ঠগী- উপমহাদেশের এক - TopicsExpress



          

ঠগী- উপমহাদেশের এক ভয়ঙ্কর ভুলে যাওয়া সম্প্রদায় (প্রথম পর্ব) By- Mohim Jobayer সে অনেকদিন আগের কথা, এই মায়াময় ভারত উপমহাদেশ তখন কুয়াশায় ঘেরা এক স্থান । সেই কুয়াশায় হারিয়ে যাওয়ায় বাধা ছিল না কারও । হারিয়েও যেত অনেকে । সৈনিক ছুটিতে গিয়ে আর ফিরত না, তীর্থ যাত্রী হারিয়ে যেত অহরহ, আত্মীয়স্বজন বুকে পাথর বেঁধে নিশ্চিত স্বর্গ প্রাপ্তির সান্ত্বনা দিত নিজেকেই । আর এই হারিয়ে যাওয়ার সিংহ ভাগের জন্য যারা দায়ী ছিল তারা হল ঠগী, আজ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নিখুঁত আর নির্দয় খুনি সম্প্রদায় । তাদের হাতে নারী-পুরুষ-শিশু কেউ রেহাই পেত না, রেহাই পেত না জমিদার থেকে শুরু করে এমনকি সাদা চামড়ার ইংরেজ কর্মকর্তারাও । তাদেরকে সবচেয়ে দুধর্ষ আর নিখুঁত খুনীর এই তকমাটিও ইংরেজদেরই দেওয়া । কি অস্ত্র ছিল এই দুর্ধর্ষ খুনিদের? ঢাল তলোয়ার, কামান ? না, তাদের অস্ত্র ছিল নির্দোষ চেহারার রেশমি রুমাল ! এই রুমালে মোটামুটি মাঝের দিকে বাঁধা হত একটি এক পয়সা বা দুটি আধুলি । ব্যস, হয়ে গেল ভয়ঙ্করতম এক অস্ত্র । এই অস্ত্র কোমড়ে পেঁচিয়ে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় ঘর থেকে বের হত তারা । সকল ঠগীই ছিল সনাতন দেবী কালীর উপাসক । এমনকি ঠগীদের মাঝে ছিল মুসলমানরাও, তাদের জিজ্ঞাসা করলে বলত- ধর্ম কি ? মুসলমান দেবী কে? কালী (!) ঠগীদের মতে তাদের উদ্ভবের গল্প অনেকটা এরকম - একবার দেবী কালী অসুরদের সাথে যুদ্ধ করছিলেন, কিন্তু অসুরদের প্রতি ফোঁটা রক্ত থেকে জন্ম নিচ্ছিল আরও সহস্র অসুর । তাই দেবী তার ঘাম থেকে জন্ম দিলেন ঠগীদের, আর হাতে তুলে দিলেন নিজের রুমাল । সেই থেকে ঠগীরা হত্যা করতে নামল । ঠগীদের তাই হত্যা করার প্রধান উদ্দেশ্য লুট করা ছিল না, বরং এটা ছিল তাদের কাছে পবিত্র ধর্মীয় আচার । তাই তারা খুন গুলো করত ফ্যানাটিক দক্ষতার সাথে । আর লুটের সম্পত্তি ছিল তাদের নিকট দেবীর উপহার । যেহেতু লুটপাট প্রধান উদ্দেশ্য ছিল না, তাই ভিক্ষুক থেকে আরম্ভ করে সম্পদশালী জমিদার কেউই রক্ষা পেত না । এদের খুনের ধরন ছিল এরকম, প্রথমে দল বেঁধে তারা টার্গেট করা দলের সাথে ভিড়ে যেত । বিপদসঙ্কুল পথে সাথী পেয়ে টার্গেট দলও বেশ খুশি হত । আর ঠগী দলের সর্দার পাঠিয়ে দিত নিজ দলের কাউকে আগেই গিয়ে রাস্তায় সুবিধাজনক জায়গা ঠিক করতে । সেই সময়ে ঠগীদল আন্তরিক আচরণে হয়ে ঊঠত টার্গেট দলের বন্ধু । নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছনোর পর ঠগী সর্দার সেখানেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিত, সাধারণত টার্গেটও খুশি মনে রাজি হত । এবং রাত গভীর হলেই শুরু হত আসল "খেলা "। টার্গেট দলের সবার উপর একসাথে আচমকা আঘাতটা আসত । একজন ধরত পা, একজন পা, আর একজন গলায় পরাত সেই বিখ্যাত রুমাল । ঠগীদের আক্রমণ থেকে কেউ কখনো বেঁচে ফিরেছেন এমনটা শোনা যায় না । ঠগীরা সুযোগ মতনিঃসঙ্গ পথচারীদেরও হত্যা করত । হত্যার পর লাশগুলো গোলাকৃতি কবরে কবর দেয়া হত । সেই কবর দেয়ার প্রক্রিয়া ও রীতিমতো বিশাল নিয়ম অনুসারে হত । সময় পেলে অন্য কোনদিন লিখব । ওহ.. আর একটা কথা না বললেই নয়, এই ঠগীদের ধ্বংস করেছিল স্লীমান নামক এক মহান ব্যাক্তি । তিনি শুধু ঠগীদের এই ভয়াবহ পেশা থেকে সরিয়েই আনেন নি, তাদের পুনর্বাসনও করেছেন । ঠগীদের হাতে নির্মিত একটা কার্পেট এখনো ইংল্যান্ড এর রাজপ্রাসাদে আছে । ঠগীদের ইংরেজরা বলত Thuggee, এখান থেকেই ইংরেজি শব্দ Thug এর উৎপত্তি । এছাড়া Confession of a Thuggee নামক একটি বিখ্যাত উপন্যাস আছে, উপন্যাসটা খুবই সুখপাঠ্য, তবে বাস্তবতা বিবর্জিত ও লেখকের কল্পনা প্রসূত । Sir Killer Rumi
Posted on: Sun, 21 Jul 2013 13:49:51 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015