পৃথিবী যত বদলাচ্ছে, শুধু - TopicsExpress



          

পৃথিবী যত বদলাচ্ছে, শুধু বদলাচ্ছে বললে ভুল হবে, সুপার ফাষ্ট গতিতে বদলাচ্ছে, মানুষের অন্যান্য সব রোলর মত মা রোলটাও বদলাচ্ছে। তৈরী হচ্ছে নিত্য-নতুন কনফিউশান। কী রকম? একটা উদাহরণ দেই। আম্মুদের সময়ে মা মানে ছিলো, স্রেফ মা। যিনি বাড়ির মেইন, কারণ বাপরা মোটামোটি বাইরেই থাকতো। সন্তানদের সাথে বাপদের সম্পর্ক বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অনেকটা ছিলো তোর বাপ আসুক! এর মধ্যেই সীমিত। বাপ বাসায় আসলে সব সিধা। কেউ পড়ছে, কেউ ঘরের কাজ করছে, যার কিছু করার নাই সেওও তখন চুপচাপ কোনো কোণার ভিতর, যেন বাপের গুরুগম্ভীর ধমক শুনতে না হয়। তো, বাসা/বাড়ি মানেই ছিলো মা। মা সব ছেলে মেয়ে দেখছেন। মা সংসার সামলাচ্ছেন, মা এই করছেন, মা ঐ করছেন। চব্বিশ ঘন্টা যে মানুষ রোবটের মত এই সংসার নামক ইন্সটিটিউশানটাকে তদারকী করে রাখতেন, অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ইন্সটিটিউশানের সাথে সম্পর্ক দেখাশোনা করে রাখতেন, তার নাম ছিলো মা। তার আর আলাদা কোনো পরিচয়ের দরকার পড়েনি। কিন্তু এখন? আমাদের সময়ে এসে দেখেছি, যখন কোথাও আমাদের বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করা হতো, তোমার বাবা-মা কী করেন? মা হাউজ ওয়াইফ বা মা মাত্র অমুক ক্লাস পর্যন্ত পড়েছেন এই কথাটা বলার সময় সবাই কেমন তাড়াহুড়া করে দ্রুত বলে শেষ করে দিতো, বা অনেকে শুধু বাবার কথা বলেই শেষ, মার কথা কিছু বলতোনা। যাদের মা কিছু করতো, বা যাদের মার হায়ার ডিগ্রী আছে তাদেরকে দেখতাম চোখ মুখ ফুলিয়ে গর্ব করে বলতো, আমার মা অমুক ভার্সিটী থেকে পড়েছে, বা আমার মা অমুক কাজ করে। [এহহেম, আমি নিজেও খুব গর্ব নিয়ে বলতাম, আমার মা ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়েছে!] বিয়ের পরে প্রথম মেয়েদের মা বিষয়ক আইডেন্টিটি ইস্যুটা ভাল করে খেয়াল করা শুরু করি। এবং টের পাই, প্রচুর খালা-চাচী, আন্টি, আপু, ভাবীরা কিছু না কিছু করছেন, এবং যখন কারণ জানতে চাই, খুব কমন দুটা উত্তর পেতাম, এক-ছেলে মেয়ে বড় হয়ে মানুষকে কী বলবে ওদের মা কী করে? দুই-নিজের একটা পরিচয় লাগবেনা? আশ্চর্য্য, আমি কি স্রেফ বাসার কাজের বুয়া? টের পেতাম, মার রোল-ভূমিকা আস্তে আস্তে কীভাবে যেন চেইঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা নিজেরাও চায় তার মার একটা নিজস্ব পরিচয় থাকুক। মা-কে কোনো না কোনো এংগেলে এক প্রকার স্বাধীন, কনফিডেন্ট দেখতে ছেলেমেয়েরাও পছন্দ করে। গ্লোবালাইজেশান যে ধারায় জেনারেশন চেইঞ্জ হচ্ছে, তাতে চেইঞ্জ হচ্ছে তাদের conventional জীবন বোধ, চিন্তা-ভাবনা। আর যে কোনো চেইঞ্জ আসে অনেক প্রসেসের ভিতর দিয়ে। সেই প্রসেসের মধ্যে এখন আশেপাশে দেখি, অনেক মারা তাদের এই নতুন রোলের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে অনেক ধরনের কনফিউশান, অপরাধবোধে ভোগেন। খুব স্বাভাবিক, কারন সমাজ এবং চারপাশ যে কোনো চেইঞ্জের প্রথম সমালোচক। এক্ষেত্রে একজন Neo-globalized মাকে তাই মানসিকভাবে চরম সব Dilemmaর ভিতর দিয়ে যেতে হয় নিজের রোল-কে ডেভেলপ এবং এডপ্ট করে নিতে গিয়ে। সত্যি বলতে আমি নিজেও এই Dilemma কম ফেইস করিনি, এখনো করে যাচ্ছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমার মধ্যে দুটো বিষয় কাজ করে। এক- আমার সবার প্রথম পরিচয় আমি মানুষ। কোরানে যখন আমি মানুষ হিসেবে আমার রেস্পন্সিবিলিটি খুঁজতে যাই, তখন যেসব ক্ষুদ্রতর এবং বৃহত্তর দায়িত্ববোধের কথা পড়ি, তখন আপনাতেই টের পাই, নিজের মা পরিচয় কিছুতেই আমার মানুষ পরিচয়ের আগে আসা উচিত না। এবং সেক্ষেত্রে একজন মানুষ হিসেবে আমার সম্পূর্ণ পটেনশিয়ালের রেস্পনসিবল ওয়েতে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করার জন্য আমি দায়বদ্ধ। ধরুন, একজন মেয়ে দারুণ ক্যালিউগ্রাফী করতে পারে, এটা তার প্রতিভা, যা কিনা সে খুব সেনসিটিভ এবং চরম-দরকারী শিল্প ও সাহিত্য ক্ষেত্রে কনট্রিবিউট করতে পারে। এখন সে যদি এই প্রতিভাকে স্রেফ মা হওয়ার কারণে চাপা দিয়ে রাখে, কাজে না লাগায়, আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এ মনে হয় ইসলাম এটাকে কোনোভাবেই সমর্থন করেনা। কারন মৃত্যুর পর যখন মানুষ হিসেবে নিজের পটেনশিয়াল-কে কতটা কাজে লাগিয়েছো জিজ্ঞেস করা হবে, তখন ওহ, আমি বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে গিয়ে আর কিছু করতে পারিনি উত্তরটা মনে হয়না কাজে আসবে। দুই- ইতিহাসের কোনো phase-এই কোনো context-এই কোনো মারাই চব্বিশ ঘন্টা তাদের ছেলেমেয়েদের পিছনে লেগে থাকেন নি। দূরের উদাহরনের দরকার নেই, আমাদের নিজেদেরই উদাহরন দেই। বৃটিশদের সময়ে বাংলাদেশ তার মসলিন কাপড়ের হোম-প্রোডাকশানের জন্য বিখ্যাত ছিলো। এই কাপড়ের হিষ্ট্রি খুঁজতে গেলে দেখবেন, ঘরে ঘরে মেয়েরা-মহিলারা দিনের বিশাল একটা সময় এই কাপড় প্রোডাকশানের সাথে জড়িত ছিলো। যারা এই কাজ করতোনা, তারা হয় ক্ষেত-খামারি করতো, বা হাঁস-মুরগী-গরু-ছাগল পালতো। এর প্রত্যেকটা কাজেরই মেইন একটা অংশ হয় বাড়ীতে, মেয়ে-মহিলাদের তদারকীতে। সেই বৃটিশ আমল থেকে এখনো গ্রামে মহিলাদেরকে দেখবেন, যার কিচ্ছু নেই, তারও বাড়ির পিছনে শাক-সব্জী আছে, অন্ততঃ কয়েকটা মুরগী আছে যেগুলো ডিম পাড়ে। তাও যদি না থাকে তাহলে গিয়ে দেখুন সেই মহিলা অন্য বাড়িতে গিয়ে কামলা দেয়। সমস্যা হলো, urbanizationর সাথে সাথে শহরে যত দেয়াল উঠেছে, মেয়েদের ইনফর্মাল কাজের ক্ষেত্রও ততটা সীমিত হতে হতে শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। এখন আমরা হাউজ-ওয়াইফ বলতে যেটা বুঝি, কোনো দেশেই কোনো সমাজেই এই হাউজ ওয়াইফ কনসেপ্টের সাথে মিলে এমন কোনো রোল কোনো মহিলাদেরই ছিলোনা, অন্ততঃ আমি যতটুকু জানি। তবে শেষ পর্যন্ত পুরো ব্যপারটা এসে দাঁড়ায় নিজস্ব কঠিন ব্যালেন্স (যা কিনা সাথে নিয়ে আসে অনেক কম্প্রোমাইজ এবং স্যাক্রিফাইজ) আর পরিবারের অন্যান্য সদস্য-সদস্যাদের আন্তরিক সহযোগীতায়। এ দুটো ছাড়া Neo-globalized motherhood identity মেয়েদের বারটা বাজিয়ে ছাড়বে!
Posted on: Thu, 24 Oct 2013 01:49:26 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015