বহিস্কার ও পুরস্কারের তালিকা খালেদার হাতে ঢাকা: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ভুমিকা রাখায় একডজন নেতার ওপর খুশি হয়েছেন খালেদা জিয়া একইভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আরও একডজনেরও বেশি নেতার ওপরে। এর মধ্যে পাঁচ নেতাকে বহিস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। ৯০ এ এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনে ভুমিকা না রাখার জন্য গোলাম ফারুক অভি ও সানাউল হক নিরুকে বহিস্কার করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আমান-খোকন-আলমদের। এবারও এমন কিছু করতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর প্রাথমিক পর্যায়ে বিএনপির পাঁচ নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। নিজের শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও আন্দোলনে মাঠ ছেড়ে যাননি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপি অফিসে বন্দী জীবন কাটিয়ে মিডিয়াকে ফেস করছেন করছেন একমাত্র তিনিই। খালেদা জিয়ার পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন তিনিই। বুধবার তার কথাতেও প্রমাণ মিলেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু’জন নেতা ও একজনেউপদেষ্টার সামনে বললেন, ছেলেটা অসুস্থ। পায়ের ব্যাথা নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তার প্রতি খালেদা জিয়ার সহানুভুতির বিষয়টি আগেও প্রকাশ হয়েছে। বন্দী অবস্থায় থাকা অসুস্থ রিজভীকে দেখতে দলীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকার পরে ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। আন্দোলনের মাঠেও ঘরে ঢুকে যাননি এ নেতা। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও। শারীরিকভাবে সুস্থ না হলেও দলের জন্য নিবেদিত আরেক নেতা তরিকুল ইসলামের ভুমিকায় খুশি খালেদা জিয়া। পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত, দলের ক্রাইসিস মোমেন্টে পালিয়ে না বেড়ানো এবং সামনে থেকে সংগ্রাম করার অদম্য মানসিকতা রয়েছে তার। দলের একাধিক ক্রাইসিসে চেয়ারপার্সনের নির্দেশ উপেক্ষা করেন নি তিনি। ওয়ান ইলেভেনের পরে আবারও দলে সক্রিয় হয়ে কাজ করেছেন বিগ্রেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ। এবারও দলের কাজে নিজের সক্রিয়তা দেখিয়েছেন তিনি। আন্দোলনেও থেকেছেন সামনে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলের বিপুল প্রচারণা, হুমকি ধমকি, অব্যাহতভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রশাসনিক হয়রানি, অপপ্রচার ও নিজেদের অন্তর্কোন্দলকে উড়িয়ে দিয়ে দলের বিপুল বিজয়ে তার অবদান ছিল সর্বাগ্রে। ঢাকায় যখন নেতারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন চট্টগ্রাম ও বরিশাল উত্তাল। সিলেটে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ঢাকাতে হরতালে পিকেটিং না হলেও চট্টগ্রামে হরতালসহ দলীয় কর্মসূচি পালিত হয় বিপুলভাবেই। এ দু’নেতা রয়েছেন খালেদা জিয়ার পছন্দের তালিকায়। সারাদেশে আওয়ামী লীগের হরতাল বিরোধী মিছিল বের হলেও বরিশালে এ মিছিল করে না সরকারি দল। কারণ সেখানে মাঠে থাকেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার। খালেদা জিয়ার জন্য অসংখ্যবার জীবনের ঝুকি নিয়েছেন এই নেতা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাদারীপুরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর আক্রান্ত হলে নিজেই পিস্তল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে গুলি করেছিলেন সাবেক এই বডি বিল্ডার। বরিশালে তার ভুমিকার প্রশংসা করে খালেদা জিয়া অন্য নেতাদের বলেছেন, বরিশালে সরওয়ার পারলে আপনারা পারেন না কেনো? খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখছেন আন্দোলনের মাঠে। আসাদুল হাবিব দুলুও রংপুরে সংগঠিত করছেন দলকে। মাঠে না থাকলেও প্রতিমুহুর্তে নেত্রীকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেন শমশের মবিন চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা। এদেরকে সামনে নিয়ে এগুতে পারেন তিনি। শফিক রেহমানের ভুমিকায়ও খুশি তিনি। ঠিক বিপরীত চিত্র হাইব্রিড নেতা ও বিগত সরকারের আমলে রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নেতাদের ক্ষেত্রে। দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেই মাঠ ছেড়ে পালান এসব নেতা। বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের কর্মসূচি ঘোষণার পর মাঠে থাকেন না। মোবাইল ফোন থাকে বন্ধ। দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে পৌছে না তার কোন নির্দেশ। মিডিয়ামুখী এই নেতার উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া। কিন্তু তার আশেপাশে কিছু সংখ্যক চাটুকার আর উত্তরবঙ্গের লোক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানেরও আর্শীবাদ রয়েছে তার উপর। ৯০ গণআন্দোলনে যথাযথ ভুমিকা না রাখায় দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল গোলাম ফারুক অভি ও সানাউল হক নিরুকে। দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আমান-খোকন-আলমদের। তারাই এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল। এভাবে ঢাকায় আন্দোলন জমাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির ৫ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যথাযথ উত্তর পাওয়া না গেলে তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা হতে পারে। যে পাঁচ নেতাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে তারা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু। এদের মধ্যে সপুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গুঞ্জন উঠেছে এটি একটি গ্রেফতার নাটক। আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগে থাকা যুবদলকে নিস্ক্রিয় রাখা ছাড়াওকেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বা অন্য পদ দেয়ার নামে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে এক নেতার বিরুদ্ধে। মুর্খ অশিক্ষিতদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও আরও যাদের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া তারা হলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবীর খোকনসহ গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন ঢাকার এমন নেতাদের উপরেও ক্ষুব্ধ তিনি। মিডিয়া কভারেজের জায়গায় সামনে থাকলেও মাঠে থাকেন না আরেক সুযোগ সন্ধানী নেতা বরকতউল্লাহ বুলু। অথচ দলকে পুজি করে এদের কেউ কেউ ব্যাংক, টেলিভিশন, টেক্সটাইল মিল, ইন্সুরেন্স, হাউজিং প্রতিষ্ঠানসহ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এসব নেতা ব্যস্ত রয়েছেন নিজেদের সম্পদ রক্ষায়। সরকারের সঙ্গে আপোষ করে চলছেন তারা। ক্ষেত্রবিশেষে দলের বিরুদ্ধে যেতেও এরা প্রস্তুত বলে রিপোর্ট রয়েছে নেত্রীর কাছে। বিএনপির সূত্র বলছে, আরও কয়েক নেতার নামে নোটিস যাচ্ছে শিগগিরই। - See more at: khaskhabor/details.php?id=955#sthash.S7OLg1Ce.dpuf
Posted on: Fri, 15 Nov 2013 18:07:45 +0000