মধ্যযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি - TopicsExpress



          

মধ্যযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ না করলে খালেদা জিয়া কিছুই পাবেন না (গতকালের পর) বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা [যেমন, গার্মেন্টস, যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে] এদেশের মানুষ সমর্থন করে কিনা? যদি না করে তাহলে তাদের সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, ১৯৫৪ সালে আমাদের পূর্বসূরিরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে। তবে এর একটি রূপোলি দিকও আছে। খালেদা আওয়ামী [জোট] লীগকে বাংলাদেশের সমার্থক মনে করেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি দেশের এরচেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে। তবে শেষে ‘বাঙালী অনুপ্রবেশ’ সম্পর্কে তিনি যে উক্তি করেছেন তা প্রশংসাযোগ্য। বিজেপি বাঙালী খেদাও সেøাগান তুলেছিল নির্বাচনে। খালেদা বলেছেন, বাঙালীরা এখন এখানে ভাল আছে, তারা কেন যাবে? “সুষমাও একথা তোলেননি। জেতার জন্য নির্বাচনের সময় অনেকে অনেক কথা বলেনÑ আমরাও বলি।” খালেদার সব উত্তর যদি এরকম হতো, তা হলে বলা যেত, তিনি অনেকটা এগিয়েছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারবেন। কিন্তু অন্যান্য প্রশ্নের জবাব যেভাবে দিয়েছেন তাতে মনে হয়, খুব একটা বদলাবেন না খালেদা এবং যদি না বদলান তাহলে আমেরিকা ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন। আসলে এ বয়সে খাসলত কতটা আর বদলানো যায়? তিন. একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি যেমন ক্ষণে ক্ষণে বদলায় না, তেমনি সব সময় অপরিবর্তিতও থাকে না। নিজ দেশের স্বার্থানুযায়ী পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হয়। তবে মৌলিক কিছু বিষয় থাকে যা পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ভারত যেমন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পঞ্চশীল-কে অগ্রাধিকার দিয়েছিল এবং এখনও মোটামুটি তার আলোকে কাজ করে। বাংলাদেশের নীতির মূল কথা ছিল সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, এখনও সেই মৌল বিষয়ের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। একটা ধারণা ছিল আমাদের অনেকের যে, ঐতিহাসিক এবং নীতিগত কারণে কংগ্রেস সরকার সব সময় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে, অন্যদিকে বিজেপি ও বিএনপি যেহেতু মৌলবাদী এজেন্ডায় বিশ্বাসী সেহেতু তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। কিন্তু এক যুগে, নানা বাস্তব কারণে, ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন তারা তাদের স্বার্থের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছে বেশি। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি গৌণ। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন বাস্তবতার নিরিখে এবং দেশের স্বার্থের খাতিরে তাকেও ভারতের প্রতি সহযোগিতামূলক নীতি গ্রহণ করতে হয়েছে। অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায় ও আমি যৌথভাগে বিষয়টি পর্যালোচনা করে কয়েক বছর আগে এ সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ রচনা করি যা দিল্লী ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সে গ্রন্থের নির্যাস উদ্ধৃত করছি তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে কেন ভারত হঠাৎ বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করেছিল এবং এখনও কেন তা অটুট। একটি বিষয় মনে রাখা উচিত যা আগে উল্লেখ করেছি, তাহলো দু’দেশের রাজনীতিবিদদের চিন্তাধারায়ও একটি পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের। এখন বিশ্বায়নের যুগ। নিছক রাজনৈতিক হাঙ্গামা থেকে মানুষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে। রাজনীতিতে এখন টিকে থাকতে হলে সাধারণের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মুক্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজনীতিতে থাকতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জও নিতে হবে। ২০১০ সালে দেখা যাচ্ছে দু’দেশের নেতৃত্বই সেটি অনুধাবন করেছে। বাংলাদেশের বড় বাধা, প্রথাগত ভারতবিরোধিতা যা রাজনীতির হাতিয়ার। ভারত- বাংলাদেশ সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশে ভারতের প্রাক্তন রাষ্টদূত যিনি দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন, বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতার রাজনীতির আর ভবিষ্যত নেই।’ ভারতীয় এক সম্পাদক মন্তব্য করেছেন, Both the prime ministers had realized that prolonged impasse on these issues had done no good to either. The two countries had paid grievously for the opportunity cost of delay. Time had come for both sides to deliver, as the cost of another missed opportunity would cause incalculable damage to their relatives and welfare of their people. একই আশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা একজন সম্পাদক মাহফুজ আনামও। তিনি লিখেছেন, ভারত -বাংলাদেশ চুক্তিতে, Bangladesh has moved towards such a vision.’ বাংলাদেশ ভারতের জন্য এখনই সুবর্ণ সুযোগ। তারা যদি ভিত্তি গড়ে ‘...a durable, mutually beneficial relationship that will transform the region’s strategic and security scene. Now is the moment for grand visions and grander actions. If Bangladesh was guilty of being shackled to the mindset of the past, let India not be accused of having failed to think outside the box when opportunity beckoned.’ এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠতে পারে তিন দশক পর ভারত কেন আগ্রহী হয়ে উঠল সম্পর্ক উন্নয়নে? এর বাস্তব কিছু কারণ আছে। প্রথম, বলা যেতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি যে গুরুত্ব আরোপ করেছিল ভারত তা ফলপ্রসূ হয়নি। পাকিস্তানী জঙ্গীরা ভারতে অনুপ্রবেশ করছে, হামলা করছে। শুধু তাই নয়, আইএসআই উপমহাদেশে তালেবান রফতানি করছে। অন্যদিকে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশে ঘাঁটি গড়েছে আইএসআইয়ের সমর্থনে। বাংলাদেশকে তারা একটি মিনি পাকিস্তানে পরিণত করতে চাইছে আদর্শগতভাবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশী জঙ্গী, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী, বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল/ গ্রুপ, আইএসআই ও ডিজিএফআই [বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা] মধ্যে অদৃশ্য আঁতাত আছে। উত্তর-পূর্ব ভারত, মিনি পাকিস্তান [বাংলাদেশ] ও পশ্চিমে বড় পাকিস্তান সামাল দেয়া কি ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে? বস্তুত, এই নিরাপত্তার প্রশ্নটি ভারত বড় করে দেখেছে এবং ভারতে এই চৈতন্যোদয় হয়েছে পাকিস্তান জঙ্গীদের বেশ ক’টি হামলার পর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অরুণাচলের প্রতি ‘Chinas newly confrontational stance over its claims to much of the Indian state of Arunachal Prodesh. হয়ত ভারতীয় নীতি প্রণয়নকারীদের মনে হয়েছে খালেদা কট্টর ভারত বিরোধী কেননা ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন ‘তারা স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাই দিল্লীর সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ হিসেবে ভারতের কবল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মুক্ত করার জন্য তাদের সমর্থন দরকার [খালেদা কি এ্যাজিহাইমারে ভুগছেন? না হলে সাক্ষাতকারের সময় নিজের এই উক্তি ভুললেন কীভাবে। এ্যানজিহাইমারে ভুগলে রাজনীতি থেকে তার সরে যাওয়া সমীচীন।]’ শুধু তাই নয়, বেগম জিয়ার শাসনামলকে আখ্যায়িত তখন করা হতো ‘Second centre of global terrorism after Pakistan’ হিসেবে। একজন প্রাক্তন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাও বলেছেন, ‘ভারতের প্রধান সমস্যা হলো, বাংলাদেশ ভারতীয় সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়স্থল।’ ঐ সময় জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম ভারতবিরোধী এবং জঙ্গীবাদের পক্ষে প্রচার চালাতে থাকে। গ্রামাঞ্চলে কাগজটি বিনে পয়সায় পৌঁছায় যারা শিক্ষিত নগর এলিটদের বৃত্তের বাইরে। জামায়াত জঙ্গীবাদ প্রচারে তার ছাত্র সংগঠন শিবিরকেও ব্যবহার করে। সেই অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সামরিক অফিসারের মতে, ভারতের জন্য এখন বড় সমস্যা ভারতীয় জঙ্গীদের বাংলাদেশের আশ্রয়ই শুধু নয় আবার বাংলাদেশীদের ভারতে ‘অনুপ্রেবশ’ও। আর পাকিস্তানী জঙ্গীদের ভারতে অনুপ্রেবেশের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল আরেকটি সমস্যা বিমসটেক। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট না থাকায় ভারত বিমসটেক ফ্রি ট্রেড চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারছিল না। ‘কারণ ট্রানজিট রুটের অনুমতি না পাওয়ায় ভারতের পণ্য থাইল্যান্ডে যেতে পারবে না এবং বে অব বেঙ্গল ইনিসিয়েটিভ যার মাল্টি সেক্টেরল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন সংক্ষেপে বিমসটেক ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের উদ্দেশ্যটাই মাঠে মারা যাবে।’ উত্তর-পূর্ব ভারতের দিক থেকেও বিষয়টি দেখা যেতে পারে। ২০০৪-০৫ সালে অসমের উন্নয়নের হার ৮ ভাগ, অন্য রাজ্যগুলোরও এই হার বাড়ছে। তাদের দরকার বাজার, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি। তারা তাই তাকাচ্ছে দক্ষিণে অর্থাৎ বাংলাদেশের দিকে। অর্থনৈতিক কারণেই এখন উত্তর-পূর্ব ভারতেরও দৃষ্টিভঙ্গি বদল হচ্ছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, দেশ বিভাগ তাঁর দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এখন দরকার ‘Restoration of old surface transport links through Bangladesh.’ না হলে মিয়ানমার বা আসিয়ান দেশসমূহের সঙ্গেও বাণিজ্য অসম্ভব হয়ে উঠছে। অর্থাৎ তারা অনুভব করছে ‘এবড়মৎধঢ়যু রং বপড়হড়সরপ ফবংঃরহু.’ অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে, দু’দেশের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। রাজনৈতিকভাবে বন্ধুত্ব দৃঢ় হলে, উগ্রবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাধীদের যৌথভাবে দমন করা যাবে। সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস পাবে। নিরাপত্তা প্রশ্ন বিঘিœত হবে না। বাংলাদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করা যাক। হেনরি কিসিঞ্জারের ‘নধংশবঃ পধংব’ আর এখন নয় বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ২০১০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, এত সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০০০-২০০৮ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১.৬ ভাগ, পাকিস্তানের যেখানে ২.৩ এবং ভারতের ১.৪ ভাগ। ৪০ ভাগ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করলেও প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হার ৫৩%, আয়ু পুরুষদের ৬৫ ও মহিলাদের ৬৭ বছর। জিডিপি বৃদ্ধির হার গড়ে ৬ ভাগ এবং মাথাপিছু আয় ১১০০ ডলারের ওপর। এই মাথাপিছু আয়ে পৌঁছুতে ভারতের লেগেছে ৫৫ বছর। ২০১০ সালে মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান এ্যান্ড স্যাশ বাংলাদেশকে ‘সম্মুখের সারির বাজার’ এবং ‘একাদশ উদীয়মান’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০০৯ সালে বিশ্বমন্দার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.৫ যা এখন প্রায় ৬.৫। তবে প্রতিবন্ধকতাও আছে, যেমন দুর্নীতি, উগ্রবাদ ইত্যাদি। গোল্ডম্যান স্যাশের রিপোর্ট অনুযায়ী এইসব চ্যালেঞ্জের যথাযথ মোকাবেলার জন্য হাসিনার সবচেয়ে সক্ষম হাতিয়ার হতে পারে দেশের অর্থনীতি। এই অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য দরকার বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও বাজার। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রসারিত বাজার হবে সীমান্তের সাতটি ভারতীয় রাজ্য, নেপাল ও ভুটান। বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সাহায্য দিতে পারবে ভারত। ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক বন্ধুত্ব সমুদ্র সীমা, ছিটমহল, গ্যাস-তেল উত্তোলন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক- সব সমস্যারই সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হবে। সুতরাং পুরনো বন্ধুত্ব, ঐতিহাসিক সম্পর্ক, আবেগ ছাড়াও শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংকে এই বাস্তবতার নিরিখে এগুতে হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই ঘোষণা করেন, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রবাদীদের জায়গা বাংলাদেশে হবে না। ভারতীয় অনেকের মতে, হাসিনার এই দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ আরেক আফগানিস্তানের পথে হাঁটতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে- ‘Much to chagrin of the ISI of Pakistan and Hasina’s arch-rival, the BNP, during whose rule Bangladesh had became a safe heaven for anti India Pakistani terrorist groups, Hasina gave her Indian interlocaters unequivocal commitment on mutual security concerns.’ এ ছাড়া শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বাংলাদেশ চতুর্পাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করেছে যার ফলে বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষীরা বলতে পারবে না, শুধু ভারতের স্বার্থেই সব করা হচ্ছে। কারণ, যখন দু’দেশের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেখানে নেপাল ও ভুটানকেও পরস্পরের ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বাংলাদেশ বিষয়টি যত ইতিবাচক হিসেবেই দেখুক না কেন এর সাফল্য নির্ভর করছে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির দিকে। একজন প্রথিতযশা ভারতীয় বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভারতের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে চারটি উপাদান থাকতে হবে ‘ংঢ়বপরধষ’ নয়। ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলে তখন ‘বয়ঁধষ’ সম্পর্কের কথা বলে, ‘ংঢ়বপরধষ’ নয়। দ্বিতীয়, ভারত নিজ স্বার্থে যেই ক্ষমতায় থাকুক তার সঙ্গেই সম্পর্ক রাখবে তার কোন ইচ্ছা থাকবে না ‘ঃড় ঢ়রপশ ভধাড়ঁৎরঃবং রহ ইধহমষধফবংয.’ তৃতীয়ত, উপমহাদেশের মানুষের ভাগ্য এই সূত্রে গাঁথা। ভারতের উন্নয়ন তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাঁধা। বাংলাদেশের জন্য তার বাজার আরও ‘মবহবৎড়ঁংষু’ খুলে দেয়া দরকার, বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি দরকার। তিনি বলছেন, বাণিজ্যের ব্যাপারে ভারতের যতটুকু করা দরকার ততটুকু করা হচ্ছে না। চতুর্থত, আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়া। সার্কের উদ্গাতা বাংলাদেশই। তাঁর ভাষায় ‘... a strong Indian endorsement of Dhakas’ aspirations to lead the process of regional and sub- regional cooperation in the subcontinent. তাঁর যুক্তিগুলো গ্রহণীয় দ্বিতীয়টি বাদে। ভারতবিরোধী শক্তির সঙ্গে সু-সম্পর্ক ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের আলোচনায়ই তা আমরা দেখিয়েছি। এ পরিপ্রেক্ষিতেই শেখ হাসিনা ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভারত সফরে যান। সেখানে ভারতের সঙ্গে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ৫০ অনুচ্ছেদের একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। এ সফর, এ চুক্তিকে দু’দেশের এলিট, নীতিনির্ধারক, মিডিয়া ‘ইতিবাচক’, ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সফরের আগে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে একটি ইস্যু করার চেষ্টা চালিয়েছিল বিএনপি। ভারত সরকার ‘টিপাইমুখ বাঁধ’ নির্মিত হচ্ছে না এই ঘোষণা দেয়ায় সে বিরোধিতা হালে পানি পায়নি। চুক্তি হওয়ার পর বেগম জিয়া সংসদে ঘোষণা করেন, ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি হয়েছে [সাক্ষাতকার দেয়ার সময় খালেদা এইসব কথা হয়তো বয়সের কারণে ভুলে গিয়েছিলেন।] কিন্তু তা দেখাতে বলায় তিনি বলেছেন, তিনি শুনেছেন। অর্থাৎ, ভারতবিরোধিতা আগে যেভাবে কার্যকর হতো এখন তেমনভাবে হচ্ছে না এবং চুক্তি মোতাবেক যদি অর্থনীতি গতিশীল হয় তা হলে রাজনীতির এই হাতিয়ার আর ব্যবহার করা দুষ্কর হয়ে উঠবে বাংলাদেশ ভারতের আমলাতন্ত্র, রাজনীতিবিদদের এই বিষয়টি নতুনভাবে বুঝতে হবে। তখন লিখেছিলাম বুঝতে হবে। এখন লিখতে পারি, আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদদের গরিষ্ঠ অংশ তা বুঝতে পারছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কারণে, ভারত যে ডিভিডেন্ড পাচ্ছে তা কেন সে হারাবে? আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে এই ডিভিডেন্ড পাওয়া যাচ্ছে, তাই এই সরকারের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক সঠিক রাখতে চায়। বিএনপি বারংবার এ সুযোগ পেয়ে পাকিস্তানের কারণে তা হারিয়েছে। বিনিময়ে পাকিস্তান থেকেও কিছু পায়নি। সে কারণে, খালেদা জিয়াকে সমর্থন করা অর্থহীন। সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আলোচনায় এবং পত্রিকায় সাক্ষাতকারের সময় তিনি যদি অসত্য [যা আগে বিশ্লেষণ করছি] না বলতেন তা’হলে তিনি কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারতেন। কিন্তু অন্ধ আওয়ামী বিদ্বেষের কারণে তিনি তা পারেননি। প্রশ্ন উঠতে পারে, ভারত কি তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরেছে? না, সম্পূর্ণভাবে পারেনি। তাদের ফেডারেল কাঠামোয় অনেক সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু সুষমা আশ্বাস দিয়েছেন, কংগ্রেস সরকারের মতোই তারা সে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাবেন। তবে, প্রতিশ্রুতি অনেক পূরণও করেছে ভারত। এর অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশ তার স্বার্থহানিকর কিছু মেনে নেবে। অন্তত শেখ হাসিনা থাকাকালীন তা হবে না এ বিশ্বাস আমাদের আছে। তবে, ভারতের পাকিস্তান তোষণ নীতি এখনও আছে। যেমন, ভিসার ক্ষেত্রে পাকিস্তানীদের যে ছাড় দেয়া হয় বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে তা হয় না। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তবে বাংলাদেশ তার সদিচ্ছা প্রকাশ করে যাচ্ছে। যেমন, ত্রিপুরায় যে চাল আসছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তার জন্য কোন চার্জ নিচ্ছে না বাংলাদেশ। তেমনি, ৬৬ বছর পর যে প্রায় ৭০ বিঘা জমি বাংলাদেশ দখল নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ভারত তা উপেক্ষা করেছে। কোন সংঘাতে যায়নি। এতসবের পরও মির্জা ফখরুল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ বিএনপি আশা করে ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান সুসম্পর্ক বিনষ্ট হবে। আপাতত বলা যায়, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিজেপি নির্বাচনী এজেন্ডার কিছু কার্যকর করতে পারে কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নয়। বিশ্বে ভারত মৌল-জঙ্গীবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হোক মোদি সরকার সেটি চান না। তারা এও বুঝতে পেরেছেন, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে মৌলবাদী এজেন্ডা কার্যকর করা সহজ হবে না কারণ ভারতের অসাম্প্রদায়িক শক্তি সজীব ও শক্তিশালী। বাংলাদেশে তা দুর্বল হলেও বিএনপি-জামায়াত কিন্তু তাদের মৌল জঙ্গীবাদী এজেন্ডা বাংলাদেশেই কার্যকর করতে পারেনি। সুতরাং, খুব সহসা মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হবে এমনটি বলা শক্ত। মির্জা ফখরুল অপেক্ষা করতে থাকুন। তবে, সবচেয়ে ভাল হয়, তারা যদি খালেদা জিয়া উল্লিখিত ‘মধ্যপন্থী’ দলে পরিণত হোন। জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করেন। যুদ্ধাপরাধ বিচার সমর্থন করেন। তা’হলে ইমেজ কিছুটা বদলাতে পারে। এই ইমেজ নিয়ে বিশ্বদরবারে মার্কিন সমর্থন ছাড়া খালেদা আর কিছুই পাবেন না। আর ভারত না চাইলে মার্কিন সমর্থনেও কাজ হবে না। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সমর্থন, যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধকে সমর্থন, অনবরত মিথ্যা বলা এ আশায় যে মানুষ তা সত্য বলে ধরে নেবে এক সময়, পাকিস্তান প্রত্যয়টিকে গ্রহণ করা, সরকারের প্রতিটি বিষয়কে নেতিবাচক হিসেবে প্রতীয়মান করার চেষ্টা, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের সর্মথন, দেশ ও দল থেকে নিজের সন্তানদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া- এগুলো কোন আধুনিক চিন্তা নয়। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি এখন মধ্যযুগীয়, অনাধুনিক, পশ্চাৎপদ দৃষ্টি হিসেবে পরিচিত। খালেদা ও বিএনপির ইমেজ বদলাতে হবে। ইমেজ বদলানোর সুযোগ এখনও খানিকটা আছে। যেমন, প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে খালেদা একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। আসছে ১৫ আগস্ট ঘটা করে নিজের জন্মদিন পালন না করে যদি তিনি জাতীয় শোক পালন করেন তা হলে বোঝা যাবে খালেদা অনাধুনিক পশ্চাৎপদ মধ্যযুগীয় চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসছেন। আধুনিক জগতে পদার্পণ করছেন। এতে শুধু তার বা দলের লাভই হবে না, বাংলাদেশও উপকৃত হবে। মুনতাসীর মামুন
Posted on: Thu, 10 Jul 2014 14:52:10 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015