দাজ্জাল সম্বন্ধে - TopicsExpress



          

দাজ্জাল সম্বন্ধে অন্যান্য হাদীস বইয়ের প্রথম দিকে লিখে এসেছি যে হাদীসসমূহের সত্যতা যাচাইয়ের কঠিন প্রক্রিয়ায় এসনাদের অভাবে বা ত্রুটিতে অনেক সহিহ অর্থাৎ সত্য হাদীসও পরিত্যক্ত হোয়েছে, বাদ পোড়ে গেছে। দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধেও কতকগুলো হাদীস আছে যেগুলো এসনাদের অভাবে সহিহ পর্যায়ে নেয়া হয়নি- কিন্তু ওগুলো পড়লেই বোঝা যায় যে ওগুলো সহিহ, কারণ সহিহ হাদীসগুলোর সঙ্গে ওগুলো শুধু সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সম্পূর্ণ সম্পূরক। এর মধ্য থেকে একটি হাদীস পেছনে উল্লেখ কোরে এসেছি যেটায় বলা হোয়েছে- দাজ্জালের ঘোড়ার অর্থাৎ বাহনের এক পা থাকবে (পৃথিবীর) পূর্ব (মাশরেক) প্রান্তে, অন্য পা থাকবে পশ্চিম (মাগরেব) প্রান্তে। এখন অন্য দু’একটি হাদীস উল্লেখ কোরবো। পেছনে Leopold Weiss অর্থাৎ মোহাম্মদ আসাদের কথা লিখেছি। প্রকৃতপক্ষে তার Road to Mecca বইয়ে দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে তার অভিমতই আমাকে এই বিষয়ে চিন্তার প্রেরণা দেয়। তার আগে আমিও অন্যের মত দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে প্রচলিত ধারণা, আকীদাই পোষণ কোরতাম- অর্থাৎ বিরাট ঘোড়ার ওপর উপবিষ্ট এক চক্ষুওয়ালা এক দানব- পৃথিবীর মানুষকে বোলছে- আমি তোমাদের রব, প্রভু! আর পৃথিবীর সব মানুষ তাকে রব বোলে মেনে নিয়ে তাকে সাজদা কোরছে। দাজ্জালের সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে দাজ্জালের দেয়া রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, মানুষের তৈরী করা আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি তাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ কোরছে। তার বইটিতে মোহাম্মদ আসাদ দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে যে কয়টি হাদীস বোললেন তার মধ্যে শুধু একটি বাদে সবগুলো সহিহ। ঐ একটি হোচ্ছে এই- পৃথিবীর অপর প্রান্তে(অর্থাৎ পৃথিবীর সর্বত্র) কি কথা হোচ্ছে দাজ্জাল (Dajjal) তা শুনতে পাবে এবং পৃথিবীর অপর প্রান্তে কি হোচ্ছে তা দেখতে পাবে। এই হাদীসটির অর্থ যে রেডিও ও টেলিভিশন তা তো আহাম্মকও বুঝবে এবং ও দু’টি যে ইহুদী- খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার দান তাও সবারই জানা। মোহাম্মদ আসাদ এই হাদীসটি বোলেছিলেন মক্কার তখনকার শ্রেষ্ঠ আলেম ও শায়েখ আবদুলাহ ইবনে বুলাইদিদের সামনে যিনি তদানীন্তন বাদশাহ আবদুল আযীয ইবনে সউদকে ধর্ম বিষয়ে পরামর্শ ও উপদেশ দিতেন। যেহেতু সেই শায়েখ ঐ হাদীসের সত্যতা সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন তুললেন না, বরং আসাদের মতেরই সমর্থন কোরলেন সেহেতু আমরা ধোরে নিতে পারি যে ঐ হাদীস সঠিক। দ্বিতীয়ত, এটা অন্যান্য সমস্ত সহিহ হাদীসের সমার্থক ও সম্পূরক। মহানবীর এই হাদীসটি আরও একটি বিষয় পরিষ্কার কোরে দিচ্ছে। যারা হাদীসের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ কোরে দাজ্জাল (Dajjal) কে একটি দানব বা দৈত্য হিসেবে নিচ্ছেন তাদের মতে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের কথা দাজ্জাল (Dajjal) একাই শুনতে ও দেখতে পাবে। কিন্তু বেতার ও টেলিভিশন কি আজ শুধু একজন শুনতে ও দেখতে পায়? অবশ্যই নয়। অর্থাৎ দাজ্জাল (Dajjal) একটা মাত্র ব্যক্তি বা জিনিস (Unit) নয়, দাজ্জাল (Dajjal) হোচ্ছে ইহুদী- খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার মহাশক্তিশালী বিরাট একচক্ষু দানব ও তার অনুসারীরা। আরও একটি চিত্তাকর্ষক হাদীস পাঠকদের সামনে পেশ কোরছি। এটারও সনদ আমার জানা নেই। অনেক দিন আগে এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে শুনেছিলাম। তখন দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে বিশেষ কোন আগ্রহও ছিলো না, দাজ্জালের ঘটনা ও আবির্ভাব যে এত গুরুত্বপূর্ণ তাও জানতাম না। কাজেই যিনি এ হাদীসটি আমায় বোলেছিলেন তাকে হাদীসের সনদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কোরি নি। তাকে আজ আর মনেও নেই। তবে হাদীসটি ভুলি নি, মনে আছে। হাদীসটি এই- দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে বলার সময় আল্লাহর রসুল যখন দাজ্জাল (Dajjal) খুব দ্রুতগতিসম্পন্ন হবে বোললেন তখন কোন কোন সাহাবা তাঁকে প্রশ্ন কোরলেন, কেমন দ্রুত সে গতি হবে? তখন বিশ্বনবী বোললেন- জুম্মার সালাহ কায়েম কোরতে যে সময় লাগে সেইটুকু সময়ের মধ্যে দাজ্জাল (Dajjal) সমস্ত পৃথিবী ঘুরে আসতে পারবে। আমরা জানি যে, ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতা আকাশে যে উপগ্রহগুলো (Satellite) চালু কোরেছে সেগুলোর গতি ঘণ্টায় কমবেশী ১৮,০০০ (আঠারো হাজার) মাইল। এই গতিতে পৃথিবীকে এক চক্কর ঘুরে আসতে এই উপগ্রহগুলোর সময় লাগছে ৯০ থেকে ৯৫ মিনিট। এই নির্দিষ্ট গতির কারণ আছে। উপগ্রহসহ যে কোন বস্তুর গতি যদি ঘণ্টায় আঠারো হাজার মাইলের চেয়ে কম হয় তবে তা শূন্যে থাকতে পারবে না, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের (Gravity) টানে তা পৃথিবীর বুকে পোড়ে যাবে। আবার উপগ্রহগুলোর গতি যদি ঘণ্টায় ২৪,০০০ (চব্বিশ হাজার) মাইলের বেশী হয় তবে ওগুলো মাধ্যাকর্ষণের টেনে রাখার শক্তিকে পরাজিত কোরে মহাশূন্যে চোলে যাবে, পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকবে না। এই জন্য ঘণ্টায় ২৪,০০০ মাইলের বেশী গতির বৈজ্ঞানিক নাম হোচ্ছে Escape Velocity অর্থাৎ যে Velocity বা গতি লাভ কোরলে কোন বস্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান থেকে নিজেকে মুক্ত কোরে বাইরে, মহাকাশে চোলে যেতে পারে। কাজেই উপগ্রহগুলোকে পৃথিবীর চারদিকে কক্ষপথে (Orbit) ধোরে রাখার জন্য ওগুলোর গতি ঘণ্টায় ১৮,০০০ মাইল রাখতে হোয়েছে। এই উপগ্রহগুলো শুধু যে যন্ত্র তাই নয়, ওর মধ্যে মানুষও দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অবস্থান কোরছে। যেসব রকেট মহাশূন্যে পাঠানো হোচ্ছে সেগুলির গতি ঘণ্টায় ২৪,০০০ মাইলের বেশী করা হোচ্ছে। আল্লাহর রসুলের সময় ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের হিসাব ছিলো না। কাজেই দাজ্জালের পৃথিবীর ঘুরে আসার সময়টা তাঁকে বোলতে হোয়েছে অন্য কোন কাজের সময়ের উদাহরণ দিয়ে, এবং সেটা তিনি দিয়েছেন সবচেয়ে প্রযোজ্য উদাহরণ, জুম্মার নামাযের সময় দিয়ে। জুম্মার নামাযের প্রস্তুতি অর্থাৎ গোসল করা, কাপড়-চোপড় পরা, মসজিদে যাওয়া, খোত্বা শোনাসহ নামায পড়া, পরিচিতদের সঙ্গে দু’চারটি কথা বলা ও বাড়ীতে ফিরে আসা। সব মিলিয়ে মোটামুটি ৯০ থেকে ৯৫ মিনিটের মতই সময় লাগে। অনেকে বোলতে পারেন ও সব কিছু সত্ত্বেও জুম্মার নামাযে ৯০/৯৫ মিনিট সময় লাগে না। এ কথাটিও ঠিক। বর্ত্তমানের বিকৃত, আল্লাহর- সুলের প্রদর্শিত দিক-নির্দেশনার বিপরীতমুখী, দাজ্জালের পায়ে সাজদায় অবনত ‘মোসলেম’দের জুম্মায় সময় কম লাগে। কারণ এখন জুম্মা অর্থ খোত্বা শোনা (যে খোত্বার কোন অর্থই এরা বোঝেন না) ও দু’রাকাত নামায পড়া। কিন্তু রসুলাল্লাহর সময় মসজিদ ছিলো তার উম্মাহর সমস্ত রকমের কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। কাজেই জুম্মায় এখনকার চেয়ে সময় বেশী লাগতো। যেহেতু উপগ্রহ ও মহাকাশচারী রকেটগুলো ইহুদী- খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার উদ্ভাবন সুতরাং নিঃসন্দেহে এই সভ্যতাই দাজ্জাল (Dajjal)। এ হাদীসগুলির ব্যাখ্যা থেকে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে আল্লাহর রসুল কর্ত্তৃক বর্ণিত আখেরী যমানার দাজ্জাল (Dajjal) কোন দৃশ্যমান (Visible) বা শরীরী (Physical) দানব নয়, তখনকার দিনের মানুষদের বোঝাবার জন্য এটি একটি রূপক (Allegorical) বর্ণনা যে কথা পেছনে বোলে এসেছি। এর পরও যদি কেউ জোর কোরে বোলতে চান যে, না, এক চক্ষুবিশিষ্ট, বিরাটকায়, জ্বলজ্যান্ত একটি অশ্বারোহী দানবই আসবে, তাহোলে আমার বক্তব্য হোচ্ছে, ধরুন আপনার কথামত এক চক্ষুবিশিষ্ট এক বিশাল দানব পৃথিবীতে উপস্থিত হোল, তার বাহন ঘোড়া বা গাধার দুই কানের ব্যবধানই সত্তর অর্থাৎ বহু সহস্র হাত (দেখুন দাজ্জালের পরিচিতি অধ্যায়ের ১ নং হাদীস), তাহোলে কি কারো মনে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকবে যে এটাই রসুল বর্ণিত সেই দাজ্জাল (Dajjal)? চোখের সামনে প্রায় পৃথিবীর সমান আয়োতনের এক দানবকে দেখে প্রথমেই সকলের মনে প্রশ্ন আসবে, এই বিরাট দানব আসলো কোত্থেকে! তাকে দেখে কেবল মোসলেমরাই নয়, অমোসলেমরাও এক মুহূর্ত্তে চিনে ফেলবে যে, এই তো এসলামের নবীর বর্ণিত দানব দাজ্জাল (Dajjal)। সকল মানুষেরই তখন আমাদের নবীর উপর এবং এসলামের উপর ঈমান এসে যাবে। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর রসুল বোলেছেন, দাজ্জাল (Dajjal) ইহুদী জাতি থেকে উদ্ভূত হবে এবং আমার উম্মতের সত্তর হাজার (অসংখ্য) লোক দাজ্জালের অনুসরণ কোরবে (দেখুন দাজ্জালের পরিচিতি অধ্যায়ের ৩ নং হাদীস)। দাজ্জাল (Dajjal) যদি রসুলের বর্ণনা অনুযায়ী সত্যিই জ্যান্ত কোন দানবীয় প্রাণী হয় তাহোলে কি কোরে এমন দানব মানব সমপ্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ইহুদী জাতির মধ্য থেকে আসতে পারে? আর মোসলেমরাই কি কোরে আল্লাহকে ছেড়ে একটি দানবকে অনুসরণ কোরতে পারে? তৃতীয়ত, আল্লাহর রসুল বোলেছেন, দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে (অর্থাৎ কপালে) কাফের লেখা থাকবে। শুধু মো’মেন, বিশ্বাসীরাই তা দেখতে এবং পড়তে পারবে; যারা মো’মেন নয়, তারা পড়তে পারবে না (দেখুন দাজ্জালের পরিচিতি অধ্যায়ের ১১ নং হাদীস)। অর্থাৎ কিছু লোক (মো’মেন) দাজ্জাল (Dajjal) কে কাফের বোলে বুঝতে পারবে আর কিছু লোক (যারা মোমেন নয়) দাজ্জাল (Dajjal) যে কাফের তা বুঝতে পারবে না, এবং বুঝতে পারবে না বোলেই বহু সংখ্যক লোক তাকে রব বোলে মেনে নেবে। দাজ্জাল (Dajjal) যদি শরীরী কোন দানবই হয় তাহোলে সবাই তাকে প্রথম দর্শনেই দাজ্জাল (Dajjal) বোলে চেনার কথা। তারপরও সে কাফের কি কাফের নয় এ নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিমত হওয়া সম্ভব? ধরুণ কোন লোকালয়ে বা জনবহুল স্থানে হঠাৎ একটি বাঘ এসে পড়লো; সেখানের অবস্থাটা কি হবে ভাবুন। ছেলে, বুড়ো, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবাই প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পারবে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা কোরবে, তাই নয় কি? অথচ অকল্পনীয় বিরাট, ভয়ঙ্কর একটি দানব, যার বাহনের এক পা পৃথিবীর এক প্রান্তে আরেক পা পৃথিবীর অপর প্রান্তে, তাকে সামনা সামনি দেখেও কেউ চিনবে- কেউ চিনবে না, কেউ তাকে অনুসরণ কোরবে- কেউ কোরবে না, কেউ তার কপালের কাফের লেখা পড়তে পারবে- কেউ পারবে না এ কি হোতে পারে? তাহোলে আর সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে দাজ্জাল (Dajjal) কোন শরীরী বা বস্তুগত দানব নয়, এটি একটি বিরাট শক্তির রূপক বর্ণনা; সেই সাথে এ কথাতেও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে ঐ বিরাট শক্তিটিই হোচ্ছে বর্ত্তমান দুনিয়ার ইহুদী- খ্রীস্টান বস্তুবাদী যান্ত্রিক সভ্যতা। চলবে .............
Posted on: Wed, 07 Aug 2013 09:56:21 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015