দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যামেরিকা দেখলো যে, শত্রুর এরিয়া থেকে যুদ্ধ শেষে ফিরে আসা বিমানগুলোর wing এর চারপাশ আর পেছনের দিকের tail gunner অংশে সবথেকে বেশি ড্যামেজ হয়। তাই তারা ঠিক যে যে অংশে বেশি ড্যামেজ হতো সেই সেই যায়গায় বাড়তি ধাতব বর্ম লাগিয়ে দেয়া শুরু করলো যেন বিমানের ক্ষতি কমানো যায়। বিমানের ওজনের লিমিটেশন থাকার কারণের ইচ্ছা মতো সব যায়গায় বাড়তি বর্ম লাগানো যেতো না, শুধু যেসব যায়গায় খুব বেশি ড্যামেজ পাওয়া গিয়েছিলো শুধু সেসব যায়গায় লাগানো হলো। কিন্তু এতো খরচ করে সব বিমানে বাড়তি এই সুরক্ষা দেয়ার পরেও দেখা গেলো আগে ঠিক যে পরিমাণ বিমান প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছিলো এর পরেও ঠিক তাই হচ্ছে। ইউএস মিলিটারি চিন্তায় পরে গেলো। কি করা যায় তাহলে? শেষে নিজেরা ব্যার্থ হয়ে তারা তৎকালীন কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত বিখ্যাত গণিতবিদ আব্রাহাম ওয়াল্ডকে এই ব্যাপারটা নিয়ে ইনভেস্টিগেট করতে বলল। ডিসিশন থিওরি আর ইকনমেট্রিক্সে ওয়াল্ড এর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। মাত্র কয়েকদিনের ইনভেস্টিগেশন শেষে তিনি ইউএস মিলিটারিকে বললেন যেসব যায়গায় ড্যামেজ হয়েছে সেইসব যায়গায় বাড়তি মেটাল না লাগিয়ে বরং যেসব যায়গায় ড্যামেজ কম হয়েছে সেইসব যায়গায় লাগাও, কাজ হবে। সবাই তো অবাক, এই লোক বলে কি??? তারপরে উনি ব্যাখ্যা করলেন- শত্রু এরিয়া থেকে ফিরে আসা বিমানগুলো আসলে সারভাইভার। তারা শত্রুর বুলেট সারভাইভ করে নিজ বেজে সফলভাবে ফিরে এসেছে। মানে তার ড্যামেজ হওয়া যায়গাগুলো যথেষ্ট শক্ত ছিল বলেই সে সারভাইভ করতে পেরেছে। আর এইসব যায়গা বাদে অন্য জায়গাগুলোতে আঘাত পাওয়া বিমানগুলো আর ফিরে আসেনি, ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং কম ড্যামেজ হওয়া অংশগুলোই বেশি দুর্বল। সেগুলোতেই বাড়তি ম্যাটারিয়াল লাগাতে হবে। শুনে বাকিদের সম্বিত ফিরলো। করাও হলো তাই, কাজও হলো। দুঃখের বিষয় শত শত বিমানকে ক্রাশ থেকে রক্ষা করা এই বিজ্ঞানী শেষে সস্ত্রীক বিমান দুর্ঘটনাতেই মারা গিয়েছিলেন। উপরে ইউএস মিলিটারি যে ভুলটা করেছিলো সেটাকে সাইকোলজির ভাষায় বলা হয় survival bias। এটা মানুষের একটা স্বাভাবিক টেন্ডেন্সি যে তারা সবসময় একটা নির্দিষ্ট প্রসেসের মধ্যে দিয়ে শুধু সারভাইভ করা মানুষগুলোকে দেখেই একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হতে চায়, ব্যর্থদের কথা ভুলে যায়। সেটাকেই বলা হচ্ছে survival bias। অনেকটা আমাদের টিচারদের মত। প্রথম কয়েকজনের সিজি দেখিয়ে বলবে ওরা ভালো করতে পারলে তোমরা পারোনা কেন? আবার প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় ৩০% ছাত্র যে পাস করতে পারেনি সেদিকে খেয়াল নাই, ৩ জন এ প্লাস পাইছে ওইটা দেখাইয়া বলবে প্রশ্ন কঠিন হইলে এরা এ প্লাস পাইলো ক্যামনে? আবার ধরো, তুমি দেখলে যে ভার্সিটিতে তোমার ক্লাসের সর্বোচ্চ সিজিধারী ৩জন ছাত্র একি কলেজ থেকে পাস করে ভার্সিটিতে এসেছে। এটা দেখেই তোমার মনে হবে তাহলে নিশ্চয়ই ওই কলেজটা খুবই ভালো। কিন্তু তুমি ভুলে গেছো তুমি শুধু সাকসেসফুলদের কথাই বিবেচনা করেছো। ওই কলেজের একি ব্যাচে আরও অনেক ছাত্র ছিল যারা হয়তো কোথাও চান্স পায়নি। সুতরাং তুমি আসলে ওই ব্যাচের সব ছাত্রকে ইনভেস্টিগেট না করে শুধু সাকসেসফুলদের কথা বিবেচনা ওই কলেজের মান সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবে না। আমার মনে হয় আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে আমরা খুব বেশি পরিমাণে survival Biased হয়ে পরছি। একদম টপ লেভেলের সফলদের দেখে মাথা কুঁড়ে মরি যে আমার দারা কিছুই হলো না। আবার সমাজের উপরের লেভেলের টাকাওয়ালাদের দেখে ভাবি আমি কতো গরীব। অথচ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ যে আমার থেকে গরীব, অনেক মানুষ দুইবেলা ঠিকমতো খেতে পাচ্ছেনা সেটা ভুলেই যাই। সুখি জীবন যাপনের নিমিত্তে এই ধরণের বায়াসগুলো যেমন selection bias, sampling bias যেগুলো সম্পর্কে আমি আগে বলেছি সেগুলো থেকেও বেড়িয়ে আসা প্রয়োজন। Collected from- Javed Parvez
Posted on: Wed, 03 Dec 2014 14:27:29 +0000