গর্ভকালীন খিঁচুনি - TopicsExpress



          

গর্ভকালীন খিঁচুনি প্রতিরোধ অধিকাংশ নারী ও তাঁদের পরিবারের জন্য সন্তান জন্মদান একটি আনন্দময় বিষয়। কিন্তু প্রতি মিনিটে মৃত্যু ও শোকের মধ্য দিয়ে একজন নারীর গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনার সমাপ্তি হয় (ইউএনএফপিএ ২০০৯)। গত দেড় দশকে (১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত) গর্ভাবস্থায় ও সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় বিভিন্ন জটিলতায় মাতৃমৃত্যুর হার ৩৪ শতাংশ কমেছে। এই অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য হলেও এই হার ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু ৭৫ শতাংশে কমিয়ে আনার সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) বার্ষিক হ্রাস হারের অর্ধেকের চেয়েও কম। উন্নয়নশীল দেশের একজন নারীর প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনি (প্রি-একলাম্পশিয়া) হওয়ার ঝুঁকি সাত গুণ, গর্ভকালীন খিঁচুনি (একলাম্পশিয়া) হওয়ার ঝুঁকি তিন গুণ এবং গর্ভকালীন খিঁচুনির কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি (ব্যালান্সিং দ্য স্কেলস, এনজেন্ডার হেলথ ২০০৭)। গর্ভাবস্থায় প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনি রক্তচাপকে এতটাই বাড়িয়ে দেয়, যা গর্ভকালীন খিঁচুনিতে পরিণত হয়। ফলে গর্ভবতী মা রক্তচাপ ও হূদেরাগে আক্রান্ত হন। পরিস্থিতি কতটা সংকটাপন্ন গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াকে অতিরিক্ত মানসিক চাপজনিত (হাইপারটেনসিভ) অসংগতি বলা হয়। বিশ্বের ১০ শতাংশ গর্ভবতী মা এতে আক্রান্ত হন। এটি গুরুতর মাতৃত্বজনিত জটিলতা, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতা এবং মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ। গর্ভকালীন মায়ের প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনি নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দেয়। এশিয়া ও আফ্রিকায় প্রায় এক-দশমাংশ মাতৃমৃত্যুই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপজনিত অসংগতির সঙ্গে যুক্ত। লাতিন আমেরিকায় এই সংখ্যা সব মাতৃমৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ (ডব্লিউএইচও ২০১১)। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার। মাতৃমৃত্যু জরিপ ২০১০ অনুসারে গত এক দশকে বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। ২০০১ সালে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে ৩২০ জন মা মারা যেতেন। ২০১০ সালে এই সংখ্যা কমে ১৯৪-এ নেমে এসেছে। এই জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে গর্ভকালীন খিঁচুনি। ধাত্রীবিদ্যাসংক্রান্ত জটিলতায় রক্তক্ষরণে (৩১ শতাংশ) সংঘটিত সব মাতৃমৃত্যুর ২০ শতাংশই গর্ভকালীন খিঁচুনির কারণে হয়। গর্ভাবস্থায় তীব্র প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনি ও গর্ভকালীন খিঁচুনি বেশ গুরুতর ও অপেক্ষাকৃত ঘন ঘন হয়। আমাদের দেশে এই দুই জটিলতা একসঙ্গে মিলে গর্ভাবস্থায় মা ও নবজাতকের অসুস্থতা ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে এমন পরিস্থিতি হয় যে অধিকাংশ মা-ই হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়ার আগেই মারা যান। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ কী ২০ সপ্তাহ বা এর চেয়ে বেশি গর্ভাবস্থায় (মোট গর্ভকাল ৩৭+ সপ্তাহ) অথবা সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় বা পরে দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা যদি মায়ের রক্তচাপ ১৪০/৯০ থাকে, তবে সেই অবস্থাকে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলে। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ কেন মারাত্মক প্রায় ১০ শতাংশ মা গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতায় ভুগে থাকেন। এ কারণে প্রতিবছর কয়েক হাজার মাতৃমৃত্যু হয়। কীভাবে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা যায় গর্ভাবস্থায় ল্যাবে প্রস্রাব পরীক্ষার সময় এলবুমিন বা প্রোটিনের উপস্থিতি থাকলে ওই মায়ের অতিরিক্ত রক্তচাপ আছে, এমনটি নির্দেশ করে। এটি প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনি শনাক্তকারী (প্রস্রাবের সহজ ও কম খরচের পরীক্ষার ওপর এই শনাক্তকরণ নির্ভর করে)। যদি এটি রক্তচাপ ও হূদেরাগের (অথবা কোনো অচেতন অবস্থা) সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তবে তাকে একলাম্পশিয়া বা গর্ভকালীন খিঁচুনি বলে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রক্তচাপ দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ অনেক কমিয়ে ফেলে যা মূত্রগ্রন্থি (কিডনি), হূদ্যন্ত্র, যকৃৎ, মস্তিষ্ক এবং জরায়ুর গুরুতর ক্ষতি করে। উদাহরণস্বরূপ, কিডনি কাজ না করলে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তচাপের কারণে কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হূদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনিসহ বহুবিধ অসংগতি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলোর যেকোনো একটির কারণে মৃত্যুও ঘটতে পারে। কারা ঝুঁকিপূর্ণ সব গর্ভবতী মা প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনির সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের সবার এই ঝুঁকি প্রতিরোধ ও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রক্তচাপ মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়, যা স্বাভাবিকভাবে মায়ের পেটে শিশুর বেড়ে ওঠা ব্যাহত করে। এর ফলে অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর জন্ম হয়। কীভাবে আমরা এ অবস্থা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনি ও গর্ভকালীন খিঁচুনি প্রতিরোধে চার মাসের গর্ভাবস্থা থেকে সম্পূরক হিসেবে ক্যালসিয়াম খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের মতো ওষুধ গর্ভকালীন খিঁচুনির ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ কমাতে পারে এবং খিঁচুনিজনিত মাতৃমৃত্যু শতকরা ৪৬ ভাগ কমাতে পারে। কমিউনিটি পর্যায়ে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট দিয়ে প্রাক্-গর্ভকালীন খিঁচুনি অথবা গর্ভকালীন খিঁচুনি রোগীর জরুরি রেফারেন্স মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
Posted on: Tue, 10 Sep 2013 07:00:31 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015