গাজীপুরে একটি ইসলামিক - TopicsExpress



          

গাজীপুরে একটি ইসলামিক বিশ্বমাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসাটির নাম যদিও বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়, তবে সেটি কোনমতেই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। আমার কিছু বন্ধু সেখানে পড়ালেখা করতো, সেখানে গিয়েছিলাম কয়েকবার। দেখেছিলাম, সেই বিশ্বমাদ্রাসাটিতে কোন বিধর্মীর পড়ালেখার সুযোগ নেই, কোন নারীর পড়ালেখার সুযোগ নেই। এখন কী অবস্থা আমি জানি না, তবে সে সময় ছাত্রদের রীতিমত নামাজ রোজা ইত্যাদির জন্য বাধ্য করার চেষ্টাও হতো। শুধু মুসলমান পুরুষের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না, বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্টই এর সাথে যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় হতে হয় মুক্ত, ধর্মীয় এবং লৈঙ্গিকভাবে যেখানে ছাত্রদের বিবেচনা করা হয়, সেখানে শিক্ষার্থীরা আসলে কী শিখবে? কোনকিছুর পক্ষে কথা বলার অধিকার থাকলে বিপক্ষে কথা বলার অধিকারটুকুও নিশ্চিত করতে হবে। এটা বাক-স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত। পৃথিবীর সকলের চিন্তার কাঠামো একই রকম হবে, এমন দাবী স্বৈরতান্ত্রিক, বাক-স্বাধীনতা পরিপন্থী। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের পক্ষে কথা বলা হলে বিপক্ষেও কথা বলা যাবে। তাতে কোন সমস্যা নেই। যারা এতে জ্বলে পুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছেন, অশ্লীল গালাগালিতে নিউজফিড ভাসিয়ে দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হচ্ছে, বিরোধিতার অধিকার যদি না থাকে তবে আপনারও পক্ষাবলম্বনের কোন অধিকার নেই। বরঞ্চ বিরোধিতাই আমাদের চিন্তাভাবনার কাঠামো শুদ্ধ করবে, নতুবা সকলেই একই ভাষাতে কথা বলতে থাকলে চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ হয়ে উঠতে থাকবে। আমরা অন্তত ভেড়ার পালের মত লক্ষ লক্ষ ভেড়া চাই না। বরঞ্চ বিরোধিতা চলুক, কঠোর কঠিন সমালোচনা চলুক, তাও সেগুলো স্বাধীন চিন্তাপ্রসূত হোক। বন্ধু আনোয়ার হোসেন ফার্মারের উপরে দলবদ্ধ আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা সেই কিশোর বয়স থেকেই পড়ি। তখন এতকিছু বুঝতাম না, তবে পরবর্তীতে কিছু বিদেশি সায়েন্স ফিকশন পড়ার কারণে বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছিলাম বটে। বিদেশি সায়েন্স ফিকশন পড়া শুরু করার পরে বোঝা গেল, তিনি অবলীলায় বেশ কিছু বিদেশি ভাষার লেখকের লেখা অনুবাদ করে বই হিসেবে প্রকাশ করেছেন, নামও উল্লেখ করেন নি। অনেক সময় কয়েকটি বিদেশি সায়েন্স ফিকশন একত্র করে একটা বই লিখেছেন। কয়েকটা সায়েন্স ফিকশন তো প্রায় হুবহু কপি, শুধু সেগুলো বাঙলাদেশের উপযোগী করে লেখা। কিন্তু তাতে বোধকরি মুহাম্মদ জাফর ইকবালের গুরুত্ব কমে না, তিনি খাটোও হন না। এই দেশের শিশুকিশোরদের বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য। কোন মানুষই যেহেতু ফেরেশতা নয়, তাই ভুল ত্রুটিহীন মহামানব যারা কারো মধ্যে খোঁজেন তারা ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা থেকে বের হতে পারেন নি। অন্তত বিদেশি সেসব সায়েন্স ফিকশন তো হাজার হাজার কিশোর কিশোরীর কাছে পৌঁছে গেছে। কয়েকজন বামপন্থী বন্ধু মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কড়া সমালোচনা করেছেন। করতেই পারেন। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ঈশ্বরের পয়গম্বর না। ওনার সমালোচনা স্বাভাবিক। তাতে ৫৭ ধারা লঙ্ঘিত হয় বলে মনে হয় না। তবে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কেন হ্যান করেন নি, কেন ত্যান করেন নি, এসব অত্যন্ত লঘু কথাবার্তা। মার্ক্সবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে কেন মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে সঠিক হতে হবে, তাও আমি জানি না। ইতিপূর্বে মার্ক্সবাদীরা জ্যা পল সার্ত্রে, বুভোয়া, মিশেল ফুঁকো সহ অসংখ্য গুণী বুদ্ধিজীবীকে বুর্জোয়া দালাল, পেটি বুর্জোয়া ইত্যাদি নানান কথাবার্তা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা অনেকে রবীন্দ্রনাথকেও উড়িয়ে দেয়। একটা সময় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত স্থূল। মানুষের চিন্তাভাবনার কাঠামো যখন একটি নির্দিষ্ট তত্ত্ব বা মতবাদ দ্বারা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, তখন তারা সেই অন্ধ প্রকোষ্ঠেই মাথা ঠুকে মরেন। মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে হতে হবে ইসলাম সম্মত, মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে হতে হবে বিজ্ঞান সম্মত, মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে হতে হবে মার্ক্সসম্মত, মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে হতে হবে জামাত সম্মত, কেন? মুহাম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষা সংস্কার করেন নি, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান নি, কেন এগুলো হতেই হবে? গ্রহণ অথবা খারিজ, এই দুটো ছাড়াও এর মধ্যবর্তী অনেকখানি জায়গা আছে, যেগুলো বিবেচনার দাবী রাখে। মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে অন্ধভাবে গ্রহণ বা ঘৃণাবশত খারিজ, এই দুই ধরণের মানসিকতার বাইরেও বস্তুনিষ্ঠভাবে তার কাজ বিবেচনা করা যায়। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ইদানীং তার অন্ধভক্ত অনুসারী এবং তার প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ পোষণকারী উভয় গোত্রই এক ধরণের নোংরামিতে মেতে উঠেছেন। অন্ধভক্তরাও যে ভাষাতে গালাগালি করছে, ঘৃণাপোষনকারীরাও একই ভাষায় গালি দিচ্ছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে জাফর ইকবাল ভক্তরা বা বিদ্বেষীরা কেউই আসলে বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনায় উৎসাহী নন। এই আলোচনার পরিবেশটাই দূষিত, প্রতিক্রিয়াশীলতায় ভরপুর। এই দফায় জাফর ইকবাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, জাফর ইকবালের প্রতি ব্যক্তিগত ঘৃণাবশত আঞ্চলিকতার সমর্থন করাটা অত্যন্ত স্থূল কাজ হয়েছে বলে মনে করি। মোল্লারা প্রায় সবসময়ই মুখিয়ে থাকে জাফর ইকবালকে এক হাত নেয়ার জন্য। জাফর ইকবালের কন্যা কোন ছেলের সাথে ছবি তুলেছে, জাফর ইকবাল কোন অনুষ্ঠানে নেচেছে, এগুলো নিয়ে কুৎসিত প্রচারণা চলতেই থাকে। এই প্রোপাগান্ডার মুখে জাফর ইকবালের মেয়ে এটা করে নি, জাফর ইকবাল সেটা করে নি, এধরণের ডিফেন্সিভ কথাবার্তার কোন দাম নেই। পালটা আক্রমণে যাওয়াই জরুরী। তাই আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাল্টে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব দিয়েছি। এতে অনেকেই আমাকেও এক হাত নিয়েছেন। কিন্তু হযরত শাহজালালের নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বেশি প্রাসঙ্গিক নয়? তবে মনে রাখতে হবে, জামাত শিবির কিন্তু পীর প্রথার বিরুদ্ধের। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বিরোধিতা করতে গিয়ে যেন আবার জামাতি প্রোপাগান্ডায় আমরা মেতে না উঠি।
Posted on: Wed, 27 Nov 2013 17:54:14 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015