ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন - TopicsExpress



          

ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন সাড়ে ১২টা !!!! পনেরো আগস্টের প্রথম প্রহর,,কি হতে যাচ্ছে??? ঘাতক মেজর ফারুক রহমান সকল অফিসারদের এয়ারপোর্টের পাশে অবস্থিত হেড কোয়ার্টার স্কোয়াড্রন অফিসে সমবেত হতে নির্দেশ দেয়। ___অভিযানের চূড়ান্ত ব্রিফিং___ এই প্রথমবার শেখ সাহেবকে(বঙ্গবন্ধু) উৎখাত(খুন) করার অভিযান (যা তখনো সৈনিকদের পরিস্কার করে জানানো হয়নি)____পরিকল্পনায় অংশগ্রহণকারী অফিসারদের সামনে প্রকাশ করা হলো। কমান্ডার মেজর ফারুক টেবিলের উপর ছড়িয়ে দিলো ঢাকা শহরের ম্যাপ। কালো ইউনিফর্ম পরা ফারুক রহমান। পিঠে ঝুলছে স্টেনগান, দৃঢ় চেহারা নিয়ে অবিজ্ঞ কমান্ডারের মত তিনিও তার অপারেশন অর্ডার শুনালেন অফিসারদের। ম্যাপে টার্গেট চিহ্নিত করাই ছিল। প্রধান টার্গেট ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সরাসরি আক্রমণ করা হবে। আক্রমণের দায়িত্বে তার ইউনিটের বিশ্বস্ত অফিসার মেজর মহিউদ্দিন। বাসাকে ঘিরে ধরা হবে দুটো বৃত্তে (Inner circle and outer circle). Inner circle এর গ্রুপ বাসার উপরে সরাসরি আক্রমণে অংশ নিবে। Outer circle এর গ্রুপ রক্ষীবাহিনী এবং বাইরের সব আক্রমণ ঠেকাবে। Outer circle এর অফিসার থাকবে মেজর নুর,,মেজর হুদা। ২৭ নম্বর রোড,,সোবহান মসজিদ,, লেক ব্রীজ এরিয়ায় রোড-ব্লক সৃস্টি করা হবে। প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধুর বাসায় আক্রমণের সাথে সাথে একই সময় আক্রমণ চালানো হবে ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ ফজলুল হক মনি ও শেখ সেরনিয়াবাতের বাসায়। ফারুক মেজর ডালিমকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় আক্রমণে উপস্থিত থাকতে বলে কিন্তু ডালিম পুর্ব সম্পর্কের অজুহাতে সেই আক্রমণ গ্রুপে না থেকে স্বেচ্ছায় শেখ সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণের দায়িত্বভার গ্রহন করে। গ্রুপ কমান্ডার মেজর ডালিমকে একটি হেভী মেশিনগান সংযোজিত দ্রুতগতির জীপ দেয় এবং সাথে দেওয়া হলো প্রচুর অ্যামুনিশন ও গুলি এক প্লাটুন ল্যান্সার সৈন্যসহ একটি বড় ট্রাক। শেখ মনির বাসায় আক্রমণের দায়িত্বে থাকে ফারুকের পরম বিশ্বস্ত রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। রেডিও স্টেশন ও ইউনিভার্সিটি,, নিউ মার্কেট এরিয়ার নিরাপত্তা গ্রহনে থাকে মেজর শাহরিয়ার। এই গ্রুপটি সম্ভাব্য বি,ডি,আর, আক্রমণ মোকাবেলা করবে। তার সাথে রইলো এক কোম্পানি সৈন্য। অপারেশনের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল রক্ষীবাহিনীকে প্রতিহত করা। বঙ্গবন্ধুর বাসা যখন আক্রমণ হবে,, তখন প্রবল প্রতি-আক্রমণের আশংকা ছিল সাভার ও শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত কয়েক হাজার রক্ষীবাহিনী থেকে। অপারেশন কমান্ডার মেজর ফারুক তার ট্যাংক বাহিনী নিয়ে রক্ষীবাহিনীকে প্রতিহত করার দায়িত্ব স্বয়ং তার কাঁধে গ্রহন করলো। ২৮টি ট্যাংক ও ৩৫০ জন সৈনিক নিয়ে লড়বে রক্ষীবাহিনীর সাথে,,যদিও ট্যাংকের কামানের গোলা বারুদ তার কাছে ছিলনা। তবে তার ট্যাংকগুলোর মেশিনগান গুলোতে মজুদ ছিল পর্যাপ্ত গুলি। Dismounted পদাতিক ট্রুপস ৩৫০ জন রাইফেলধারী সৈন্যকে সাজালো রশিদের ইউনিট থেকে ধার নেয়া ১২টি ট্রাকে। তারা মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রধান টার্গেট অভিযানে অংশ নেবে।শেখ মনির বাসায় অভিযানেও তার দুই ট্রাকে দুই প্লাটুন সৈন্য অংশ নেবে। মেজর রশিদের অবস্থান ছিল কোথায়??? মেজর রশিদের প্রধান কাজ ছিল অপারেশনের পরবর্তী অবস্থার সামাল দেয়া,ও সার্বিক রাজনৈতিক সমন্বয় ধারন। তার ১৮টি কামান এয়ারপোর্টে যথারীতি গোলা ভর্তি করে যুদ্ধাবস্থায় রাখা হলো। কামানগুলোর ব্যারলে রক্ষীবাহিনীর হেড কোয়ার্টার এবং প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে তাক করা। প্রয়োজন মত কমান্ডারের নির্দেশে টার্গেটের উপর সেই অবস্থান থেকে ভারী গোলা নিক্ষেপ করা হবে। ৩২নং রোড এবং রক্ষীবাহিনী হেড কোয়ার্টার রইলো দূরপাল্লায় কামানগুলোর রেঞ্জের মধ্যেই। শুধুমাত্র একটি ১০৫ এম এম হাউইটজার কামান আর্টিলারি মেজর মহিউদ্দিনের অধীনে প্রধান টার্গেটের পাশে লেকের ওপারে পজিশন করা হবে। রক্তঝরা অপারেশনের সার্বিক দায়িত্বে বেঙ্গল ল্যান্সারের মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান। আশ্চর্যের বিষয়,, ঐ রাতে সমস্ত ঘটনার প্রস্তুতি চলছিল আর্মি ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পাশেই মাত্র কয়েকশ গজ দূরে। তারা সবাই তখন নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে।
Posted on: Tue, 02 Dec 2014 06:14:11 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015