ফেসবুকে লগইন করতেই - TopicsExpress



          

ফেসবুকে লগইন করতেই ‘আদিবা চৌধুরী’ নামে একটা মেয়ের রিকুয়েস্ট চোখে পড়ে তমালের। মেয়েটার প্রোফাইলে গিয়ে ঘাটাঘাটি করার পর ও প্রোফাইল পিকচার গুলো দেখার পর আইডিটা রিয়েলই মনে হয় তাঁর। একসেপ্ট করে সে। একটু পর আদিবা তাকে নক করে। সাধারন ‘হাই’, ‘হ্যালো’ দিয়ে নয়। রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছে সে। তমাল কিছুটা অবাক হয় এমন একটা কান্ড দেখে। তবে তাঁর ভালো লাগে ব্যাপারটা। সেও জীবনানন্দ দাসের একটা কবিতা লিখে পাঠায়। এভাবে কবিতা আদান প্রদান করার মাধ্যমেই তাদের কথা বলা শুরু। একজন আরেকজনকে চিনলো, জানলো। আদিবা মেয়েটা খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে। তাঁর প্রত্যেকটা ম্যাসেজ খুব সুন্দর করে লেখা। এতোটা গুছিয়ে লেখা যে মানুষ লিখতে পারে, সে না জানি কত সুন্দর করে কথা বলে! এই কথাটা ভেবে আদিবা মেয়েটার ফোন নাম্বার চায় সে। মেয়েটা দিয়েও দিল বিনা বাক্য ব্যায়ে! তমাল ফোন দিল মেয়েটার নাম্বারে। অপর প্রান্ত থেকে মিষ্টি একটা কন্ঠ বলে উঠল, ‘হ্যালো তমাল...’ ‘হ্যাঁ আমি তমাল। তুমি আমাকে চিনলা কি করে?’ কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তমাল। ‘না চেনার কি আছে। আমি তো আমার নাম্বার সবাইকে দিয়ে বেড়াই না। তোমাকে দিয়েছি, এখন ফোন দিলে তো তুমিই দিবা... সেটা আন্দাজ করেই বলেছি।’ মেয়েটা সত্যিই খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে। একেবারে রেডিও জকিদের মতো। কন্ঠটাও ভালোলাগার মতো। তমালের খুব ভাল লাগতে শুরু করে আদিবার সাথে কথা বলতে। তারা কথা বলেও প্রচুর। সারাদিনে কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা কথা তাদের। তবুও যেন তৃপ্তি আসে না। কথা বলাও যেন শেষ হয় না দুজনার। একসময় তাদের মধ্যকার সম্পর্ক গভীর হয়। ভালোলাগা থেকে তা রূপ নেয় ভালোবাসায়। তমাল বুঝতে পারে তাঁর পৃথিবী এখন শুধুই আদিবা কে ঘিরে। এক জোছনার রাতে তমাল কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ‘আদিবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’ আদিবা খুব স্মার্টলি বলেছিল ‘দেখো, ভালোবাসি কথাটা গুছিয়ে বলতে হবে। এভাবে মিন মিন করে বললে আমি জীবনেও তোমাকে আমার বয়ফ্রেন্ড বানাবো না। আর আমার মতো এমন লক্ষী গার্লফ্রেন্ডও তুমি আর দ্বিতীয়টা পাবা না। সো আমার মতো ভালো গার্ল ফ্রেন্ড পেতে চাইলে ভালোভাবে প্রপোজ করো।’ আদিবার কথা শুনে তমালের কান্না চলে আসে। সব কান্না কষ্টের হয় না। কিছু কান্না থাকে আনন্দের, প্রাপ্তির, ভালোবাসার। তমালেরটাও তাই! রিলেশন হওয়ার কিছুদিন পর তমাল আদিবার সাথে দেখা করা প্রসঙ্গ তুলে, ‘আচ্ছা আদিবা আমরা কি দেখা করতে পারি না?’ ‘কেন নয়? আমি তো তোমার সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। তুমি কবে কোথায় কখন দেখা করতে চাও বল?’ ‘আগামীকাল আমরা রেইন ফরেস্ট কফি শপে দেখা করি?’ ‘না। আমি আগামীকাল পারব না। সপ্তাহে রবিবার ছাড়া আর অন্য কোন দিন আমি খুব একটা সময় পাই না বাইরে বের হবার। তাই আগামী রবিবার বিকেলে দেখা করি?’ ‘আমার রাজকুমারী আদিবা যা বলবে, তা ই সই...’ ‘হুম। তুমি কিন্তু ঐ দিন মাস্ট কালো শার্ট, ব্লু জিন্স আর স্লিপার পড়ে আসবা। চোখে সান গ্লাস দিতে পারো... ইট ইস ইউর চয়েস!’ ‘ওকে... কিন্তু তুমি কি পড়ে আসবা?’ ‘সেটা সারপ্রাইজ থাক। সব কিছু আগেই বলে দিলে দেখা করার মজাটাই থাকবে না।’ ‘ওকে... তাহলে আগামি রবিবার আমরা দেখা করছি।’ ‘ওকে...’ কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দেয় আদিবা। তমালের ভিতরে অদ্ভুত এক শিহরন কাজ করে। এতো দিন ধরে যে মানুষটার ছবি ফেসবুকে দেখে আসছে সে মানুষটাকে দু’দিন পর সামনা সামনি দেখবে – এটা ভাবতেই কেমন জানি ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করে! এর পরের রবিবার বিকেলে তমাল আদিবার পছন্দের কালো শার্ট – ব্লু জিন্স পড়ে রেইন ফরেস্ট কফি শপে যায়। আদিবার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু আদিবা আসতে বড্ড দেরি করছে। আদিবার ফোনে কল দেয় তমাল। আদিবার নাম্বার বন্ধ। বারবার ফোন দিতেই থাকে তমাল। নাহ... নাম্বারটা বন্ধই। ফোন থেকে ফেসবুকে লগইন করে তমাল। ম্যাসেজ বক্সে গিয়ে দেখে আদিবার নামটা নীল থেকে কালো আছে। সে কি তমালকে ব্লক দিয়েছে? নাকি আইডিটাই ডিএকটিভ করে দিয়েছে? ভেবে পায় না তমাল। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। কফি শপ থেকে বের হয়ে বাসায় যায় তমাল। বাসায় ফিরে ছোট বোনকে কিটক্যাটের লোভ দেখিয়ে তাঁর আইডি থেকে আদিবার আইডিটা সার্চ দেয় তমাল। নাহ নেই। ফেসবুকের অনেক অনেক আদিবার ভিরে নেই তমালের আদিবা। তারমানে আইডিটা ডিএকটিভ করে দিয়েছে! কিন্তু কেন? কারনটা জানে না তমাল। আদিবার সাথে দেখা না হবার ঐ ঘটনা ঘটার পর আজ প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। এখনো তমাল প্রত্যেক রবিবার বিকেলে রেইনফরেস্ট কফি শপে আদিবার জন্য অপেক্ষা করে। শুধু মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তরের আশায় – কেন সে এমন করে তাঁর সাথে! কেন? লিখাঃ অপ্রত্যাশিত মিসবাহ
Posted on: Sat, 27 Sep 2014 05:25:41 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015