক্ষনে ভাবি,সবে তো জীবনটা শুরু,ইবাদতের এখনো অনেক সময় আছে.... নাস্তা টা দ্রুত শেষ করে,অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হই। তারপর ব্রিফকেসটা হাতে নিয়ে সোজা বেরিয়ে পরি। দো তলার বারান্দায় দাড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানায় রুহি। অফিসে অনেক কাজের চাপ।তারপরও একটু সময় পেলেই রুহির কথা মনে পরে।দু বছর হল আমাদের বিয়ে হয়েছে।একবছর হল রুহি আমার সাথে আছে।এই একবছরের প্রতিটাদিন ও আমাকে নামাজের কথা,রোজা,আর অন্যান্য ইবাদতের কথা বলেছে। আল্লাহর ইবাদত করতে বলেছে। প্রতিদিন পাঁচবার করে ও আমাকে নামজের কথা বলে। কিন্তু,আমার কানে ওর কথা পৌছায় ঠিকই,কিন্ত মনে নয়। রুহি আমাদের গ্রামেরই মেয়ে।একটু বোকা ধরনের। তবে একটা কথা রুহিকে দেখলেই চোখ বন্ধ করে বলা যায়,গ্রামের মেয়েরা শহরের মেয়েদের থেকে আনস্মার্ট হয় বটে,কিন্ত গুনে শহরের খুব কম মেয়েরাই গ্রামের মেয়ের মত হয়...! একদিন আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, --তুমি আমাকে এত নামাজ পড়তে বল কেন?তুমি নিজে তো পর।তারপর আবার আমাকে বলার দরকার কি? --আমি যদি একা বেহেস্তে যাই,তাতে কি লাভ হবে আমার?না,হবে না। তুমি ছাড়া একা বেহেস্তে আমি কি করব। তাই তোমাকে প্রতিদিনই বলি। মাথাটা নিচু করে শান্ত স্বরে বলে রুহি। কথাটা সোজা আমার বুকের ভেতর লাগে।কিন্ত একটু পরেই শয়তান কানে মন্ত্রনা দেয়,এখনো ঢের সময় আছে... আজ একটু তারাতারিই অফিস থে ফিরে দেখি রুহি নামাজ পড়ছে। আসরের নামাজ।আমার আসা বুঝতে পেরে দ্রুত নামাজ শেষ করে।তারাতারি এসে বলে, --তুমি এত তারাতারি আসলে যে? --কেন?আমার কি একটু আগে আসা মানা নাকি? --না,তা হবে কেন। আমি কথাটা ওভাবে বলতে চাই নি। মুখটা কালো করে বলে রুহি। আমি জানি,ও কথাটা ওভাবে বলতে চায় নি। কিন্ত,গ্রামের মেয়েরা একটু সরল হয়ে থাকে।তাই এতকিছু না ভেবেই বলেছে রুহি... আমি শোয়ার ঘরে শুয়ে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিলাম।খুব মজার একটা কলাম পড়ছিলাম,তাই সময়টা কখন চলে গেছে বুঝতেই পারি নি। পায়ে একটা মশা কমড় দিল। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। রুহিকে ডাকলাম, --রুহি,ওই রুহি... রান্না ছেড়ে দ্রুত ঘরে আসল রুহি। --কি হয়েছে?? --ঘরে এত মশা কেন?আজ স্প্রে কর নি? রুহি উত্তর না দিয়ে বলল,সামান্য একটা মশা কামড়েছে বলে এত ডাকাডাকি করছ,কিন্তু একবার ভেবে দেখ কবরে তুমি শুধু একা থাকবে।অত অন্ধকার আর ছোট জায়গায় তুমি কি করবে। ওখানে তো আমাকেও পাবে না... রুহির এই ভাষন শুনে মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল। কি হল আমার মধ্যে বুঝলাম না,ঠাস করে সশব্দে একটা চড় বসিয়ে দিলাম রুহির গালে। এক মিনিট স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল রুহি।মাথাটা নিচু করে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। যাওয়ার সময় দেখলাম,ফর্সা গালটা লাল হয়ে গেছে। রান্না শেষ করে,টেবিলে সাজিয়ে বসে রইল রুহি।একবারও ডাকল না।আমি নিজেই গেলাম টেবিলে।কিছু না বলে ভাত বেড়ে দিল রুহি।নিজে কিছু খেল না। আজ কোন চঞ্চলতা নেই ওর ভেতর। আস্তে করে শুয়ে পড়ল। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবলাম,রুহি তো সবসময় ঠিক কথাই বলে।তাহলে আমি ওকে চর মারলাম কেন? আমি তো মুসলিম।তাহলে কেন আল্লাহর ইবাদত করব না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। আযানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।আজ আর রুহি ডাকল না।নিরবে শুয়ে রইল। আযান শুনে দ্রুত উঠে পরলাম।ওজু করে টুপিটা মাথায় দিয়ে রুহিকে বললাম,আমি নামাজ পরতে যাচ্ছি রুহি খুব দ্রুত উঠে পরে। --এই শোন --কথাটা শুনে পেছনে ফিরে তাকালাম। কোন কিছু বলার আগেই জরিয়ে ধরে রুহি। এবার ছাড়,নাহলে নামাজে যেতে দেরি হবে। আমাকে ছেড়ে একটা হাসি দেয় রুহি।এত সুন্দর হাসি রুহির মুৃখে এর আগে দেখি নি। আমি মসজিদের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। পেছনে দাড়িয়ে আমার চলে আসা দেখছে রুহি....
Posted on: Tue, 02 Dec 2014 06:03:04 +0000
Recently Viewed Topics
© 2015