বর্তমান বিশ্বের তো বটেই, - TopicsExpress



          

বর্তমান বিশ্বের তো বটেই, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্র পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম একজন সম্ভবত স্টিভেন স্পিলবার্গ। ইহুদী বংশোদ্ভূত এই পরিচালকের অনবদ্য একটা সিনেমার নাম মিউনিখ। সিনেমাটির পটভূমি ১৯৭২ সালে মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের আসর, যেখানে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামক একটি সংগঠনের ৮ জন সশস্ত্র ফিলিস্তিনী গেরিলা ১১ জন ইসরায়েলি অ্যাথলেটকে জিম্মি করে। তারা দাবী করে নিরীহ খেলোয়াড়দের জিম্মি করা তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। জিম্মি করার সময়ই তারা দুইজন খেলোয়াড়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে, এবং পুলিশের কাছে ধরা পরার ঠিক আগে তারা বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় বাকি নয়জনকে। এই ঘটনা সিনেমার ঘটনা মনে হলেও ঘটনাটি সত্য। একে মিউনিখ ম্যাসাকার বলা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলে মোসাদ সক্রিয় হয়ে ওঠে, এবং লিস্ট ধরে ধরে তারাও ১১ জন ফিলিস্তিনী গেরিলা হত্যার মিশন শুরু করে। উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং রক্তক্ষয়ের পরে সিনেমার নায়কের অনুভব করতে থাকে, এত রক্তক্ষয়, এত হত্যা খুন জখম শুধুমাত্র নিজের পরিবারের সাথে নিরাপদ একটা আশ্রয়ের জন্য। সেই আশ্রয়ের স্বপ্ন আসলে এই রক্তপাতের সাথেই শেষ হয়ে গেছে। সেই নিরাপদ আবাস, সেই আশ্রয় এই রক্তপাতের মাধ্যমে কখনই লাভ করা যাবে না। প্রতিটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া চলতে থাকবে, চলতেই থাকবে। আজ ওরা মারবে, তার প্রতিশোধ নিতে তারা মারবে, ওরাও আবার প্রতিশোধ নেবে, এভাবে অনন্তকাল চলবে প্রতিশোধ গ্রহণের পালা। মাঝখানে মারা যাবে ইসরাইলের নিরীহ খেলোয়াড়রা, প্যালেস্টাইনের নিষ্পাপ শিশুরা। যারা আসলে কোন অপরাধ করে নি। সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরাইলি আক্রমণে সারা দুনিয়ার মানবতাবাদীরা সোচ্চার, তারা এই যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানাচ্ছে। এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে হামাসের দ্বারা, তারা তিনজন ইহুদী কিশোরকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল। তার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল এখন হামলা চালাচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। মৃতের সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়ে গেছে। হামাসও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলে উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সরঞ্জাম থাকায় হামাসের হামলায় ইসরাইলের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে না, কিন্তু ইসরাইলের হামলায় নিহত হচ্ছে গাজায় বসবাসকারী সাধারণ ফিলিস্তিনীরা। হামাস সেই আক্রমণের ভয়াবহতা বর্ণনা করে বিশ্বের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে, এবং আরব-বিশ্ব থেকে অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, টাকা আমদানির চেষ্টা করছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কে এই হামাস, কী তাদের উদ্দেশ্য, কী তাদের লক্ষ্য? তাদের উত্থান কীভাবে? ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হামাস, শোনা যায় তাদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন ইসরায়েলি সামরিক সরকারের সম্মতি এবং সহায়তা ছিল। উদ্দেশ্য ছিল ফাতাহ গ্রুপকে কোণঠাসা এবং ক্ষমতাহীন করে ফেলা। জানা যায়, মোসাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই হামাস ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ঠিক যেমনটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করেছিল আল কায়দা এবং তালেবান প্রতিষ্ঠার সময়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে দুর্বল করার মার্কিন চক্রান্তে সৃষ্টি করা এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সম্পর্কে রোনাল্ড রিগ্যান বলেছিলেন, “These are the moral equivalent of America’s founding fathers”. পরবর্তীতে তালেবানদের দেখিয়ে বিভিন্ন দেশ মার্কিন আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং অস্ত্র ব্যবসার দুয়ার খুলে যায়। হামাসও একই কাজ করে যাচ্ছে। ইসরাইল অবশ্যই একটি ধর্মবাদী বর্বর রাষ্ট্র, কিন্তু তারা প্রাচীন ইহুদী আইন অনুসারে দেশ পরিচালনা করে না। মুসলিমদের পবিত্র দেশ সৌদি আরবে কিংবা অন্যান্য ইসলামিক দেশে কোন ইহুদী নাগরিক না থাকতে পারলেও ইহুদীদের পবিত্র ভূমি ইসরাইলে বসবাস করছে অনেক মুসলমান। কিন্তু ফিলিস্তিনের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব যতদিন হামাসের মত সংগঠন করবে, ততদিন ফিলিস্তিনের জনগণকে শুধু বর্বর, ধর্মান্ধ, মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করাই সহজ হবে, আর কিছু নয়। হামাসের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, ইসরাইলকে উৎখাত করা এবং ফিলিস্তিনে শরীয়া আইন প্রবর্তন করা। ইসলামি মৌলবাদী শিক্ষানীতি থেকে শুরু করে শরীয়া আইনের মত বর্বর ব্যবস্থা প্রণয়ন যে আধুনিক বিশ্বে মুসলিমদের আরো বেশি হাস্যাস্পদ করে তুলবে, বর্বর এবং অসহায় করে তুলবে, তা হামাসের সৃষ্টিকর্তারা খুব ভালভাবেই জানে। যুদ্ধ যতদিন চলবে ততদিন অস্ত্র ব্যবসা চলবে, এবং এই অস্ত্রগুলো কারা বিক্রি করছে তা একটু বুদ্ধি খরচ করলেই বোঝা সম্ভব। হামাসের মত সংগঠন চোরাগোপ্তা হামলা করে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই যাবে। হামাস আক্রমণ করে পালাবে নিরাপদ দূরত্বে, এবং ইসরাইল আক্রমণ চালালে ঢুকে যাবে গর্তে। এতে নিহত হবে ফিলিস্তিনের নারী, শিশু। তাতে অবশ্য হামাসের কিছু যাবে আসবে না, তারাও চাইবে যত বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয় হোক। কারণ সেই রক্তাক্ত লাশের ছবি দেখিয়ে তারা আরব বিশ্ব সহ অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ করবে অর্থ, ক্ষেপণাস্ত্র। তা দিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার খেলা খেলতেই থাকবে তারা। দুই পক্ষের এই কুৎসিত প্রতিশোধ নেয়ার খেলা কোনদিন শেষ হবার নয়। মিউনিখ সিনেমাটার মতই, একটা স্বাধীন ভূমির স্বপ্ন, পরিবার নিয়ে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের স্বপ্ন তাদের স্বপ্নই থেকে যাবে। উভয় পক্ষেরই। মিউনিখ সিনেমাটিতে মোসাদ এজেন্টের একটা বক্তব্য ছিল এমন, “The only blood that matters to me is Jewish blood”. একজন ফিলিস্তিনী গেরিলা মুসলমানের বক্তব্যও ঠিক তেমনই। একজন মুসলিমের রক্ত ঝরলেই শুধু তারা কাঁদে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, রক্তের মধ্যে লেখা থাকে না, সেটা মুসলিমের রক্ত নাকি ইহুদীর।
Posted on: Sat, 12 Jul 2014 02:26:09 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015