মস্তিষ্ক নিয়ে যত - TopicsExpress



          

মস্তিষ্ক নিয়ে যত কুসংস্কার! আমাদের মাথার ভেতরে থাকা শক্তিশালী মস্তিষ্কটা দিয়ে আমরা সারাদিন কত চিন্তা করি। কিন্তু মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা করি কতটুকু? মস্তিষ্ক এবং এর কার্যক্ষমতা নিয়ে যত গুজব প্রচলিত আছে সেগুলোর কতখানি সত্যি, এটা কি আমরা চিন্তা করে দেখেছি? আপনার মস্তিষ্কের রঙ ধূসরঃ মস্তিষ্ককে অনেক সময়েই বলা হয় “grey matter”। মস্তিষ্কে ধূসর রঙের কিছু কোষ থাকার কারনে এটা বলা হয়। আসলে কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কে আছে সাদা, কালো, ধূসর এবং লাল রঙ। বিভিন্ন রঙের কোষ এবং রক্ত পরিবাহী নালিকার উপস্থিতির কারনে মস্তিষ্কে এত রঙের সমাহার। ধ্রুপদী সঙ্গীত শুনলে মস্তিষ্কের উন্নতি হয়ঃ এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে অনেক বাবা-মা’ই তাদের বাচ্চার জন্য Mozart অথবা অন্যান্য ধ্রুপদী সঙ্গীতের সংকলন কিনে থাকেন। কিন্তু এর পেছনে যুক্তিটি বেশ নড়োবড়ো। ১৯৯০ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি গবেষণা করা হয় যাতে দাবি করা হয়, ১০ মিনিট Mozart এর সঙ্গীত শোনার পর একটি আইকিউ টেস্টে শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করে। এরপর থেকে এই ঘটনাটিকে বলা হয় “Mozart effect”। কিন্তু পরবর্তীতে অন্য কোন গবেষণায় এটি প্রমান করা সম্ভব হয় নি। তাই আপনারা চাইলে Mozart বা ধ্রুপদী সঙ্গীত শুনতে পারেন কিন্তু তাতে আপনার বুদ্ধি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন কিছু শিখলে আমাদের মস্তিষ্কে নতুন ভাঁজ তৈরি হয়ঃ এটা আমাদের অনেকেরই জানা যে আমাদের মস্তিষ্কে আছে অগুনতি ভাঁজ। কিন্তু এই ভাজগুলো তৈরি হয় আমাদের জন্মের সময়েই এবং এর পর আমাদের মস্তিষ্কে তেমন পরিবর্তন হয় না। বিশেষ করে ভাঁজের সৃষ্টি তো হয়ই না। নতুন কিছু শিখলে আমাদের মস্তিষ্কে যে পরিবর্তনটি আসে তার নাম হল Brain Plasticity এবং এভাবে মস্তিষ্কে স্নায়ুতন্তু এবং রক্তজালিকার পরিমাণ বাড়লেও তার সাথে মস্তিষ্কের ভাঁজের সংখ্যা বাড়ে না। অবচেতন মনে প্রভাব রাখতে পারে Subliminal Messageঃ Subliminal Message হল এমন একটি ধারনা, যেখানে বলা হয় আমাদের সচেতন উপলব্ধির বাইরে কোন বার্তা যদি টিভি বা রেডিওর মাধ্যমে আমাদেরকে দেওয়া হয় তবে আমাদের মস্তিষ্ক অবচেতনভাবে সেটা গ্রহন করতে পারে এবং আমাদের অজান্তেই সেটা আমাদের আচার-আচরঙ্কে প্রভাবিত করতে পারে। এটিও একটি ভুল ধারনা এবং এমন একটি গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এ ধারনাটি তৈরি হয়েছে যার কোন সত্যতা নেই। মানুষের মস্তিষ্ক অন্য প্রাণীদের থেকে বড়ঃ অনেকে মনে করেন, মানুষ সবচাইতে বুদ্ধিমান বলে তাদের মস্তিষ্কও সবচাইতে বড়। ভুল। মানুষের মস্তিষ্কের ওজন গড়ে ৩ পাউন্ড। ডলফিনের মস্তিষ্কের ওজনও প্রায় একই। কিন্তু একটা sperm whale (যার বুদ্ধি ডলফিনের থেকে অনেক কম) এর মস্তিষ্ক হয় প্রায় ১৭ পাউন্ড। আবার ছোট মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চড়ুই পাখির মস্তিষ্ক হল মাত্র এক গ্রাম ওজনের। এই থেকে বঝা যায়, মস্তিষ্কের আকারের সাথে বুদ্ধির সম্পর্ক নেই। বরং যে প্রাণীটি যত বড় তার মস্তিষ্কও সে অনুযায়ী বড়। মাথা কেটে ফেলার পরও আমাদের মস্তিষ্ক জীবিত থাকেঃ এই মিথটির উৎপত্তি সে সময়ে যখন কিনা গিলোটিনে শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। এ সময়ে অনেকে দাবি করেন যে তারা কেটে ফেলা মস্তকটিকে চোখের পাতা ফেলতে বা ঠোঁট নাড়াতে দেখেছেন। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা এই ঘটনাগুলোকে চিহ্নিত করেন পেশীর “reflexive” প্রক্রিয়া বলে এবং এর সাথে মস্তিষ্কের সম্পর্ক নেই। শিরশ্ছেদের সময় প্রচণ্ড ব্যাথা এবং Trauma তৈরি হয় যার ফলে মস্তিষ্ক কোমায় চলে যায় সাথে সাথে এবং ২-৩ সেকেন্ডের মাঝেই হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত সরবরাহের অভাবে এর মৃত্যু ঘটে। Brain Damage একটি স্থায়ী সমস্যাঃ Brain damage কথাটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে কোমায় আক্রান্ত অচেতন এক ব্যক্তির ছবি, যাকে হাসপাতালে রাশি রাশি যন্ত্রপাতির মাঝে শুইয়ে রাখা হয়েছে। মস্তিষ্কে ক্ষতি হলেই আমরা ধরে নেই সেটা মারাত্নক প্রাণঘাতী। আসলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে brain damage মানুষের মৃত্যু বা পক্ষাঘাতের কারন হয়ে দাঁড়ালেও ছোটোখাটো ক্ষতিগুলো মস্তিষ্ক নিজেই মেরামত করে নিতে পারে এবং এগুলো তেমন স্থায়ী হয় না। ড্রাগের প্রভাবে মস্তিষ্ক ফুটো হয়ে যায়ঃ মারিজুয়ানা, এক্সটাসি বা কোকেইন জাতীয় ড্রাগের প্রভাবে মস্তিষ্ক ছোট হয়ে যাওয়া, স্মৃতিবিভ্রম এমনকি মস্তিষ্কে ফুটো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এমনটা মনে করেন অনেকেই। মস্তিষ্কে সত্যি সত্যি ফুটো করে ফেলার জন্য আসলে প্রচণ্ড আঘাতের প্রয়োজন। ড্রাগের প্রভাবে মস্তিষ্কে অনেক অস্বাভাবিকতা তৈরি হলেও, কোন রকম ড্রাগের প্রভাবে মস্তিষ্ক ফুটো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অ্যালকোহল এর প্রভাবে মস্তিষ্কের কোষ মরে যায়ঃ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায় অ্যালকোহলের খারাপ প্রভাব আছে বটে। এমনকি এর ফলে স্নায়ুকোষের প্রান্তীয় অংশগুলোর ক্ষতি হয় কিন্তু কোষগুলো মারা যায় না। আমরা মস্তিষ্কের মাত্র ১০% ব্যবহার করিঃ এটা সম্ভবত মস্তিষ্ক নিয়ে প্রচলিত মিথগুলোর মাঝে সবচাইতে জনপ্রিয়। এর সপক্ষে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির উদ্ধৃতি আছে। কিন্তু এটা আসলে শুধুই আরেকটা কুসংস্কার। কারন আমাদের মস্তিষ্ক সব সময়েই কাজ করছে। এবং এর পুরো অংশটাই কাজে ব্যস্ত। এভাবে চিন্তা করুন- আপনি ভাত খাচ্ছেন। এতে আপনার হাত এবং মুখ নাড়াতে হচ্ছে, পা নয়। তার মানে এই না যে আপনার পা ঘুমিয়ে আছে। এভাবেই, যে কোন সময়েই আমাদের মস্তিষ্ক থাকে পুরোপুরি সজাগ এবং আমরা আসলে ব্যবহার করি এর পুরোটাই অর্থাৎ ১০০%।
Posted on: Tue, 13 Aug 2013 07:51:40 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015