খাটের এক কোনায় বসে আছি - TopicsExpress



          

খাটের এক কোনায় বসে আছি আমি। এভাবে বসে থাকার কথা না কিন্তু বসে আছি। আমারই থাকার ঘর। অথচ এমন ভাবে বাসে আছি যেন অপরিচিত কারো ঘরে ভুল করে ঢুকে পরেছি। অনুমতি না নিয়ে অপরিচিত কারো ঘরে ঢুকে পরলে শাস্তি দেওয়ার নিয়ম আছে কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তিটা হল মাথা নিচু করে সারারাত ঠিক এখানটাতেই বসে থাকা। নো নরন চরন। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। আমার চোখ মেঝেতে টিকটিকিটার দিকে স্থির হয়ে আছে। টিকটিকির লেজ নেই। লেজ হীন টিকটিকি আর আমি সম্মোহীতের মত একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি। তবে কে কাকে সম্মোহীত করেছে এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। টিকটিকির কালো ছোট ছোট চোখ দুটোর জন্য দেখতে অসম্ভব কিউট লাগছে। আমি ছারাও এই ঘরে আরো একজন আছে। খাটের ঠিক মাঝখানটায় পরীর মত মেয়েটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। ঘরে ঢুকে একবার তাকিয়েছিলাম এরপর সাহস করে আর তাকাতে পরিনি। লাল শারিতে অপূর্ব লাগছিল দেখতে। কবি সাহিত্যিক হলে হয়ত দু একটা লাইন মনে মনে লিখে ফেলতে পারতাম। আমি কবি সাহিত্যিক নই। খুবই সাধারণ একজন মানুষ। সাধারণ মানুষের কাজ হচ্ছে সুন্দর কিছুর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা। আমি হা করে তাকাতে পারছিনা। সাধারণ মানুষের পাশা পাশি আমার আরেকটা যোগ্যটা হচ্ছে আমি খুবই নিম্ন শ্রেণীর ভিতু মানুষ। ভিতু মানুষের সরাসরি কারো দিকে তাকানোর নিয়ম নেই। অদ্ভুত একটা কাজ করে ফেলেছি। একটা কাগজে লিখেছিলাম "আমার সাথে কথা বলবে?"। কাগজটা এখন ওর হাতে। ভাবছি কাজটা বোকার মত হয়ে গেল কিনা। আস্তে করে মাথাটা ওপরে নিচে করাতে বুঝতে পারলাম বলবে। আমার এই পাগলামোপনাকে সে সহজ ভাবেই নিয়েছে। আরেকটা কাগজে লিখলাম "আমি এখনো তোমার নামটা জানি না।" চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকানোর কথা। তাকাচ্ছে না। ইশারায় বোঝাল কাগজ আর কলম লাগবে। -রিয়া। -আমার কাজগুলো কি তোমার অদ্ভুত লাগছে? -না। -না কেন? -আমি আপনার সম্পর্কে আগে থেকেই জানি। -কি জান? আর আপনি আপনি করে বলবা না। -আপনি খুব ভিতু। সরাসরি ভিতু বলায় আমার রাগ লাগার কথা। আমার কেন যেন রাগ হচ্ছেনা, এটা ভেবে ভাল লাগছে মেয়েটা কিছুটা হলেও আমাকে বুঝতে পারছে। -রাগ করেছেন? -না, রাগ করিনি তবে করব ভাবছি। -কেন? -তুমি যদি আপনি আপনি করতেই থাক। -কি বলব? -তুমি বলবা। -তুই করে বলি? -না! মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় কি করে! আসলেই কি ওর হাসি এত সুন্দর। নাকি আমার মনের ভ্রম। কাউকে ভাল লাগলে তার সব কিছুই ভাল লাগতে শুরু করে। সে যদি শব্দ করে নাক ঝারে তাতেও ভাল লাগা কাজ করে। আহা কি সুন্দর করে নাক ঝারছে মেয়েটা! এর মানে কি এটাই ওকে আমার ভাল লাগতে শুরু করেছে? -আমি ভিতু এটা তোমাকে কে বলেছে? -কেউ বলেনি, আমি বুঝে নিয়েছি। -কিভাবে বুঝলে? -আপনি লুকিয়ে আমাকে দেখার চেষ্টা করছিলেন? -লুকিয়ে দেখলেই কেউ ভিতু হয়ে যায়না। -আপনি রেগে যাচ্ছেন? -না রাগছিনা, পিচ্চি একটা মেয়ের কথায় রাগার কোন কারণ নেই। -আপি পিচ্চি মেয়ে না। -দেখে তো বুড়ির মত লাগছে না। রাগ রাগ ভাব নিয়ে তাকাচ্ছে। রাগ ভাবটা ঠিক ভাবে ফুটে উঠছে না। ওর চোখ দুটোতে রাগের কোন চিন্হ নেই। এই একটু আগেও বুঝিনি ওর চোখ জোড়া অসম্ভব রকম সুন্দর। একেবারে দিঘীর সচ্ছ জলের মত। একবার তাকিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার পড়ে নেওয়া যায়। পরিশিষ্টঃ বারান্দায় পাশা পাশি বসে আছি দুজন। সদ্য কৈশোর পেরোনো চাঁদটা রাতের আধারটাকে আলোর বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। প্রথম দিককার আঢ়ষ্টতার লেশ মাত্র নেই এখন। ইচ্ছে করলেই আমি ওর দিকে তাকাতে পারি, হাতটা ছুয়ে দিতে পারি। অচেনা মিষ্টি একটা সুবাশ আসছে ওর চুল থেকে। অদ্ভুত এক মাদকতা আছে তাতে। মনে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে ওর চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রানটা নিলেও তৃষ্ণা মিটবে না। আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই কিনা ওর মাথাটা আমার কাঁধে রাখল। নিজেকে সুখি ভাবার জন্য আর কিছুকি প্রয়োজন আছে?
Posted on: Sun, 15 Sep 2013 18:13:36 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015