অর্থপূর্ণ জীবন গড়ার ৭ - TopicsExpress



          

অর্থপূর্ণ জীবন গড়ার ৭ উপায় ড. ফিলিপ জিমবার্দো। স্ট্যানফোর্ড বিশ্বদ্যিালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর এমেরিটাস, পালো অ্যাল্টো বিশ্বাবদ্যালয়ের প্রফেসর, ওয়েস্টার্ন সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দুইবারের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং অ্যামেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট। সর্বাধিক বিক্রিত বই ‘দ্য লুসিফার এফেক্ট’-এর লেখক এবং ‘হিরোয়িক ইমাজিনেশন প্রজেক্ট’-এর প্রেসিডেন্ট। তিনি সোশ্যাল সাইকোলজি জগতের এক মহারথি। গত বছর জুলাইয়ের প্রথম দিকে ইউনিভার্সিটি অব পুগেট সাউন্ডে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের উদ্দেশে এক অভিভাষণ দেন। সেখানে তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন সাইকোলজি পড়ানোর ক্ষেত্রে তার ৫৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই অনন্য সুযোগ পাওয়ার জন্য তিনি এবং তার সহকর্মী শিক্ষকেরা চিরঋণী তাদের ছাত্রদের কাছে। কারণ, তিনি ও শিক্ষকেরা সবাই শেখার সুযোগ পেয়েছেন এই ছাত্রদের তারুণ্যসুলভ উচ্ছ্বাস থেকে। যেসব শিক্ষক ছাত্রদের প্রণোদিত করেন, তারা সবাই প্রতিদিনের বীর, তাদের উচিত সমাজের মাধ্যমে আরো জ্ঞানসমৃদ্ধ হয়ে ওঠা। একই সাথে হওয়া উচিত সেখানে সমবেত বাবা-মা ও অভিভাবকদের মতো, যারা দীর্ঘ সময় এসব শিক্ষার্থীর কল্যাণ ও সফলতার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। এখানে তিনি উপস্থিত গ্র্যাজুয়েটদের জন্য কামনা করেন সুখী জীবন এবং কামনা করেন এমন এক জীবন, যা অবদান রাখবে সামষ্টিক কল্যাণে। ছাত্ররা যাতে নিজেদের মতো করে ব্যক্তিগত সুখ ও সামগ্রিক কল্যাণ অর্জন করতে পারে, তাতে সহায়ক হতে পারার মতো সাতটি উপায়ের কথা তিনি তার অভিভাষণে উল্লেখ করেন। এই সাতটি উপায়ের কথা তিনি জেনেছেন কয়েকটি বিষয়ের ওপর তার গবেষণা থেকে। বিষয়গুলো হচ্ছে : evil, heroism, time, shyness and power of the social situation. ব্যক্তিগতভাবে কিংবা সামাজিকভাবে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার ব্যাপারে ড. ফিলিপ জিমবার্দো যে সাতটি জীবনপন্থার কথা উল্লেখ করেছেন, তাই এখানে উপস্থাপিত হলো, তার ভাষায়। জীবনপন্থাগুলো অনুসরণ শুধু ছাত্ররাই নয়, যেকেউ তার জীবনকে নিয়ে যেতে পারেন নবতর উচ্চতায়। এক : ‘বিজ্ঞতার সাথে সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন: ইউজ টাইম ওয়াইজলি অ্যান্ড ওয়েল’ সময় আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কখনোই সময়ের অপচয় করা যাবে না। মনোযোগের সাথে এর তিনটি শক্তির উৎসের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে সময়ের ব্যবহার করতে হবে। এই তিনটি শক্তির উৎস হচ্ছে এক. প্রত্যক্ষ অতীত তথা পজিটিভ পাস্ট সম্পর্কে মৌল জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়া, যা আপনার পরিবার, পরিচয়সত্ত্বা ও সংস্কৃতির সাথে আপনাকে সংযুক্ত করবে; দুই. আনন্দবাদী বর্তমান তথা হেডোনিক প্রেজেন্টের ক্ষমতা সম্পর্কে খোলামেলা হওয়া, যা আপনাকে এই মুহূর্তের শাক্তপ্রবাহের সাথে সংযোগ ঘটাবে; এবং তিন. আপনার হোপ-ফিল্ড ফিউচার তথা আশাপূর্ণ ভবিষ্যত-জীবনে নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী পুরোপুরি সফলতা পাওয়া সম্পর্কে অনুপ্রাণিত হওয়া, যা আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার নবতর ও উচ্চতর গন্তব্যে। উল্লিখিত এই পার্থিব ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে অনেক পরিস্থিতিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের মধ্যে আসে একধরনের নতুন নমনীয়তা। নিজের ও অন্যের অতীত থেকে শিক্ষা নিন এবং অন্যকে সম্মান করতে শিখুন। নিজের বর্তমান কাজকে এমনভাবে বেছে নিয়ে সাজান, যাতে তা বিকশিত করে মানবিক যোগাযোগ ও সমবেদনা। আপনার কষ্টার্জিত সফলতা ও পুরস্কার উপভোগ করুন ভবিষ্যৎ সাফল্য ও অর্জনের মধ্য দিয়ে। আর যেহেতেু আমাদেরর দ্রুত ফুরিয়ে চলা জীবনে প্রচুর সময় নেই, অতএব আমাদের প্রত্যেককে জানতে হবে কী করে সময় বের করতে হবে পরিবারের জন্য, বন্ধুদের জন্য এবং ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য। দুই : ‘জীবনভর শিখতে ভালোবাসুন : লাভ অ্যা লাইফটাইম লার্নিং’ কয়েক দশক ধরে আপনাদের মতো ছাত্ররা একটি সুবিধাজনক জীবনযাপন করে আসছেন। তখন সামাজিক কোনো দায় নিয়ে আপনাদের কিছুই ভাবতে, শিখতে, যুক্তি দিতে ও সৃজন করতে হয়নি। এখন সময় হচ্ছে, বাকি জীবনের প্রয়োজনে জানা-শেখার জন্য একজন পড়–য়া ছাত্রের মতো পড়াশোনা সারা জীবন অব্যাহত রাখা। এখন আপনাদের জন্য সময় সমাজ ও জাতিকে আরো উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার। তিন : ‘আবেগ প্রতিপালন করুন : নারচার ইউর প্যাশন’ আপনি প্রতিদিনের করণীয় কাজের একটি তালিকা তো তৈরি করবেনই। এর বাইরে আরেকটি দ্বিতীয় ব্যক্তিগত তালিকা করুন, যা আপনি প্রতিদিনের জীবনে করতে প্রত্যাশী। উদঘাটন করুন, সেসব কাজ করতে আপনি সত্যিকারের কতটুকু আবেগ ধারণ করেন, যাতে এই আবেগকে জীবনের অপরিহার্য শক্তির উৎস করে তুলতে পারেন। তা করার অর্থ হচ্ছে, আবেগ তখন হয়ে উঠবে ব্যক্তিগত গর্বের বিষয়। আর এর ফলে এটি নিশ্চিত হবে যে আপনি যখন ভবিষ্যতে অতীতের দিকে ফিরে তাকাবেন, তখন কখনোই নিজেকে নিজের কাছে অর্থহীন মনে হবে না। চার : ‘লজ্জাকে রূপান্তর করুন সামাজিক সংশ্লিষ্টতায় : ট্র্যান্সফর্ম শাইনেস ইনটু সোশ্যাল এঙ্গেজমেন্টে’ অব্যাহতভাবে লাজুক অতিথি হয়ে নিষ্ক্রিয় না থেকে বিভিন্ন পার্টিতে সামাজিকভাবে এনগেজিং হোস্ট হয়ে কাজ করা অনুশীলন করুন। আমাদের সবারই বেছে নেয়ার সুযোগ আছে নেতা হবো, না অনুসারী হবো। তেমনি আমাদের বেছে নিতে হবে আমার লাজুক হয়ে ঘরে বসে থাকব, না ঘরের বাইরে যাওয়া-আসা করব। লাজুকতা হচ্ছে স্ব-আরোপিত সামাজিক বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধের ফলে অন্যেরা আপনার অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে জানতে পারে না, কারণ আপনি নিজেই এ বাধা সৃষ্টি করে রেখেছেন। লজ্জা তথা শাইনেসকে আমি রূপক অর্থে বলি ‘সেলফ-ইমপোজড সাইকোলজিক্যাল প্রিজন’ তথা ‘স্ব-আরোপিত মনস্তাত্ত্বিক কারাগার’, যেখানে একজন হারায় সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা। আর যা যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা বাকস্বাধীনতা হচ্ছে এক মহা পুরস্কার। কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিই এই স্ব-আরোপিত মনস্তাত্ত্বিক কারাগার সৃষ্টি করে, কোনো প্রাকৃতিক নিয়মে তা সৃষ্টি হয় না। গ্র্যাজুয়েশন ও পরবর্তী নতুন ক্ষেত্রে যাওয়ার একটি অপ্রত্যাশিত আনন্দ হচ্ছে, কেউই আদৌ জানেন না যে আপনি লাজুক, অতএব আপনি সবাইকে বোকা বানিয়ে দিতে পারেন আপনার পার্টিতে ডেকে এনে তাদের উৎফুল্ল করে দিয়ে, যেখানে আপনি তাদের সাথে নাচবেন। পাঁচ : ‘নতুন করে গড়ুন নিজের ভাবমর্যাদা : রিমেইক ইউর ইমেজ’ এটাই সময় আপনার পরিচিত সাবলীল অভ্যাসগুলোকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অভিযানে নামা, যা আপনাকে ভবিষ্যৎ একগুঁয়েমি থেকে মুক্তি দেবে। মাঝে মধ্যে এমন কিছু করুন, যা অন্যরা ভাবতেও পারেন না যে, আপনি এমনটি করবেন বা করতে পারেন। এ কাজ আপনার সাধারণ রুটিন কাজের মধ্যে থাকবে না। গতানুগতিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে চাইলে এখনই সময় আগামীর যেকোনো কাজে আরো হিসাব-নিকাশ করে ঝুঁকি নেয়ার, নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার, আরো পরিশ্রমকর প্রচেষ্টার এবং আরো বিজ্ঞোচিত চিন্তাভাবনার। যখন আপনা সিদ্ধান্ত জন্য প্রত্যাশামতো ফল বয়ে আনে না, তখন কগনিটিভ ডিসোন্যান্স তথা ধারণাগত অমিলের সরল সমাধান হচ্ছে ‘আই মেড অ্যা মিসটেক, আই অ্যাম সরি, ফরগিভ মি, লেট’স মুভ’। ছয় : ‘হোন নৈতিক ও সামাজিকভাবে ইতিবাচক ভিন্ন মানের মানুষ : বিকাম অ্যা ডেভিয়েন্ট’ নেগেটিভ গ্রুপ পাওয়ারের তথা নেতিবাচক গোষ্ঠিশক্তির একটি উৎস হচ্ছে, আমাদের সবার ওপর কাজ করা সামাজিক মানদণ্ডের পরিব্যাপক চাপ (পারভেসিভ প্রেসার অব সোশ্যাল নরমস)। জরুরি পরিস্থিতিতে কোনো পদক্ষেপ না নিতে, কোনো কিছুতে সংশ্লিষ্ট না হতে, নিজের কাজে মনোনিবেশ না করতে, আমাদের কিছু করা উচিত এমনটি জানা সত্ত্বেও কিছুই না করতে দেয়ায় এই চাপ আমাদের ওপর কাজ করে। আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক বরাবর বলে, ‘আমি এতে জড়িত আছি’। তা সত্ত্বেও আমরা যখন সামাজিক পরিস্থিতিতে সামাজিক নাটকীয়কতায় আটকা পড়ি, তখন বেশির ভাগ মানুষই সামাজিক মানদণ্ডের গর্তে ঢুকে অসহায়, মনোযোগহীন নীরব দর্শক বনে যাই। এটাই হচ্ছে বাইস্ট্যান্ডার অ্যাপেথি বা নীরব দর্শকের উদাসীনতার উদাহরণ। অর্থপূর্ণ জীবন গড়তে এখন সময় এই প্রবণতায় পরিবর্তন ঘটানোর। তাই অনুশীলন করুন ক্ষুদ্র ধরনের হলেও একজন সোশ্যাল ডেভিয়েন্ট হতে, যার মাধ্যমে আপনি হবেন নৈতিক ও সামাজিকভাবে ইতিবাচক ভিন্ন মানের এক মানুষ। আপনার বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের লোকজন কিংবা কোনো আগন্তুকের কাছ থেকে আসা এ ধরনের কোনো চাপ যেদিন প্রতিহত করতে পারবেন, সেদিন আপনি অর্জন করবেন আপনার অন্তর্নিহিত শক্তি। তখন আপনার একার শক্তি বড় হয়ে যাবে অন্য অনেকের সম্মিলিত শক্তির চেয়ে। সাত : ‘নিজেকে প্রশিক্ষিত করে তুলুন প্রতিদিনের বীর হয়ে ওঠার জন্য : ট্রেইন ইউরসেলফ টু বিকাম অ্যান এভরিডে হিরো’ অর্থপূর্ণ জীবন গড়ায় আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এই সপ্তম উপায়টি। এখন আপনার প্রয়োজন নতুন এক সামাজিক বিপ্লবের জন্ম দেয়ার। এ জন্য আপনাকে হতে হবে স্বেচ্ছায় সমাজ পরিবর্তনের এজেন্ট। আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে পৃথিবীটাকে আর ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যখন অন্যেরা ভুল করবে, সঠিক কাজ করেবে না; তখন আপনাকে সঠিক কাজটি পক্ষে দাঁড়িয়ে, কথা বলে, পদক্ষেপ নিয়ে সঠিক কাজটিই করতে হবে। যে আকারেই হোক, সঠিক নৈতিক সাহস নিয়ে সঠিক সংহতি প্রকাশ করে মন্দের মোকাবেলায় আপনাকে হতে হবে প্রতিশ্রুতিশীল। ব্যক্তিগত সমবেদনা ও আবেগ অনুভূতি নিয়ে অন্যের সাথে একাত্ম হওয়ার ক্ষমতা হোক আপনার পথচলার আলোকবর্তিকা। সব সময় প্রস্তুত থাকুন প্রতিদিনের বীরত্বপূর্ণ কাজে তাৎক্ষণিক অংশ নেয়ার জন্য। নাগরিক সদগুণের প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট হোন আপনার প্রতিদিনের কাজে। হিরোইজম তথা বীরত্ব নিজের মধ্যে গড়ে তোলা যায়। দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া, মনোযোগী হওয়া ইত্যাদি অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মতো এটি হতে পারে শেখার বিষয়। প্রয়োজনে অন্যের হয়ে কাজ করা এবং নৈতিকতা রক্ষায় প্রচুর ঝুঁকি ও ক্ষতির সম্ভানার মধ্যে কাজ করাই হচ্ছে বীরত্ব। অতএব এর জন্য প্রয়োজন সমাজকেন্দ্রিক হওয়া, অবশ্যই এখানে আত্মকেন্দ্রিকতার স্থান নেই। ইগোসেন্ট্রিজম, পেসিমিজম ও সাইনিসিজম ( আত্মকেন্দ্রিকতা, দুঃখবাদ ও হতাশাবাদ) হচ্ছে হিরোইজমের শত্রু। লক্ষ করে থাকবেন, অনেকেই সঙ্ঘবদ্ধভাবে সংগঠিত হয়ে সবচেয় কার্যকরভাবে বীরত্বপূর্ণ কজ করে যাচ্ছে। এরা শুধু এককভাবে বীরত্বপূর্ণ কাজের গণ্ডিতে নিজেকে আটকে রাখছে না। অতএব আপনি নিজেকে এ ধরনের হিরোয়িক স্কোয়াডে জড়িত করতে পারেন। কিংবা নিজেই উদ্যোগী হয়ে অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন এ ধরনের ভিন্ন কোনো হিরোয়িক স্কোয়াড গড়তে। আমার শেষ কথা ও কাজে নামার চূড়ান্ত আহ্বান শান্তি ও সুখ উপভোগের মধ্য দিয়ে অর্থপূর্ণ জীবন গড়ার কাজে নেমে পড়ুন। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান আরো উন্নত পৃথিবী গড়ার কাজেও।
Posted on: Mon, 08 Sep 2014 20:43:51 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015