বাঙালীর - TopicsExpress



          

বাঙালীর সংস্কৃতি বর্তমান বাংলাদেশ বা প্রাচীন বঙ্গ ছিল সুপ্রাচীন এক জনপদ। বাংলার বিস্তৃর্ণ জনপদে সভ্যমানব গোষ্ঠীর বসবাস ছিল যাদের স্বাতন্ত্রবোধ ও স্বকীয়তা সর্বজন স্বীকৃত ছিল। উপমহাদেশে অনুপ্রবেশকারী আর্যজাতি তাদের সংস্কৃতি ক্রমান্বয়ে উপমহাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিলেও প্রাচীন বঙ্গ দেশে তা প্রভাব বিস্তার করতে পারে নাই। এদেশের মানুষ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। এ জনপদের মানুষ যে সভ্য ছিল তা অনুধাবন করা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বাংলার জনপদ পুন্ড্রুবর্ধনে বৌদ্ধধর্ম মতের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং তিন বা ছয় মাস বাস করে গেছেন। একাধিক বৌদ্ধসূত্র ও চৈনিক পরিব্রাজকদের লেখনী থেকে বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। গ্রীক বীর আলেকজান্ডার এশিয়া ও ভারতের অংশবিশেষ জয় করার পর পরাক্রান্ত গ্রিক সৈন্যরা আর অগ্রসর হতে চায়নি শক্তিশালী গঙ্গারিডই জাতির ভয়ে। গ্রিক ও ল্যাটিন উৎস থেকে জানা যায়, গঙ্গা নদী উপত্যকায় গঙ্গারিডই রাজা বিশাল বাহিনী নিয়ে গ্রিকদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হলে আলেকজান্ডার বাহিনী আর অগ্রসর হতে সাহসী হয়নি। এ ঘটনা প্রমাণ করে আলেকজান্ডারের অভিযান কালে অর্থাৎ ৩২৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বাংলায় সুসভ্য এক সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল যা গ্রিকদের নিকট আতঙ্গের কারণ হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের রাজা রাজেন্দ্র চোল (১০১২—১০৪৪) বাংলাদেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। অনুমান করা হয়, ১০১২ থেকে ১০২৪ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে তার সেনাবাহিনী বাংলাদেশ আক্রমণ করে। এই অভিযানের কাহিনী বিবৃত হয়েছে তার তিরুমলয় শিলালিপিতে। তাতে বলা হয়েছে, ...after having forcibly attacked Ranasura, Vangladesa where rain water never stopped (and from which) Govindrachandra fled, having descended (from his) male elephant, elephants of rare strength, women and treasure (which he seized) after having been pleased to frighten strong mahipala on the field of hot battle (with the noise of) conches (got from the deep sea), uttiraladam (on the shore of expansive ocean) producing pearls; and the Ganges whose waters bearing flagrant flowers dashed against the bathing places. ( …..তিনি বলপূর্বক রণসুর আক্রমণের পর এলেন বাংলাদেশে যেখানে বিরতিহীন বৃষ্টি পড়ে, যেখানে গোবিন্দচন্দ্র তার পুরুষ হাতির পিঠ থেকে নেমে পালালেন এবং বাজেয়াপ্ত করা হলো অসাধারণ শক্তিশালী গজসমূহ, ললনাদের মণিমানিক্য এবং উত্তর রাঢ়ে বা উত্তরিলদামে (যা বিশাল সমুদ্রের তীরে অবস্থিত) উত্তপ্ত যুদ্ধক্ষেত্রে (গভীর সমুদ্র হতে আহরিত) অজস্ত্র শঙ্খের ধ্বনিতে শক্তিশালী মহিপালকে ভয় দেখিয়ে জয় করা হয়। এখানে মুক্তা উত্পাদিত হয় এবং গঙ্গার গতিধারায় ভেসে চলে সুরভিত পুষ্পসমূহ যা স্নানের ঘাটের উপর আছড়ে পড়ে।) এই লিপি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ নামটি কমপক্ষে এগারো শত বছরের পুরানো, অবিরল বারিধারায় স্নাত এই দেশ, এখানে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে সুগন্ধি ফুল আছড়ে পড়ে। এই সুন্দর দেশটির মানুষ বৈদিক সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে তাদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছিল বা বলা যায় বৈদিক সংস্কৃতি এ দেশে কখনো প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এ জনপদের সম্পদ যুগে যুগে শত শত বহিরাগতদের টেনে এনেছে। গুপ্ত ও মৌর্য্য বংশের সংক্ষিপ্ত সময় ছাড়া এ দেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছিল। যা প্রমাণ করে তাদের শৌর্য-বীর্য, অনমনীয় মনোভাব ও সুতীব্র স্বাধীনতা স্পৃহাকে। আর তাদের এই স্বাতন্ত্র্য বোধের প্রেরণা ছিল হাজার বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে ওঠা বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতি।
Posted on: Tue, 21 Oct 2014 16:34:15 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015