কিছু অসাধারণ শিক্ষকের - TopicsExpress



          

কিছু অসাধারণ শিক্ষকের অসাধারণ কাহিনী খুলনার বিশ্ব বরেণ্য মানুষ স্যার পি. সি. রায় প্রবীর বিশ্বাস:: জন্ম-পরিচয়: ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট বাংলা ১২৬৮ সালের ১৮ শ্রাবন অবিরাম বর্ষণের রাতে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র (পি. সি. রায়) সাবেক যশোর আর বর্তমান খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরে ছায়া ঢাকা ঐতিহ্যবাহী রাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম গৌরবে শুধু তার জন্মভূমি দক্ষিণ খুলনার অবহেলিত জনপদ পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামই ধন্য হয়নি বরং সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ তার জন্ম গৌরবে গৌরবাম্বিত। পি.সি. রায় ছিলেন একজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ। তিনি নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন এইভাবে “আমি বৈজ্ঞানিকের দলে বৈজ্ঞানিক, ব্যবসায়ী সমাজে ব্যবসায়ী, গ্রামক সেবকদের সাথে গ্রামসেবক আর অর্থনীতিবিদদের মহলে অর্থনীতিজ্ঞ’’। তার মায়ের নাম ভূবনমোহিনী দেবী এবং পিতা আরবী, ফার্সী ও ইংরেজী ভাষায় দক্ষ জমিদার হরিশচন্দ্র রায়। তার পরিবার ছিল বুনিয়াদি। ছোটবেলা থেকেই প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত তুখোড় এবং প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন। পিতা তাঁকে ডাকতেন ফুলু বলে। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, রসায়নবিদ, সমাজ সেবক, দার্শনিক, কবি, শিল্পী, সমবায় আন্দোলনের পুরোধা ও রাজনীতিবিদ। সিংহ হৃদয়ের এই মানুষটির জীবন ছিল নানান বৈচিত্রে ভরা। শিক্ষাজীবন: ছোটবেলায় মায়ের নিকট শিক্ষার হাতেখড়ি। এরপর পাঠশালা এবং পরে পিতার প্রতিষ্ঠিত এম.ই. স্কুলে ৯ বছর পর্যন্ত লেখাপড়া করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কোলকাতায় চলে যান। ১৮৭২ সালে কোলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৪ সালে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় গুরুতর রক্ত-আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ায় ২ বছর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য এ পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়াই তার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। এই সময় তিনি পিতা হরিশচন্দ্র রায়ের লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করে পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডারের সন্ধান পান। ১৮৭৬ সালে কেশব চন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠিত ‘আলবার্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৭৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বৃত্তি না পাওয়ায় তাঁর শিক্ষকরা নিরাশ হলেও তিনি মনে করতেন “পরীক্ষার নম্বরই মানুষের জীবনের শেষ কথা নয়, যারা পরীক্ষায় ভালো করেছে তারা অনেকেই পরবর্তী জীবনে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছে। জীবনের ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য স্থির লক্ষ্য ও সুষ্ঠুভাবে অধ্যাবসায়ের সঙ্গে শিক্ষালাভ অনেক বেশী ফলপ্রদ’’। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন ১৮৮০ সালে। সেখান থেকে ১৮৮১ সালে এফ এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে বি এ ভর্তি হন। ১৮৮২ সালে তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেয়ে ‘ক্যালিফোর্নিয়া’ নাম জাহাজে চড়ে প্রথমে ইংল্যান্ড ও পরে ট্রেনে চড়ে লন্ডন চলে যান এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এস.সি-তে ভর্ত্তি হন। ১৮৮৫ সালে ঐ কলেজে পড়ার সময় ‘সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে Essay on India নামে প্রবন্ধটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। এডিনবার্গ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বি.এস.সি পাশ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য গবেষণা শুরু করেন। কর্মজীবন: ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে আচার্য্য রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান কলেজে পালিত অধ্যাপক এবং ১৯৩৭ সাল থেকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমৃত্যু (Emiritius Professor) এমিরিটাস প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষক হিসেবে পড়ানোর সময় উদ্দীপক উপাখ্যান বর্ণনার মত করে সাহিত্যের প্রাঞ্জল ভাষায় রসায়নের বিষয়গুলি তিনি ছাত্রদের নিকট তুলে ধরতেন। আত্মচরিতে তিনি বলেছেন “প্রেসিডেন্সি কলেজে আমার ২৭ বছর অধ্যাপনা জীবনে আমি সচেতনভাবে প্রধানতঃ নিচের ক্লাসেই পড়াতাম। কুমোর যেমন কাদার ডেলাকে তার পচ্ছন্দমত আকার দিতে পারে হাই স্কুল থেকে সদ্য কলেজে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের তেমনি সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়। আমি কখনও কোন নির্বাচিত পাঠ্যবই অনুসরণ করে পাঠদান দিতাম না”। শিক্ষক হিসেবে তিনি বলতেন “সর্বত্র জয় অনুসন্ধান করিবে কিন্ত পুত্র ও শিষ্যের নিকট পরাজয় স্বীকার করিয়া সুখী হইবে। একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে কতটুকু ভালোবাসেন বা দিক নির্দেশনা দেন তার প্রমান পাওয়া যায় তাঁর কর্মকান্ডে। ফজলুল হক (শের-এ বাংলা) ৫/৬ দিন ক্লাসে না আসলে একদিন বিকালে তিনি তার বাসায় যান। ফজলুল হক তখনও খেলার মাঠে থাকায় তিনি তার জন্য অপেক্ষা করেন। ফজলুল হক ফিরে এসে স্যারকে দেখে তিনি কতক্ষণ এসেছেন জানতে চাইলে বলেন “তোমাদের হিসেবে এক ঘন্টা আর আমার হিসেবে ষাট মিনিট’’। অধ্যাপনাকালে তার প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে তিনি নিত্যনতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। তার উদ্যোগে তার নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীকালে ১৯০১ সালে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। এরপর ১৯৩৭ সালে ৭৫ বছর বয়সে তিনি যখন পরিপূর্ণ অবসর নিতে চাইলেন, তখন উপাচার্য্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে রসায়নের গবেষণাকর্মের সঙ্গে যুক্ত রাখেন। বিজ্ঞান কলেজে যোগ দিয়ে তিনি কলেজেরই দোতলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটি ঘরে থাকতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই ঘরে কাটিয়েছেন। ৭৫ বছর বয়সে তিনি পালিত অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পরও আট বছর বেঁচে ছিলেন। সেই সময়ও কেটেছে বিজ্ঞান কলেজের ওই ছোট কক্ষে, যেখানে ছিল শুধুএকটি খাটিয়া, দুটি চেয়ার, খাবার ছোট একটি টেবিল, একটি পড়ার টেবিল ও একটি আলনা। অবদান: নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। কলেজে সব সময় ৮-১০ জন ছাত্র গবেষণাকাজের জন্য তাঁর কাছে থাকতেন। তাঁর প্রথম মৌলিক গবেষণা খাবারে ভেজাল নির্ণয়ের রাসায়নিক পদ্ধতি উদ্ভাবন-সংক্রান্ত। ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে।এ ছাড়া পারদ-সংক্রান্ত ১১টি মিশ্র ধাতু আবিষ্কার করে তিনি রসায়নজগতে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। গবাদি পশুর হাড় পুড়িয়ে তাতে সালফিউরিক এসিড যোগ করে তিনি সুপার ফসফেট অব লাইম তৈরি করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিল্পায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন। সম্মাননায় ভূষিত: ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হিসেবে তৃতীয়বারের মত তিনি ইংল্যান্ড যান এবং সেখান থেকেই সি আই ই লাভ করেন। ১৯১১ সালে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী দেয়। এছাড়া ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট পান। ১৯১২ সালে লন্ডনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ড. প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারীকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে পাঠান। তার গবেষণা পত্রের জন্য স্যার উইলিয়াম রামসে তাকে অভিনন্দন জানান। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড.এইচ. ভেলি স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন” তিনি (অধ্যাপক রায়) সেই আর্যজাতির খ্যাতনামা প্রতিনিধি- যে জাতি সভ্যতার উচ্চস্তরে আরোহণ করতঃ এমন এক যুগে বহু রাসায়নিক সত্যের আবিস্কার করিয়াছিলেন, যখন এদেশ (ইংল্যান্ড) অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অধ্যাপক রায় এ্যামোনিয়াম নাইট্রাইট সম্মন্ধে যে সত্য প্রমান করিয়াছেন তাহা প্রচলিত মতবাদের বিরোধী। একই বছর স্যার পি.সি রায় ব্রিটিশ সরকার কতৃক ÒCompanion of the Indian Empire (C.I.E.)Ó উপাধিতে ভূষিত হন এবং ১৯১৯ সালে “নাইট” উপাধি দিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে সম্মানিত করেন। এর আগে ১৮৮৭ সালে তিনি ডিএসসি উপাধি পান। পরবর্তীতে ডাচ একাডেমী লন্ডনের রসায়ন সমিতি তাকে অনারারী ফেলো নির্বাচিত করেন। দেশ প্রেমিক: আচার্য্য দেবের দেশপ্রেম তাকে ইউরোপে থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। দেশে এসেও তিনি তার সেই স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ক্লাসে বাংলায় লেকচার দিতেন। বাংলা ভাষা তার অস্তিত্বের সাথে মিশে ছিল। তার বাচনভঙ্গী ছিল অসাধারণ যার দ্বারা তিনি ছাত্রদের মন জয় করে নিতেন খুব সহজেই। তিনি সকল ক্ষেত্রেই ছিলেন উদারপন্থী। মানবকল্যাণে নিজের অর্জিত সব অর্থ অকাতরে দান করেছেন। এছাড়া মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার আন্দোলন করেছেন তিনি। অসাম্প্রদায়িকতা: শিক্ষক হিসেবে তার নিরপেক্ষতা ও ধর্ম বিষয়ে উদারতার প্রমান পাওয়া যায়। তিনি অসাম্প্রদায়িকই শুধু ছিলেন না বরং সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার মূলোৎপাটনের জন্যও চেষ্টা করেছেন সব সময়। ১৯১৫ সালে কুদরত-ই খুদা (একমাত্র মুসলিম ছাত্র) এম.এস.সি তে (রসায়ন) প্রথম শ্রেণী পাওয়ায় কয়েক জন হিন্দু শিক্ষক তাকে অনুরোধ করেন প্রথম শ্রেণী না দেওয়ার জন্য, কিন্তু আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রস্তাবে সম্মত হন নি। অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুদরত-এ-খুদাকে প্রথম বিভাগ দেন। বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী: বৃটিশ গোয়েন্দা দপ্তরে স্যার পি. সি. রায়ের নাম লেখা ছিল “বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী”। ১৯১৯ সালে ১৮ জানুয়ারি রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে টাউন হলে চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে এক সভা হয়। স্যার পি. সি. রায় সেখানে যোগ দিয়ে বলেন ‘আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারেই আমার কাজ, কিন্ত এমন সময় আসে যখন বৈজ্ঞানিককেও দেশের আহবানে সাড়া দিতে হয়। আমি অনিষ্টকর এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ করিতেছি। গবেষণা: ১৮৮৭ সালে ডক্টরেট ডিগ্রিলাভের পর বিজ্ঞানের গবেষণায় স্যার পি. সি. রায়ের যে যাত্রা শুরু হয়েছিলো, ১৮৯৫ সালে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিস্কারের ফলে সফল বিজ্ঞানী হিসেবে তার স্বীকৃতি মেলে। এরপরে ১২টি যৌগিক লবন ও ৫টি থায়োষ্টার আবিস্কার এবং ১৪৫টি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস লিখে স্যার পি. সি. রায় ১২০০ শতাব্দী এবং তারও পূর্বের ভারতবর্ষের রসায়ন চর্চার ইতিহাস তুলে ধরে প্রমান করেন যখন ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ গাছের ছাল বা বাকল পরে লজ্জা নিবারণ করতো, তখন ভারতবর্ষের মানুষ পারদের ব্যবহার এবং পাতন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত ছিলো। তার গবেষণার বিষয় ছিলো “অন পিরিয়ডিক ক্লাসিফিকেশন অফ এলিমেন্টস’’। দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি এই গবেষণা সমাপ্ত করেন এবং ১৮৮৭ সালে পিএইচডি ও ডিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। তার গবেষণাপত্রটি শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হওয়ায় তাকে ১০০ পাউন্ড ‘হোপ প্রাইজ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পরে গিলক্রাইষ্ট কর্তৃক তাঁকে আরও ৫০ পাউন্ড দেওয়া হয়। ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার পরও তিনি আরও এক বছর তিনি “অন এ্যানালিসিস অফ ডাবল সালফেটস এন্ড দেয়ার কৃস্টাল বিহেভিয়ার” বিষয়ে গবেষণা করেন। গবেষণা কার্যে সুনামের জন্য তিনি এডিনবার্গ বিশ্বদ্যিালয়ের রসায়ন সমিতির সহ-সভাপতি নির্বাজিত হন। বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী: আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একই প্রতিষ্ঠানের, একই সময়কার শিক্ষক ও বিজ্ঞানী ছিলেন। কিন্ত স্যার পি.সি রায়ের ছাত্ররাই পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন, সে কারণেই স্যার পি.সি. রায়কে “বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী” বলা হত। তার কৃতি ছাত্রদের মধ্যে ড. মেঘনাথ সাহা, হেমেন্দ্র কুমার সেন, বিমান বিহারী দে, ড. কুদরত-ই-খুদা, প্রিয়দা রঞ্জন রায়, জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায়, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপধ্যায়, রাজেন্দ্র লাল দে, প্রফুল্ল কুমার বসু, বীরেশ চন্দ্র গুহ, অসীমা চ্যাটার্জী প্রমূখ। বিদ্যুৎসাহী পি. সি. রায়: চারটি গ্রামের নাম মিলে ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী তিনি দক্ষিণ বাংলায় প্রথম আর, কে, বি, কে হরিশচন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন। পিতার নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি ও তার ভাই নলিনী কান্ত রায় চৌধুরী -রাড়ুলী, বাকা, কাটিপাড়া, খেসরা গ্রামের বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তিদের এক সভা থেকে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন। একই স্থানে তাঁর পিতা উপমহাদেশে নারী শিক্ষা উন্নয়নকল্পে ভূবনমোহিনীর নামে ১৮৫০ সালে রাড়ুলী গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আজও প্রতিষ্ঠানগুলো স্ব মহিমায় এগিয়ে চলছে। ১৯১৮ সালে বাগেরহাটে তার অর্থানুকুল্যে বাগেরহাট কলেজ স্থাপিত হয় যা পরে স্যার পি.সি. রায়ের আপত্তি সত্বেও তারই ছাত্র শের-এ-বাংলা ফজলুল হকের প্রস্তাবে পি.সি. কলেজ নামে পরিচিতি পায়। এছাড়া সাতক্ষীরা চম্পাপুল স্কুলও স্যার পি.সি. রায়ের অর্থানুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু তাই নয় বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে অনুদান নিয়ে নৈহাটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন। এগুলো বাদেও খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ততোধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গৌরব উজ্জ্বলে এগিয়ে চলেছে। উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পি.সি. রায় ১৯২৬ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত এক লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা দান করেন। খুলনার দৌলতপুর বিএল কলেজ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ, বরিশালে অশ্বর্ণী কুমার ইনস্টিটিউশন, যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে তিনি অর্থনৈতিক অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান কলেজের শেষের ১৫ বছরের বেতন দুই লক্ষ ৪০ হাজার টাকার সম্পূর্ণ অংশ ঐ কলেজের রসায়নের বিশুদ্ধ ও ফলিত শাখার উন্নয়নে ব্যয় করেন। দেশ বিদেশে তার স্থাপিত প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান সাধনায় স্মরণ করছে সর্বস্তরের মানুষ। সমবায় আন্দোলন: স্যার পি. সি. রায় বাঙালি জাতিচেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং দেশের সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তিনি ১৮৯২ সালে বেঙ্গল কেমিক্যাল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরর্তীতে “বেঙ্গল কেমিকেল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কাস লি: নামে ১৯০১ সালের ১২ এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে নিজ জেলা খুলনার মানুষের কমর্সংস্থানের কথা চিন্তা করে সমবায় ভিত্তিক “প্রফুল্ল চন্দ্র কটন টেক্সটাইল মিলস লিঃ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ধর্মগোলা ও সমবায় ভান্ডার স্থাপনের পরামর্শ দেন। ১৯১৭ সালে বেঙ্গল কেমিক্যাল সমবায় সমিতি, ১৯১৮ সালে বঙ্গবাসী কলেজ কো-অপারেটিভ স্টোর এন্ড কেন্টিন, ১৯২১ বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটিসহ অনেক সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজ সংস্কারে মানবতাবোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। তদানিন্তন সময়ে পল্লী মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন। ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ (সমবায়) ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। পি.সি. রায় ১৮৯২ সালে কলকাতার মানিকতলায় মাত্র ৮শ’ টাকা পুঁজিনিয়ে যে বেঙ্গল কেমিক্যাল এ্যান্ড র্ফামাসিউটিক্যাল নামের ঔষধ শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। পি. সি. রায় ও রবীন্দ্রনাথ: ১৯৩২ সালে স্যার পি.সি. রায়ের সত্তরতম জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সভাপতির ভাষণে কবিগুরু বলেন ‘আমরা দুজনে সহযাত্রী, কালের তরীতে আমরা প্রায় এক ঘাটে এসে পৌঁছেছি। পরে কবিগুরু আচার্য্যদেবের হাতে একটি তাম্রফলক উপহার দেন। কবির স্বরচিত দুটি ছত্র তাতে উৎকীর্ণ ছিলো- প্রেম রসায়নে ওগো সর্বজনপ্রিয় করিলে বিশ্বের জনে আপন আত্মীয়। উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথের এবং আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্ম একই বছরে; আবার মৃত্যুর পর যেন দু’জনেই একই জায়গায় নিমতলা শ্মশানের পূর্ব-পশ্চিমে মিলিত হলেন মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে। পি. সি. রায় ও নজরুল: ১৯২৫ সালে বাঁকুড়া জেলা কংগ্রেসের রাজনৈতিক সম্মেলনে পি. সি. রায় সভাপতিত্ব করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তখন অস্পৃশ্যতা বর্জন ও জাতিভেদ বিরোধ সভায় তাঁর পার্শ্বে থাকেতেন। এই সকল সভায় তিনি উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসেবে গাইতেন ‘জাতির নামে বজ্জাতি বস’। এছাড়া ১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর এলবার্ট হলে নজরুল ইসলামকে সোনার দোয়াত কলম উপহার দিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। ঐ সভায় সভাপতির ভাষণে পি. সি. রায় বলেছিলেন, ‘‘আমরা আগামী সংগ্রামে কবি নজরুলের সঙ্গীত কন্ঠে ধারণ করিয়া শ্রীমান সুভাষের মতো তরুণ নেতাদের অনুসরণ করিবো’’। পি. সি. রায় ও গান্ধীজি: ১৯০১ সালের ডিসেম্বরে গান্ধীজি মহামতি গোখলের সাথে কোলকাতায় এলে, তিনি তার সাথে স্যার পি.সি. রায়ের পরিচয় করিয়ে দেন। গান্ধীজির মুখে প্রবাসী ভারতীয়দের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে কোলকাতাবাসীদের এবিষয়ে জানানোর জন্য ১৯০২ সালের ১৯ জানুয়ারি কোলকাতার আর্লবাট হলে (বর্তমান কফি হাউজ) এক সভার ব্যবস্থা করেন। তখনকার দিনে এই সভা এতই সফল হয়েছিলো কোলকাতার সকল সংবাদপত্র এ বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। গান্ধীজির অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন ও মানুষের জন্য তার মমত্ববোধ স্যার পি.সি. রায়ের জীবনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিলো বলেই তিনি নিজেকে কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। এরপর ১৯২৫ সালের জুনে বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার তালার সৈয়দ জালাল উদ্দীন হাসেমী ও ডুমুরিয়ার মাওলানা আহম্মদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলন প্রচারে গান্ধীজি খুলনায় এলে স্যার পি. সি. রায় স্টিমার ঘাঠে তাদের স্বাগত জানান। স্যার পি.সি. রায় ছিলেন সম্বর্ধন কমিটির সভাপতি। ১৯২৫ সালে কোকনাদ কংগ্রেসের কনফারেন্সে সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আলীর অনুপস্থিতে কিছু সময় স্যার পি.সি. রায় সভাপতিত্ব করেন। একই সময় পাইকগাছা উপজেলার কাটিপাড়ায় “ভারত সেবাশ্রম” নামে একটা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে নিজ জন্মভূমির এলাকার মানুষকে চরকায় সুতো কাটার মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। অবশ্য বিজ্ঞান কলেজের বারান্দায় একটা চরকা স্থাপন করে তিনি নিজেও সুতা কাটতেন। পি.সি রায় ও মাইকেল মধুসুদন: অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক বাংলা সাহিত্যের এক অবিশ্মরণীয় প্রতিভা সম্পন্ন কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত। আর এই কবির মামার বাড়ী পাইকগাছার রাড়ুলীতেই। জীবদ্দশায় তিনি কেশবপুরের সাগরদাঁড়ী থেকে তালা হয়ে অনেকবার রাড়–লিতে গিয়েছেন। শুধু তাই নয় পি. সি. রায়ের জন্মের বছর বাংলার ‘মিল্টন’ মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর অমর সাহিত্যকীর্তি ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য প্রকাশ করেন। সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাব তাঁর বসত ভিটা: বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী রসায়নবিদ স্যার পি.সি. রায় ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অবিবাহিত। দেশ-বিদেশে তার প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আজও মানব সেবা দিচ্ছে। অথচ তাঁর ভিটা-বাড়ীর ভবনগুলো আজও অবহেলিত। সংস্কারের অভাবে ধ্বসে পড়ছে বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানীর জন্মভিটা বাড়ীর বিভিন্ন স্থাপনা, নেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, দিন দিন সেগুলো শ্রীহীন হচ্ছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় বিভিন্ন ভাবে অপচেষ্টা চলে পি.সি. রায়ের জš§ভূমি স্মৃতি চিহ্ন বসতভিটা দখলের। সর্বশেষ ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্মৃতিচিহ্ন বসতভিটা দখল নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এতে ফুসে ওঠে পি.সি. রায় প্রেমী, এলাকার সচেতন মানুষসহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা। কঠোর আন্দোলনের মুখেও সে সময় রাতের অন্ধকারে ঐ স্থানের মূল্যবান সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যায় কথিত দখলদাররা। সংগ্রহশালা দখলের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা: পি.সি. রায়ের সংগ্রহশালা ও জাদুঘর দখলের বিরুদ্ধে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। খুলনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অভিযোগ উঠেছিল, পল্লী চিকিৎসক আকামত গাজী ও তাঁর লোকজন পি.সি. রায়ের সংগ্রহশালা ও জাদুুঘরের মূল্যবান সামগ্রীভর্তি আলমারি সরিয়ে ফেলে ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে খুলনার জেলা প্রশাসন ওই দখলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে খুলনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত বলেছিলেন, উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই দখলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। জানা যায়, এই উদ্যোগ নেওয়ার পিছনে খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক এন এম জিয়াউল আলমের বড় ভূমিকা ছিল। বিজ্ঞানী পি.সি. রায়ের বাড়ী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী: পাইকগাছা উপজেলা থেকে এখনও বিছিন্ন ফাদার অব নাইট্রাইট খ্যাত প্রথিতযশা বিজ্ঞানী স্যার পি.সি. রায়ের জন্মস্থান রাড়ুলী গ্রামটি আজও অবহেলিত। সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য বোয়ালিয়ায় কপোতাক্ষ নদের উপর আজও নির্মিত হয়নি ব্রীজটি, কবে হবে তা কেউ বলতে পারেনা। সংরক্ষণে এখনই পদক্ষেপ না নিলে এক সময় এ ক্ষণজন্মা মানুষটির জন্মস্মৃতিমাখা স্থাপনাগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। এলাকাবাসীর দাবী মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকীতে মন্ত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো সাগড়দাঁড়ি সেভাবেই বরেণ্য পি.সি. রায়ের জন্মাবার্ষিকী ধুমধামের সাথে পালিত হোক এবং রাড়ুলী পি.সি. রায়ের জন্মভূমিতে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। বিদায়: কালের পরিবর্তনে সকলকেই এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। তেমনি পি.সি রায়ের জীবনেও আসে সেই অন্তিম কাল। যেসব ছেলে তাঁর কাছে থাকত, তাদেরই একজনের হাতে মাথা রেখে তিনি ১৯৪৪ সালে ১৬জুন কোন উত্তরসূরী না রেখে ৮৩ বছরের জীবনাবসান ঘটে এই বিজ্ঞানীর। শেষ জীবনে তাঁর স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছিলো, স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতেন না, এমন কি নিজের বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে পারতেন না। তার মৃত্যুর খবর পেয়েই শের-এ-বাংলা ফজলুল হক, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন, শিক্ষামন্ত্রী নাজিম উদ্দীন খান, সিভিল সাপ্লাই মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি ও অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা ছুটে যান তাঁকে শেষ বারের জন্য দেখার জন্য।
Posted on: Thu, 05 Sep 2013 05:25:01 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015