::::::::::নিশ্চই - TopicsExpress



          

::::::::::নিশ্চই পড়বেন::::::::: ভুমিকাঃ যে যাই বলুক ৭ ই নভেম্বর দিনটি বিএনপি ও জামায়াত রাজাকারগুষ্ঠির জন্য বিশেষ উৎসবের দিন হলেও আসলে এটি “মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস”। ক্ষমতালিপ্সু জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ সহ বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কে হত্তা করে ব্যাপক রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। আনেক মুক্তিযোদ্ধা কুরবানি হন এই দিনে, আর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং তাদের গড়া কথিত রাজনৈতিক দলসহ ৭১-এর যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এই দিনটিকে “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি” দিবস নামে ঈদ উৎসব পালন করে আসছেন। প্রকৃত পক্ষে বিএনপির জন্মদিন এই ৭ই নভেম্বর। না বিপ্লব - না সংহতি - কোনটার সাথেই এদের কোন যোগাযোগ ছিলোনা। বরঞ্চ এরা এই দিনটাকে যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী- সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর পুনর্জন্ম দিবস বা ভাগাড় থেকে প্রত্যবর্তন দিবস হিসাবে পালন করলে বরঞ্চ সত্যের কাছাকাছি যাবে। আর সাধারন মানুষ? মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেঈমানী করলো একজন মুক্তিযুদ্ধা, প্রতারিত হলো জনগন - এই বিষয়গুলো দেখার পর - দিনটি জাতীয় প্রতারনা দিবস হিসাবেও পালন করতে পারেন। পূর্ব কথাঃ মুলত ১৯৭২ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে কর্নেল তাহেরে নেতৃত্বে প্রতিবিপ্লবীরা সংগঠিত হয়। এরা সেনাবাহিনীতেও একটা বিরাট প্রভাব ফেলে। তারপর ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্টের হত্যঅআন্ড, সামরিক শাসন আর ৩রা নভেম্বর জের হত্যা - সবই সংগঠিত। অবশেষে ৩ থেকে ৭ ই নভেম্বর দ্রুত দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। কয়েকজন মেজর আর কর্নেলকে নিয়ে খন্দকার মুশতাক দেশে একটা অরাজকতা চালাচ্ছিলো। এই অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধারা খালেদ মুশাররফের নেতৃত্বে একটা প্রচেষ্টা নেয়। কিন্তু জেনারেল ওসমানীর মধ্যস্থতায় মুশতাক আহমদে বেঁচে যায় - কিন্তু জেলে নিহত হন চার নেতা। অন্যদিকে ওসমানীর মধ্যস্থতা মেনে নিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্যটাও পরিশোধ করেন খালেদ মোশাররফ। নেপথ্যের নায়কঃ ৭৫-এর ৭ নভেম্বরে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ভিতর থেকে যে ঘটনা ঘটেছিল তার প্রকৃত নায়ক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে, কর্নেল (অব আবু তাহের বীর উত্তম। তিনিই এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনিই বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন, সেইসঙ্গে জিয়াকে ক্ষমতায়ও বসিয়েছিলেন সিপাহী-জনতার স্বার্থরক্ষা করার শর্তে। সিপাহী বিদ্রোহের শুরু এবং জিয়ার মুক্তিঃ Image রাত ১২টায় সুবেদার মেজর আনিসুল হকের ইঙ্গিতে শুরু হল সিপাহী বিদ্রোহ। ১২ টা থেকেই তাহেরের বিপ্লবী গণবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত সিপাহীরা জিয়াকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে জিয়ার বাসায় চারপাশে সমবেত হতে লাগল। জিয়াকে মুক্ত করতে আসা কয়েকটি ইউনিটের মধ্যে মেজর মহিউদ্দীন (আর্টিলারি, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসি প্রাপ্ত আসামী) ও সুবেদার মেজর আনিসের নেতৃত্বে টু ফিল্ডের কতিপয় সৈন্য সর্বপ্রথম জিয়ার বাসভবনে পৌছায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে জিয়াকে পাহারারত ফার্স্ট বেঙ্গল রেজিমন্টের এক প্লাটুন সৈনিক শুন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে উল্টো দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। গেট খুলার মত সেখানে উপস্থিত কেউ না থাকায় সৈন্যরা গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই স্লোগান দিয়ে বেশ কিছু সৈনিক জিয়ার বাসায় ঢুকে পড়ে। তারা জিয়াউর রহমানকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে পীড়াপীড়ি শুরু করেন। এক পর্যায়ে মেজর মহীউদ্দীন বলেন, স্যার আমরা আপনাকে নিতে এসছি, আপনি আসুন প্রতিউত্তরে জিয়াউর রহমান বলেন, আমি রিটায়ার্ড করেছি। আমি কিছুর মধ্যে নাই। আমি কোথাও যাব না। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মেজর মহীউদ্দীন আবার বলেন, আমরা আপনাকে নিয়েই যাব। আমরা আপনাকে আবার চিফ বানাতে চাই। দোহাই আল্লাহর আপনি আসুন। এভাবেই জেনারেল জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করা হয়। Image তাহেরের জিয়া দর্শন ও আবদারঃ এদিকে জিয়ার মুক্তির খবরে তাহের পুরো অভুত্থানের কৃতিত্ব দাবী করলেন এবং পুরষ্কারস্বরুপ রাস্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে জিয়ার সাথে জিদ ধরলেন। লে: ক: আব্দুল হামিদ লিখেন, জিয়াকে মুক্ত করার কিছুক্ষন পরেই তাহের টু-ফিল্ড রেজিমন্টে ছুটে আসে। তখন রাত প্রায় ২-৩০ মিনিট। ওই সময় জিয়ার কক্ষে গুটিকয় অফিসার: কর্নেল আমিনুল হক, মেজর মহীউদ্দীন, মেজর জুবায়ের সিদ্দীক, মেজর মুনীর, সুবেদার মেজর আনিস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জিয়া ও তাহের উভয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন। জিয়া বললেন, তাহের তোমাকে ধন্যবাদ, আমাকে বাচিয়েছো। তাহের বলল, আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে। এদিকে আসুন প্লিজ, তাহের তাকে নিয়ে কক্ষের একটি নিভৃত কোণে গেল। বহুক্ষন ধরে তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকল। একসময় তাদের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হল। এক ফাকে জিয়া বারান্দায় এসে সুবেদার মেজর আনিসকে কানে কানে বললেন, আনিস সাহেব ওকে কোনভাবে সরিয়ে দিন এখান থেকে। সাবধান বহু পলিটিক্স আছে। তাহের জিয়াকে টু-ফিল্ড থেকে বের হয়ে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যেতে চাইছিল। জিয়া যেতে রাজি হন নি সংগত কারনেই। বেতার ভাষণ ও ক্ষমতা গ্রহণঃ Image টু-ফিল্ডের অফিসেই রেডিও রেকর্ডিং ইউনিট এনে জিয়ার একটি ভাষন রেকর্ড করা হল ভোর বেলা প্রচার করার জন্য। সংক্ষিপ্ত ভাষনে জিয়া ঘোষনা করেন, তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দ্বায়িত্বভার হাতে নিয়েছেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর অনুরোধে তিনি এই কাজ করেছেন। তিনি সবাইকে এই মুহূর্তে শান্ত থেকে নিজ নিজ দ্বায়িত্ব পালন করার আহবান জানান। তিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া অফিস- আদালত, বিমানবন্দর, মিল-কারখানা পুনরায় চালু করার অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ আমাদের সহায়। বিনা বিচারে বীর মুক্তি যোদ্ধা জেনারেল খালেদ কর্নেল হুদা ও হায়দারকে হত্যাঃ খালেদ হত্যা প্রসঙ্গে লে. কর্ণেল হামিদ লিখেছেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাত ১২ টায় বঙ্গভবনে সিপাহী বিপ্লবের খবর পেয়ে জেনারেল খালেদ কর্নেল হুদা ও হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের বাসায় যান। সেখান থেকে শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে যেতে সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, ১০ম বেঙ্গলকে বগুড়া থেকে খালেদই আনিয়েছিলেন তার নিরাপত্তার জন্য। পথে ফাতেমা নার্সিং হোমের কাছে তার গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি হুদা ও হায়দারসহ পায়ে হেটে কর্নেল নওয়াজিসের ১০ম বেঙ্গলে গিয়ে পৌছেন। খালেদের আগমনের খবর পেয়ে তৎক্ষণাত তিনি টেলিফোনে টু ফিল্ডে সদ্যমুক্ত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ইউনিটে খালেদের উপস্থিতির কথা জানান । তখন ভোর প্রায় চারটা, জিয়ার সাথে ফোনে তার কিছু কথা হয় । এরপর তিনি মেজর জলিলকে ফোন দিতে বলেন। জিয়ার সাথে মেজর জলিলের কথা হয়। ভোরবেলা দেখতে দেখতে সিপাহী বিদ্রোহের প্রবল ঢেউ ১০ম বেঙ্গলে এসে পড়ে। পরিস্থিতি কর্নেল নওয়াজিসের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। আফিসার মেসে বসে খালেদ-হায়দার -হুদা সকালের নাস্তা করছিলেন। হুদা ভীত হয়ে পড়লেও খালেদ ছিলেন ধীর, স্থির, শান্ত। হায়দার নির্ভীক নির্বিকারভাবে পরাটা মাংস খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেজর জলিল কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভিতর প্রবেশ করে, সাথে একজন বিপ্লবী হাবিলদারও ছিল। সে চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলল-আমরা তোমার বিচার চাই! খালেদ শান্তকণ্ঠে জবাব দিলেন, ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো। স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো-আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো। খালেদ ধীর স্থির কন্ঠে বললেন, ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো । খালেদ দুহাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন। ট্যারর-র-র-র! একটি ব্রাস ফায়ার । মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার জেনারেল খালেদ মোশারফ যার ললাটে ছিল বীরযোদ্ধার জয়টিকা, মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তমের শিরোপা আর মাথার বাম পাশে ছিলো পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন। কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্রমামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার বীর বিক্রম কর্নেল নাজমুল হুদা। কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন । উত্তেজিত সিপাহীরা কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। প্রশ্ন হচ্ছে জিয়া মেজর জলিলকে কি বলেছিলেন? হত্যা উৎসব? সিপাহী বিপ্লব ছিল হত্যা উৎসব। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেছেন, এই সময়ে সেনাবাহিনীতে অফিসারের সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত লিখেছেন, “এদের মধ্যে হামিদা নামে এক লেডি ডক্টর আর একজন ডেন্টাল সার্জন করিমকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশে হত্যা করা হয়। আর দুজন অফিসার ক্যাপ্টেন আনোয়ার আর লে. মোস্তাফিজ যারা বাংলাদেশ হকি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তাদেরকে টিভি স্টেশনের কাছে তাড়া দিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।” মে.জে. মইনুল হোসেন চৌধুরী লিখেছেন, “ আজও ভাবলে গা শিউরে ওঠে যে, ঢাকা সেনানিবাসের সৈনিকদের যদি সেদিন নিয়ন্ত্রণে আনা না যেত, তাহলে সারা দেশে সামরিক-বেসামরিক পর্যায়ে একটা নেতৃত্বহীন ভয়াবহ উচ্ছৃঙ্খল শ্রেনী সংগ্রাম শুরু হয়ে যেত। সৈনিকদের সেদিনের শ্লোগানই ছিল সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই।’ প্রশ্ন হল, সিপাহীদের মধ্যে আর কারা ছিল। হাবিলদার মেজর আবদুল হাই মজুমদার ছিলেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্য। তার এক বছর জেল হয়েছিল। তিনি দাবি করেন যে, ‘ঐ অফিসারদের হত্যা করেছে পাকিস্তান প্রত্যাগত সৈনিকেরা।’ সন্দেহ নেই, কেবল সিপাহী না, হত্যাযজ্ঞে অফিসাররাও ছিলেন। সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশে এসব হত্যাকান্ড হয়েছিল। আর এই সুযোগ তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত এই সিপাহী বিপ্লবের সময়। বিপ্লবী সৈনিকরা তালিকা তৈরি করে হত্যাউৎসবে মেতে উঠেছিল। মনে রাখা প্রয়োজন, রশীদ-ফারুকরা অনুগত সৈন্যদের ফেলে রেখে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এসব সৈন্য ৩ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল অসহায়। এরাও সক্রিয় হয়ে উঠে ৭ নভেম্বর। পাকিস্তান ফেরতরাও যোগ দেয় বিপ্লবীদের সাথে। সৈনিক - জনতার বিপ্লব, সেই সময় করা ছিল? সৈনিকদের পদভারে টু-ফিল্ড রেজিমেন্ট তখন প্রকম্পিত। এদের মধ্যে বহু সৈনিক দেখা গেল এলোমেলো খাকি ড্রেসে। পায়ে ছিল বুটের বদলে সাধারন জুতা, অনেকের মাথায় টুপিও নাই। জাসদের বিপ্লবী সংস্থার সদস্যবৃন্দ সিপাহী বিদ্রোহের রাতে খাকি উর্দি পরে তারা মিশে গিয়েছিল ক্যান্টনমেন্টের সাধারন জোয়ানদের সাথে। কে বিপ্লবী সৈনিক, কে আসল সৈনিক বুঝা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। তারাই অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছিল। সিপাহীদের সাথে তাহলে জনতাও ছিল। কিন্তু ওরা কারা? জাসদতো ছিলই। আরও অনেকে যুক্ত হয়েছিল। যেহেতু এই মূল পরিকল্পনায় ছিল সাম্রাজ্যবাদ সেহেতু ৭ নভেম্বরে সিপাহী- জনতার অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের লোকেরাও প্রতিবিপ্লবের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল। বামপন্থী অন্যান্য দল আগে কিছু না জানলেও খবর পেয়ে ৭ নভেম্বর মাঠে নেমেছিল। হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন, ‘রাতের মধ্যে আমি কাজী জাফর ও মেননের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, এই অভ্যুত্থানে আমাদের অংশ নিতে হবে। কিন্তু কিভাবে? কারা করছে তাও জানি না। যাই হোক, আমরা ভোর থেকে রাস্তায় থাকবো। সকাল থেকেই আমাদের সকল শক্তিকে সমবেত করে ঢাকার রাস্তায় থাকতে হবে। পরদিন সকাল ৯ টার মধ্যে টঙ্গী থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক মিলের ট্রাক দখল করে ঢাকায় উপস্থিত হল।’ জনাব রনো আরও লিখেছেন, ‘পরদিন যখন অভ্যুত্থানকারী সৈনিকরা ও তরুণ ছাত্ররা নানা ধরণের বিপ্লবী শ্লোগান দিচ্ছে, তখন জুম্মার নামাজের পর একদল লোক খন্দকার মুশতাকের ছবি নিয়ে বের হয়েছিল। এত দ্রুত মুশতাকের ছবি এলো কোথা থেকে? তাহলে আগের রাতেই মুশতাকের ছবি ছাপানোর বা জোগাড় করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল?’ আরও তো অনেকে তৎপর ছিল। সেনা ছাউনিতে তৎপর ছিল স্বার্থান্বেষী অফিসাররা এবং বে-সামরিক পর্যায়ে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী-চরম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীসমূহ। পরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত জিয়াউর রহমানের সঙ্গে একাকার হয়ে এরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে থাকে। জামায়াতসহ যেসব পাকিস্তানপন্থী দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল তারা এই দিন কৈ ছিল। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এরচেয়ে বড় সুযোগ তো ঐ সময় ছিল না। সুতরাং সিপাহী-জনতার সেই বিপ্লবে এরাও ছিল জনতা। নামকরণঃ দিনটিকে যেভাবে নামকরন করা হয়েছে তাতে সিপাহী ও জনতাই যেন এর মূল নায়ক এবং এক মহান উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে। আসলে কি তাই? মধ্যরাতে জিয়াউর রহমানকে কিছুটা কমান্ডো স্টাইলে বিনাবাধায় মুক্ত করার পর সকালবেলা বিপ্লবীদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে শত শত সৈনিক তাদের ইউনিটের ট্রাকে চেপে স্লোগান দিতে দিতে শহরের দিকে ছুটতে থাকে। তাদের হুকুম দেওয়ার, বাধা দেওয়ার কেউ নেই। নতুন শ্লোগান উঠল, সিপাহী জনতা ভাই ভাই। ভয় ভেঙ্গে কৌতুহলী জনতা বের হয়ে আসে ও ধীরে ধীরে সৈনিকের উল্লাসে সামিল হয়ে স্লোগান দিতে থাকে আল্লাহু আকবার। সিপাহী জনতা ভাই ভাই। জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ। বিপ্লবী সুবেদার সারওয়ারের ডাকে ভোর পাচটার দিকে বেঙ্গল ল্যান্সারের ট্যাংকগুলো প্রবল বেগে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়া এলো। সারা রাত তারা শান্তভাবে ক্যান্টনমেন্টের উত্তর কোণে বসে বসে ঘটনা পরখ করছিল। জনতা প্রবল উল্লাসে ট্যাংকগুলো ঘিরে ধরে সিপাহীদের সাথে মিশে গিয়ে নৃত্য করতে থাকে। সিপাহী জনতার উল্লাস ব্যাপক উম্মাদনায় রুপ নেয়। সব ঘটে যাবার পরে এ ভাবেই সিপাহী বিপ্লব কে মোড় নেয়ানো হয় সিপাহী জনতার বিপ্লবে। কোন রেফারেন্সে পাওয়া যায় না যে এতে সাধারন জনতার কোন অংশগ্রহন ছিল। সিপাহীর অবশ্যই অংশগ্রহন ছিল, কিন্তু সেটা সেনা অফিসারদের নেতৃত্বে। কি এমন মোটিভেশন সিপাহী- জনতাকে উস্কে দিল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার জন্য তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। জিয়াউর রহমান ঐ সময় এমন কোন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন না যে সিপাহী-জনতা স্বতস্ফুর্তভাবে তাকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসবে। আসলে সিপাহী-জনতার বানোয়াট নাম দিয়ে এই দিনকে মহান বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে, আদতে আর কিছু না। বন্দিদের সাথে সাথে “নারায়ে তকবির-আল্লাহ আকবর” এর মুক্তি শাহ মোয়াজ্জেমকে জেলে আট্ক করে ছিলেন খালেদ মোশারফ। সৈন্যরা জেলখানায় ঢুকে অনেক জাসদ নেতা, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও তাকে বের করে নিয়ে আসে। তিনি লিখেছেন, তারা (সৈনিকরা) তখন মহাউল্লাশে বলতে থাকল, স্যার বাড়ি যাবেন পরে, আগে রেডিওতে চলেন। গভর্ণমেন্ট গঠন করবেন। মোশতাক সাহেব আবার প্রেসিডেন্ট হবেন। আপনারা বড় মন্ত্রী হবেন। তারপর বাড়ি যাবেন। আপনারা জেলে ছিলেন। জানেন না বাইরে সিপাহী আর জনতা এক হয়ে বিপ্লব করেছি। ভারতের দালালদের খতম করে দেওয়া হয়েছে। তারা মোশতাক সাহেব ও জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতাচ্যূত করে বন্দী করেছিল। আমরা তাদের মুক্ত করে এনেছি। মোশতাক সাহেব রেডিও অফিসে রয়েছেন। এখুনি নতুন সরকারের ঘোষণা দেওয়া হবে।..... নাজিমউদ্দিন রোডের বাড়িগুলোর দোতলা থেকে, ছাদ থেকে আমাদের ট্রাক লক্ষ্য করে ফুল ছুঁড়ছে, মালা ছুঁড়ে মারছে। হাততালি দিচ্ছে। চারদিকে সিপাহী- জনতা জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ‘নারায়ে তকবির-আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি আবার ফিরে এসেছে। জয় বাংলা ধ্বনি তিরোহিত। ভীতিকর রাত পার হতে না হতে, সাত সকালে ফুল আসলো কোথা থেকে? ভারতের দালাল সমাচার ও ধাপ্পাঃ বলতে দ্বিধা নেই, ১৫ই আগস্টের মত, তাহেরের বিপ্লবের একটা বড় উপজীব্য ছিল ভারত বিরোধীতা। কর্নেল তাহের তার জবানবন্দীতেও বলেছেন, তেসরা নভেম্বরের পর কি ভয়ার্ত নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এ জাতির জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল তা সবারই জানা।......এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, খালেদ মোশাররফের পেছনে ভারতীয়দের হাত রয়েছে।’ ইতিহাস সাক্ষী তাহেরের এই কথার কোনো ভিত্তি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতিহাস আরও সাক্ষী বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর খুনীদের সাথে রেডিও স্টেশনে তাহেরও ছিলেন। মেজর ডালিম লিখেছেন ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন চেষ্টা চালাচ্ছে আর্মির মধ্যে কিছু লোকের মাধ্যমে একটি প্রতি বিপ্লব ঘটিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিভক্তি সৃষ্টি করে দেশকে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে ২৫ বছরের আওতায় বাংলাদেশে সরাসরিভাবে হস্তক্ষেপ করে জনাব তাজুদ্দীনের নেতৃত্বে একটি অনুগত সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্যে পরিনত করা (যা দেখেছি, যা বুঝেছি ও যা করেছি, পৃষ্ঠা ৫০৩) । মেজর ডালিম খালেদ মোশাররফের প্রধান উস্কানিদাতা হিসেবে শাফায়াত জামিলের কথা উল্লেখ করেন। ১৫ আগষ্টের অভ্যুথানের সময় যে ভাষ্যটি গুজবের চেয়েও শক্তিশালীভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, যে বিবরণ সে সময় প্রকাশিত হয়েছিল সেটায় ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ও বিরাট ধাপ্পা । ভাষ্যটি এমন -মেজর রশিদ মেজর ফারুক ও মেজর ডালিমের নেতৃত্বে মাত্র ছয়জন জুনিয়র অফিসার তিন’শ লোক সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করে । অভ্যুথানের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছিল, শেখ মুজিব ও তার সহযোগীদের ওপর বিদেশী প্রভাব, সাংবাদিক গোষ্ঠীর সবাই এই ভাষ্যটি গ্রহণ করে । এন্থনী মাসকারেনহাস, লিফশুলজও শুরুতে এই ভাষ্যেই ইমান আনেন (পরে অবশ্য মুজিব হত্যা সিআইএ কানেকশন আবিষ্কারে উদ্যোগী হন ) । বস্তুত ,বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় । তথাপি ২০ আগষ্ট কয়েকজন সাংবাদিক ব্যাংকক হয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়েন কিন্তু ২২ তারিখেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয় । ঢাকায় অবস্থানের পুরো সময়টা তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্তরীণ রাখা হয় । সে সময় বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে অভ্যথানের যাবতীয় তথ্যের সূত্র হয়ে দাড়ান একজন স্থানীয় বাঙালি সাংবাদিক । (সুত্রঃ মুজিব হত্যায় সিআইএ,এশিয়া পাবলিকেশন ,১৯৯৬) ইনি বাংলাদেশে বিবিসি ও রয়টারের প্রতিনিধি আতিকুল আলম, যিনি মুজিব হত্যায় সিআইএ আর মোশতাক চক্রের ভূ্মিকা গোপন করতে মিথ্যা ভাষ্য প্রচার করেন । মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান রেডিওতে কাজ করতেন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন । যুদ্ধের পর বেশ কিছুদিন তাকে জেলখানায় আটক রাখা হয় । পরে শেখ মুজিবের আদেশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় । (দ্র. বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস,অধ্যাপক আবু সাইয়িদ , পৃ ১২২ ) এই সাংবাদিক আর এনায়েতুল্লাহ খান খালেদকে ভারতের এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। লরেন্স লিফশুলজ লিখেছেন-”Two persons within Bangladesh who figured prominetly in slapping the label”Indian agent of Khaled’were the journalists, Atiqul Alam and Enayetullah khan.(pp 64) নভেম্বরের চার ও পাঁচ তারিখে এই সাংবাদিক ঢাকায় কুটনীতিকে মহলে ঘুরে ঘুরে দাবি করেন যে তার কাছে কারান্তরীণ বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও মুজিব মন্ত্রীসভার প্রাক্তন সদস্য তাজউদ্দিন আহমদ- এর লেখা একটি চিঠি রয়েছে। ভারতীয় হাই- কমিশনার সমর সেনকে লেখা কথিত এই চিঠিতে অভ্যুত্থনের প্ল্যান ও প্রস্তুতির পূর্ণ বিবরণ লেখা ছিল। বিদেশি কুটনীতিদের তিনি বোঝান যে, এই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল ‘ভারতপন্থী তাউদ্দিন আহমেদকে জেল থেকে বের করে এনে ক্ষমতায় বসানো। আলমের দেখানো এই চিঠির ফলে কূটনীতিকে মহলে রটে যায় যে খালেদের অভ্যুত্থানে পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে। তার সহযোগী সাংবাদিক বন্ধুদের মতে এধরনের কোন চিঠির অস্তিত্বই ছিল না, পুরো ব্যাপারটাই একটা বাজে প্রচারণা মাত্র। ’৭৫এর নভেম্বরে জাসদের হুমকিতে লন্ডন পালিয়ে যান । পরে হুমকিদাতারা গ্রেফতার হলে ঢাকায় ফিরে আসেন ও জিয়ার সামরিক শাসনের প্রকাশ্য সমর্থক হয়ে উঠেন । ২৭ অক্টোবর ১৯৭৭ দি ফাইনেন্সিয়াল টাইমস জানায় ১০০০ জনেরও বেশি প্রধানত সিপাহি বিশেষ সামরিক আদলতে বিচারের প্রতীক্ষায় আছে । অক্টোবরের পর ৬০০ জনের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়-এই খবর জানা যায় ৭৮ সালের ৫ মার্চ প্রকাশিত দি সানডে টাইমস থেকে। এই সাংবাদিক সাহেব সশস্ত্রবাহিনীতেপাইকারী মৃত্যুদন্ডদানের পরেও শাসকদের হয়ে প্রকাশ্যে ওকালতি করেন । রবিবাসরিয় হলিডেতে ( ৩০ অক্টোবর৭৭) ইনি এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে পথভ্রস্টদের প্রতি সহানুভুতির জন্য গাল দেন । তিনি এই গণ মৃত্যুদন্ডদানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রশ্ন করেন,”বাংলাদেশের কি করা উচিত ছিল ? এদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবে যাতে পরে আরো শক্তি নিয়ে ওরা আক্রমন করতে পারে?” বিবিসির এই সংবাদদাতা জিয়াকে রাজনীতিতে যোগদানের আহ্বান জানান হলিডের নিবন্ধের শেষে। খালেদের বিরুদ্ধে উথাপিত “বাকশালি ও ভারতপন্থী” অভিযোগ খন্ডন করেছেন বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবি ঢাবি’র সাবেক ভিসি ও খালেদা জিয়ার সরকারের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন । তিনি তার ‘Military Rule and the Myth of Democracy” ( UPL,1988 , Page 78) গ্রন্থে এক মূ্ল্যায়নে লিখেছেনঃ “Military sources close to khaled catagorically denied any linkage with India ...” রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন ১৯৯২ সালের ৭ ই নভেম্বর দৈনিক দিনকালে লিখেছেনঃ” খালেদ মোশাররফ ছিলেন একজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা, একজন দেশপ্রেমিক, ভারতীয় স্বার্থের ধারক বা বাহক তিনি ছিলেন না । জেনারেল খালেদ যখন সেক্টর কমান্ডার হিসাবে যুদ্ধ করছিলেন তখন তার রিক্রুটদের অস্ত্র আর প্রশিক্ষন আর খাবার দাবার দিত ইন্ডিয়ান একটা ব্রিগেড। ঢাকা গেরীলার অধিকাংশই উনার নিজের হাতে গড়া। সৈন্য সংখ্যায় তার সেক্টরেই সবচেয়ে বড়। তাই রেশনও অন্যান্যদের চেয়ে বেশী লাগতো। ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার একদিন উনাকে বললেন, খালেদ তোমার সেক্টরে রেশনে অন্যান্যদের তুলনায় বেশী লাগে কেন? আই এম স্যরি এবার থেকে রেশনিং এর জন্যে ইন্ডিয়ান আর্মির কাছে তোমাকে রিপোর্ট করা লাগবে। উনি বললেন। স্যার, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মনে রাখবেন বন্দুকের নল দু-দিকেই ঘোরানো যায়। ঐ ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার আর কোন কথা না বলে চুপ করে গেলেন। এই লোক ভারতীয় দালাল কি করে হন? লজ্জা জনক হলেও সত্তি, ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী-রাও একসময় ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত হয়েছিলেন...... তা ছিল পাক্শক্তির অপপ্রচার, সেই একই ভাবধারায় স্বাধীনতাবিরোধীরা নেমে যায় দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধাকে কলঙ্কিত করার আপচেষ্টা। ওয়াদা ও বিশ্বাসঘাতকতাঃ জিয়া বলেছিল, দেশ সমাজতান্ত্রিক ধারায় চালাবে, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ সমুন্নত রাখবে। তা জাসদের অনেক মূলকথারা সাথে মিলে গিয়েছিল। একজন মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে কর্নেল তাহের আরেকজন মুক্তিযুদ্ধা জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় বসালেও - সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় মক্তুযুদ্ধে অর্জনগুলো। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার শত্রু আর পরাজিত শক্তিকে পূর্নবাসন শুরু করে - অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বর্জণ করে হাত মিলায় রাজাকরদের সাথে। ক্ষমতা হাতে পেয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-মৌলবাদ এবং দেশীয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষায়। জিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করেন ক্ষমতায় বসার শর্তের সঙ্গে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তিনি তার প্রাণরক্ষক তাহেরকে গ্রেফতার করেন, তারপর তার বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বরের ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দোষী করেন এবং এক প্রহসনের বিচার বসিয়ে তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেন। পুরস্কার এর বদলে বুলেট / ফাসিঃ জিয়া ৭ নভেম্বরের কৃতিত্ব এবং নেতৃত্ব নিজে নিয়ে নেন, দিনটিকে ‘সিপাহী- জনতার অভ্যুত্থান’-এর বদলে কথিত বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে প্রচার করেন। আর এর সঙ্গে সঙ্গে সেনা ছাউনিগুলো থেকে বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সিপাহী ও অফিসারদের আটক করে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে গুপ্ত হত্যাকাণ্ড ঘটাতে থাকেন। হাজার হাজার সিপাহী- অফিসার এবং জাসদ সংগঠকদের জেলখানায় আটক রেখে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকে এসব কাণ্ড। শেষের কথাঃ দেশের কি লাভ হল? শুধু মাত্র ক্ষমতার বদল হল। ক্ষমতার লড়াইয়ের বিজয়ী বিএনপি তাই দলীয়ভাবে এই দিন উদযাপন করতেই পারে। কিন্তু এটা তো জাতীয় কোন বিজয় না। জাতীয় ছুটি দেয়াটা অতি বারাবারি নয় কি? এখানে উল্লেখ করতেই হয় যে ক্যাণ্টনমেণ্টভিত্তিক, জনসম্পৃক্ততাহীন বা জনবিচ্ছিন্ন, জবাবদিহিতাহীন, সেনাবাহিনী না হয়ে তখন যদি আমাদের সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী হতো তাহলে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নিহত হতে হতো না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হতো না, দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হতো না, সামরিক শাসন আসতো না এবং মুক্তিযুদ্ধের শত্র“রা ক্ষমতা দখল করতে পারতো না, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত ’৭২-এর সংবিধানও ক্ষত-বিক্ষত হতো না। আর সেজন্যই কর্নেল তাহের বৃহত্তর সৈনিকগোষ্ঠীর সঙ্গে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সম্মিলনে সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সফল পরিণতি ঘটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি, তাদের এদেশীয় এজেণ্ট ও দালালগোষ্ঠী, ’৭১-এর পরাজিত যুদ্ধাপরাধী চক্র এবং স্বার্থান্বেষী মহলগুলো ছিল অনেক বেশী সতর্ক ও সংগঠিত। যে কারণে ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান বিজয়ী হতে বা সফল পরিণতি লাভ করতে পারেনি। এতে বিজয়ী হয়েছে প্রতিশক্তি এবং এর ফলশ্র“তিতে প্রাণ দিতে হয়েছে কর্নেল তাহেরকে, প্রাণ দিতে হয়েছে আরও বহু মানুষকে। আসলে ’৭১-এর পর ১৫ই আগস্টের মত আরও এক গণহত্যাযজ্ঞের মধ্যদিয়ে নিধন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে এবং সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে প্রতিশক্তিকে। আল্টিমেটলি এই সাত নভেম্বর হইলো স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠার বিপ্লব। পনেরো আগস্টের ফিনিশিং টাচ। যার পুরাটাই এক্সপ্লয়েট করছেন জিয়াউর রহমান। বাঙালির প্রত্যাশা যদি পূরণ হতো তাহলে বাংলাদেশ আজ অন্য বাংলাদেশ হতো। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে থাকতো ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের দর্শনে। এই বাংলাদেশে জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী জনগণের বাহিনী ছাড়া কখনই সাম্রাজ্যবাদ এবং তাদের প্রতিভূদের ক্রীড়নক হিসেবে কোন শক্তি থাকতো না, দেশে যুদ্ধাপরাধী বা মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অস্তিত্ব থাকতো না। এমনকি দেশে কথিত ওয়ান ইলেভেন ঘটিয়ে সাম্রাজ্যবাদ-বিশ্বব্যাংক- আইএমএফ চক্রের জয়জয়াকার ঘটানোর অবকাশ থাকতো না, সামরিক শাসকদের সৃষ্ট বিএনপি- জামায়াত জোটকে নানা কৌশলে গণরোষ থেকে রক্ষা করে ফের রাজনীতি করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুযোগও ঘটতো না। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষত- বিক্ষত করে বৃহত্তর জনগণের প্লাটফর্মকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টাও সম্ভব ছিল না। শেয়ার, লাইক,কমেন্টস কিরা আপনার দায়িত্ব,,,,,,
Posted on: Thu, 07 Nov 2013 09:17:37 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015