যখন চট্রগ্রাম বসে এস,এস,সি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, আম্মু আব্বু তখন ঢাকাতে। ইনফ্যাক্ট, আমাদের আত্মীয় স্বজন তখন সবাই ঢাকাতে। আমার আম্মুর গলায় থায়রয়েড অপারেশন। অবস্থা সিরিয়াস। আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন একরকম শেষ দেখা দেখতে এসেছিলো। আমাকে বলা হয়েছিলো আম্মুর চিকিৎসা চলতেছে। সুস্থ হয়ে যাবে। তিনি ভালো আছেন। আমাকে ঠিকমত লিখাপড়া করে পরীক্ষা দিতে বলেছেন। তো আমি এমনিতেই ফার্মের মুরগীর মত বড় হওয়া পাবলিক। :P আম্মু ছাড়া আমার চলে না। সেই আম্মু নেই গত ১ মাসেরও বেশি সময়। আমি অবশ্য জানি না যে তাঁর অবস্থা এতো সিরিয়াস। এসব আমাকে বলা হয় নি। আমার মুল সমস্যা হচ্ছে খাওয়া দাওয়াতে। তো রাজশাহী থেকে এক খালা চলে এলেন আমার দেখাশোনা করার জন্য। নিজের ঘরসংসার ফেলে। বিপদের দিনগুলো তিনি বুঝতেই দিলেন না। আম্মু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর যখন সব শুনলাম, অবাক হয়ে গেলাম। তখন বুঝতে শুরু করলাম, কেনো সেসময় আত্মীয় স্বজন ফোন করে আমাকে স্নেহ ভালোবাসা মাখা কথা শোনাতো। ভাবখানা এমন যে আমি এতিম হয়ে গেছি। :P যাই হোক। আম্মু সুস্থ হয়ে উঠলেন। আজও তিনি আছেন। :) যদিও তাকে গত এক দশক নিয়ম করে রেডিও থেরাপি নিতে হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্যেই মুলত এসেছিলাম ঢাকাতে। প্রিয় চট্রগ্রাম ছেড়ে এলাম ঢাকাতে। খুব কষ্ট হয়েছিলো সেদিন। জন্মের পর এই শহরে আমি বড় হয়েছি। অনেক আপন এই শহর। ঢাকা এসে ঢাকা কলেজে হলাম ভর্তি। কলেজের প্রথম বর্ষ। তখন চলছে গ্রামীন ফোনের ডিজুস রাত্রীকালিন ফ্রি প্যাকেজ :P একটেল এক্সিড, সহ আরো কত কি :P অনেক ছেলেপেলে সেই সময় ঝামেলায় পড়েছিলো। আমিও পড়েছিলাম :P থাক সেসব অন্যদিন বলা যাবে। তো কলেজের ফাস্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় ইংলিশে পেয়েছিলাম ৭২ বাকি সবগুলোতে ফেল। বাসায় রীতিমত কুরুক্ষেত্রে চলছিলো। আব্বু টার্ম ড্রপ করতে বলে। আম্মু বলে, না। ছেলের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। টার্ম ড্রপ করা চলবে না। সত্যি বলতে, আমি নিজেই চাইছিলাম টার্ম ড্রপ দিতে। কারণ আমি ফাস্ট ইয়ারে কিছুই পড়ি নি। আমি কিছুই জানি না। ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আব্বু এই সময় একটা কথা বলছিলো, যে কারণে আজও আব্বুর উপর আমার রাগ অভিমান আছে, কোনো মত পাস কর। উন্মুক্ততে ভর্তি হতে পারবি অন্তত আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছিলো রুবেল স্যার। উনি তখন বুয়েট থেকে পাস করে সদ্য পিডিবিতে চাকরি নিয়েছেন। উনি আমাকে পড়াতে শুরু করলেন সেকেন্ড ইয়ার থেকে। এখনো ভাবতে অবাক লাগে, উনি সেকেন্ড ইয়ারে আমাকে ফাস্ট ইয়ারের পড়া পড়াতেন। ফলাফল, সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল, অর্থাৎ টেস্ট পরীক্ষা কেবল attend করেছিলাম। হয়েছিলাম সবার লাস্ট। রুবেল স্যার বলতেন, তুমি যেভাবেই হোক, পদার্থ, রসায়ন, গণিত, ইংলিশ, এই বিষয়গুলোতে ভালো করো। তোমার মাথায় বুদ্ধি আছে। কিন্তু নিজের উপর তোমার একফোটা কন্ট্রোল নেই। এটাই তোমার সমস্যা। রুবেল স্যারের এই কথা যে কতটা সত্যি, এটা আজ আয়নায় নিজেকে দেখলে বুঝি :P যাই হোক, ইন্টারে GPA 5 আমি পায় নি। কিন্তু রুবেল স্যারের কথা শুনেছিলাম। ওই চার বিষয়ে আমার ২০ ছিলো। ফলাফল, আমি বুয়েটে পরীক্ষা দিতে পারতেছি। অতঃপর এক শীতের সকালে আমি বুয়েটে পরীক্ষা দিলাম। কিছুদিন পর রেসাল্ট দিলো। চট্রগ্রাম থেকে বন্ধু সৌরভ ফোন করে জানালো, আমি বুয়েটে চান্স পেয়েছি। সেদিন আব্বুকে ভীষণ গালাগালি করেছিলো আম্মু। =D আব্বু বিশ্বাস করতে পারতেছিলোনা। আমিও সাহস করে কিছু কথা সেদিন তাঁকে শুনিয়ে দিয়েছিলাম :v বুয়েট থেকে পাস করার পর এক নতুন কাহিনী চলতেছে। :v এটা নিয়ে ভবিষ্যতে লিখবো। যাই হোক, বুয়েট লাইফের সত্যিকার মুল্যায়ন হয়ত করতে পারবো আরো অনেক পড়ে গিয়ে। পেছনে ফিরে তাকিয়ে। যদি বেঁচে থাকি। :)
Posted on: Wed, 19 Nov 2014 17:49:40 +0000
Trending Topics
Recently Viewed Topics
© 2015