আমার সামনে বসা মেয়েটা! - TopicsExpress



          

আমার সামনে বসা মেয়েটা! তবে মেয়েটার মুখ দেখতে পারছি না, কেমন আবছা আবছা । আমাদের সামনে একটা খাতা, আর খাতায় ক্রস-সাইন (তবে x-o ভাবেই বেশি খেলা হয়) গেইমের ছক (Tic-Tac-Toe) । ছোট বেলার এই গেইমটা আমার এত ফেভরিট যে সব সময় খেলি। তবে এই খেলায় বেশির ভাগ সময়েই ড্র হয়। কেউ যদি ইচ্ছা করে প্রতিপক্ষকে জিততে দিবেনা তাহলে সেটাও সম্ভব। আর সামনে যে মেয়েটি আছে সে সবসময় জিততে চায়। কয়েকদান খেললাম। সব গুলা ড্র । ও গেলো ক্ষেপে। ওর কন্ঠ শুনে বুঝা যাচ্ছে। আমাকে বললো, “এবার আমি যেখানে যেখানে দিতে বলবো সেখানে সেখানে ক্রস দিবা ওকে?” - কেন ? আমাকে হারানোর জন্য? - আমি জানিনা, যা বললাম তাই শুনবা। - আচ্ছা। - ওই মধ্যে না, কোনায় ক্রস দাও... - দিলাম - এবার উপরের মাঝ খানটায়। - আচ্ছা, তুমি জিতবা এটা। - হিহিহি, এবার বাম সাইডের মাঝখানে। - ওমা! এভাবে খেলে মজা আছে? ওখানে দিলে নিশ্চিত হারবো! - দিতে বলেছি দাও! - না দিবোনা! কিছুক্ষণ জোরাজুরির পর না পেরে আমার হাত থেকে কলম নিয়ে সে নিজেই আমার ক্রস গুলা পূরন করে দিয়ে নিজে জিতে গেলো। “ইয়াহুউউ” বলে চিৎকার দিলো। যেন একটা বাচ্চা মেয়ে। আর সে সবসময়েই এটা করে। ওর চেহারাটা বুঝার জন্য আরেকটু এগিয়ে গেলাম আমি। কিন্তু কিসের জানি ঠং ঠং শব্দ বাঁজা শুরু হলো। সামনের মেয়েটার সামনে আবছা কুয়াশা জমতে শুরু করলো। ওর কন্ঠ আর আমি শুনতে পাচ্ছিনা। হাত দিয়ে সামনের কুয়াশা গুলা সরানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু না, সে নেই। ঠং ঠং ঠং... লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে পরলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি আমার দরজার কাঁচের সামনে মুখ দিয়ে আছে ‘মোঁচওয়ালা জাম্বু’! সে তার পালিশ করা লাঠি দিয়ে দরজায় বারি দিচ্ছে তাই এমন ঠং ঠং শব্দ হচ্ছে। সে মোটা আর ইয়া বড় মোঁচ তাই আমি তার নাম রেখেছি ‘মোঁচওয়ালা জাম্বু’। তার চোখে চোখ পরায় তিনি বললেন, “সাড়ে সাতটায় নাস্তা দেয়া হবে, ফ্রেশ হয়ে নাও” আমি হালকা ‘গরর...’ করে বুঝালাম যে ‘আচ্ছা’ সে চলে গেলো, পাশের ঘরে। তার প্রতিদিনের ডিউটি এটাই, সাত সকালে আমাদের ডেকে দেয়া। তবে আমি চিন্তা করছি আমার স্বপ্ন টা নিয়ে। সেই মুখ না দেখা মেয়েটাকে নিয়ে। আর ঠিক এই স্বপ্নটাই আমি প্রায়ই দেখি। যেদিন এই স্বপ্ন দেখিনা সেদিন অন্য রকম ভয়ংকর স্বপ্ন দেখি। যেমন একটা গভীর কুয়ার ভেতর আমি পরেই যাচ্ছি পরেই যাচ্ছি...অনন্ত কাল ধরে... ** বিছানা গুছালাম, ব্রাশে পেস্ট নিয়ে বেসিনের সামনে গেলাম। সাড়ে সাতটার আগে ফ্রেশ হয়ে নিতে হবে। তাছাড়া লাল খাতায় এসব মার্ক হয়ে যাবে এবং পরে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি হলো দুই হাত উঁচু করে ত্রিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা আর এক কিজানি তিতা ঔষধ খাওয়া যা একদম বিচ্ছিরি, জঘন্য। দূর থেকে নার্স দের কথাবার্তা কানে ভেসে আসছে, কোথাও টেলিফোন বাঁজার শব্দ শুনা যাচ্ছে। পাশের রুমে একটা নার্সের গলা শুনা যাচ্ছে। সে নিশ্চিত সিফাত কে তাড়া দিচ্ছে। কারন সিফাত ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে সেটা মুখে ঢুকিয়ে এক ভাবে আয়নায় তাকিয়ে থাকে। নিজের চেহারা খুঁটে খুঁটে দেখে। দুনিয়ার সব কিছু যেনো সে ভূলে যায়। কয়েকবার শাস্তি দিয়েও তার এই বদ অভ্যেস তাড়ানো যায় নি, তাই সকাল বেলা একজন নার্স আসে তাকে বলে বলে সব করিয়ে দেয়ার জন্য। আমার বাম পাশের ঘরে থাকে মোটু বিজয়। ইয়া বড় ভুঁড়ির মালিক সে। এমনকি মোঁচওয়ালা জাম্বুর থেকেও তার ভুঁড়ি বেশি। তার একটা বৈশিষ্ট হলো সে কিছু একটা হলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদে। এখনো তার কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে। নিশ্চিত সে ব্রাশে পেস্ট বেশি নিয়ে ফেলেছে না হয় পেস্ট ভর্তি ব্রাশ হাত থেকে পরে গেছে এজন্য কাঁদছে। আর মোটু বিজয়ের পাশের রুমে থাকে শাওন। এর কাজ হলো সারাক্ষণ হাসা। আর উল্টাপাল্টা কাজ করা। আমাদের এই চারজন নিয়েই আপাতত গ্রুপ। অন্যান্য গ্রুপে সাতজন করে অবশ্য। নতুন কেউ আসলে সে আমাদের গ্রুপে জয়েন করবে। আমরা বের হয়ে এক এক করে “নার্স স্টেশন” এর দিকে যাই। কাঁচঘেরা টেবিলের ফাঁক গলে আমাদের তারা এক কাপ চা দেয়। সেই বিশ্রি চা যদিও লালচে পানি বলাই ভাল, সেটা এক ঢোকে খেয়ে নেই। চায়ের সাথে কি ঔষধ মেশায় কে জানে। তারপর সবাই দেয়াল ঘেষে লাইন হয়ে দাঁড়াই। এবং ক্যাফেটেরিয়ার উদ্দেশ্য রওনা দেই। আমরা চারজন বসে এক সাথে নাস্তা করি। একটুকরা কেক, একটা কলা, এক ফালি সিদ্ধ ডিম আর বনরুটি। এই খাবারের সব টুকু খেতে হবে, কলার খোসা বাস্কেটে নিয়ে ফেলতে হবে। এবং খাওয়া শেষে ট্রে নিয়ে গিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার বেসিনে রেখে আসতে হবে। একটু এমন তেমন হলে লাল খাতায় নাম উঠে যাবে। আমার এসব একই খাবার খেতে ভাল লাগেনা। তাই যখন নার্স একটু অন্য দিকে যায় তখন মোটু কে কিছু খাবার দেই। খুশিতে ওর চোখ ভিজে উঠে। খাবারের ট্রে এক এক করে বেসিনে রেখে আসি, সেখানে নার্স প্রত্যেক টা ট্রে চেক করে। কারো ট্রে তে কোন খাবার না খাওয়া আছে কিনা। তারপর সবাই হাত মুখ ধুয়ে চলে আসি। এখানেও কড়াকড়ি। খাবার গুলা এত বিচ্ছিরি যে অনেকেই বমি করে উগলে ফেলে। তাই হাত মুখ ধুয়ার সময়েও নার্স রা সতর্ক থাকে কেউ যাতে বমি করার চেষ্টা না করে। অনেকে বমি করতে না পেরে সেখানেই কাঁদে। ** সকাল নয় টা, এই সময় টা সবাই মিলে নার্সদের সাথে আলোচনা করে। একজন উর্ধ্বতন নার্স আসেন। যিনি সবাইকে হাসপাতালের রুলস গুলো বলেন। যদিও এসব শুনে শুনে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। এবং এই সময়ে অন্যান্য সবাই তাদের সমস্যা গুলা বলে। যেমন সিফাত বলে, “আমাকে দাঁত ব্রাশ করার জন্য কম সময় দেয়া হয়” মোটু বিজয় অশ্রুভেজা চোখে বলে, “আমার ট্রে তে সব সময় ছোট সাইজের কলা পরে” শাওন বলে সে তার জোকসের বই খুঁজে পাচ্ছেনা। (যদিও ভূয়া কথা) আর আমার প্রতিদিনের কমপ্লেইন হলো আমি পুরো স্বপ্ন দেখতে পাইনা। আমার সমস্যার কথা শুনে তারা হাসে। কিন্তু আমার যে সেই মেয়েটার চেহারা দেখার খুব ইচ্ছা যে প্রায়ই আমার সাথে ক্রস গেইম খেলে। একটু পর আসেন সদা হাসি হাসি মুখে করে রাখা এক মহিলা নাম ডাক্তার রেহানা। তিনি এসে আমাদের সবাইকে আমাদের সমস্যা গুলা অর্থ্যাৎ যে সমস্যা গুলার জন্য আমরা এই মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি সেসব বলতে বলেন। আমি বুঝিনা প্রতিদিনই কেন আমাদের এসব বলতে হবে! একবার বললেই তো হয়। আমাকে প্রতিদিন বলতে হয় “আমার সিজনোফ্রবিয়া, সুইসাইডিকাল এটেম্পট আর ডিপ্রেশনের জন্য এখানে আসতে হয়েছে। আমি হাই ডোজের অনেক গুলা ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলাম” আমার মনে হয় বুড়ির মাথায় ঘিলু খুব কম তাই তার কিছু মনে থাকেনা এবং এজন্য আমাদের প্রতিদিন একজিনিস বলতে হয়। তবে তিনি আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন, রাতে কেমন ঘুম হয়েছে বা ব্রেকফাস্ট কেমন হয়েছে এসব। আমাদের কে বলেন, “কখন বুঝবা তোমাদের ডেভেলপ হচ্ছে? যখন দেখবা যে তোমাদের অতীতের কিছু স্মৃতি বা মানুষকে মনে পরে যাচ্ছে। এমনও কিছু স্মৃতি আছে যা তোমাদের গলায় এসে আটকে যাবে কিন্তু ব্রেইনে আসবে না। সেসব স্মৃতি গুলা গলা থেকে যখন ব্রেইনে যাবে তখনই তোমাদের ডেভেলপ হবে। আমরা আমাদের চিকিৎসায় স্বার্থক হবো।” একটু পর শোনা যায় কোন মেয়ের চিল্লানি। ধুপ ধুপ করে দেয়ালে বারি মারার শব্দ। আমাদের হাসি হাসি বুড়ি তখন উঠে পরেন। নার্সদের বলেন ‘কোড ওয়ান’ আর তারা তখন সেই মেয়েটাকে বের করে কোন এক রুমে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায়। যতদূর জানি ওখানে নাকি ‘শক-ট্রিটমেন্ট’ জাতীয় কিছু দেয়া হয়। তারপর আমি আর শাওন টুলের উপর বসে বই পড়ি, আমি বসে থাকি আর সে আমার কোলের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে তার হাজারবার পড়া জোকসের বই পড়ে। আর একটু পর পর হাসে। আমি ওর চুলে হাত বুলিয়ে দেই মাঝে মাঝে। ত্রিশ মিনিট পর শুরু হয় গ্রুপিং টাইম। সব গ্রুপ কে একটা টপিক দেয়া হয়। আমাদের চার জনকেও টপিক দেয়া হলো। “নেতিবাচক দিকের বিরোধিতা’ খুবই কঠিন টপিক। বাকি তিনজনের মাথায় ঢুকেনা এটা। তবে আমি ‘মাস্টর’ হিসেবে সুপরিচিত এখানে। আমি অন্যদের তুলনায় বেশি জানি বলে আমাকে সবাই ‘মাস্টর’ বলে ডাকে। আমি লিখতে শুরু করি। আমি একটা নেতিবাচক কিছু লিখি তারপর তার বিপরীতে তিনটা পজিটিভ জিনিস লিখি নেগেটিভ বিষয় টাকে পরাজিত করার জন্য। আর ওদিকে মোটু নিজের লিখা নিজে পড়ে কেঁদে ফেলে, শাওন নিজের লিখা পরে হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয় আর সিফাত খাতায় কলমই টাচ করেনি তখনো। ** সাড়ে বারোটা, লাঞ্চ টাইম। খাবারের চেহারা দেখার পর মোটু বাদে আমরা তিনজনই খাবারের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে বিভিন্ন পাখি ফল ফুল আঁকাই। মোটু শুধু গপাগপ গাসাতে থাকে। একসময় আমার অর্ধেক খাবার ওকে দিয়ে দেই। দুপুরের দিকে আমাদের দেয়া হয় রিক্রিয়েশনাল থেরাপী...অর্থাৎ এখন আমাদের মুভি দেখানো হচ্ছে। ইংরেজি মুভির এক পর্যায়ে ভিলেনদের ভেতর তর্ক শুরু হয়ে। তারা একে অপরকে গালাগালি শুরু করে। তাদের গালাগালির এসব কথা শুনে শাওন আমাকে বলে, “আচ্ছা মাস্টর এই Kiss my ass মানে কি?” আমি ওটার মানে বলার পর সে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। মোটু আমাকে বলে, “মাস্টর F*ck you” মানে কি? আমি বলবোনা তাই বললাম, “এই যাহ এটা আমার গলায় আটকে গেছে ব্রেইনে আসছে না। তাই বলতে পারলাম না।” - তাহলে I will kill you এটার মানে? - আমি তোরে খুন করবো! - ও আচ্ছা আচ্ছা! সিফাত হঠাৎ বলে উঠে ওই ভিলেন টা আমার মত দেখতে তাই না ফাহাদ? আমি কিছু বলার আগেই উর্ধ্বতন নার্স এসে আরেকটা নার্স কে বকতে শুরু করেন যে কেন সে সামাজিক মুভি দেখানো বাদ দিয়ে প্যাশেন্ট দের ইংরেজি ভায়োলেন্সের মুভি দেখাচ্ছে... দুঃখের বিষয় এটাই যে কোন মারামারি দেখার আগেই মুভিটা চেঞ্জ করে দিলো। মুভি দেখা শেষে আমি শাওনের ছবি আঁকাই সে আমার ছবি আঁকায়। দুজন মুগ্ধ চোখে আমাদের শিল্পের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদিও পরে আবিষ্কার করি আমি শাওনের কাঁন আঁকাই নি আর শাওন আমার নাক আঁকায় নি। তবে এটাই পিওর ভালোবাসা। এক সময় একজন নার্স আসে, বলে, আমাকে কারা বলে দেখতে এসেছে। গিয়ে দেখি আমার ‘বাবা মা’ নামের দুইজন মানুষ। আমি জানিনা কেন জানি তাদের দেখলেই আমার মাথা দপদপ করে। শুধু মনে হয় এই পাগলা গারদে আসার পেছনে তারাই দায়ী। গিয়ে দেখি মা নামের মহিলাটার চোখে জল নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আর বাবা নামের ভদ্রলোকটা আমাকে কি জানি বলছেন, “বাবা মীম কে এখানে রেখে গেলো ওর বাবা মা আজ, তুই ওদের দেখলে ক্ষেপে যেতে পারিস তাই তারা তোর সামনে আসেনি, বাবা কেমন আছিস?” আমার মাথায় দপদপ করে ব্যাথা আরো বাড়তে শুরু করেছে। তাদের কথার কোন মানে আমার মাথায় ঢুকছে না। সামনের দেয়াল টাকে খুব আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। তাই সোজা গিয়ে মাথা ঠুকা শুরু করলাম দেয়ালে। মনে হলো সেই বাবা মা গিয়ে ডাক্তার ডাকতে শুরু করলেন। আমি এদিকে মাথা ঠুকেই যাচ্ছি। একটু পর কয়েকটা নার্স এসে ঢুকলো আমার ঘরে। আমার হাত চেপে ধরলো। একজন কোড ওয়ানের ব্যাপারে কি সব বলতে শুরু করলো, আমি ভয় পেয়ে গেলাম সাথে সাথে। আমি ওই শক দেয়ার ঘরে যেতে চাই না। আমি বললাম, “আমি ঠিক আছি, আর করবোনা এমন কখনো, আমাকে কোড ওয়ান দিবেন না প্লিজ!” আমার কপাল চিড়ে রক্ত বের হয়েছে। সেখানে ব্যান্ডেজ করা হলো। হাসি হাসি বুড়ি এসে সেই বাবা মাকে নিয়ে গেলেন আমার সামনে থেকে। **** ডাক্তার রেহানা ফাহাদের বাবা মাকে বললেন যে ফাহাদ অন্যান্য প্যাশেন্ট দের মত না, তাকে সুস্থ্যই মনে হয়। তবে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে আরও কিছু সময় লাগবে। আমরা আশা করছি সে দ্রুতই সুস্থ্য হয়ে যাবে। ফাহাদের বাবা মা দূর থেকে বিছানায় শুয়ে থাকা ফাহাদ কে এক পলক দেখে চোখ মুছতে মুছতে চলে যান। ** আমি সব সময় ক্রস সাইন খেলি বলে তারা আমাকে একটা চকের প্যাকেট দিয়েছে। তবে এই শর্ত দিয়ে যে আমি যেন খেলার পরে সব মুছে ফেলি। বিকেল চারটার সময় টা আমার খুব প্রিয়। কারন এ সময়ে সব প্যাশেন্ট দের একটা খোলা মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়। যে যার মত খেলাধুলা বা অন্য কিছু করে। আমি তখন মাঠে ক্রস গেইমের ছক আঁকাই আর স্বপ্নে দেখা মেয়েটার কথা মনে করার চেষ্টা করি। তাই আজ? মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই মাঠে এসে পরেছি। চক দিয়ে ছক আঁকাচ্ছি আর মোটু বসে আমার আঁকানো দেখছে। একটু পর শাওন এসে পরলো। মোটুর মুখের সামনে শাওন তার পেছনের দিকটা বাড়িয়ে বললো, “হেই মোটু Kiss my ass…kiss my ass… দে চুমা দে মোটু...” মোটু এবার ক্ষেপে গিয়ে চোখে পানি নিয়ে বললো, “দূরে যাহ শাওন, আমাকে কাঁদাইস না। আমি কাঁদলে কিন্তু I will kill you….i will kill you” একটু পর একটা নতুন মেয়ে আমার সামনে এসে বসে পরলো। আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিলাম। মেয়েটা আমাকে ফিসফিস করে বলতে শুরু করলো, “ফাহাদ...আমি মীম...আমাকে চিনতে পারছো? আমার বিয়ের পর তুমি পাগল হয়ে গিয়েছিলা মনে আছে? সুইসাইড করতে চেয়েছিলা! দেখো আমিও বিয়ের পর থেকেই পাগলের অভিনয় করে এখানে আসছি। আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে জানো? আমি শুধু তোমার জন্যেই এখানে এসেছি। আমার দিকে তাকাও ! চিনতে পারছো না?” আমার মাথায় মেয়েটার কোন কথার মানেই ঢুকলো না। তবে বুঝলাম আজ যে নতুন পাগল মেয়েটা এসেছে এটাই সে এবং এ আমাদের গ্রুপে জয়েন করবে। আর ওদিকে শাওন আর মোটুর লাফালাফি চলছেই। তারা দেখছি মুভির ডায়ালগ ভালোই মুখস্থ করেছে। শাওন মোটুর সামনে গিয়ে “my ass…kiss my ass…” বলছে আর মোটু চোখে পানি নিয়ে “I will kill you….i will kill you” বলে চলেছে। একটু পর কয়েকটা নার্স ছুটে আসলো এদিকে। শাওন নার্সদের দেখে তাদের কেও বলতে শুরু করলো, “হেই নার্স kiss my ass…kiss my ass…হিহিহিহি” তারপর শাওন কে কোড ওয়ান দেয়া হলো, তাকে শক দেয়ার জন্য মোঁচওয়ালা জাম্বু নিয়ে যাচ্ছে তবুও সে তার ass এ কিস চেয়েই চলেছে। এবং সাথে সাথে আমাদের সবাইকে ঘরে ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়া হলো। সামনে বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালাম। সে চোখে জল নিয়ে কি সব বলেই যাচ্ছে। আমি তাকে সেখানে রেখেই চলে আসলাম। আফসুস একটাই ক্রস গেইম খেলা হলো না আজ। ** রাত নয়টা... ডিনার সেরে আমরা সবাই কমন রুমে। এটা আরেকটা সময় যখন আমরা সবাই আবার এক সাথে মিলিত হতে পারি। সবাই সবাইকে গুড নাইট জানাচ্ছে। আমি মেঝেতে বসে চক দিয়ে ক্রস গেইমের ছক আঁকাচ্ছি। মোটুও বসে হাঁ করে দেখছে। একটু পর টলতে টলতে শাওন আসলো আমার দিকে। আমি অবাক হয়ে গেলাম সে বিছানা ছেড়ে উঠলো কিভাবে শক খাওয়ার পরেও। এসে আমার সামনে বসলো। বসেই আমাকে দুম করে গালে কিস করলো। আমি গাল মুছতে মুছতে ওর দিকে তাকালাম। সে বললো, “ফাহাদ জানিস তোকে আমি কত ভালোবাসি?” - হ্যা জানি তো শাওন - তোকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা রে... - আমিও তো তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা... ওদিকে মোটু আমাদের রোমান্টিক কথাবার্তা শুনে ফুৎফুৎ করে কান্না শুরু করে দিছে। - আমার একটা কথা রাখবি ফাহাদ? - অবশ্যই রাখবো বল... - সত্যি তো? - তিন সত্যি! - তাইলে আমার Ass এ একটা কিস কর...kiss my ass...kiss my ass...হাহাহাহাহা মেজাজ গেল বিগড়ে, ইলেক্ট্রিক শক খেয়েও শায়েস্তা হয় নি সে। তবে ওকে বললাম , “আচ্ছা ঘুড়ে দাঁড়া!” ও ঘুড়ে দাঁড়ালে ধাম করে ওর Ass এ দিলাম লাত্থি। এবং এই প্রথম দেখলাম মোটু কাঁদা বাদ দিয়ে হোহোহো করে হাসছে। আবার আমি চক নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম। একটু পর কেউ আমার সামনে এসে বসলো। তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটা। মাথা নিচু করে ছক আঁকানোয় মন দিলাম। সে বলতে শুরু করলো, “তুমি আমাকে চিনতে পারছোনা ভাল, কিন্তু আজ আমি তোমার সাথে ক্রস সাইন খেলবো!” আমার মন খুশিতে ভরে গেলো যাক কাউকে পেলাম যে আমার সাথে খেলবে। আমি ক্রস দিচ্ছি, সে সাইন দিচ্ছে...এভাবে কয়েকটা গেইম ড্র হলো। এবার সে বললো, “আমি যা বলবো তাই দিবা এবার!” কথাটা শুনে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকলাম। মাথার কোথায় যেন আঘাত করলো কথাটা। সে যেখানে যেখানে বলছে আমি সেখানে সেখানে ক্রস দিচ্ছি। সে বলছে, “উপরের মাঝখানে দাও, ডানের কোনায় দাও, মাঝে খবরদার ক্রস দিবানা...” একটু পর সে বললো, “ফাহাদ তোমার মনে নেই? আমরা এভাবে খেলতাম? আমি জোর করে জিততাম?” আমি স্তব্ধ হয়ে তার খেলার দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমার হাত থেকে ঝটকা মেরে চকটা নিয়ে নিলো। এবার সে নিজে নিজে আমার চাল দিলো। এবং নিজে নিজে জিতে “ইয়াহুউউ” বলে চিৎকার দিলো! বললো দেখো ফাহাদ! আমার দিকে দেখো? তুমি ঠিক চিনতে পারবে আমায়, চেষ্টা করো প্লিজ একটু। আমার মাথায় তখন হাজারো খন্ড খন্ড টুকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবে এক এক করে টুকরা গুলো জোড়া লাগছে। সামনের কুয়াশা গুলো যেন সরে যাচ্ছে, একটা মেয়ের অবয়ব ভেসে আসছে। আমি যেন কুয়াশা গুলা হাত দিয়ে সরিয়ে মেয়েটার কাছে যাচ্ছি। টুকরা গুলো এক সাথে মিশে মেয়েটার চেহারায় পরিনত হচ্ছে এবং কুয়াশা সব সরে পরিষ্কার হচ্ছে আস্তে আস্তে। টুকরা গুলা সব জুড়ে গেলো এক এক করে। একটা মেয়ের অবয়ব ধারন করলো সেগুলা। নিমিষেই যেন তাকে চিনতে পারলাম আমি। আমি এক #ঝটকায় উঠে পরলাম। বন্ধ দরজার কাছে গিয়ে জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে ডাক্তার রেহানা কে ডাকতে শুরু করলাম এবং বললাম, “হাসি হাসি মহিলা আপনি কই? আমার গলায় আটকে থাকা স্মৃতি আজ ব্রেইনে এসেছে...আমি এই মেয়েটাকে চিনতে পেরেছি...এ হলো ইশরাত.. আমার ইশরাত #মীম...যাকে আমি ভালোবাসতাম!” লিখেছেনঃ FH Shihir
Posted on: Fri, 10 Oct 2014 12:18:27 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015