পরকীয়ার টানে ৩০ বছর বয়সী ছেলেকে হত্যা! এর নামও কি প্রেম! এই বয়সে প্রেমের টানে ৩০ বছর বয়সী ছেলেকে হত্যা? কিন্তু পুলিশ বলছে ঘটনা তাই। পাষণ্ড ওই মা নিজেই স্বীকার করেছেন। পুলিশ ওই পাষাণীসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানীর ডেমরায় পাথর ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মায়ের পরকীয়া। মায়ের পরিকল্পনাতে প্রেমিক ও তার সহযোগীরা হত্যা করে কামরুজ্জামানকে। হত্যার পর রাস্তার পাশে লাশ ফেলার সময়ও মা দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর লাশ ফেলে যাওয়ার সময় খুনিদের ১০ হাজার টাকাও দেন পাষাণী এই মা। পরে হত্যার দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করেন কামরুজ্জামানের স্ত্রী নূরজাহানের ওপর। কিন্তু ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের তদন্তের চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি পুলিশ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মা মরিয়ম বেগম (৪৫), তার প্রেমিক আজিজুল হক ওরফে আজিজ (৫০), প্রেমিকের দুই সহযোগী তাফাজ্জল হোসেন (৬৫) ও মঞ্জুরুল ইসলামকে। আজ শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, খালাত বোনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করতে চেয়েছিল কামরুজ্জামান। মা তাতে রাজি ছিল না। বিয়ে হয় অন্য জায়গায়। এ নিয়ে কামরুজ্জামানের সাথে মা মরিয়ম বেগমের সম্পর্ক ভালো ছিল না। এক পর্যায়ে মরিয়ম বেগমের প্রেম ও অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পারে কামরুজ্জামান। এ নিয়ে সে তার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ ও গায়ে হাত তোলে। এরপর মরিয়ম বেগম কামরুজ্জামানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। চলতি বছরের ১২ আগস্ট রাত ৮টার দিকে মরিয়ম বেগম পরিকল্পনা অনুয়ায়ী শরীর অসুস্থতার কথা বলে ডাক্তার দেখানোর নাম করে কামরুজ্জামানকে নিয়ে খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে যান। সেখানে আগে থেকেই প্রেমিক আজিজ ও তার দুই সহযোগী একটা মাইক্রোবাস নিয়ে হাজির ছিল। কামরুজ্জামান ফোনে কথা বলার জন্য নিচে নামেন। কামরুজ্জামানকে আজিজ চিনলেও তিনি আজিজকে চিনতেন না। মরিয়ম ফোন করে বিষয়টি পুনরায় প্রেমিক আজিজকে জানিয়ে দেন। এরপর আজিজ কৌশলে ও ব্যবসার কথা বলে কামরুজ্জানের সাথে সখ্য গড়ে তোলে। পরে চা খাওয়ার কথা বলে তাতে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেয়। এরপর মাইক্রোবাসে বসে কথা বলার এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান কামরুজ্জামান। তারপর খিলগাঁয়ের অন্ধকার কয়েকটি গলিতে গাড়ি নিয়ে ঘুরে। এর মধ্যে গাড়ির সিট বেল্ট দিয়ে গলায় চেপে ধরে কামরুজ্জামানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এর মধ্যে মরিয়ম বেগম বের হয়ে চলে যায়। পরে ডেমরার চিটাগাং রোডে শুকুরশী নামক স্থানে কামরুজ্জামানের লাশ ফেলে দেয়া হয়। তখন মরিয়ম বেগম একটু দূরেই দাঁড়িয়ে সব দেখছিলেন। কাজ শেষে চলে যাওয়ার সময় হত্যাকারীদের ১০ হাজার টাকাও দেন মরিয়ম। হত্যাকাণ্ডের পর মরিয়ম তার দুই মেয়ে আরিফা ও মারুফার সাথে আলোচনা করেন। তখন তিনি ঘটনাটি কামরুজ্জামানের স্ত্রী নূর জাহানের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর কামরুজ্জামের বাবা আশোক আলী বাদি হয়ে মামলা করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। গত ১ সেপ্টেম্বর মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর হয়। এরই এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাটি উদঘাটনে সমর্থ হন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খিলগাঁও এলাকা থেকে আজিজকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রংপুর কোতোয়ালি থেকে তাফাজ্জল হোসেনকে এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত মরিয়ম বেগমের ডেমরায় নিজের বাড়ি রয়েছে। আর প্রেমিক আজিজের খিলগাঁওয়ে নিজের বাড়ি আছে। সে গাড়ি চালক এবং বিভিন্ন ধরনের দালালির ব্যবসা করে। আজিজের দুই সহযোগী তাফাজ্জল ও মঞ্জুরুল বিভিন্ন জায়গায় কবিরাজি করে। প্রেমের সূত্রপাত সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ফোনে মিছকল থেকে আলাপ। সেখান থেকে প্রেমের সূত্রপাত। এরপর অনৈতিক সম্পর্ক। আজিজের স্ত্রীর বয়স হয়ে যাওয়ায় এবং মরিয়ম বেগমের স্বামীর অসুস্থতার কারণে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। আর সে কারণে তারা ডেমরায় একটি ফ্যাটও ভাড়া নেন। নিহত কামরুজ্জামান পাথর ব্যবসায়ী ছিলেন। Khan Md Motiur Administered ফেসবুক টিপস
Posted on: Fri, 03 Oct 2014 17:44:59 +0000