বাঁচতে হলে জানতে - TopicsExpress



          

বাঁচতে হলে জানতে হবে অধুনা বিশ্বে একটি প্রান- ঘাতি রোগের নাম হচ্ছে এবোলা ভাইরাস ডিজিজ বা EVD, যা AIDS এর চেয়েও মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে যদি এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। EVD সেন্ট্রাল আফ্রিকা ও আফ্রিকার পশ্চিমাংশের দেশগুলোতে মহামারী আকার ধারন করেছে। জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাব ও গুরুত্বের দিক থেকে চিন্তা করেই আমার এই পোস্ট। আমার এই লেখায় খুব সংক্ষেপে EVD সম্পর্কে আলোকপাত করছি- সংক্ষেপে মূল কথাঃ Ebola virus disease (EVD) যা পুর্বে Ebola haemorrhagic fever বা রক্তক্ষরনকারী জ্বর হিসাবে পরিচিত ছিলো। EVD রোগের প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা যায় ১৯৭৬ সালে একই সাথে নাইজার, সুদান, ইয়াম্বুকু ও রিপাব্লিকান কঙ্গোতে। পরবর্তিতে রিপাব্লিকান কঙ্গোর এবোলা নদীর ধারে অবস্থিত একটি গ্রামে মহামারী আকার ধারন করে এবং সেই এবোলা নদীর নামেই এই ভাইরাসের নামটি রাখা হয়েছে Ebola। এই রোগটি জন্তু জানোয়ার থেকে মানুষে এবং পরবর্তিতে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। ফলভোজী বাদুর মূলতঃ এই রোগের প্রধান প্রাকৃতিক বাহক হিসাবে চিহ্নিত হলেও বাহক হিসাবে বানর, সিম্পাঞ্জি, গড়িলা ও শুকরের গুরুত্ব এড়ানো যাবেনা। এই রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারী (ICU) প্রয়োজন হয় এবং এখন পর্যন্ত এই রোগের কোন স্বিকৃত চিকিৎসা বা ভেক্সিন আবিষ্কৃত হয়নি। Filoviridae family (filovirus) এর এই ভাইরাসকে কে তিনটি জেনাসে ভাগ করা যায়- ১) Genus Ebolavirus ২) Genus Marburgvirus ৩) Genus Cuevavirus. এর মাঝে Genus Ebolavirus কে আবার মোট ৫ টি গোত্রে ভাগ করা হয়, যেমন- ১) Bundibugyo ebolavirus (BDBV) ২) Zaire ebolavirus (EBOV) ৩) Reston ebolavirus (RESTV) ৪) Sudan ebolavirus (SUDV) ৫) Taï Forest ebolavirus (TAFV) এই ৫ টির মাঝে BDBV, EBOV, এবং SUDV আফ্রিকায় মহামারীর জন্য দায়ী। EVD কিভাবে ছড়ায়? এই ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের রক্ত, লালা বা যেকোন নিশৃত রস থেকে ও শরীরের ক্ষতস্থানের মধ্যদিয়ে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। চিহ্ন ও লক্ষণসমুহঃ ১) হঠাত করেই এই ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়। ২) প্রচন্ড জ্বর সহ মাংসপেশীতে ব্যাথা ও শরীর দুর্বলতা দেখা দেয়। ৩) মাথা ব্যাথা ও গলা ব্যাথা হয়। ৪) পরবর্তিতে বমির সাথে ডাইরিয়া দেখা দেয়। ৫) স্কিন র্যাশ, কিডনী এবং লিভার ফাংশনে সমস্যা দেখা দেয়। ৬) কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ দেখা যায়। লেবোরেটরি টেস্ট ও ডায়াগ্নোসিসঃ রক্তে স্বেত কনিকা ও অনুচক্রিকা বা প্ল্যাটেলেট কমে যায় এবং লিভার এঞ্জাইম বেড়ে যায়। এই এবোলা ভাইরাস ডিজিজকে মুলত মেলেরিয়া, টাইফয়েড, সিগেলোসিস, কলেরা, লেপ্টোস্পেরসিস, প্লেগ, রিকেটসিয়া, মেনিঞ্জাইটিস, হেপাটাইটিস ও অন্যান্য রক্তক্ষরনকারী ভাইরাসজনিত রোগ থেকে আলাদা করা জরুরী এবং সেইক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পরীক্ষাসমুহ দ্বারা EVD কে আলাদা করা যায়- antibody-capture enzyme-linked immunosorbent assay (ELISA) antigen detection tests serum neutralization test reverse transcriptase polymerase chain reaction (RT- PCR) assay electron microscopy virus isolation by cell culture. ইঙ্কুবেশন পিরিয়ডঃ এই ভাইরাস ২ থেকে ২১ দিন মানুষের শরীরে কোন লক্ষন ছাড়া চুপচাপ অবস্থান করতে পারে। সংক্রমন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রনঃ এবোলা ভাইরাস ডিজিজ বা EVD এর কোন স্বিকৃত চিকিৎসা বা ভেক্সিন নাই তাই এর প্রাদুর্ভাব খুবই ঝুকিপুর্ণ এবং সংক্রমন প্রতিরোধই এর থেকে বাচার উপায়। ১) আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ২) আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীর নিশৃত লালা বা রস থেকে সাবধানে থাকতে হবে। ৩) আক্রান্ত ব্যাক্তির সেবাকারী অবশ্যই গ্লাভ ব্যাবহার করবে ও হাত ভালো করে ধৌত করবেন। ৪) (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রজোয্য না) আক্রান্ত গৃহপালিত জন্তু জানোয়ার যেমন বানর,সিম্পাঞ্জি ও শুকরগুলোকে সেবা দানকারী অবশ্যই গ্লাভ ব্যাবহার করবেন। উপসংহারঃ বস্তুত অল্পকথায় এবোলা ভাইরাস ডিজিজ বা EVD সম্বন্ধে পরিপুর্ণ ধারনা দেয়া সম্ভব না, তবুও আমার এই লেখাটা EVD সম্পর্কে যদি আপনাদের হালকা ধারনাও দিতে পারে তবেই এই লেখার স্বার্থকতা। আতঙ্ক নয় আমাদের সতর্কতাই আমাদের বাচিয়ে রাখবে এই মরনব্যাধি EVD থেকে। (তথ্যসূত্র- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)
Posted on: Thu, 14 Aug 2014 17:01:48 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015