আমার বন্ধু সেলিম। ওর - TopicsExpress



          

আমার বন্ধু সেলিম। ওর সাথে তেমন দেখা হয়না বললেই চলে। যখন দেখা হয় তখন সেটা হয় আমার বাসায়, তাও আবার রাতের শেষ অংশে। একবার রাত দুইটার দিকে এসেছিল। ঘরে ঢুকেই ইয়াহু ধরণের কণ্ঠে বলল, দোস্তো, কাল সকালে একটি মেয়ের সাথে হবে। প্রথম বারের মত দেখা হচ্ছে, তাই তোর সাথে আলাপ করতে চলে আসলাম, একটু জ্ঞান দিবি তাই। আমি ওর দিকে না তাকিয়ে বললাম, ভালো করেছিস, আমি তোর কথাই ভাবছিলাম, তোকে কিছু জ্ঞান দেব বলে। বিরক্ত মুখে সেলিমের দিকে তাকিয়ে বললাম, প্রথম জ্ঞান হচ্ছে এটা মানুষের ঘুমের সময়, কোন আলাপের সময় না। রাগ করিস না, আজকে বেশি সময় নিচ্ছি না, একটু পরেই চলে যাব। - এই একটু পরটা কি দিনের বেলা করা যেত না? রাতের বেলা তোর মাথা ভালো কাজ করে, তাই রাত করে আসি। তুই হলি আমার বিপদের বন্ধু। - কি বলবি বলে বিদায় হ, হাতের কিছু কাজ সেরে ঘুমিয়ে পরবো। আচ্ছা, এমন কিছু কি করা যায় যাতে মেয়েটা শুরু থেকেই আমার প্রতি আগ্রহ দেখাবে? - হ্যাঁ করা যায়। কি করতে হবে বল, আমি তাই করব। - খুব সহজ, তুই ইচ্ছে করে পনের বিশ মিনিটের মত দেরি করে যাবি। মেয়েটা যখন দেরি করার কারণ জানতে চাইবে তখন বলবি রওনা হবার আগে পায়খানা করতে গিয়ে তোর দেরি হয়েছে। অন্য কোন ধরণের কারণ বললে হবে না? - না হবে না। বেশির মানুষ ট্রাফিক জ্যামের মিথ্যে উজুহাত দেখায়, তুই দেখাবি পায়খানার ওজুহাত, দুর্গন্ধ ধরণের ওজুহাত হলেও মেয়েটা তোকে সত্যবাদী ভাববে, আর তোর প্রতি সে একধরণের দুর্বলতা অনুভব করবে। আজকাল সত্যবাদী প্রেমিকের বেশ অভাব। সেলিম যেন আমার এই অদ্ভুত কথায় খুশিতে আত্মহারা হল, চোখ বড় বড় লকরে বলল, দোস্তো তুই আসলেই একটা জ্ঞানী মানুষ। সেলিম আমার ছেলে বেলার বন্ধু। স্কুলে আমরা এক সাথে পড়েছি। আমার দেখা অতি মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে সে একজন। দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে কেটেছে তার ছোট বেলা। বাবা মায়ের দুই সন্তানের এক সন্তান সেলিম। এসএসসি ও এইচএসসি দুইটাতেই সে মেধা তালিকায় স্থান করেছিল। বর্তমানে পেশায় সে একজন আর্কিটেক্ট। লম্বা আকারের সেলিম দেখতে সুদর্শন, এক দেখায় পছন্দ করার মত সুদর্শন। হাজমলা খেলে সুদর্শন হয় কিনা জানা নেই। সেলিমকে প্রায় সময় হাজমলা খেতে দেখা যায়। ট্যাবলেট আকারের হাজমলা তার পকেটে সব সময় পাওয়া যায়। ঘড়িতে এখন রাত প্রায় ১২ টার মত। বিনা নোটিশে আজকেও সেলিম আমার বাসায় হাজির। অন্যবারের মত আজকেও সে জরুরি কোন প্রয়োজনে এসেছে। তার ধারণা জরুরি বিষয়ে আমি ছাড়া অন্য কেউ তাকে সাহায্য করতে পারে না। আজ কি ধরণের সাহায্য চাইতে পারে সেটা অনুমান করতে ইচ্ছে করছে না। দোস্তো, একটা বিপদে পরে তোর কাছে এসেছি! - হ্যাঁ বুঝতে পারছি। ঝটপট তোর বিপদের কথা বলে ফেল্‌, আমার হাতে সময় কম। জানিস তো আমার বিয়ের কথা চলছে, আর আমার ঘটক একের পর এক পাত্রিদের ছবি আর বায়ো ডাটা দেখিয়ে যাচ্ছে। - হ্যাঁ জানি, উন্নতমানের গাধা ধরণের গরুর জন্য একটা গাভী খোঁজা হচ্ছে। ঘণ্টা খানেক আগে আমার ইমেইল অ্যাকাউন্টে এক পাত্রী নিজে তার ছবি সহ বায়ো ডাটা পাঠিয়েছে। হাই প্রোফাইল বায়ো ডাটা, চাচা মামারা বেশীর ভাগই সরকারী অফিসার। তাদের সবার ঢাকায় বাড়ি গাড়ি আছে। আমাকে লিখেছে আমিও যেন তাকে আমার বায়ো ডাটা পাঠাই। - চাচা মামাদের বাড়ি গাড়ি আছে জানলি কি করে? ওর বায়ো ডাটা থেকে জেনেছি। সংক্ষেপে প্রত্যেক মামা চাচাদের বাড়ির বিবরণ দেয়া, সেই সাথে তাদের জমির পরিমান। ওর বড় চাচার দোতালা বাড়িটা এক বিঘার উপরে করা। পাত্রীর আত্মীয়রা সবাই ঢাকার স্থানীয়। - এক কাজ কর, ইমেইলটা দুদুকের কাছে পাঠিয়ে দে। দুদুকের ভাগ্যে এমন তথ্যময় ইমেইল কখনও জোটে না। আমি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি সাঈদ, তোর কাছ থেকে দুদুক উপদেশ শুনতে আসিনি। - পাত্রী সম্পর্কে কিছু লেখেনি? হ্যাঁ লিখেছে, মেয়ে কিন্ডার গার্ডেন স্কুল টিচার। ওর বাবা পাসপোর্ট অফিসে চাকুরী করে। অফিসার পদে কিনা সেটা লেখা নেই। ঢাকায় ছয় তলা বাড়ি আছে। নীচতলা কার পার্কিং আর অন্য তলায় দুই ইউনিটের ফ্ল্যাট। প্রতিটি ১৮২০ স্কয়ার ফিট। - ফ্ল্যাটের এর সাইজও লিখেছে? হ্যাঁ লিখেছে। পকেট থেকে ভাঁজ একটি কাগজ বের করে আমাকে পড়তে দিল। আমি পড়া শুরু করলাম। Name: MST Bilkis Banu Pakhi Age: 23 Height: 5-2 Complexion: Medium Fair Weight: 46kg Occupation: School Teacher at Kinder Garden School. Fathers Name: MD Rohim Uddin Akkas Fathers Occupation: Govt Job holder at Bangladesh Passport Office Residence Status: Own house at Mirpur 6, Dhaka. 6 storied double unit apartment with ground floor parking space. Apartment size - 1820 square feet each including common area. বাকিটা পরতে ইচ্ছে করছে না। কাগজটি সেলিমের হাতে ধরিয়ে দিলাম, বললাম, পড়ে মজা পাচ্ছি না রে দোস্তো! এটা তোর পকেটে ঢুকিয়ে রাখ। ও বিরক্ত চোখে বলল, পড়ে মজা পাচ্ছিস না মানে কি? - তেমন কোন মানে নেই, এধরণের বায়ো ডাটা আমাকে আকর্ষণ করে না, ধরে নে এটাই মানে। কেমন হলে বায়ো ডাটা তোকে আকর্ষণ করতো? - পাত্রীর বাড়ির বর্ণনার পরিবর্তে তার দৈহিক বর্ণনা দেয়া থাকলে পড়ে আনন্দ পেতাম। সাইজ জিরো পাত্রীর দৈহিক বর্ণনা কেমন হয় জানা নেই। এটা একটা সুযোগ হতে পারতো। সাঈদ! প্লিজ! ফাজলামো করিস না! বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। - সেটা কেমন? পাত্রীর হাসিটা প্রেমে পরার মত হাসি, চোখ দুইটা অসাধারণ। ছবি দেখেই আমার পছন্দ হয়েছে, আর পছন্দ হয়েছে বলেই গাড়িতে না এসে রিকশায় করে তোর বাসায় এসেছি। - পছন্দের সাথে রিকশায় আশার সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে। যদি পথে ছিনতাইকারী বা পুলিশ ধরে ঝামেলা করে তাহলে ধরে নিতে হবে এই মেয়েকে বিয়ে করা ঠিক হবে না। তোর এখানে আশার পথে কোন ঝামেলা হয়নি, লক্ষনটা ভালো। দেখা যাক বাসায় ফেরার পথে কি হয়। কুফা বলে একটা বিষয় আছে। - এখন বলে ফেল আমাকে কি করতে হবে। তুই আমাকে একটা বায়ো ডাটা তৈরি করে দিবি। এমন ভাবে তৈরি করবি যাতে সবকিছু ভাসা ভাসা ভাবে লেখা থাকে। জানিস তো নিজের পরিচয় ছাড়া বিয়ের বাজারে পরিচয় দেবার মত কিছুই আমার নেই। তোর মাথা ভালো, তুই সুন্দর করে মিথ্যে কথা লিখতে পারিস। - সুন্দর করে মিথ্যে কথা লিখতে পারি কি করে বুঝলি? মিথ্যে কথা লিখতে না পারলে বিদেশীদের কাছ থেকে কাজ বাগিয়ে নিস কি করে? ঐ যে কি সব আউটসোর্সং না ফ্রিলান্সিং করিস, সেটার কথা বলছি। মারুফের কাছ থেকে তোর এই রহস্যের কথা জেনেছি। - মারুফ টা কে? আমার পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। ওয়েব সাইট ইঞ্জিনিয়ার। ফ্রিলান্সিং করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করে, আর সেই টাকা দিয়ে পাড়ার সব ছেলেদেরকে সে বিনা পয়সায় ফ্রিলান্সিং শেখায়। খুব ভালো ছেলে। ওর একটা ট্রেনিং সেন্টারও আছে, কি যেন একটা নাম, এখন মনে পরছে না। মারুফ কিভাবে ট্রেনিং সেন্টারটা শুরু করছিল শুনবি? - না, এখন শুনতে ইচ্ছে করছে না। তুই বাসায় চলে যা। তোর ভাসা ভাসা বায়ো ডাটা তৈরি করে তোকে ইমেইল দিচ্ছি। ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে। রীতিমত ধাক্কা দিয়ে বের করার মত করে সেলিমকে বাসায় পাঠাতে হল। যেতে চাচ্ছিল না, শেষ কথাও যেন তার শেষ হয় না। সরল প্রকৃতির মানুষগুলোর মধ্যে এমন আচরণ দেখা যায়। এ ধরণের মানুষগুলো তুচ্ছ বা সাধারণ ঘটনা নিয়ে তার ব্যাস্ত হয়ে পরে। সেলিমকে সরল না বলে অতি সরল বলা উচিৎ। জীবনের প্রকৃত জটিলতা তাকে স্পর্শ করে না। সাধারণ ব্যাপারে তাকে মুগ্ধ হতে দেখা যায়। চারুকলার পাশে রুস্তম মিয়ার চায়ের দোকানের চা তার প্রিয়। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে তাকে এই চা খেতে হয়, না খেলে রাতে তার ভালো ঘুম হয় না। ওর ধারণা ওয়েস্টিন হোটেলের চা রুস্তম মিয়ার চায়ের কাছে হারমানবে। রুস্তম মিয়ার কন্ডেন্স মিল্ক দিয়ে বানানো চা আমার মোটেই কাছে পছন্দ না। সেলিমকে খুশি করার জন্য একবার খেতে হয়েছিল। বায়ো ডাটা তৈরি করতে বসে পরেছি। বছর খানেক আগে চাকুরীর জন্য কয়েকজনকে সিভি তৈরি করে দিয়েছিলাম। বায়ো ডাটা কখনও তৈরি করা হয়নি। এটাতে বাড়তি বিষয় লিখতে হয়। যে যত ঢোল পিটিয়ে মামা চাচার পরিচয় দিয়ে লিখবে বিয়ের বাজারে তার বায়ো ডাটা ততই আকর্ষণীয়। ঘটকদের কাছে আকর্ষণীয় পাত্র পাত্রীদের কদর বেশি। সেলিমের জন্য আকর্ষণীয় বায়ো ডাটা বানানো যাবে না জানি। মিথ্যে তথ্য দিয়ে এমন কিছু তৈরি করাও আমার পক্ষে সম্ভব না, তবে একটু ভিন্নতা আনা যেতে পারে। ব্যতিক্রম ধরণের জীবন বৃত্তান্ত হতে পারে। কিছু মেয়েরা ছেলেদের মাঝে ব্যাতিক্রম দেখতে পছন্দ করে। মায় অমুক ইজ ডিফারেন্ট বলতে পারার সুযোগ হয়। বায়ো ডাটা তৈরি করেছি। চোখ বুলিয়ে দেখছি কোথাও কোন ভুল হল কিনা। এর মাঝে মোবাইল বেজে উঠল, সেলিমের ফোন। ফোন ধরতে ইচ্ছে করছে না। ফোন না ধরেও উপায় নেই, সে থামবে না, ফোনের পর ফোন করতেই থাকবে। সাঈদ? - ফোন করেছিস কেন? তোকে বায়ো ডাটা তৈরি করতে হবে না, এটা বলার জন্য। তুই এখন ঘুমা। - হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত? কি হল আবার? কুফা লেগেছে। বিয়ে জাতীয় ঘটনার শুরুতে কুফা লাগা মানেই কোথাও কোন সমস্যা আছে। তাই এটা নিয়ে আগানো ঠিক হবে না। - তোকে কি ছিনতাইকারী ধরেছিল? ছিনতাইকারী না, পুলিশ ধরেছিল। আরেকটু হলেই থানায় নিয়ে যেত। চারশ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে রক্ষা পেয়েছি। - বলিস কি? পুলিশ তোকে ধরতে যাবে কেন? পকেটে হজমলা দেখে ভেবেছে আমি ইয়াবার ব্যাবসা করি। অনেক চেষ্টা করেও তাদেরকে বোঝাতে পারিনি যে ওগুলো হজমলা বড়ি। ইয়াবা যে লাল রঙের হয় সেটাও বলেছি, তাতেও কোন কাজ হয়নি। পুলিশ বলে এগুলো নাকি মানুষের গোপন অঙ্গ দিয়ে পাচার করা ইয়াবা, তাই এর রঙ হলুদ। এখন থেকে আর হজমলা খাওয়া হবে না রে, মনে পরলেই গা ঘিন ঘিন করে উঠছে। আমি রাখছি, ঘুম পাচ্ছে। [লেখা সংক্ষিপ্ত করার জন্য সেলিমের জন্য তৈরি করা ব্যাতিক্রমধর্মী বায়ো ডাটাটি আজ দেয়া হল না, এটা অন্য একদিন পোস্ট করা হবে ]
Posted on: Tue, 19 Aug 2014 13:57:46 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015