আমি যেদিকেই তাকাতাম, - TopicsExpress



          

আমি যেদিকেই তাকাতাম, সেদিকেই দেখতাম বড় বড় পরাশক্তিগুলো আমার ভালোবাসাকে ধ্বংস করতে তৎপর। আমি দেখেছি আফগানিস্তানের মুসলিমদের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন কী করেছে। আমি দেখেছি বসনিয়ার মুসলিমদের উপর সার্বিয়ানদের অত্যাচার, দেখেছি চেচনিয়ার মুসলিমদের উপর রাশিয়ার অনাচার। আমি দেখলাম লেবাননের মুসলিমদের সাথে ইসরাইল কী অন্যায় করেছে এবং যা সে আজও চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনে, আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতায়। আমার এও অজানা ছিল না যে আমেরিকা নিজেই মুসলিমদের সাথে কী ভয়ানক অন্যায় করে আসছে। আমি উপসাগরীয় যুদ্ধ সম্পর্কে জানলাম, জানলাম কিভাবে ইউরেনিয়াম বোমা ব্যবহার করে ইরাক জুড়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সেই বোমার তেজস্ক্রিয়তায় মরণব্যাধি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল বহুগুণে। আমেরিকার নেতৃত্বে জাতিসংঘ কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরাকে খাদ্য, পানি এবং ঔষধপত্র প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। যার ফলাফল ছিল ইরাকে অন্তত ৫ লক্ষ শিশুর মৃত্যু। আমার মনে আছে একটা ভিডিও ক্লিপ দেখেছিলাম, “60 Minutes” প্রোগ্রামে, সেখানে সাক্ষাৎকারে ম্যাডেলিন অলব্রাইট বলেছিলেন, “এটাই তাদের যথার্থ পাওনা !” আমি দেখলাম কীভাবে কিছু মানুষ এই নির্মম শিশু হত্যার ঘটনায় শান্ত থাকতে না পেরে এরোপ্লেন হাইজ্যাক করে ১১ সেপ্টেম্বরে টুইনটাওয়ার উড়িয়ে এর প্রতিশোধ নেয়। এর পরবর্তী সময়ে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া স্বরুপ আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে বসল। আবিষ্কার করলাম “Shock & Awe” (এক ধরণের আক্রমণাত্মক মিলিটারি tactic) এর পরিণতি। ইরাকের যন্ত্রণাক্লিষ্ট শিশুরা হাসপাতালের ওয়ার্ডে শুয়ে আছে, তাদের কপালে বিঁধে আছে মিসাইলের তীক্ষ্ণ শ্র্যাপনেল। না, CNN এ এসবের কিছুই দেখায়নি। মেরিন সেনারা হাদীসা শহরে ২৪ জন ঘুমন্ত মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করে উড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল ৭৬ বছর বয়স্ক হুইলচেয়ারে বসা এক বৃদ্ধ, আরও ছিল বিছানাতে ঘুমন্ত নারী এবং শিশু। আমি আরো জানলাম এক চৌদ্দ বছরের ইরাকি বালিকার কথা। বোন আবীর-আল-জানাবি, তাকে পাঁচজন আমেরিকার সেনা গণধর্ষণ করে। তারপর তাকে ও তার পরিবারের সকলকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। পাষন্ডরা তাদের মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। আমি আপনাদের একটা জিনিষ মনে করিয়ে দিতে চাই। একজন মুসলিম নারী কখনও তার একটি চুল পর্যন্ত পরপুরুষের সামনে উন্মুক্ত করে না। অথচ কল্পনা করে দেখুন একটিবার, রক্ষণশীল পরিবারের এই ছোট্ট মেয়েটির কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। পাশবিকভাবে তাকে যৌন নির্যাতন করছে, একজন-দুজন নয়, পাঁচ সৈনিক মিলে। এই আজও, আমি কারাগারে বসে পাকিস্তান, সোমালিয়া আর ইয়েমেনে আমেরিকার চলমান ড্রোন হামলার খবর শুনছি। এইতো গত মাসেই, শুনলাম ১৭ জন আফগান মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং এরপর তাদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এদের বেশিরভাগ ছিলেন মা এবং তাদের ছোট সন্তান। এগুলো হয়তো আপনার কাছে নিছক পত্রিকার খবর বৈ কিছু নয়… কিন্তু এই আমি, এরই মাঝে শিখেছি, ইসলামের আনুগত্য আর ভ্রাতৃত্বের সংজ্ঞাটুকু। প্রতিটা মুসলিম নারী আমার বোন, আর প্রতিটা মুসলিম পুরুষ আমার ভাই, আর এই আমরা একসাথে একটা বিশাল পরিবার যারা একে অপরকে সাহায্য করে যাব। অন্যভাবে বলতে গেলে, আমি আসলে আমার ভাইবোনদের উপর এমন নির্বিচার অত্যাচার দেখে চুপ বা “নিষ্ক্রিয়” থাকতে পারিনি। শোষিতের জন্য সহানুভূতি আমার সবসময়ই ছিল, কিন্তু আজ যেন ব্যাপারটা একদমই ব্যক্তিগত। যারা আমার ভাই-বোনদের হয়ে লড়ছে তাদের প্রতি আমার সম্মানও তাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসরিত। -- কথাগুলো তারেক মেহান্নার জবানবন্দিতে তার সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার গল্প থেকে সংগৃহীত, পৃষ্ঠা-১২, বই: প্রাচীর
Posted on: Fri, 15 Aug 2014 08:51:54 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015