আমি একজন মহিলাকে চিনি, - TopicsExpress



          

আমি একজন মহিলাকে চিনি, বেশ সুন্দরী। আমার দেখা বাংলাদেশী সবচে সুন্দরী মেয়েদের একজন। আল্লাহ উনাকে বানিয়েছেনও এমন করে যে উনি যতই খান না কেনো, বাচ্চা-কাচ্চার মা হয়েছেন, তাও দেখতে শুনতে ভার্সিটির মেয়ের মতই থেকে গেছেন। আমি প্রথমবার যখন উনাকে দেখি বেশ মুগ্ধ হয়েছিলাম দেখে। কিন্তু ব্যপার হলো, উনার সাথে যারাই মিশে বা এক-দুইবার কথা বলে, কেউই উনাকে পছন্দ করেনা! কারণ স্রেফ একটা- ভদ্রমহিলা সবকিছু জানেন। দুনিয়ার হেন বিষয় নাই যাতে তিনি আগ বাড়িয়ে কমেন্ট করবেন না বা সে সম্পর্কে তিনি জানেন না! তার সাথে কথা বলাই মুশকিল, কারন আপনি তাকে কী বলবেন? তিনি তো অলরেডী সব জেনে বসে আছেন! (আমি এখন ঐ মহিলার সাথে কথা হলে কেমন আছেন? ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ ব্যাস, এরপরে আর কী বলবো খুঁজে পাইনা! এমনকি লাষ্টটাইম ভাল আছি বলেও ধরা খেয়েছিলাম, মহিলা সাথে সাথে বলা শুরু করেছিলেন তোমরা তো ভাল থাকবাই-ই, বিদেশে থাকো, কত আরাম!) ------------------------------------ দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভাবতে বসলে আমার আজকাল প্রায়ই ঐ মহিলার কথা মনে হয়। এই সব জানা-টা মনে হয় আসলে ঐ মহিলার ব্যক্তিগত দোষ না, এটা আমাদের জাতীয় দোষ। জাতিগতভাবে আমাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে আমরা সব জানি। দেখবেন, ফেইসবুকে যত স্ট্যাটাস/কমেন্ট পড়বেন, মানুষের আড্ডা যত শুনবেন, সব জায়গায় ঝগড়ার শুরুটা হয় কারন একজন আরেকজন সম্পর্কে সব আগেই জেনে বসে থাকেন এবং সেই presumption থেকে এমন সব কমেন্ট/কথা বলেন যা গায়ের চামড়া জ্বালিয়ে দেয়ার মত। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে আপনি-আমি সবাই এই স্বভাবের হয়ে গেছি। --------------------------------------- আপনার ওয়ালে ১৬-ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকা নাই কেনো? আপনি সবচে বড় রাজাকার! আমি মেইলগুলো পড়ি। একসময় এগুলো পড়লে খুব মেজাজ খারাপ হতো। এখন মেজাজ খারাপ হয়না। মায়া লাগে। একজন রোগীকে দেখলে যেমন মায়া লাগে তেমন। আমাদের জাতীয় দোষ সব জানি কত মারাত্মকরকম ভাইরাসের মত সবাইকে infected করে ফেলেছে! আমাকে যে/যারা জীবনেও কাছে বা দূর থেকে দেখেনি, আমার জীবন-চিন্তা সম্পর্কে জানেনা কিছুই বলতে গেলে, আমার ফেইসবুকে কয়েকটা স্ট্যাটাস-কমেন্ট পড়ে, ওয়ালের রকম সকম দেখেই কত বড় বড় জাজমেন্ট দিয়ে দেন তারা! বাংলাদেশে আসলেই কোর্টের কী দরকার?! সবাইই তো দেখি এক একজন সুপ্রীম কোর্টের জাজের মত। -------------------------------------------- গতকাল দুপুরে বড়ভাইয়া এসেছিলো। খেতে বসে আমি বড়ভাইয়া আর আমার জামাই তিনজনে রাজনীতি নিয়েই আড্ডা দিচ্ছিলাম। বড়ভাইয়া অনেক পড়ালেখা করে, অনেক কিছু জানে (স্রেফ এই একটা বিষয়েই আমি ওকে খুব ঈর্ষা করি)। ৭১ নিয়ে কী একটা প্রশ্নে ও এমন সব কিছু ফ্যাকচুয়াল ডিটেইলস দিলো, আমি বোবা হয়ে গিয়ে মনে মনে নিজেকে একটা কথাই বলছিলাম- হায় হায়, আমি তো একাত্তোর সম্পর্কে কিছুইই জানিনা দেখছি! ------------------------------------------ আমি যখন থিসিসের প্রথম দিকে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম, সুপারভাইজার চেইঞ্জ করতে হলো, স্কুল চেইঞ্জ করতে হলো, নতুন সুপারভাইজার একদিন ডাকলেন। নিজের ইজি চেয়ারে আরাম করে হেলান দিয়ে প্রথম প্রশ্ন করলেন, বলো দেখি, তুমি আসলে কী বিষয় নিয়ে পিএইচডি করতে চাও? তখন নতুন নতুন পিএইচডি শুরু করেছি। প্রচন্ড উৎসাহ। কত কিছু যে করে ফেলবো! কত কিছু যে লিখে ফেলার চিন্তা মাথায়! পিএইচডির শুরুর দিকে মনে হয় সবারই আমার মত অবস্থা থাকে, মানসিকতা থাকে এমন আমি মোটামোটি এই বিষয়টাতে সব জানি, এখন খালি থিসিসটা লিখতে হবে- এই মেন্টালিটী থেকেই হড়বড় করে বলা শুরু করলাম। সুপারভাইজার প্রথমে মনযোগ দিয়ে শুনলেন, তারপর আস্তে আস্তে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। প্রশ্ন করতে করতে, করতে করতে, করতে করতে... মিটিংর শেষে তিনি বললেন, আশা করছি আমার প্রশ্নগুলো তোমার নিজের কাছে বিষয়টাকে ক্লিয়ার করতে আরো সাহায্য করবে আমি খুব মন খারাপ করে উত্তর দিয়েছিলাম, কীসের সাহায্য করবে, এখন তো মনে হচ্ছে আমি যে বিষয়ে পিএইচডি করতে চাচ্ছি সেই বিষয়টা সম্পর্কেই কিছু জানিনা! কিচ্ছু না জানলে আমি পিএইচডি করবো ক্যামনে? সুপারভাইজার হেসে উত্তর দিয়েছিলেন তুমি যদি আগেই এই বিষয়টার সব জানতা, তাইলে তো আর পিএইচডি করা লাগতো না, মানুষ পিএইচডি করে ঐ বিষয়ে জানার জন্যই। ---------------------------------------------- অনেক আগে ব্লগে IIUCর একজন স্যারের কথা লিখেছিলাম। স্যার যেদিন পিএইচডির সার্টিফিকেট পান, সেদিন স্যারের স্যার সার্টিফিকেট হাতে তুলে দেয়ার সময় স্যারকে যা বলেছিলেন তার সারমর্ম হলো- এই সার্টিফিকেটের মানে তুমি এখন সব জানো তা না, বরং এর মানে হলো এখন থেকে তোমার জানার চেষ্টার শুরু। ------------------------------------------ ব্যক্তি বলুন বা রাষ্ট্র, আমরা সবাই যদি আমি জানি এই এটিচ্যুডটা বাদ দিয়ে অন্য মানুষ সম্পর্কে, দল সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা করতাম, বুঝার চেষ্টা করতাম, তাহলে একটা dialogue এর রাস্তা খুলে যেতো। তখন অবাক হয়ে দেখতেন, আল্লাহ! কত কিছু যে না-জানা/অজানা থেকে গেছে! যে ছেলেকে স্রেফ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ফেইসবুকি গন কেইস মনে হচ্ছে, দেখতেন সেই ছেলের বুকের ভিতরেই কত আবেগ সমাজের জন্য কিছু করতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, যে মেয়েকে নেকাব পড়া জামাতী ছাগু মনে হচ্ছে, দেখতেন সেই মেয়ে নিউরোসাইন্স নিয়ে এমন গবেষনা করছে যে গবেষনায় একটু ভালো সাপোর্ট পেলে, একটু স্পন্সর পেলে দেশের নাম দুনিয়ার সামনে উজ্জ্বল করতে পারতো, যে লোককে দাঁড়ি-টুপি পড়া রাজাকার মনে হচ্ছে, সে আসলে ছিলো স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা যার নিজের বোনকে পাকি সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলো এবং সে লজ্জায় সে বোন যুদ্ধ শেষে আত্মহত্যা করেছে, অথবা যে ক্লিনশেভড লোককে আপনার চেতনাধারী চুশীল মনে হচ্ছে সে আসলে এথিক্যালি সবচে স্ট্রং একজন মানুষ যিনি নিজের পরিবারের ক্ষতি হতে পারে জেনেও এই চরম দূর্যোগের সময়েও যেটা মোরালি-এথিক্যালি ঠিক তার পক্ষে কথা বলছেন, আর তাই করতে গিয়ে পাওয়ারফুলদের কুনজরে পড়ছেন... ----------------------------------------- প্লীজ, কারো সম্পর্কে বা কোনো কিছু সম্পর্কে এত সহজে জাজমেন্ট দিয়ে বসবেন না। আপনি-আমি-আমরা সবাই মিডিয়ার গোলাম, আমাদের জানার সোর্স প্রচন্ড রকম limited, compromised এবং biased. মুখ দিয়ে একটা কথা বলার আগে, বা কী বোর্ডে একটা শব্দ টাইপ করার আগে অন্ততঃ দুইহাজার শব্দ পড়ে নিন, জেনে নিন। অন্যদের দেয়া ইনফর্মেশান না গিলে নিজে বিকল্প-সোর্স থেকে ইনফরমেশান খুঁজে নিন, তারপর যে কোনো কথা বলার আগে সে কথার এথিক্যাল ভাল্যু ঠিক রেখে কথা বলুন, আর অবশ্যই এত জানার পরও নিজের জানার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
Posted on: Sun, 15 Dec 2013 23:54:52 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015