প্রস্তাবনাঃ সন্দ্বীপ - TopicsExpress



          

প্রস্তাবনাঃ সন্দ্বীপ স্বাক্ষরতা অভিযান ২০১৪-২০১৫ উদ্দেশ্যঃ সন্দ্বীপকে ১০০ ভাগ স্বাক্ষর উপজেলায় পরিণত করা আহ্বায়কঃ সন্দ্বীপ ২০৪০ মুভমেন্ট বাস্তবায়নেঃ এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী সকল সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, ডাক্তার, সাংবাদিক, ইঞ্জিনিয়ার, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, জেলে, বেকার যুবক, প্রবাসী, সন্দ্বীপত্যাগী সন্দ্বীপী, সর্বোপরি সর্বস্তরের আগ্রহী জনগণ। ভূমিকাঃ হাজার বছরের পুরনো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সন্দ্বীপ। ভৌগলিকভাবে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বরাবরই সন্দ্বীপবাসীদের পার হতে হয় হাজারো বাধা বিপত্তির। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক অধিকার থেকেও অনেক দ্বীপবাসী বঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা হলেও শিক্ষা ও চিকিৎসায় অনেক পিছিয়ে আছে আমাদের প্রিয় সন্দ্বীপ। ভাল শিক্ষা অর্জনের জন্য খুব অল্প বয়সেই সবাইকে পাড়ি দিতে হয় সমুদ্রের উত্তাল তরংগমালা। চিকিৎসার জন্যও । আবার সেই তরংমালা পেরিয়ে এসেও অনেক সময় সুচিকিৎসা হয় না। হাজার হাজার মৃত মানুষের ইতিহাস লেখা যাবে যারা বছরের পর বছর ধরে জরুরী চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন সন্দ্বীপে, কিংবা মূল বাংলাদেশে পৌছানোর পথে পথে। আর তাদের অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা নামধারী শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী মহল- যারা দ্বীপের সাথে প্রথম সুযোগেই নিজেদের সম্পর্ক চুটিয়ে বিদায় নিতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করি। নিজেদের পাথেয় অর্জনের জন্য আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত কিন্তু নিজের জন্মভূমির উন্নয়নের স্বপ্ন আমাদের দেখা হয় না। কিংবা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে অনেকাংশেই নিজেদের পকেট উন্নয়ন করেছেন অনেকেই। সন্দ্বীপের অশিক্ষিত বাকী জনগণ যারা তাদের জীবনের পুরোটাই কাটিয়েছেন এখানে- যারা জানেন না শহরের ঝিকিমিকি বাতির গল্প, যারা জানেন না বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, যারা জানেন না আজকের বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কথা , যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কথা জানেন না, যারা এই দ্বীপে ধুঁকে ধুঁকে মরেছেন, এই দ্বীপের মাটিতেই তাদের মৃত হাড়, মাংস মিশে গিয়ে উর্বর হিউমাস তৈরী করেছে তাদের শরীরের কোটি কোটি কার্বন পরমাণু আজকে আমাদের এই শিক্ষিত জনগণকে অভিশাপ দিচ্ছে। সেই অভিশাপ আমরা প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে বুঝতে পারি, তাদের ধিক্কারে আমাদের কান ঝালাপাল হয়ে যায়, অপমানে আমাদের শরীর নিথর হয়ে যায়, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসে। আসলে আমরা কজনই বা এভাবে চিন্তা করতে পেরেছি? কেন এই স্বাক্ষরতা অভিযান? ১। বিশ্বায়নের এই যুগে আর পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। সুযোগ নেই অশিক্ষিত থাকার, অসচেতন থাকার। ২। আমরা যারা শিক্ষিত হয়েছি আমাদের দায়িত্ববোধ থেকেই এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে। সন্দ্বীপের একটি মানুষ ও অশিক্ষিত থাকবে না। সন্দ্বীপ হবে ১০০ ভাগ শিক্ষিত সচেতন সুনাগরিকদের একটি মডেল অঞ্চল যাদের অনুসরণ করবে পুরো বাংলাদেশ। ৩। বছরের পর বছর আমরা আমাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে এসেছি। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা, আমাদের বিদ্যুৎ, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা ইত্যদি ইত্যাদি। সব সমস্যার মূলে আমাদের অসচেতনতা, আমাদের শিক্ষা নামক অশিক্ষা। যেই শিক্ষা আমাদের চারপাশের মানুষের জীবনব্যবস্থা পাল্টাতে শেখায় না সেটা অশিক্ষাই বটে। দ্বীপের সবাইকে সুশিক্ষিত করতে পারলেই এই সকল সমস্যার উত্তরণ ঘটবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এই স্বাক্ষরতা অভিযান কিভাবে সন্দ্বীপকে / সন্দ্বীপের জনগণকে সাহায্য করবেঃ ১। শিক্ষার সাথে উন্নতি সমানুপাতে বাড়ে। সন্দ্বীপের জনগণ ১০০% শিক্ষিত হলে সচেতন হবে আরো অনেক বেশী। নিজেদের অধিকার আদায়ে তারা সোচ্চার হয়ে উঠবে । তখন স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠবে অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ আন্দোলন। সেই আন্দোলনের উপর ভর করে আমরা অর্জন করতে পারবো আমাদের কাঙ্খিত মৌলিক অধিকার- শিক্ষা , চিকিৎসা। যোগাযোগ ব্যবস্থার ১৮০ ডিগ্রী পরিবর্তন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সকল আশীর্বাদ এর সুব্যবহার, বিশ্বের সকল দেশের সাথে যোগাযোগ সবই সম্ভব হবে একদিন। ২। আপাতঃ ভাবে বাংলাদেশের ১০০% শিক্ষিত অঞ্চল হিসেবে হাইলাইটেড হবে আমাদের দ্বীপ। স্বাভাবিকভাবেই এই দ্বীপকে আর কেউ অবহেলা করতে পারবে না। অবহেলা করার কোন সুযোগই থাকবে না তখন। যেই দ্বীপের মানুষেরা নিজেরা নিজেদের ১০০ ভাগ শিক্ষিত করে ফেলতে পারবে তাদের অবহেলা করার সাহস কিংবা সু্যোগ কারো আর থাকবে না তখন। ৩। ১০০% শিক্ষিত উপজেলা হিসেবে সরকারী, বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে সন্দ্বীপ। সেই সুবাদে আমরা সন্দ্বীপকে ট্যুরিজম অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলব। ইকো ট্যুরিজম, মেডিকেল ট্যুরিজম, সোশ্যাল ট্যুরিজম এর তীর্থস্থান হবে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। ট্যুরিজম এর সাথে জড়িত সকল ব্যবসার প্রাসার ঘটবে দ্বীপে। রিসোর্ট, বিনোদন, ট্রান্সপোর্ট, শপিং, স্যুভেনির হাজার রকমের ব্যবসা গড়ে উঠবে। বেকার সমস্যার অতি সহজ সমাধান হবে এর মাধ্যমে। এটা নিয়ে আমাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা আমরা সবার সামনে উত্থাপন করব ভিন্ন প্রস্তাবনায়। ৪। আমাদের দ্বীপবাসীর ক্রসড্যামের দাবী, দ্বীপ রক্ষার দাবী আমরা ছাড়া কেউ অন্তর থেকে অনুভব করবে না। ডেনমার্কের লোকজন এসে এখানে ক্যালকুলেশন করে সরকারকে বলবে ক্রসড্যামের কথা, সেই কথা সরকার কবে শুনবে কবে শুনবে না সেই নিয়ে আমাদের ৫০-১০০ বছর অপেক্ষা করতে হবে এই গৎবাঁধা চিন্তার বাক্স থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। We have to think out of the box. আমরা এই দ্বীপেই গড়ে তুলব আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে পড়ানো হবে Water Engineering & management, Disaster management, Marine technologies, Marine fisheries, Geography, Biotechnology etc etc দ্বীপের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যশীল সকল বিষয়। এখানকার ছাত্ররাই তৈরী করবে সন্দ্বীপ সহ সকল দ্বীপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা- তারাই পরিবর্তন করে দিবে নদী-সাগরের গতিপথ। তারাই রক্ষা করবে আমাদের এই দ্বীপকে ইন শা আল্লাহ। আজকের বিশ্বে যেখানে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি হচ্ছে সেখানে আমরা প্রাকৃতিক দ্বীপকে রক্ষা করতে পারবো না কেন? ৫। এরপর আমরা মূল ভূখন্ডের সাথে সংযোগ ব্রীজ, সন্দ্বীপের জন্য এয়ারপোর্ট, স্টেডিয়াম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, Amusement park , থিম পার্ক সহ আরো অনেক বড় কিছু করতে পারবো ইন শা আল্লাহ। এত কিছু হবে কিভাবে/এটা কতটা বাস্তবসম্মত? ১। পৃথিবীতে অনেক কিছুই ছিল না। কারো না কারো প্রচেষ্টায় জন্ম হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতির, উড়োজাহাজের, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের। মানুষের কল্পনাশক্তিই বাস্তবতাকে পালটে দেয়। মোবাইলে কথা বলার চিন্তা ১০০ বছর আগে আমাদের দাদার দাদাদের কল্পনাশক্তির বাইরে ছিল। আমাদের শক্তিটা এখানেই। আমরা স্বপ্ন দেখছি আজকের নয়, কালকের নয়, আগামী বছরের নয় , আমরা স্বপ্ন দেখছি পুরো শতাব্দীর। ২। ৫০-১০০ বছর পরে আমাদের ৩য় প্রজন্মের জন্য একটা অসাধারণ বাসযোগ্য সন্দ্বীপ আমরা গড়ে দিতে চাই। সেই ভাঙ্গা গড়ার খেলায় আমাদের ২ ধরণের দায়মুক্তি ঘটবে। পূর্বপুরুষদের অভিশাপ থেকে মুক্তি আর উত্তর প্রজন্মের বদদোয়া থেকে মুক্তি। ৩। আমাদের পরিকল্পনা যাদের কাছে অবাস্তব মনে হবে তাদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ থাকবে না। তাদেরকে আমরা বলব আমাদের সমালোচক হিসেবে থেকে আমাদের অগ্রযাত্রাকে সহায়তা করতে। সেটাও যদি পছন্দ না হয় তবে অন্তত চুপ থাকতে। ৪। স্বপ্ন সেটি নয় যেটি আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি- স্বপ্ন তো তাই যা আমাদের ঘুমাতে দেয় না। আমাদের আসলে প্রয়োজন এই ধরণের এক ঝাঁক তরুণ যারা এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে। যাদের হাত দিয়ে সূচনা হবে নবযুগের, রচিত হবে নতুন ইতিহাসের। সকল বন্যায়, সিডর, নার্গিসে যারা এতটুকু টলবে না। আর এই তরুণদের সাহায্য করতে যারা প্রস্তুত থাকবে – সেই সকল মানুষদের প্রতি আমাদের অগ্রিম লাল সেলাম। সর্বশেষে, আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব যিনি আমাদের এতবড় স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যিনি আমাদের এত দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নেবার শক্তি ও সাহস দিয়েছেন তিনি যেন আমাদের পথচলাকে সহজ করে দেন। বাস্তবিকপক্ষে সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম রহমত ছাড়া এই পথচলা আমাদের জন্য এতটুকুও সম্ভব হবে না। 1:33 am 09-07-14 কার্টেসীঃ মোহাম্মদ শরফুদ্দিন পাটোয়ারী
Posted on: Fri, 11 Jul 2014 04:38:29 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015