পারমানবিক বিদ্যুৎ - TopicsExpress



          

পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ October 10, 2013 at 11:54pm গত ২ অক্টোবর২০১৩ রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন প্রধানমন্দ্রী শেখ হাসিনা। ২০২১ সালের মধ্যে এ প্রকল্প চালু হলে জাতীয় গ্রিডে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই কেন্দ্রের পারমাণবিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রযুক্তি সম্বন্ধে কিছু সাধারণ তথ্যঃ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মূলত দুই প্রকার। হাইড্রলিক অথবা জলবিদ্যুৎ এবং থার্মাল বা তাপবিদ্যুৎ। এছাড়া রয়েছে সৌর বিদ্যুৎ। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জ্বালানীর উৎস অনুসারে দুই প্রকার, জীবাশ্ম জ্বালানী বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। জীবাস্ম জ্বালানী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেল, কয়লা বা গ্যাস পুড়িয়ে এবং পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পারমানবিক চুল্লিতে (Nuclear Reactor) তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের দহনে তাপ উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন তাপ বয়লার সিস্টেমের মাধ্যমে পানিকে বাষ্পীভূত করে এবং সে উৎপাদিত বাষ্প টারবাইনকে সক্রিয় করে। টারবাইনের সাথে যুক্ত এক ধরনের জেনারেটর অলটারনেটর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। অলটারনেটরের একটি বিশেষ অংশ মোটর, ইঞ্জিন বা অন্য কোনো উপায়ে ঘোরালে পরবর্তী বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ (Alternating Current) সৃষ্টি হয়। এই ব্যবস্থা যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে। আমরা জানি, আমরা জানি প্রত্যেক পদার্থ পরমাণু নামক অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। প্রতিটি পরমানুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস যাতে প্রোটন ও নিউট্রন থাকে এবং নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে ইলেক্ট্রন। প্রতিটি পরমানু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ অর্থাৎ সমান সংখ্যক ধনাত্মক প্রোটন ও ঋণাত্মক ইলেক্ট্রনের সংখ্যা থাকে। এবং প্রতিটি পরমানুর ভর হচ্ছে নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন ও ইলেক্ট্রনের সংখ্যার যোগফল। নিউট্রনের সংখ্যার তারতম্যের কারণে একই মৌলের বিভিন্ন ভর সংখ্যা হতে পারে। যেগুলোকে ঐ মৌলের আইসোটোপ বলে। তেজস্ক্রিয় কিছু আইসোটোপ আছে যেগুলো বিশেষ অবস্থায় নিজেরাই নিজেদের পরমাণুকে ভেঙ্গে তাপশক্তি বিকিরণ করে। ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, প্লুটুনিয়াম ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হয় ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপ। যার নিউক্লিয়াসে ৯২টি প্রোটন ও ১৪৩টি নিউট্রন আছে। এ পরমানুটিতে একটি নিউট্রন ঢুকিয়ে দিলে অস্থিত (Unstable) আইসোটোপ Uranium-236 এ পরিণত হবে। যা ভেঙ্গে দুটি সুস্থিত (Stable) পরমাণু Krypton ও Barium এ পরিণত হবে। ভেঙ্গে যাবার সময় প্রচুর তাপশক্তি নির্গত হবে এবং দুটি নিউট্রনকে মুক্ত করে দেবে এবং মুক্ত নিউট্রন দুটি নতুন দুটি ইউরেনিয়ামকে ভেঙ্গে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন করবে এবং নতুন আরো চারটি নিউট্রনকে মুক্ত করে দেবে। যতক্ষণ Uranium-235 এর অস্তিত্ব থাকবে ততক্ষণ এ বিক্রিয়া চলতে থাকবে। একে বলে Chain Reaction. এটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তাপশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে পারে। যেমন নিক্লিয়ার বোমা। পারমানবিক চুল্লিতে Chain Reaction কে নিয়ন্ত্রণের জন্য Cadmium দিয়ে তৈরী নিয়ন্ত্রক রড/পাইপ ব্যবহার করা হয়, কারণ Cadmium মুক্ত নিউট্রনকে শুষে নিতে পারে এবং চুল্লির বিভিন্ন ধাপে খুব শক্ত এবং প্রশস্ত কংক্রিট দেয়া হয় যাতে তেজস্ক্রিয়তা বাহিরে আসতে না পারে। চুল্লীর তাপমাত্রাকে কমাতে বা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক পাইপ দিয়ে ইউরেনিয়াম রডকে ঢেকে দেয়া হয়। আর সম্পূর্ণ রিয়েক্টর বা চুল্লীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয় পানি। রিয়েক্টরের তাপে পানি বাষ্পে পরিণত হয় এবং টারবাইনের সাহায্যে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। টারবাইনে ব্যবহারের পর এই বাষ্পকে কুলিং টাওয়ারের মাধ্যমে পানিতে পরিণত করে আবার রিয়েক্টরে ফেরত পাঠানো হয়। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাষ্প চিমনি দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ও নতুন পানি বাহির থেকে সরবরাহ করা হয়। চুল্লীর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যেসব তেজস্ক্রিয় পার্টিকেল প্রস্তুত হয় তারমধ্যে Deuterium ও Tritium অন্যতম। এগুলো পানির হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে নিউট্রন যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়। যেগুলো হাইড্রোজেনের আইসোটোপ। কোনো কারণে রিয়েক্টর বন্ধ করে দিলেও এর ভেতর উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। কারণ পারমানবিক বিক্রিয়া হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া যায় না। তাই পানির প্রবাহ সচল রাখতে হয়। পানির প্রবাহ সচল রাখা না গেলে অতিরিক্ত তাপে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সম্প্রতি জাপানের ফুকুশিমায় ভূমিকম্পে ও সুনামির আঘাতে বিকল্প পাম্পগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চুল্লিতে পানির প্রবাহ সচল রাখা সম্ভব হয়নি। যার ফলে বিস্ফোরণ ঘটে। রিয়েক্টরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে ফুয়েল রড তথা ইউরেনিয়াম রড গুলো গলে গিয়ে রিয়েক্টরের মেঝেতে তেজস্ক্রিয় জ্বালানী ছড়িয়ে পড়তে পারে। রিয়েক্টরের মেঝে ২২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক বিক্রিয়ার (চেইন রিয়েকশন) ফলে তাপমাত্রা ৪০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে রিয়েক্টরের মেঝে গলে গিয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটির নীচে চলে যাবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহের সাথে মিশে যাবে। দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাটির নীচ থেকে সংগ্রহ করা হয়, সেক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া রিয়েক্টরের তেজস্ক্রিয় বাষ্প বাতাসের অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটায়। ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয়ের মাত্রা পরিমাপকঃ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও সম্ভাব্য বিপর্যয়কে পরিমাপ করার জন্য যে স্কেল ব্যবহার হয় তাকে সংক্ষেপে International Nuclear Event Scale (INES) স্কেল বলা হয়। এর প্রণেতা হচ্ছে International Atomic Energy Agency (IAEA)। ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদমাত্রার পরিমানকে এই স্কেলে সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্কেলের ধাপগুলোকে লগারিদম পদ্ধতিতে বাড়ানো হয়েছে, অর্থাৎ ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদমাত্রার পরিমান প্রতি ধাপে দশ গুণ করে বাড়ে। উল্লেখ্য ১৯৮৬ সালের ইউক্রেনে চেরনোবিল দুর্ঘটনাকে স্কেলের সর্বোচ্চ ৭ নম্বর মহা বিপর্যয়, ১৯৫৭ সালে রাশিয়ায় মায়াক দুর্ঘটনাকে ৬ নম্বর বিপর্যয়, সাম্প্রতিক কালে জাপানের ফুকোশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনাকে ৫ নম্বর বিপর্যয় এবং ১৯৮০ সালে ফ্রান্সের সেন্ট লরেন্ট দূর্ঘটনাকে ৪ নম্বর পর্যায়ের বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ পারমাণবিক চুল্লিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার পর সৃষ্টি হয় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য যা জীবজগত ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপদজনক। এসব বর্জ্য কমপক্ষে ১০,০০০ বছর বিশেষভাবে সংরক্ষণ করতে হয় যেন তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে না পারে। পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি হল ব্যবহার ফুরিয়ে যাওয়ার পর পারমাণবিক ফুয়েল রডগুলোর গতি করা। এই ফুয়েল রডগুলো তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা যথেষ্টই ক্ষতিকর এবং এগুলোকে সাধারণ আবর্জনার মত যেখানে সেখানে ফেলে দিলে মহাবিপদ। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ আবর্জনাগুলোকে খেয়ে বা পচিয়ে সারে পরিণত করে বিভিন্ন জীবাণু। যেগুলো বাকি থাকে সেগুলোকে আমরা রিসাইকেল করে অন্য কাজে লাগাই। কিন্তু পারমাণবিক বর্জ্য পচনশীল নয় এবং এটাকে আবার রিসাইকেলও করা যায় না। একমাত্র উপায় হল একে লোকালয় থেকে দূরে এমন কোন স্থানে ফেলে আসা যেখানে এগুলো থাকবে কমপক্ষে কয়েক শতাব্দী এবং এ সময়ের মাঝে এগুলোর তেজস্ক্রিয়তা কমে আসবে সহনশীল পর্যায়ে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এ বর্জ্য নিষ্কাশনের যথার্থ কোনো স্থান নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের নিজস্ব এমন প্রযুক্তি ও সামর্থ্য নেই যে, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কারখানা থেকে যে পরিমাণ পরমাণু বর্জ্য তৈরি হবে তা সঠিকভাবে পরিশোধন করতে পারবে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে সেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৭ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড, ১০ হাজার টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ১০ হাজার দুইশ টন নাইট্রোজেন অক্সাইড, দুই হাজার দুইশ বিশ টন হাইড্রোকার্বন, ৭২০ টন কার্বন মনো-অক্সাইড, ১৭০ পাউন্ড পারদ, ২২৫ পাউন্ড আর্সেনিক এবং ১১৪ পাউন্ড সিসাসহ অন্যান্য বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হবে। তাছাড়া পরমাণু স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ ছাই এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ বাতাস, ভূপৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ করবে। তাই এতো বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপযুক্ত শোধনাগার না থাকলে তা আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের জন্য একদিন কাল হয়ে দাঁড়াবে। খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া এ কেন্দ্রের বর্জ্য ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু সেটি কিভাবে নেবে, ব্যয় নির্বাহ করবে কারা, বর্জ্য পরিবহন ও স্থানান্তরে ঝুঁকি কাদের- তার কোনো উল্লেখ নেই। রুপপুর নিয়ে বিশেষজ্ঞ অভিমতঃ সরকার রুপপুর আণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা (ফিজিবিলিটি) পরীক্ষার উদ্দেশ্যে ৪৫ মিলিয়ন ডলার (অর্থাৎ প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা) বরাদ্দ করেছেন। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের প্রাক্তণ প্রধান প্রকৌশলী ডঃ মতিন সঠিকভাবেই বলেছিলেন যে, সাধারণত কোন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা পরীক্ষার কাজ সরকারের নিজস্ব তহবিল দ্বারাই সম্পাদিত হয়; এবং পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই কেবল তার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য ঋণচুক্তি সাক্ষরিত হয়। এরূপ সম্ভাব্যতা পরীক্ষার বাজেটও কম হয়। অথচ, সরকার ঋণের টাকা দ্বারা এক বিপুল ব্যয়ের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার আয়োজন করেছেন। ৩৬০ কোটি টাকা দ্বারা একটা মাঝারি আকারের তাপবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা যায়। সমীক্ষার জন্য এত বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন কেন? যদি তর্কের খাতিরে ধরা যায় যে, সমীক্ষায় প্রমাণিত হলো যে, রুপপুর প্রকল্প সম্ভব নয়। তখন এই ৩৬০ কোটি টাকার কী হবে? এই টাকা কে ফেরত দিবে? দেড় বিলিয়ন ডলারের ঋণের কী হবে? এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রকাশিত হলো যে, রুপপুর আণবিক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা এখনও পরীক্ষার অপেক্ষায়। অথচ, রুপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার গত ২০১১ সালের ২ নভেম্বর রাশিয়া সরকারের সাথে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি ইতিমধ্যে সাক্ষর করেছেন। যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতাই এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঋণ চুক্তি কী করে হয়? সে ঋণের একটি অংশই উপরোক্ত সম্ভাব্যতা পরীক্ষার জন্য ব্যয়িত হচ্ছে। এভাবে সম্পাদিত সম্ভাব্যতা পরীক্ষা কি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে পারে? পরিবেশগত দিক বিবেচনায় পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে যখন চারদিকে সংশয় সন্দেহ তৈরী হয়েছে তখন এ ঘটনার মাধ্যমে দূর্নীতি ও লুটপাটের সম্ভাবনা নতুন করে যুক্ত করেছে। এদিকে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা দুরূহ ও সমস্যাসংকুল হতে পারে বলে মনে করছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। রূপপুরের ভূতাত্ত্বিক অবস্থা, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও আবহাওয়া বিবেচনা করে তাঁরা এই অভিমত দিয়েছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজে সরাসরি অংশ নিতে যাওয়া বিশেষজ্ঞ কোম্পানি জেএসসি এটমেনার্জিপ্রোকটর মহাপরিচালক মারাত মুস্তাফিন রাশিয়ার পরমাণু শক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট নিউক্লিয়ার ডট আরইউ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের স্থান হিসেবে রূপপুর অত্যন্ত জটিল একটি জায়গা। তাঁরা একটি বিদেশি কোম্পানির এর আগে করা সমীক্ষার তথ্যাদি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন। তাতে তাঁরা দেখেছেন, রূপপুরের ভূতাত্ত্বিক গঠন বেশ জটিল। এটি তাঁরা প্রাথমিক তথ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাবেক পরিচালক (তেজস্ক্রিয় নিয়ন্ত্রণ) জসিমউদ্দিন আহমেদ বলেন, রূপপুর প্রকল্প এলাকাটি একটি ভূচ্যুতির ওপর অবস্থিত। এ ধরনের ভূচ্যুতি ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু বা উৎসস্থল হয়ে থাকে। কাজেই জায়গাটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জসিমউদ্দিন বলেন, ওখানে এখন দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়াও দুরূহ হবে। সরকারি-বেসরকারি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার (৬৪ হাজার কোটি টাকা) থেকে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার (এক লাখ আট হাজার কোটি টাকা যা চলতি বছরের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশের সমান) পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে।(প্রথম আলো, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩) চেরনোবিলের অভিজ্ঞতাঃ ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে ঘটে পারমানবিক দূর্ঘটনা। চেরনোবিল দূর্ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে চেরনোবিল এইডস, চেরনোবিল পা, চেরনোবিল হৃদপিন্ড, চেরনোবিল থাইরয়েড, চেরনোবিল স্মৃতিবিভ্রাট নামের নানা রোগের জন্ম দিয়েছে। এ দূর্ঘটনার কারণে ১৯৯০-২০০৪ সাল পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা জনিত কারণে রাশিয়ায় ৬৭,০০০, বেলারুশে ৫৯,০০০, ইউক্রেনে ৮৬,০০০ সহ সর্বমোট ২১২,০০০ মানুষ মারা যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০৫৬ সাল পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তাজনিত ক্যান্সারে বেলারুশে ১৭,০০০, ইউক্রেনে ১৭,৫৪৬, রাশিয়ায় ১৫,৭৪৮, জার্মানীতে ৫,৭৫৪, রোমানিয়ায় ৩,২৩৬, অষ্ট্রিয়ায় ৩,১৩১, যুক্তরাজ্যে ২,৬৫৪, ইতালীতে ২,৩৩৭ সহ সর্বমোট ৮৯,৮৫১ জন মানুষ মারা যেতে পারে। এছাড়া তেজস্ক্রিয়তার কারণে বেলারুশে ২৬৫,০০০ হেক্টর, ইউক্রেনে ১৩০,০০০ হেক্টর এবং রাশিয়ায় ১৭,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ইতোমধ্যে চাষাবাদের অনুপযুক্ত বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। উন্নত বিশ্বে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ বিশ্বের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৬% আসে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। বিশ্বের ৩১টি দেশের ৪৪০টি পারমাণবিক চুল্লিতে এই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একাই রয়েছে ১০৪টি রিয়েক্টর যেখানে উৎপাদন হয় তাদের ২০% বিদ্যুৎ। ২০১১ সালে সুনামির আঘাতে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এবং এর তেজষ্ক্রিয়তা থেকে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে এ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলো এখন চিন্তা করছে কীভাবে পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা যায়। এসব দেশে শিল্পায়ন, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান এসব কিছুই উচ্চ পর্যায়ের হওয়ায় তাদের মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণও অত্যন্ত বেশি। সেই দেশগুলো এখন বিকল্প পন্থার ব্যবস্থা গ্রহণ সহ বহু অর্থব্যয়ে স্থাপিত তাদের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। তাদের তৎপরতা শুধু যে চিন্তাভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এমন নয়। এ বিষয়ে তারা কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। জাপান তাদের সর্বশেষ পারমাণবিক চুল্লিটি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফুকুশিমার ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর পরিণতি জানার পর থেকে জার্মানিতে জোরদার হয়ে ওঠে পরমাণু স্থাপনা বিরোধী আন্দোলন৷ এক পর্যায়ে জার্মান সরকার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ২০২২ সালের মধ্যে তাদের সকল পারমাণবিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার। তাই সেই লক্ষ্য পূরণে বিকল্প নানা পন্থা নিয়ে এগুচ্ছে জার্মানি। জার্মানি ব্যাপকভাবে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে। পারমাণবিক দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট তেজষ্ক্রিয়তা এবং পরিবেশের ওপর এর সম্ভাব্য ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সবাই কমবেশি সচেতন হয়ে উঠছে। বিশ্বে এ ধরনের প্রকল্পের বিরুদ্ধে জনমত ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত সহ অন্যান্য দেশে রাশিয়া পরিচালিত পারমানবিক প্রকল্পের হালচালঃ পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে ভারতের কুদানকুলমের কেন্দ্রটি। ওই কেন্দ্রও তৈরি হয়েছে রাশিয়ার ঋণ ও যন্ত্রপাতি দিয়ে। কিন্তু কেন্দ্রটিতে রাশিয়ার সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি নিম্নমানের ও ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতে এবং অন্য যেসব দেশে রাশিয়ার যন্ত্রপাতি দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে বা প্রক্রিয়াধীন আছে, সেসব দেশে বিপুল শোরগোল চলছে। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলার সমুদ্র-তীরবর্তী স্থান কুদানকুলম। ভুবনবিখ্যাত পর্যটন এলাকা কন্যাকুমারিকা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরবর্তী ওই স্থানে কেন্দ্রটি স্থাপনের বিষয়ে ভারত-রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয় ১৯৮৮ সালে। ২০০১ সালে কাজ শুরু হয় এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার (ভিভিইআর-১০০০) কেন্দ্রটিতে। একদল ভারতীয় বিজ্ঞানী ও গবেষক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে উদ্ঘাটন করেন, কেন্দ্রটিতে নিম্নমানের সামগ্রী ও ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই পরিদর্শনের পর বিশিষ্ট ভারতীয় বিজ্ঞানী ও গবেষক ভি টি পদ্মনাভন স্ক্যান্ডালস ইন দ্য নিউক্লিয়ার বিজনেস শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সবার দৃষ্টি ঘুরে যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হূৎপিণ্ড হচ্ছে রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল। (আরপিভি) কুদানকুলম কেন্দ্রের সেই আরপিভি তৈরি করা হয়েছে তিন দশকের পুরোনো ও বাতিল নকশার ভিত্তিতে। জিও পডোলস্ক নামের একটি রুশ কোম্পানির সরবরাহ করা অনেকগুলো যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ব্যবহার করা হয়েছে, যা ত্রুটিপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশন—রোস্যটম কুদানকুলম কেন্দ্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করতে নতুন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দাবি করেছে। তাদের দাবি, ফাস্ট-অ্যাকটিং বোরন ইনজেকশন (পিএফআইবিআইএস) করে আণবিক চুল্লির প্রাথমিক শীতলীকরণ সার্কিটে বরিক অ্যাসিডের ঘন দ্রবণ ঢুকিয়ে চুল্লির কার্যক্ষমতা সাব-ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাবে। ভিভিইআর-১০০০ চুল্লিতে এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে চুল্লিগুলোর নিরাপত্তানির্ভরতা অনেকটাই বাড়বে বলে তাদের দাবি। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে তারা মেনে নিয়েছে যে ভিভিইআর-১০০০ চুল্লিতে, বিশেষ করে কুদানকুলমে সরবরাহ করা চুল্লিটিতে সমস্যা আছে। বিশ্বব্যাপী ভিভিইআর-১০০০ চুল্লি সম্পর্কে সমালোচনা তুঙ্গে। এর নিরাপত্তানির্ভরতা সর্বাধুনিক নয়। কুদানকুলমের মতো রূপপুরেও এই চুল্লি ব্যবহার করা হবে। রুপপুরে তুলনামূলক আধুনিক ভিভিইআর-১২০০ কিংবা ভিভিইআর-১৫০০ প্রযুক্তি ব্যবহার না করে ভিভিইআর-১০০০ কেই বলা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এ প্রসঙ্গে বিএইসির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিনের অভিমত, অতি উচ্চ দাম ও উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিয়েক্টরে ত্রুটি থাকা এবং ত্রুটিপূর্ণ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ঘটনা বিরল। ভারতের বিজ্ঞানীরা তবু ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিষয়টি ধরতে পেরেছেন। আমাদের দেশে এটা ধরার মতো লোকেরও অভাব আছে। (প্রথম আলো, ১৭ সেপ্টেম্বর’২০১৩) কেনো রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধীতা করা উচিৎঃ * নিরাপত্তাজনিত কারণঃ যেকোনো পারমানবিক প্রকল্পে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করলেও যেকোনো সময় সামান্য ভুলে ঘটে যেতে পারে বড় রকম দূর্ঘটনা। পারমানবিক প্রকল্পে সবচেয়ে হুমকি ধরা হয় ভূমিকম্পকে। বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্প প্রবণ এবং বন্যা পীড়িত দেশ। রূপপুর প্রকল্প এলাকাটি একটি ভূচ্যুতির ওপর অবস্থিত। এ ধরনের ভূচ্যুতি ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু বা উৎসস্থল হয়ে থাকে। বলা হচ্ছে এ পারমানবিক প্রকল্পটি ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখেছি প্রযুক্তিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দেশ জাপান নিজস্ব পারমানবিক প্রকল্পকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়নি। এবং জাপান এখন তার সবগুলো পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। আর রাশিয়ার ভিভিইআর-১০০০ মডেলের প্রকল্পে নিম্নমানের যন্ত্রাদি সরবরাহের খবর নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এছাড়া পারমানবিক কেন্দ্রগুলোকে ইদানিং নাশকতার টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের হামলা মোকাবিলা করার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। এবং এ ধরনের হামলায় যে বিপর্যয় ঘটবে তা বাংলাদেশের মতো ভঙ্গুর অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি দেশের পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। বাহিরের আক্রমনের কথা বাদ দিলেও দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে দেশের ভেতরের জঙ্গি/মৌলবাদী শক্তিগুলোর টার্গেট হতে পারে এ ধরনের পারমানবিক ক্ষেত্র। ইতিমধ্যে রেল সহ দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় জামাত হামলা চালিয়েছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার জন্য। এছাড়ার রয়েছে ভাইরাস আক্রমনের শঙ্কা। কিছুদিন পূর্বে ইরানের পারমানবিক স্থাপনাতে ভাইরাস আক্রমন করা হয়। এতে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। * গোপন চুক্তিঃ রাশিয়ার সাথে স্বাক্ষরিত পারমানবিক প্রকল্পে সহযোগিতামূলক এ চুক্তি গোপন রাখা হয়েছে। সাধারণত দেশবিরোধী ও জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো গোপন রাখা হয়। তাই নিশ্চিতভাবেই এ চুক্তি নিয়ে সকল রকম সন্দেহের উদ্রেক হওয়াটাই স্বাভাবিক। তেল-গ্যাস নিয়ে বিদেশী কোম্পানীগুলোর সাথে করা চুক্তিতে কোথাও ৮০ ভাগ, কোথাও ৯৬ ভাগ পর্যন্ত মালিকানা ছেড়ে দিতে হয় কোম্পানীগুলোকে। এ চুক্তি মোতাবেক উৎপাদিত বিদ্যুতে রাশিয়ার ভাগ কত সে বিষয়টি জানানো হচ্ছে না। * পারমানবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে পারমানবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার কোনো সুযোগ নেই। যথার্থভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা না হলে এর থেকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। বলা হচ্ছে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে স্পেন্ট ফুয়েল রাশিয়া ফেরত নিবে। কিন্তু এটি নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এজন্য তাদের কোনো চার্জ দিতে হবে কিনা এবং যদি হয় তবে তার পরিমাণ কত? * পানির সরবরাহঃ চুল্লি পরিচালনার জন্য প্রচুর পানি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। এ প্রকল্প সংলগ্ন নদী পদ্মা থেকে এ পানির যোগান দেয়া হবে। দীর্ঘকাল টানা পদ্মার পানি বিয়োগে উক্ত এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ বিপুল পরিমাণ পানি তোলার মাধ্যমে স্থায়ী মরুময়তার সৃষ্টি হবে। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষেঃ প্রথমেই বলে রাখা ভালো শুধু নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে নয় আমাদের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা কি পরিমাণ বিদ্যুৎ পেতে পারি তা একটু জেনে দরকার। - পুরোনো অদক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনগুলোকে নবায়ন করে ২০০০ মেগাওয়াট - কো-জেনারেশনের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট - নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে ১০০০ মেগাওয়াট - লোড ব্যবস্থাপনা ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে ন্যূনতম ১০০০ মেগাওয়াট সাশ্রয় - ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতো ৪৫০০ মেগাওয়াট। সাশ্রয় কিংবা উৎপাদন বৃদ্ধি করে সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ১২ মাসের মধ্যে সিস্টেমের নির্ভরশীলতা নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি করা যেত - আর এ কাজে সর্বমোট ব্যয় হতো সর্বাধিক ৩০০০ থেকে ৪০০০ কোটি টাকা যা লুটের উদ্দেশ্যে দেওয়া রেন্টাল খাতের বার্ষিক ভর্তুকিতে প্রদত্ত ২৮,০০০ কোটি টাকার মাত্র ১৪%। এরপরও আমরা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধী নই। কিছু প্রস্তাবনাঃ - বাংলাদেশের মতো ঘনজনবসতিপূর্ণ ও দূর্বল অর্থনীতির দেশের জন্য দরকার পরিবেশ বান্ধব ও কম খরচে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নীতি। - এক্ষেত্রে নিজস্ব জ্বালানী সম্পদ তেল-গ্যাস-কয়লার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। - বিদেশী কোম্পানীকে সম্পদ উত্তোলনের দায়ে দেশের তেল গ্যাস সম্পদ তুলে দেয়া বন্ধ করতে হবে। - দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তেল-গ্যাস-কয়লা উত্তোলন করতে হবে। - সমুদ্র বক্ষের আবিষ্কৃত গ্যাস সম্পদ উত্তোলনের ভার বিদেশী কোম্পানীকে দেয় যাবে না। - এক্ষেত্রে বাপেক্স, পেট্রোবাংলার মতো সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ বিকাশে সরকারী বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। - কুইক রেন্টালে ভর্তুকি দিয়ে বেসরকারি কোম্পানীর মালিক গোষ্ঠীর পকেট ভর্তি করা বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে আরো বিস্তর আলোচনা দরকার। যা এখানে পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক হবে না। সহায়িকাঃ পারমাণবিক বিদ্যুৎ: আধুনিকতার উপলক্ষ্যে ধ্বংসের আয়োজন Dewan Mowdud Rahman (ncbd.org/?p=723) somewhereinblog.net/blog/Zobair7/29353001 cute-fun.blogspot/2011/03/blog-post_15.html prothom-alo/international/article/47667/%20%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%20%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7_%20%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%BE%20%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95_%E0%A6%9A%20%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BF_%E0%A6%AC%20%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%AA%20%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%20%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE kalerkantho/print_edition/index.php? view=details&archiev=yes&arch_date=14-01- 2012&feature=yes&type=gold&data=news&pub_no=750&cat_id=3&menu _id=75&news_type_id=1&index=2 পারমাণবিক বিদ্যুৎ: আধুনিকতার উপলক্ষ্যে ধ্বংসের আয়োজন(ncbd.org/?p=723) dw.de/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%97-%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95/a-15649292 finance.priyo/node/5129 shaptahik/v2/index.php?DetailsId=6100 prothom-alo/opinion/article/47892/%E0%A6%AD%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8E_%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE greenmagz.info/rooppur-nuclear-power-plant/ ncbd.org/?p=719 somewhereinblog.net/blog/xamil88/29616187 blog.priyo/hasan-kamrul/2011/06/02/2875.html
Posted on: Sun, 20 Oct 2013 06:22:18 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015