কিছু কিছু - TopicsExpress



          

কিছু কিছু মানুষ,গোষ্ঠী,সম্প্রদায়ও জ্ঞানপাপীরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অপপ্রচার করে থাকে যে বেদের অনেক অংশ হারিয়ে গেছে বা পরিবর্তীত হয়ে গেছে। এবং এই অপ্রচার করেই তারা নিজেদের কথিত সৃষ্টিকর্তা প্রাপ্ত গ্রন্থ হিসেবে একখানা গ্রন্থের প্রচার করে থাকে। এই অপ্রচারের মাধ্যমে বেদজ্ঞানহীন সহজ সরল মানুষদের ধোঁকা দিয়ে বা বোকা বানিয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের ভুক্ত করাই হচ্ছে এর আসল ও একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু আসল সত্যটা হচ্ছে পবিত্র বেদ পরিবর্তনতো দূরের কথা একটা শব্দ পর্যন্ত এদিক ওদিক হয়নি। নিশ্চয়ই খুবই কৌতূহল বোধ করেছেন যে কিভাবে এটা সম্ভব। আসুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে বেদ এসেছিল,এর সময়কাল কি,কে বা কারে এটি পান এবং কিভাবে এর প্রচার ও সংরক্ষন হয়। বেদ মানবসৃষ্টির শুরুতে মানবকল্যানে ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত।আমরা জানি যে সৃষ্টিচক্র মানবন্তর এ বিভক্ত। আমরা বর্তমানে ষষ্ঠ মানবন্তরে আছি।প্রতি মানবন্তরের শুরুতে মানবজাতির বংশবিস্তারের উদ্দেশ্যে একজন মনু কে পাঠান হয়। প্রথম মানবন্তরের মনুর নাম ছিল স্বয়ম্ভুবা। বর্তমান মনুর নাম বৈবস্বত মনু।বৈবস্বত মনুর স্ত্রীর নাম শ্রদ্ধাদেবী।এছাড়া মনুর পাশাপাশি ব্রক্ষ্ম ১০ মানসপুত্র প্রেরন করেন যার প্রথম সাতজন কে বলা হয় সপ্তঋষি। বর্তমান মানবন্তরের সপ্তঋষিরা হলেন অঙ্গিরা,অত্রি,বশিষ্ঠ ভরদ্বাজ,কশ্যপ,বিশ্বা মিত্র জমদগ্নি [Manusamhita 1/35,Br. Up 2/2/6,jaiminiya brahmana 2/21-22] দশমানসপুত্রের অন্যরা হলেন আদিত্য,বায়ু,ভৃগু। এদের মধ্যে চারজন (অন্গিরা,আদিত্যঅথর্বান,অত্রি) প্রথম বেদ মন্ত্র দর্শন করেন [Shatpatha Brahmana 11/5/2/3] এরপর অন্যান্য অনেক ঋষি বেদজ্ঞান পান।তবে অন্গিরা ও অথর্বান ই বেদের অধিকাংশ দর্শন করেন।এদিকে যজুর্বেদ ধ্যনপ্রাপ্ত হন ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য।এরপর মনু ও তার বংশধর কর্তৃক এবং ঋষিদের গোত্রসমুহের মাধ্যমে তা প্রচারও সংরক্ষিত হয়।যেমন অন্গিরা এর গোত্রের নাম অন্গিরাসা,অথর্বান এর গোত্রের নাম অথর্বানা প্রভৃতি । মহাত্মা গৌতম বুদ্ধ নিজেও অন্গিরাসা গোত্রের বংশধর ছিলেন। [সূত্রঃ The Life of Buddha As Legend And history by Edward Joseph Thomas] এজন্যই বলা হয়েছে রিশ রিষ্যতি প্রপ্নোতি সর্বম মন্ত্রং জ্ঞানেন পশ্যতি অর্থাত্ ঋষিরা ধ্যনের মাধ্যমে পবিত্র মন্ত্ররুপ সকল জ্ঞান অর্জন করেন। সংরক্ষন প্রনালীঃ বেদের সংরক্ষন ও প্রচারের জন্য ঋষিদের পরিবার ও বংশধরদের ১১৩১টি শাখা ছিল যারা বেদ মুখস্ত অসাধারন কিছু Scientific & mathmetical উপায়ে। উপায়গুলোকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়। পদ,বাক্য,জাত,মালা, শিখা,রেখা,ধ্বজ,দ্বন্দ,রথ, ঘন। প্রতিটি প্রনালীকে পাঠ পদ্ধতি বলা হয় এবং এদের আয়ত্তকারীদের পাঠিন বলা হয়। এদের মধ্যে ঘনপাঠ পদ্ধতি সবচেয়ে জটিলতম ও বিজ্ঞানসম্মত এবং আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়। একজনরে দেখে নেয়া যাক কিছু নির্বাচিত পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবরন। পদপাঠ এ পদ্ধতিতে প্রতিটি পদকে আলাদা করে ১। এরমপদ্ধতিতে উচ্চারন করে মুখস্ত করা হয়। ঠিক নিম্নলিখিত রীতিতে কখ খগ গঘ... একা বেদ উচ্চারন এর দুটি মুল নিয়ম এর মধ্যে একটি(অপরটি হল সংহিতা বা বাক্যপাঠ) পদপাঠিনদের অধিকাংশ ই দক্ষিন ভারতের অধিবাসী। সংহিতা বা বাক্যপাঠ পদ্ধতি একক অর্থের একাধিক পদকে সন্ধির মাধ্যমে উচ্চারন এবং মুখস্ত করা হয়।যেমন যত্ ইদম উপাস্যতে(যাকে লোক উপাসনা করে) এর সংহিতা বা বাক্য রুপ হল যদিদমুপাসতে।এটা বেদ উচ্চারনের দুটি সঠিক নিয়মের একটি। জাতপাঠ এক্ষেত্রে প্রথম পদ পরের পদের সাথে আবার পরের পদ পুনরায় প্রথম পদের সাথে যুক্ত করে মুখস্ত করা হয়।ঠিক এভাবে- কখ খক কখ খগ গখ খগ। ধ্বজপাঠ ধরা যাক কোন মন্ত্রে ১ থেকে n সংখ্যক শব্দ আছে।তাহলে এদের মুখস্ত করা হবে এভাবে- ১২(n-1)n,২৩(n-3)(n-2),... (n-1)n১২ ঘন পাঠ পদ্ধতি এবার সবচেয়ে জটিল পাঠ পদ্ধতি আর তা হল ঘন পাঠ পদ্ধতি ।বিশেষজ্ঞদের মতে এই পাঠ পদ্ধতি বেদে পরিবর্তন হওয়া তো দুরের কথা বেদ এর প্রতিটি শব্দের উচ্চারন ও স্বরগ্রাম পর্যন্ত অবিকৃত রেখেছে। এই ঘনপাঠ এর আবার ৪টি আলাদা ধরন আছে।ধরা যাক একটি বাক্যে ১,২,৩,৪,৫ এই শব্দগুলো আছে। সেই ক্ষেত্রে সংক্ষেপে এটা নিম্নলিখিত ধরনের- ১২ ২১ ১২৩ ৩১২ ১২৩ ২৩ ৩২ ২৩৪ ৪৩২ ২৩৪ ৩৪ ৪৩ ৩৪৫ ৫৪৩ ৩৪৫ ৪৫ ৫৪ ৪৫ এই পদ্ধতিতে একবার মন্ত্রটি পড়লে প্রকারান্তরে সেটি ১৩ বার পড়া হয়ে যেত।তাই একজন ঘনপাঠিন কমপক্ষে ১৩ বার বেদ পড়ে থাকেন। এই অভুতপূর্ব সংরক্ষন এর কারনেই ২০০৩ সালের ৭ ই নভেম্বর UNESCO বেদ সংরক্ষন এর এই পদ্ধতিকে Masterpiece of the oral and intangible heritage of humanity হিসেবে ঘোষনা করে এবং The intangible cultural heritage of humanity হিসেবে ঘোষনা করেছে। উক্ত ঘোষনায় ইউনেস্কো ডিরেক্টর জেনারেল Koichiro Matsuura বলেন,আধুনিক বিশ্বায়ন ও শিল্পায়ন এর যুগে যেখানে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ক্রমাগত চাপের শিকার সেখানে এই অভূতপূর্ব মৌখিক সংরক্ষন এর সংস্কৃতির গুরুত্ব অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ন। Macdonell এ সম্বন্ধে তার History of sanskrit literature(page no 50) তে বলেন- এ রকম পরিবর্তিত হবার ক্ষীনতম সম্ভাবনা পর্যন্ত না থাকাটা পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র উদাহরন Keigi তার ঋগবেদভাষ্যের (Page 22) তে বলেন এই পর্যন্ত বেদ এত যত্নের সাথে সংরক্ষিত হয়েছে যার সাথে আর কোন বইয়ের ই তুলতা দেয়া যায়না। বেঃ অঃ বাঃ থেকে সংকলিত।
Posted on: Mon, 06 Oct 2014 08:31:23 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015