জিল্লুর রহমান - TopicsExpress



          

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী Zillur Rahman Siddiqui Home District: Jhenaidah পারিবারিক পরিচিতি: দেশের সাহিত্যাঙ্গনের উজ্জ্বলতম ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি, প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ (বর্তমান জেলা) মহকুমার দুর্গাপুর গ্রামে ১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফজলুর রহমান সিদ্দিকী ছিলেন সরকারী মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মা- হালিমা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। এক মাত্র ছোট ভাই আব্দুল কাদের সিদ্দিকী একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। বোন আছে ৬ জন। জনাব জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ১৯৫১ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর নাম সাজেদা আখতার কায়সার। ব্যক্তিগত জীবনে তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ৩ পুত্রদের নাম যথাক্রমে- দাউদ আফজাল, শাকিল আখতার ও ফারহাত আনোয়ার। একমাত্র কন্যা নাহিদ জাবিন। শিক্ষাজীবন: প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ১৯৩৪ সালে গ্রামের পাঠশালায়। পরবর্তীতে বাঁকুড়া জিলা স্কুল, জলপাইগুড়ি জিলা স্কুল ও যশোর জিলা স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেন এবং ১৯৪৫ সালে যশোর জিলা থেকেই প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৭ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই, এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে বি, এ অনার্স-ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৫০ সালে প্রথম শ্রেণীতে বি, অনার্স এবং ১৯৫১ সালে প্রথম শ্রেণীতে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে এম-এ পাশ করেন। ১৯৫২-৫৪ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উর্সটার কলেজে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে বি, এ ও এম, এ ডিগ্রী লাভ করেন। পেশাগত জীবন: ১৯৫২ সালে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকাতে প্রোগ্রাম এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে তাঁর চাকরিজীবন শুরু হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালে রীডার ও ১৯৬৪ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৭৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকার পর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালীন তিনি দুই বার (১৯৭৬-১৯৮০, ১৯৮১-৮৪ সাল পর্যন্ত)। উপাচার্যের দায়িত্বভার পালন করেন। এ ছাড়াও ১৯৯০ সালে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদে ‘শিক্ষা উপদেষ্টা’র গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার পালন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহণ করে কয়েক বছর চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। সাহিত্যকর্ম: ছাত্রজীবনেই জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর সাহিত্যপ্রতিভার প্রতিফলন ঘটে। এ সময় থেকেই কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প লিখতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে। এ সময় জার্মান নাট্যকার Ernst Toller এর নাটক (ইংরেজী অনুবাদ The Masses and man) বাংলায় অনুবাদ অংশত: ‘মুক্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি মূল লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন পিতা ও পিতামহের কাছ থেকে। পরবর্তীতে শিক্ষক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার উৎসাহেই তাঁর লেখনী প্রতিভার বিকাশ ঘটে। প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াকালীন তিনি বাংলা রচনা ও আবৃত্তির জন্য অধ্যাপকদের মধ্যে অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত একটি কবিতা “শর্বরী” (সনেট) সম্ভবত ১৯৪৫ সালে মাসিক মোহাম্মদীতে ছাপা হয়েছিল। পত্রিকাটি নেপথ্যে সম্পাদনা করতেন তাঁর ফুফাতো ভাই কবি ফররম্নখ আহমদ। তিনি তাঁকে লেখার ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ দিতেন। ১৯৫০ সালে দশজন কবির কবিতা নিয়ে আশরাফ সিদ্দিকী ও আব্দুর রশিদ খান’ এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘নতুন কবিতা’ শীর্ষক একটি কাব্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থে তাঁর পাঁচটি কবিতা স্থান পায়। ভূমধ্যসাগর তীরে ভেঙেপড়া বহু সভ্যতার কংকাল - ছড়ান পথে স্বপ্নে আমি ঘুরেছি অনেক। হেলাসের প্রান্ত হতে শ্রান্তপায়ে মৌন কর্ডোভার নির্জন নদীর ধারে সন্ধ্যাবেলা বসেছি ক্ষণেক। অ্যাথেন্স থিবিস আর করিন্থের স্তব্ধ রাজপথে ধূসর ধুলার তলে লেখা আছে যতো ইতিহাস, যতো জয় পরাজয়, যতো যুদ্ধ, যতো অভিযান- যখনি বসেছি আমি সিসিলির সমুদ্র সৈকতে, যখনি লেগেছে মুখে পশ্চিমের অশান্ত বাতাস জেগেছে আমার মনে সেইসব কাহিনী অম্লান।। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালীন ১৯৭১ সালে মিলটনের “আ্যরিও প্যাজিটিকা” এবং ১৯৭৩ সালে মিলটনের “স্যামসন অ্যাগনিসটিজ” এর বাংলা অনুবাদ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি অনুবাদ করেন “ শেক্সপিয়রের সনেট ।” তাঁর অনূদিত গ্রন্থগুলির প্রত্যেকটি একাধিকবার মুদ্রিত হয়েছে। অনুবাদ সাহিত্যে প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী তাত্ত্বিক শব্দের পারিভাষিক প্রতিশব্দ উদ্ভাবন ও ব্যবহার করে যে সাহিত্যরস সৃষ্টি করেছেন তা তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে। কবি জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর রচিত কবিতাগুলি ভাষায় কারুকার্যে মহিমান্বিত, সাহিত্যরস সমৃদ্ধ এই কবিতাগুলি পাঠক কুলের হৃদয় আকৃষ্ট করে। ১৯৭৫ সালে “হৃদয়ে জনপদে” ১৯৮৪ সালে “চাঁদ ডুবে গেলে” ১৯৮৮ সাল “আসন্ন বাস্তিল” নামে তাঁর তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ও ১টি ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। তাঁর প্রতিটি প্রবন্ধ জ্ঞানলব্ধ ও ভাষার চাতুর্যে পরিপূর্ণ। ১৯৭৬ সালে “শব্দের সীমানা” ১৯৮৪ সালে “আমার দেশ আমার ভাষা” ১৯৮৬ সালে “পৃথিবী ও পামলোট” (লঘু প্রবন্ধ) ও ১৯৮২ সালে Literature of Bangladesh and other Essays ১৯৯১ সালে “বাঙ্গালীর আত্নপরিচয়”, ১৯৮৯ সালে “শান্তি নিকেতনে তিন মাস” ভ্রমণ কাহিনীটি ও ১৯৯৩ সালে Bangla Academy English-Bengali Dictionary তাঁর সম্পাদনায় গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর সম্পাদিত ১৯৭৬ সালে ‘হে বন্য স্বপ্নের (ফররুখ আহমদ), ১৯৮৬ সালে “বাংলা প্রবন্ধ পরিচয়” ১৯৮৯ সালে “বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা” গ্রন্থগুলি পাঠকসমাজে বিশেষ সমাদৃত হয়েছে। তিনি ১৯৬১ সালে মুস্তফা নুরুল ইসলামের সঙ্গে যুগ্মভাবে ত্রৈমাসিক ‘পূর্বমেঘ’ সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এই পত্রিকাটি অনিয়মিতভাবে চলেছিল দশ বছর। ১৯৮৬ সালের বৈশাখ মাস থেকে “দীপঙ্কর” নামে তিনি আরেকটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। পত্রিকাটি পাঁচ বছর চলার পর বন্ধ হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত অনিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। এক সময় পূর্বদেশে Bangladesh Times এ প্রতি সপ্তাহে Myself and others সংবাদ এ The Daily Star একতা, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও বাংলা বাজার পত্রিকায় লিখতেন। বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান কবি প্রফেসর জিল্লু রহমান সিদ্দিকী আজীবন সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজকে নিয়োজিত রেখেছেন। দেশ ভ্রমণ: সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে পৃথিবীর বহুদেশ পরিভ্রমণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। কর্মের স্বীকৃতি: এই গণতন্ত্রমনা সাহিত্যিক তাঁর সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের জন্যে ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন সম্মানে ও পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার। ১৯৭৭ সালে “আলাওল সাহিত্য পুরস্কার”, ১৯৭৯ সালে কবিতার জন্য “বাংলা একাডেমী পুরস্কার” ও ১৯৯০ সালে “কাজী মাহাবুবুল্লাহ -বেগম জেবুন্নেছা ট্রাস্ট পুরস্কার” এবং সর্বশেষ ২০১১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
Posted on: Sun, 21 Sep 2014 21:55:45 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015