প্রিয় সনাতন ধর্মাবলম্বী - TopicsExpress



          

প্রিয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই ও বোনেরা, নমস্কার, আমরা এ দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে পর্যবেক্ষন করছি যে, গত এক বছর ধরে তথাকথিত ফেসবুক ইস্যু, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইত্যাদি বিভিন্ন ছুতোয় এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, খুন-ধর্ষণ-ধর্মান্তকরণ, দেশ ত্যাগে বাধ্য করার যে লেলিহান শিখা দাবানলের মত সারা দেশকে গ্রাস করে চলেছে, প্রায় বিনা বাধায় বিনা প্রতিকারে ভষ্মিভুত করে চলেছে সাতক্ষীরা থেকে পুটিয়া, নোয়াখালী থেকে দিনাজপুর, খূলনা,বরিশাল,ঢাকা,টাঙ্গাইল সহ সারাদেশে হিন্দুদের ঘরবাড়ি , ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান-দেবালয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দখল হচ্ছে দিনে-রাতে। স্রোতের মত দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে বিচার-বঞ্চিত মানুষ। যথাযথ রাষ্ট্রীয় ভুমিকার অভাবে নির্যাতিত মানুষগুলি না পাচ্ছে ঘুরে দাড়ানোর সাহস, না পারছে সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করতে। শুধু একবুক চোখের জলে আঙ্গিনার তুলসী তলায় শেষ প্রনাম জানিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত দেশান্তরে। মাইনোরিটি ওয়াচের সমীক্ষা অনুযায়ী শুধুমাত্র ২৮/০২/২০১৩ইং থেকে ২৮/০৩/২০১৩ইং পর্যন্ত এদেশে সম্পূর্নভাবে ধ্বংস করা হয়েছে ১৮০টি মন্দির, আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে ১৫৪টি, সম্পূর্ন ধ্বংস করা হয়েছে ২৭৭টি বসত বাড়ি এবং আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে ২১২টি , লুটপাট ,অগিড়বসংযোগ করা হয়েছে ৫৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে , নারীর সম্ভ্রম হানি হয়েছে ৯ জনের, দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে ২০১২টি পরিবার, নিহতের সংখ্যা ৩, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ২৮জন, খোলা আকাশের নীচে বসাবাস করছেন ২৯০টি পরিবার, আর্থিক ক্ষতি আনুমানিক ১৭০ কোটি। বন্ধুগন, সরকার আমাদের নিরাপত্তায় সক্রিয় হতে না পারলেও সক্রিয় হয়েছেন অন্য একটি ক্ষেত্রে, ” মরার উপর খাড়ার ঘা” এর মত সরকার ” দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১৩” শিরোনামে একটি আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্ত করে ফেলেছেন। এবারই পাশের জন্য তা সংসদে উঠতে পারে। প্রস্তাবিত আইনের এই বিলটি বিশ্লেষন করলে দেখা যায় এটি নগ্ন ভাবেই হিন্দু/সনাতন শাস্ত্র ও স্বার্থ বিরোধি একটি দুরভিসন্ধিমূলক আইন এবং সংবিধান পরিপন্থী। শত বৈষম্য , অত্যাচার-অবিচার,বঞ্চনা সত্ত্বেও হিন্দুদের শেষ আশ্রয় স্থল, শেষ মিলন বিন্দু ,নিজ পরিচয়ে টিকে থাকার শেষ ”লাইফ লাইন” মঠ, মন্দির, দেবোত্তর সম্পত্তিসমূহ যা এতদিন ভগবান কিংবা দেবতার সন্তুষ্টির জন্য প্রচলিত বিধি বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছিল। এই আইনের প্রস্তাবনা সুকৌশলে সেই দেবোত্তর সম্পত্তি, মঠ-মন্দির সমূহ(আইনের ২ ধারা উপধারা (৭), (৮), (১১), (১২), (১৪), (১৬), (১৮), (২৩) এবং তৎসহ ধারা ৪(২),৬(২),৭,৮,৯, ১০(৭), ১১, ১২, ১৭, ১৮, ১৯, ২২, ২৫, ২৬,২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৫ এবং ৩৬ অনুযায়ী ভগবানের শ্রীবিগ্রহের অধীন থেকে প্রশাসনের দখলে আনার এবং ভবিষ্যৎ নাস্তিকতার অক্টোপাসে সমাজকে ঠেলে দেওয়ার হীন প্রচেষ্টা রয়েছে (আইনের ৩৯ ও ৪০ ধারা) । এ আইনের মাধ্যমে গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, সাধু-মোহন্ত, সেবায়েতরা মুক্তভাবে ভগবানের সেবা আরাধনা ও প্রচার করতে পারবেন না। তারা হবেন বেতনভুক্ত কর্মচারী আর নিয়ন্ত্রক হবেন সরকার/বোর্ড। ফলে ভগবানের বিধান নয,নিয়োগকর্তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ইশারাতেই সেবায়েতদের চালাতে হবে মন্দির ও মঠ। অর্থাৎ ভগবানের পূজা বাদ দিয়ে সরকারের পূজা করতে হবে। অন্যথায় চাকরি হারাবেন ও বিতাড়িত হবেন সেবায়েত। নিয়োগ কর্তা তার পছন্দের ভৃত্য নিয়োগ করে নিজের ইচ্ছাতেই চালাতে পারবেন ভগবানের মন্দির। ধর্মের সাথে কি ধৃষ্টতাপূর্ন পরিহাস! ধর্মীয় অনভুতিতে কি নিষ্ঠুর/চুড়ান্ত আঘাত! একবার ভেবে দেখুন। (আইনের ৪১ ধারা) বলা হয়েছে- মন্দিরের আয়ের একটা অংশ প্রশাসনকে দিতে হবে। এটা অশাস্ত্রীয় ও পাপকাজ। ভক্তরা ভগবানের সেবার জন্য যে দান করেন তা শুধুমাত্র ভগবানের সেবায় ব্যয় করা যায়, অন্য কোন কাজে নয়। আইনের (ধারা ৫৩) অনুযায়ী সরকার যে কোন সময়ে প্রয়োজনে Acquisition and Requisition of Immovable Property Ordinance, 1982 (Ordinance No-2 of 1982) এর বলে যে কোন মঠ, মন্দির হুকুম দখল করে যে কোন কাজে লাগাতে পারবেন। এটা প্রচলিত আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। অথচ সরকারের একাধিক আইনে বলা আছে- “সরকার মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, প্যাগোডা, শ্মশান, কবরস্থানের জায়গা কোনরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সরকার মুখে সংখ্যালঘুদের মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আর সুকৌশলে হিন্দু অত্যাচার বাড়াতে দুষ্টুদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক দিক দিয়েও আঘাত করার পাঁয়তারা করছে। যাতে হিন্দুরা নিজেরাই দেশ ছেড়ে আরো দ্রুত গতিতে পালায়। ”তাই আর বলার অপেক্ষা রাখে না সনাতনধর্ম বিদ্বেষী ঘৃন্য এই আইন পাস হলে তা এদেশের হিন্দুদের দেবস্থানের উপর কত ভয়ংকরভাবে প্রয়োগ হবে। এ আইনের (ধারা ৫৬) অনুসারে এ ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কোন আইনের সিদ্ধান্ত ও কার্যাবলীর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে কোন মামলাও করা যাবে না । হিন্দু ও হিন্দু স্থাপনা নিশ্চিন্ন করার কী ঘৃণ্য ও নির্লজ্জ প্রস্তাবনা! সংবিধান অনুযায়ী এ দেশে কেউই আইনের উর্ধ্বে নন অথচ হিন্দুদের উদারতার সুযোগে এ আইনটি বিনা বাধায় হিন্দুদের ধর্মস্থান নিয়ে যখন যা খুশি করার ব্লাংক চেক দিচ্ছে সরকারের হাতে। ইতিমধ্যেই রাজধানীসহ সারা দেশের অজস্র মন্দিরের জায়গায় গড়ে উঠেছে মার্কেট, অফিস, মসজিদ, মাদরাসা এবং ব্যক্তিগত ভবন আর এবার এ আইনটি পাস করিয়ে নিতে পারলে পরবর্তী অবস্থা কি হবে একবার ভাবুন! আইনের ৪(২) ধারা অনুযায়ী বোর্ড মন্দিরের সম্পদ বিক্রী করে দিতে পারবে। অর্থাৎ আমরা অনায়াসে ভাবতে পারি এ আইনের মাধ্যমে সরকার অবশিষ্ট সম্পত্তি ও বিভিন্ন অজুহাতে বিক্রিকরে দেবেন। এ আইনের ৮(২) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক জেলায় মঠ মন্দির পরিচালনা কমিটির প্রধান থাকবেন জেলা প্রশাসক, এছাড়াও কমিটিতে থাকবেন আর.ডি.সি (সদস্য সচিব) ,এস.পি এবং আরও ৮ জন ব্যাক্তি (বলাই বাহুল্য এই ৮ জনই রাজনৈতিকভাবে মনোনিত হবেন)। সনাতন ধর্মীয় বা আর্য প্রতিষ্ঠান চালাবে অনার্য! এটা অসম্ভব। এটা চিন্তাও পাপ। রুখে দিতে তৈরি থাকা জরুরী। সরকার ইতিমধ্যেই প্রায় ৭৫% দেবোত্তর সম্পত্তি মঠ-মন্দির অর্পিত ও অনাগরিক সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করেছে। তাছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যে যেখানে থেকে পেরেছে যতখানি পেরেছে দখল করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের অবৈধ তালিকা করণের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা নিতে ডি.সি, আর.ডি.সি এবং এস.পি সাহেবরা সরকারের বেতনভুক্ত হিসাবে সরকারের দিকে দেখবেন নাকি ভিন্ন ধর্মের মন্দির, মঠের স্বার্থ দেখবেন? এটা জানতে হলে একবার মন্দির ভিত্তিক শিশু শিক্ষা দর্শন করুন, যেখানে ৫০% কর্মকর্তা, কর্মচারী, বোর্ড সদস্য অনার্য বা অহিন্দু। টাকা আত্মসাতের যেন এক অভয়ারণ্য। অপেক্ষাকৃত নিম্নপদস্থ হিন্দুরা চাকরীর ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না। পাঠদানও চলে অনার্যদের ইচ্ছামত। এ আইনের পর অবশিষ্ট দেবোত্তর মঠ-মন্দিরের অবস্থা কি হতে যাচ্ছে তা আর কারো কাছে অস্পষ্ট নয়। তাছাড়া এই কমিটির অধীনে বেতনভুক্ত সেবায়েত আদৌ কি ভগবানের সেবা পূজা সুষ্ঠু ভাবে করতে পারবেন ? পারবেন কি ভগবানের মহিমা প্রচার করতে ? এছাড়াও এ আইনের (৬ ও ৭ ধারা) অনুসারে দেবোত্তর বোর্ডের কেন্দ্রিয় কমিটিকে ১৭ জনের মধ্যে ১২ জন হবেন গন্যমান্য হিন্দু ব্যক্তি। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী ঐ ১২ জনই হবেন চলমান সরকারের দলীয় ব্যক্তিত্ব। আর এ ফলে এ দেশে হিন্দুদের মঠ-মন্দিরগুলো ভগবানের বিধানের পরিবর্তে দলের বিধানে চলতে বাধ্য হবে আমাদের ধর্মীয় অনুশাসন। জিম্মি হয়ে যাবে দ্বি-দলীয় বিধানের কাছে, আমাদের উত্তর প্রজন্ম ধর্ম হারাবে । আমরা সমূলে ধ্বংস প্রাপ্ত হব। তাই আসুন, নিজেদের মঠ-মন্দির রক্ষার জন্য ,নিজেদের ধর্মীয় জীবন রক্ষার জন্য ,নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে , পরবর্তি প্রজন্মের জন্য সঠিক ধর্মিয় নির্দেশনা বজায় রাখতে, আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে সরকারের সুযোগ সন্ধানী হস্তক্ষেপ রুখতে সর্বোপরি এই হিন্দু বিনাশ প্রসূত বিধ্বংসী আইন প্রণয়ন প্রতিহত করতে বজ্র শপথে একত্রিত হই। রণহুংকার তুলি। জীবন দেব, তবু দেবস্থান দেব না। এ মুহুর্তে এ আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া বাতিল কর, করতে হবে। নইলে চরম মূল্য দিতে হবে। নিয়মিত আপডেটে পেতে আমাদের পেইজটিতে Like দিন। facebook/pages/মঠ-মন্দির-ও-দেবোত্তর-সম্পত্তি-রক্ষা-ও-পুনরুদ্ধার-জাতীয়-কমিটি/198266756998576?ref=hl
Posted on: Sat, 22 Jun 2013 16:31:03 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015