আমি যখন গাড়িতে বা বাসে বা - TopicsExpress



          

আমি যখন গাড়িতে বা বাসে বা রিকশায় থাকি, আর কোনো লেভেল ক্রসিঙের বাঁশ পড়ে, তখন আমি বলি, কী ভাগ্য, কী ভাগ্য, ট্রেন দেখব। ট্রেন চলে যায়। ট্রেন দেখি। তারপর আবার আমার যানবাহন চলতে শুরু করে। এই শুক্রবারের আগের শুক্রবারের কথা। কাকরাইল হয়ে সুগন্ধার পাশ দিয়ে হোটেল রূপসী বাংলার দিকে যাচ্ছি। বামে রমনা পার্ক। ঢাকার সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা। দুধারে বড় বড় গাছ। ছুটির দিনের অপরাহ্ন। রাস্তায় যানজট থাকার কথা নয়। কিন্তু গাড়ি থেমে গেল। থামল তো থামল, পুরো এক ঘণ্টা নড়লই না। ব্যাপার কী। একটু পরে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। এক ঘণ্টা পর গাড়ি নড়তে শুরু করল। আরও আধ ঘণ্টা পরে আমরা শেরাটন সিগনাল পার হলাম। ত্রিশ গজ যেতে লাগল দেড়ঘণ্টা। গতকালের বিকাল। শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে আসছি। আমার গাড়ি থেমে গেল। আর নড়ে না। পুরো আধ ঘণ্টা পরে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর যাচ্ছে। কী সৌভাগ্য আমার। তিনি বোধ হয় আজিমপুরে তার প্রাক্তন স্কুলের পুর্নমিলনী থেকে ফিরছেন। তারপর গাড়ি আর এগোয় না। অতি কষ্টে ধানমণ্ডির ভেতরে ঢুকলাম। একেবারে ছ্যারাবেরা অবস্থা। বড় বড় বাস উপায়ন্তর না পেয়ে ধানমণ্ডির রাস্তায় ঢুকে পড়েছে। বেচারা সার্জেন্টকে ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়েছে। আমি বসেই আছি গাড়িতে। নেমে যাব তারও উপায় নাই। ড্রাইভার ছুটিতে। আমিই গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে আছি। আমি ইতিবাচক মানুষ। মনে মনে বলছি, কী সৌভাগ্য, আমি যে পথে যাই, প্রধানমন্ত্রীও সেই পথে যান। আমাদের এই প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার মতায় এসে একটা বৈপ্লবিক ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার গাড়িবহরের জন্য রাস্তার একটা লেন বন্ধ করা হবে না। আরেকটা বন্ধ করা হবে ন্যূনতম সময়ের জন্য। প্রথম প্রথম তার এই কথায় কাজ হয়েছিল। সত্যি তিনি সাধারণের চলাচলে বিঘœ আগের তুলনায় কম ঘটাতেন। এখন হয়তো যানজট বেড়েছে। এখন হয়তো একটু আগে থেকেই রাস্তা বন্ধ করা হয়। তিনি তো ফাঁকা রাস্তায় চলেই যান। কিন্তু তিনি যে পথ দিয়ে যান, সেই পথে তার চিহ্ন পড়ে থাকে। আমি যেমন গতকাল সেই সব চিহ্ন প্রত্য করলাম। পুরো এলাকাটা যানজটে নাকাল। আচ্ছা, কোনো মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স যদি এক ঘণ্টা আটকে থাকে, তাহলে তার আÍীয়স্বজনের মনের অবস্থা কী হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একদিন যদি প্রটোকল না নিয়ে রাজপথে বেরুতেন, জানতে পারতেন ঢাকার পথের আসলে কী অবস্থা। আজকের বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তাঘাট অচলপ্রায় হয়ে পড়েছিল। বহু লোক গন্তব্যে পৌছাতেই পারেনি, মাঝপথ থেকে ফিরে গেছে। স্কুলের বাচ্চারা স্কুলে পৌঁছাতে পারেনি সময়মতো। এখন আমাদের গণপ্রতিনিধিরা যদি নাই জানেন রাস্তার আসল রূপ, ব্যবস্থা নেবেন কী করে। এখন তো দেখি সব মন্ত্রীর গাড়ির সামনে বা পেছনে বিশেষ সাইরেনযুক্ত গাড়ি থাকে। তারা যানজটে কমই পড়েন। ঢাকার পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমন্বিত পরিকল্পনা অনুসারে এক যোগে কাজ করা দরকার। শুধু বিচ্ছিন্ন ফাইওভার সমস্যার সমাধান নয়। র‌্যাংগস ভবন ভেঙে বানানো রাস্তা যানজট বাড়িয়েছে। যা করতে হবে, তা করতে হবে মাস্টারপ্লান অনুযায়ী, সমন্বিতভাবে। আমাদের অনেকগুলো প্রকল্প, মাস্টারপ্লান, গবেষণা বিদেশি সংস্থার উৎসাহে করাও আছে। শুধু সমন্বয় নাই।
Posted on: Sun, 08 Sep 2013 10:52:33 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015