আমাদের চারপাশে - TopicsExpress



          

আমাদের চারপাশে হাজার-অজস্র বস্তুর ছড়াছড়ি। এসব বস্তু আসলে ৯২ টি প্রাকৃতিক মৌল, এদের দ্বারা গঠিত যৌগ কিংবা এদের নিজেদের ও বিভিন্ন যৌগের মিশ্রণ ছাড়া আর বেশী কিছু নয়। মৌলের ক্ষুদ্রতম কণা হল ডাল্টনের “পরমাণু”, আর যৌগের ক্ষুদ্রতম কণা হল গিয়ে অ্যাভোগেড্রোর “অণু” – এটা আজ আমাদের কারোই অজানা নয়। এসব কথা মানুষ জেনেছে, আজ প্রায় ২০০ বছর হল। ১৮১১ সালে ইটালিয়ান বিজ্ঞানী অ্যামেদিও অ্যাভোগেড্রো “Essai d’une manière de déterminer les m asses relatives des molécules élémentaires des corps, et les proportions selon lesquelles elles entrent dans ces combinaisons” শিরোনামে একটা আর্টকেল প্রকাশ করেন। এই আর্টিকেলেই সর্বপ্রথম তিনি অণুর ধারণা দেন। অণুর এই ধারণা আসার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কেন পরমাণুগুলো এক সাথে মিলিত হয়ে অণু গঠণ করে?? ১৮৫২ সালে এই প্রশ্নের জবাব দিতে চেষ্টা করেন বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্কল্যান্ড। পরমাণুগুলোর একের সাথে অন্যের মিলনের কারণ বলতে গিয়ে তিনি একটি নতুন ধারণা তুলে ধরেন। আর তা হল- “Combining Power”। এই Combining Power আসলে আর কিছুই না, আমরা যাকে এখন চিনি যোজনী বা Valency নামে। মূলত তাঁর প্রস্তাবনার সারকথা ধরেই আমরা এখনও যোজনীর সংজ্ঞা দেই – বিভিন্ন পরমাণুর একে অপরের সাতে যুক্ত হবার যে ক্ষমতা, তাকেই যোজনী বলে। পরিমাণগতভাবে আমরা বলতে পারি, কোন মৌলের একটি পরমাণু যতগুলো হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হতে পারে বা কোন যৌগ থেকে যতগুলো হাইড্রোজেন সরিয়ে দিতে পারে, তাকে বলা হয় ঐ মৌলের যোজনী। এখানে, হাইড্রোজেনের জায়গায় হাইড্রোজেনের সমতুল্য অন্য কোন মৌলের পরমাণুও হতে পারে। যেমন হতে পারে, ক্লোরিন পরমাণু। যোজনীর এই ধারণা থেকে এটা বোঝা গেল যে, পরমাণুগুলোর একে অপরের সাথে মিলিত হওয়ার সামর্থ্য/ক্ষমতা/আকাংক্ষা/ইচ্ছা আছে। কিন্তু এই সামর্থ্যের উৎস কি?? নিশ্চই এমন কোন শক্তি বা বল আছে, যা পরমাণুগুলোকে একসাথে বেঁধে রাখতে পারে! বিজ্ঞানীরা এই বলটাকেই নাম দিয়েছেন, রাসায়নিক বন্ধন! তার মানে দাড়াল, কোন যৌগে বিভিন্ন পরমাণুগুলো যে বল ( আকর্ষণ বল) দ্বারা একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকে, তাকেই বলে রাসায়নিক বন্ধন! চিত্রঃরাসায়নিক বন্ধন “বন্ধন” মানে বাঁধা। সোঁজা কথায় গিট দেয়া! ধরুন, আমি কয়েকটা লাঠিকে একসাথে নিয়ে একটা দড়ি দিয়ে গিট দিয়ে দিলাম। তাহলে কি হল, আমি গিট দিয়ে একটা বল দিলাম, আর এই বলটা লাঠিগুলোকে একসাথে আটকে রাখছে। রাসায়নিক বন্ধন ও এইরকম একটা “গিট”। কয়েকটা পরমাণুকে নিয়ে একসাথে করে কিছুটা বল “বল” দিয়ে একটা গিট দিয়ে আটকে দিতে পারলেই সেটা হয়ে গেল “রসায়নিক বন্ধন”!! একাধিক পরমাণু কোন একটা বল দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকার এই কাহিনীটা এইবার একটু গুরু-গম্ভীর স্টাইলে বলি (একটু পার্ট নেই): “পদার্থের অণুতে বা স্ফটিক জালিতে পরমাণু বা আয়নসমুহ যে আকর্ষণ বলের প্রভাবে পরস্পর সংযুক্ত থাকে, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।” যাই হোক, এই কথাটা আমাদের প্রথম শুনিয়েছিলেন বিজ্ঞানী লিনাস পলিং। রাসায়নিক বন্ধন তত্ত্বের হোতা তিনিই। কিন্তু, “Seeing is believing” যে বিজ্ঞানের আপ্তবাক্য, সে এমন বিষয় নিয়ে শুধুই একটা তত্ত্ব নিয়ে খুশি নয়। সে এই তত্ত্বের সত্যতাও প্রমাণ করেছে। কিছুদিন আগে IBM এর বিজ্ঞানীরা হাইড্রোজেন অণুর ছবি তুলতে সমর্থ্য হয়েছেন। এর পর তারা বেঞ্জিন রিঙ্গের মাঝে পরমাণুগুলো কিভাবে সংযুক্ত থাকে তার ছবিও তুলতে পেরেছেন। তাদের তোলা রাসায়নিক বন্ধনের একটা ছবি শেয়ার করছি। • তথ্যসুত্রঃ o উচ্চ মধ্যমিক রসায়ন – প্রথম পত্র (কবীর-হক-ইসলাম) o উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন – প্রথম পত্র (হাজারী-নাগ) o huffingtonpost/2012/09/15/single-molecule-images-ibm-chemical-bonds_n_1884818.html
Posted on: Sat, 20 Jul 2013 17:44:03 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015