ডকুমেন্টারি-শহীদ আবদুল - TopicsExpress



          

ডকুমেন্টারি-শহীদ আবদুল মালেক-দ্যা লিজেন্ড (পর্ব-০১) #EduDay15August ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৫ আগষ্ট ঐতিহাসিক একটি দিন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়ের সর্বকালের সেরা মেধাবী ছাত্র আবদুল মালেকের শাহাদাত দিবস। এ বছর ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী হিসেবে ইসলামী শিক্ষা দিবস নামে দিনটিকে উদযাপন করবে এদেশের আপামর তৌহিদী জনতা। ৪ দশকেরও বেশী সময় পেরিয়ে আজও আমাদের চেতনায় নাড়া দিয়ে যায় মেধাবী ছাত্র আবদুল মালেকের শাহাদাত। আবদুল মালেকের শাহাদাতে শুধুমাত্র এদেশের জনগনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়নি বরং বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তর থেকে বিবেকবান মানুষের কান্নার ধ্বনি শোকের আবহ তৈরি করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের সেরা এমন একজন মেধাবী ছাত্রের নির্মম ভাবে শহীদ হওয়াকে কেউ সহজে মেনেও নিতে পারেনি। শহীদ আবদুল মালেকের শাহাদাতের ঘটনাটি ছিল বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের ফসল। ১৯৬৯ সালে শহীদ আব্দুল মালেকসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের ততকালীন শিক্ষা মন্ত্রী এয়ার মর্শাল নুর খানের সাথে সাক্ষাত করে দেশে সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি করেন। শহীদ আবদুল মালেকের প্রতিনিধি দলের পর দেশের অন্যান্ন আরও সংগঠনও একই দাবী তোলেন। সবার দাবির মুখে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকার নতুন শিক্ষানীতি প্রনয়নের লক্ষে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। এটি ছিল পাকিস্তান আমলের গঠিত সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন। গঠিত শিক্ষা কমিশন একটি শিক্ষানীতিও ঘোষনা করে। ঘোষিত শিক্ষানীতিতে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও এতে ইসলামী আদর্শের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তাতে বাধসাদে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বজাধারীরা। তারা এ শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবি জানায়। এমনই প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে তা নিয়ে জনমতে জরিপের আয়োজন করা হয়। জনমত জরিপের অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২রা আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন(নিপা) ভবনে (বর্তমান ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) এ শিক্ষানীতির উপর ১ টি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় বামপন্থীদের বিরোধীতামুলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। অসাধারন মেধাবী বাগ্মী শহীদ আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্যে উপস্থিত সবার চিন্তার রাজ্যে এক বিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করে। ফলে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায় । জাতীর শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তির বিষয়ে তিনি সে দিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন- Pakistan must aim at ideological unity, not at ideological vacuum- it must impart a unique and integrated system of educatiuon which can impart a common set of cultural values based on the precepts of Islam. We need Common set of cultural values, not one set of cultural values- তার বক্তব্যের এ ধারণাটিকে তিনি যুক্তি সহকারে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। উপস্থিত শ্রোতা, সুধীমন্ডলী এবং নীতি নির্ধারকরা শহীদ আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে একটি সার্বজনিন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। আব্দুল মালেকের ত্বত্ত্ব ও যুক্তিপূর্ণ অথচ সংক্ষপ্ত বক্তব্য ক্ষিপ্ত করে দেয় ইতোপূর্বে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখা বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলাম বিরোধী বক্তাদের। সকল বক্তার বক্তব্যের মাঝ থেকে নীতি নির্ধারক এবং উপস্থিত শ্রোতা-সুধীমন্ডলী যখন আবদুল মালেকের বক্তব্যকে পুর্ণ সাপোর্ট দেয় তখন আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে শহীদ আব্দুল মালেকের উপর। নিপার আলোচনা সভায় বাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ডাকসু-র নামে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করানোর উদ্দেশ্যে দশ দিনের ব্যবধানে অর্থাত ১২ ই আগষ্ট ঢাবির ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে(টিএসসি) এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে শহীদ আব্দুল মালেক সহ কয়েকজন ইসলামী শিক্ষার উপর কথা বলতে চাইলে তাদের সুযোগ দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। সভার এক পর্যায়ে জনৈক ছাত্র নেতা ইসলামী শিক্ষার প্রতি কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখে। তখন উপস্থিত শ্রোতারা এর তীব্র বিরোধীতা করে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে স্লোগান দেয়। সাথে সাথে বাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবদের ক্যাডাররা হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর। সন্ত্রাসীদের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শহীদ আব্দুল মালেক তার সাথীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন। এসময় সকল সংগীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক ২/৩ জন সাথীকে সাথে নিয়ে টিএসসির পাশ দিয়ে তার হলে ফিরছিলেন। হলে ফেরার পথে লোহার রড-হকিষ্টিক নিয়ে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিয়ে মাথার নিচে ইট দিয়ে, ইটের উপর মাথা রেখে উপরে ইট ও লোহার রড- হকিষ্টিক দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত ও অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। মারাত্নক আহত হন তার সঙ্গী গাজী ইদ্রীসও। শহীদ আব্দুল মালেককে আহত এবং সংগাহীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার তিনদিন পর ১৫ আগষ্ট শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তিপুর্ণ বক্তব্য দেয়া ইসলামের এই সুমহান বক্তা। ১৯৬৯ সালের ১৫ আগষ্ট বিশ্বের যে প্রান্তেই শহীদ আবদুল মালেকের শাহাদাতের সংবাদ পৌঁচেছে ইসলাম প্রেমিক প্রতিটি মানুষের চোখের পানি সেখানে ঝরেছে। শহীদ আব্দুল মালেকের আদর্শ ও ক্ষুরধার যুক্তির কাছে পরাজিত হয়ে সেকুল্যারপন্থীরা তাকে চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়েছিল। কিন্তু আজ দিবালোকের ন্যায় একথা স্পষ্টভাবে প্রমানিত তার এই আত্নত্যাগ বৃথা যায়নি। আজও লক্ষ প্রানে জোয়ার জাগায় শহীদ আবদুল মালেক। আজ হাজারো তরুণ যুবকের কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে শহীদ আবদুল মালেকের বক্তব্যে উঠে আসা সেই সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়। যার বক্তব্যে অগ্নিস্পুলিঙ্গ ঝরে, যার ক্ষুরধার বক্তব্যে বাতিলের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় সেই শহীদ আবদুল মালেক শুধুমাত্র শ্রেষ্ঠ বক্তাই ছিলেননা, বরং তিনি তার শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপে অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষরও রেখেছেন। তার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ঘটেছিল মেধার বিস্পোরণ। একাডেমিক জীবনের হাতেখড়ি থেকে শুরু করে সর্ব্বোচ্ছ বিদ্যাপীঠ পর্যান্ত তিনি মেধার স্বার রেখে গেছেন। তিনি ৫ম এবং ৮ম শ্রেনীতে জুনিয়র স্কলারশীপ লাভ করেন। এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে মেধা তালিকায় একাদশ স্থান অর্জন করেন। এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান নিয়ে পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। শাহাদাত বরণ কালে তিনি ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ১২২ নং রুমে থাকতেন। তার মত এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর পায়নি। তাইতো তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের সেরা মেধাবী ছাত্রের স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ততকালিন শিক্ষকেরা। ১৯৪৭ সালের মে মাসে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার খোকসাবাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করা অসাধারণ মেধার অধিকারি শহীদ আবদুল মালেকের মধ্যে বিস্ময়করভাবে অনুকরণীয় সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী, নিরহংকার, বিনয়ী, মিষ্টভাষী, সঠিক নেতৃত্ব দানের দূর্লভ যোগ্যতার অধিকারী। ভালোবাসা, ত্যাগ ও কুরবানীর উজ্জ্বল ও অনুপম দৃষ্টান্ত মিশে গিয়েছিল তার জীবনের সাথে। ইসলামী শিাব্যবস্থার পে কথা বলতে গিয়ে শাহাদাত বরণকারী প্রথম ব্যক্তি তিনি। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার স্বপক্ষেপে বক্তব্য রাখার অপরাধে তার শাহাদাতের এই দিনটিকে তথা ১৫ আগষ্টকে ৪২ বছর যাব৩ ইসলামী শিক্ষাদিবস হিসেবে পালন পালন করে আসছে এ দেশের আপামর তৌহিদী জনতা। “জানিনা আর ফুটবে কিনা এই বাগানে মালেকের মত কোন ফুল” তোমরা ভুলে গেছ মালেক ভাইয়ের নাম যে মালেক জীবন দিয়ে দ্বীনের পথে করেছে সংগ্রাম” “মালেকের স্বপ্নেরা খেলা করে ঐ” ‍‍শহীদি মালেক আজো আমায় ডাকেএ ধরনের চেতনায় নাড়া দেয়া অনেক গান আজ হাজারো তরুণ যুবককে আন্দোলিত করছে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখার সংগ্রামে। শহীদ আবদুল মালেক প্রেরণার মিনারের এক সুউজ্জল আলোকরশ্মি। ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর মনে চির-ভাস¡র হয়ে থাকবেন প্রেরণার সুউজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে। যে শিাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজের জীবনকে তিনি উতসর্গ করেছেন সে শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই পরিশোধ হোক শহীদ আবদুল মালেকের শাহাদাতের ঋণ।
Posted on: Thu, 14 Aug 2014 09:53:08 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015