মারতে পারবি ? কৌতূহল চোখে - TopicsExpress



          

মারতে পারবি ? কৌতূহল চোখে জিজ্ঞাস করলো সজল ! এইটার কাছে আমি মইরা যাই ! চুখ্খা দিয়া দিয়া মারা লাগবো । জবাব দিলো আরিফ । হুরিয়া পারোছ ? না । অনেক কঠিন এইটা । বলতে না বলতেই মেরে ফেললো আরিফ কে ! ওওউয়া একটা শব্দ হলো ! সাথে সাথে স্ক্রীনে কাউন্টডাউন শুরু হলো ! 10,9,8,7... কয়েন নে তাড়াতাড়ি ! শেষ হইয়া যাইতাছে ! সজল উত্তেজিত গলায় বললো। টাকা নাই আর । বিমর্ষ চোখে গেম মেশিনের স্ক্রীনে তাকিয়ে আছে আরিফ । বড় বড় শব্দে লেখা উঠলো GAME OVER ! মফস্বল শহর । এলাকায় নতুন গেমসের দোকান বসেছে । স্কুল.পালিয়ে মোস্তফা খেলতে আসছে এই দুই বন্ধু । আরিফ খেলে । সজল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে । শিখে । ঐ , তোমরা আর খেলবা ? না খেললে বাইর হয়া যাও । জায়গা দাও । বললো দোকানের মালিক পাপ্পু ভাই । ভাইয়া , একটু দেখি ? কিছুক্ষণ দেইখা চইলা যাব।আরিফের অনুরোধ । আইচ্ছা ,সাইডে দাঁড়ায়া থাকো তাইলে । দোকানে দুইটা গেম মেশিন । একটায় মোস্তফা , আরেকটায় কিং অব ফাইটারস্ 97 ! দুজনে ঐটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । অন্য ছেলেপেলেরা খেলছে । সজল রে , দেখিস কি পাওয়ার মারে ! কালা ড্রেসের ঐ.প্লেয়ারটার নাম মোজারফ আর বেগুনি ড্রেস প্লেয়ারের নাম পাগলা ! দুইডার পাওয়ার দেখলে মাথা নষ্ট ! গলায় একটা আনন্দ আরিফের ! এই খেলা খেলতে না পারলেও দেখে একটা সুখ আছে ! ***** রাতের বেলা সজল পড়ছে ছোট বোনের সাথে । নাম তার মিনি । সজল ক্লাস সেভেনে , মিনি ফাইভে । জানোস মিনি , আজকা আরেকটা গেম দেখছি ভালো কইরা ! আগুনের পাওয়ার মারে , তারপর ঠান্ডা আগুনের পাওয়ার মারে ! সত্যই ভাইয়া ?! মিনির কৌতূহল বাড়ে ! আরে হ ! কি যে পাওয়ার তুই যদি খালি দেখতি !.জমায়া জমায়া মারে ! ইশ , আমি যদি মারতে পারতাম ! বলেই শাঁ করে হাত ছুড়লো সজল ! পাকায় রাখা পানির জগটা উপুড় হয়ে পড়ে গেলো ! কি অইছে রে ? মা দৌড়িয়ে এলো । জগ পড়ছে কেমনে ?খালি শয়তানি করে দুইটা মিল্লা ! আম্মা , ভাইয়া ফালাইয়া দিছে । না আম্মা , মিনি ফালাইছে ! চুপ , দুইটাই মিথ্যুক ! খাবার বাড়ছি , আয় খাইতে !পানি আমি মুছুম নে । উঠ ! মা তাড়া দিলেন । খাবার ঘরে বাবা বসা । ভাই বোন দুজনেই বাবাকে বাঘের মত ভয় করে ! বাবা পেপার পড়ছে । চুপচাপ দুজনে খেতে লাগলো । কিরে সজল , সামনে তো ফাইনাল পরীক্ষা । পড়তাছোছ তো ঠিকমত ? রেজাল্ট খারাপ হইলে কিন্তু তক্তা বানায়া ফেলুম ! গম্ভীর গলায় বাবা বললো । জি আব্বা , পড়তাছি । মিনমিনে গলায় বললো সজল । বাসার কাছে একটা ভিডিও গেমসের দোকান বসছে । পোলাপান গিয়া ঐখানে সারাদিন পইড়া থাকে , পড়ালেখা বাদ দিয়া । তোরে যদি ঐ দোকানের আশেপাশে দেহি তাইলে মাইর কিন্তু একটাও মাটিতে পড়বোনা । মনে থাকবো ? জ্বি আব্বা । খাওয়া শেষ করে দুই ভাইবোন আবার পড়তে বসে। মিনি নীচু গলায় বললো ,ভাইয়া , তুই আর ঐ দোকানে যাইস না । আব্বা দেখলে শক্ত মাইর দিবে ! যা ফুট ! এহ , উপদেশওয়ালিনী উপদেশ দিতে আইছে ! কাওরে কবি , তো তোরে আচার আইনা দিমুনা আর ! ধরা পড়লে টের পাইবি ! মিনি একটা ভেংচি কাটলো ! প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে সজল গেমসের দোকানে ঢুঁ মারে । সাথে থাকে আরিফ । টিফিনের পয়সা দিয়ে দুজন গেমস খেলে ! নেশার মত লাগে খেলতে !পাপ্পু ভাইয়ের সাথে খাতির থাকায় মাঝে মাঝে ফ্রি কয়েনও পায় তারা ! দুজনের আনন্দের সীমা থাকেনা তখন ! সজল এখন মোস্তফার বস মারতে পারে ! কাফির বস , কসাই বস ,হোন্ডা বস আর ব্লেড বস ! কিন্তু বুড়া বসের কাছে এসে মরে যায় ! একদিন আরিফ কিং অব ফাইটার্স খেলছিল । সজল এটা খেলতে পারেনা । এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে মিনি ঢুকলো দোকানে ! মিনি , তুই এখানে আসছস কেন ? থাপড়ায়া দাঁত ফালায়া দিবো ! ভাইয়া ,বাসায় আব্বার কাছে স্কুলের স্যার আসছে বিচার নিয়ে । তুই নাকি স্কুলে যাস না ? আব্বা বুঝে ফেলছে তুই এখানে ! স্যারের সাথে কথা বলতেছে ।এরপর এখানেই আসবে । তুই পালা তাড়াতাড়ি ! মিনি বলেই দৌড়িয়ে চলে গেলে ! আরিফ একথা শুনে সাথে সাথে চম্পট ! সজলের বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো । ও কোথায় যাবে ? দোকান থেকে বেরিয়ে বাসার দিকে দৌড় দিল । মায়ের কাছে গেলে বাবা মার দিতে পারবেনা । ও বেঁচে যাবে ! বাসার পথে যেতেই ধরা পড়লো বাবার হাতে । ইচ্ছামত জালিবেত দিয়ে সজলকে মারলো ! হারামজাদা , স্কুল পালায়া গেম খেলোছ ? তোর গেম খেলা বাইর করতাছি ! সজলের মায়ের কত অনুনয় বিনয় সজলকে না মারতে । বাবা রেগে কাঈ হয়ে আছেন । মিনি পর্দার আড়ালে নিশ্চুপ কাঁদছে । রাতে সজলের প্রচন্ড জ্বর আসলো । জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে লাগলো সে , আব্বা , আমারে মাইরেন না । আমি আর বস মারুম না আব্বা , আর বস মারুম না । ছেলের এ অবস্থা দেখে সজলের বাবা পাশে বসে কাঁদতে লাগলেন । পরীক্ষার পর যত ইচ্ছা গেম খেলিস রে বাপ , আমি বাঁধা দিবোনা । বিড়বিড় করে সজলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন । এরপর সুস্থ হয়ে সজল স্কুলে যায় রোজ । গেমসের দোকানের পাশ দিয়ে । খুব ইচ্ছা করে খেলতে । কিন্তু মনকে প্রবোধ দেয় । পরীক্ষা শেষ হোক , তারপর ! ক্লাস শেষ হয় । পরীক্ষা শুরু হয়ে যায় । পরীক্ষার দিনগুলোতে সজল তেমন করে আর গেমসের দোকানে নজর দেয়না । নজর করলে বুঝতো যে দোকানটা কয়েকদিন যাবত্ বন্ধ হয়ে আছে । পরীক্ষার শেষ দিন ! পরীক্ষা দেয়ার পর সজল আজ মুক্ত বিহঙ্গ ! বিকেল পর্যন্ত গেম খেলবে । দোকানে যায় । দোকান বন্ধ । পাশের পান ওয়ালা চাচাকে জিজ্ঞেস করে , চাচা , দোকান বন্ধ কেন ? পাপ্পু ভাই কই ? পাপ্পু ঢাকায় চইলা গেছে দোকানের জিনিসপত্র নিয়া ।এইটা ভাড়া হয়া গেছে । সেলুন বসবো । চাচার উত্তর । চাপা একটা কান্নায় কেঁদে উঠে সজলের মন । তীব্র আকাংখা , প্রচন্ড কষ্টে শরীরে শিরশিরে একটা অনুভূতি হয় । দৌড় দিলো সে বাসার দিকে । এই কান্না সে কাওকে দেখাতে চায় না.... (পরিশিষ্ট : আমরা অনেকেই শৈশবের অনেক সময় কাটিয়েছি গেমসের দোকানে সারাদিন পড়ে থেকে ,গেমস খেলে । গেমসের তখন যে কি নেশা ছিলো , তা যারা খেলেছেন , তারাই অনুভব করেছেন । বাবা মা , বড় ভাইয়ের বকুনি , চোখ রাঙানি , শক্ত মার , শত নিষেধ উপেক্ষা করে বার বার ছুটে গেছি গেমসের দোকানে । গল্পটি গেমসের দোকানের সেই দিনগুলোর কথা ভেবে রচিত । ) ~~ লিখা: আসিফ জামান ~~
Posted on: Mon, 02 Dec 2013 15:13:31 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015