“অমাবস্যায় এমন বিদায়ের - TopicsExpress



          

“অমাবস্যায় এমন বিদায়ের নকশা ছিলো” সারাদিন ধরে কেঁদে কেঁদে-অবশেষে যখন শান্ত হলো আকাশ- সেই থেকেই ওদের কান্না শুরু হলো- এর মনে হয় শেষ নেই -এই কান্নার মনে হয় শেষ হয় না- আজকে আর কোনো জোর করবো না-যতোটুকু আছে ভিতরে বের হয়ে আসুক-আগম নিগম শোধ -বাদ-সব ই আসুক আজ- এমন দিন হাতের কাছে রোজ আসে না-তাই পাতার মাঝের জলে শুয়ে স্নান করে নাও-দোল খাও -কান্নার উদ্দামে দোল খাও- এই সব বৃষ্টি জোছনায় এক ধরনের কান্না কান্না রহস্য আছে সেটা বোঝো- অমাবস্যায় এমন বিদায়ের নকশা ছিলো- থাকে- সেটাও বোঝো। প্রাকৃতিক নিয়মে বর্ষা আসে-জোছনায় আলোকিত হয় চারপাশ-আবার অমাবস্যায় গাঢ় অন্ধকার ভর করে। প্রকৃতির এই উপাদান গুলোকে যিনি বেঁচে থাকার অন্যতম উপলক্ষ্য করে তুলেছিলেন তিনি একজন হুমায়ুন আহমেদ। চাঁদনি পশর রাতে যে মানুষটার মরে যাবার ইচ্ছে ছিল-কালো অমাবশ্যায় তার বিদায় লেখা ছিলো তা কে জানতো। বাঙলাদেশে তখন প্রায় মধ্যরাত-আর নিউইয়োর্কে দুপুর। এই রকম বিদায়ের সময়ে প্রিয় বৃষ্টি তাকে ভোলেনি। ঝুমঝুম করে নিউইয়োর্কের আকাশে সেদিন বৃষ্টি হয়েছিলো। তা হয়তো তাকে বিদায় জানাতেই। এই রকম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যিনি রবিন্দ্র সংগীত অথবা হাসন রাজার গান শুনতেন –সেদিনও কি আকাশে ওই সব গানেরা এসেছিলো তাকে বিদায় জানাতে? হুমায়ুন আহম্মেদ একাধারে চলচিত্রকার, কথা শিল্পী, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী-আর সব কিছুতেই তিনি ছিলেন প্রচন্ড পরিশ্রমী। চরিত্র এবং স্থান নির্বাচনে তার চিন্তাভাবনা ছিলো অনেক গভীরে। এমন ও অনেক সময় গিয়েছে যখন তিনি জঙ্গলের ভিতরে বসে লিখেছেন উপন্যাস। সারাদিন না খেয়ে বনের ভিতরে জোছনা দেখার কথা বাঙালি কার কাছ থেকে শিখেছিলো? তিনি একজন ই –তিনি হুমায়ুন আহমেদ। বনের ভিতরে জোছনা দেখার স্বাধ মানুষের কখনও মরবে না। বুকের ভিতর বন কেনার স্বপ্ন ছিলো তার-তাই তো গড়ে উঠলো নুহাশ পল্লী-তার স্বপ্নের জায়গা। যেখানে বসে তিনি বৃষ্টিতে হারিয়ে যেতেন অথবা জোচনায় হতেন মাতোয়ারা। এই সব জোছনা রাতে তার মনে বেঁজে উঠেছিলো গৃহত্যাগের গান-তাই তো তিনি বলেছিলেন- প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই। গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে? বালিকা ভুলানো জোছনা নয়, যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটোছুটি করতে করতে বলবে, ও মাগো! কি সুন্দর চাঁদ! নব দম্পতির জোছনাও নয়, যে জোছনা দেখে স্বামী গাড় স্বরে স্ত্রীকে বলবে; দেখো দেখো, চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর। কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাঁতে জোছনা নয়, যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে। কবির জোছনা নয়, যে জোছনা দেখে কবি বলবেন, কি আশ্চর্য রুপোর থালার মত চাঁদ। আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি। যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে। ঘরের ভেতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব, আর হাঁটব। পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে, চারিদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ ডাকবে ... আয়, আয়, আয় ।। জল জোছোনায় মিশে তিনি সর্বদা মানুষের ভিতরে ঢুকতে চেয়েছেন। হতে চেয়েছেন পাখির মতো মুক্ত। সহজ জীবনবোধে বিশ্বাসী মানুষটা সারাজীবন সকলকে শ্বাশ্বত ভালোবাসা বিরহে ভাসিয়েছেন। তাইতো তার প্রস্থান সব কিছুকে ছাপিয়ে গেলো। হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে এলো পথে –কদম ফুলের এমন ভালোবাসা কে আর পেয়েছে কবে।
Posted on: Thu, 18 Jul 2013 23:08:16 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015