“লোকে তবে করে কি সুখের - TopicsExpress



          

“লোকে তবে করে কি সুখের তরে এমন দুখের আশ???“ জীবন আজকাল পাল্টে গেছে বড় অদ্ভুতভাবে । বাস্তবতায় আর ব্যস্ততায় এখন আর নিজেকে নিয়ে তেমন ভাববার সময় নেই। তবে যাই করছি, যতটুকু করছি সবটুকুই নিজের জন্য। সবাই তো তাই করে,করছে । আজকাল কতো বেশি সহনশীল হয়ে গেছি। মৃত প্রায় মানুষ আসলেই বুঝে ফেলি করার তেমন কিছু নেই। শেষ চেষ্টা টুকু করে death certificate লিখতে পারলেই বাঁচি । আগে কখনো ভাবতেও পারতামনা যা ,এখন তা হরহামেশায় ঘটে যাচ্ছে । তবু কিছু কিছু জিনিস এখনো হৃদয় পোড়ায় । মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে একটা কিছু করি ......খুব অল্প হলেও। ওয়ার্ড এ duty কালীন সময়ে কিছু কিছু রোগী আছে যাদেরকে আমাদের অনেকদিন ধরে রেখে দিতে হয়। কারন বিধাতা পুরুষ এদের এমন কোনও একটা অদ্ভুত রোগ দিয়ে রেখেছেন যা আমাদের মতো এই দরিদ্র দেশে diagnosis করতে করতেই রোগী ভুধামের পথ ছেড়ে স্বর্গের পথ ধরা শুরু করে দেয় । বেশ কিছু দিন ধরে আমি যে কয়টা রোগীকে দেখছিলাম তার মাঝে দুই জনের প্রতি শুরুতে আমি খুব বিরক্ত ছিলাম । আর শেষে এঁদের ছেড়ে আসতে আমার চোখের কোণ ভিজে এলো । এর মাঝে এক রোগীর পাশে আমি কোনোদিন কাউকেও পাইনি। বরং একদিন হসপিটাল থেকে বের হওয়ার পথে তাঁর নিজের ওষুধ নিজেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে নিয়ে উঠতে দেখলাম। সাথে কেউ নাই কেন জানতে চাইলে সে উত্তর দিল, “আপনারা তো আছেন ।” এই যে এই আমাদের উপর এতোটুক ভরসা বলেই দিন শেষে যেখানেই থাকি, যত কষ্ট ই হোক চেষ্টা করি আবার এসে একটুক হাত ছুঁয়ে দেখে আসি । আর বাকি আরেক রোগী তার প্রতি আমার তেমন কিছু বলার নেই। সে বড়ই অবাধ্য । কিন্তু আমি অবাক আর হতবাক হয়েছি তার পত্নীর সেবা দেখে । যখন ই জাই,এক ঠায় তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। খুব দূর থেকে খুব ভয়ার্ত গলায় তার কিছু জিজ্ঞাসা থাকে আমার প্রতি। খুব দূরে দাঁড়িয়ে থাকে সে। new year এ ঐ রোগীর কিছু ascitic fluid বের করার জন্য ওদের কে রুম এ নিয়ে আসলাম । এবং নতুন বছরে একটা ভালো কিছু করার অভিপ্রায়ে ঐ মহিলার হাতে কিছু একটা দিলাম। এবং ক্ষণিকের মাঝে আমার মনে হল এ আমি কি করলাম। সেধে সেধে কেন এতোটা দুঃখ নিতে গেলাম। এতদিনের জমিয়ে রাখা সব কষ্ট উজাড় করে আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কাঁদল । আমাকেও কাঁদালো । কিন্তু এই কষ্টের ,কান্নার কি যে গভীরতা! এই আমরা এতো পাওয়ার মাঝে থেকেও ,এতো বুঝেও নিজের কোন কাছের মানুষের শেষসময়ে নিজের দায়িত্ব টুকুও পর্যন্ত ঠিকভাবে পালন করতে পিছপা হই । নিজের আনন্দ ,প্রাপ্তি আর ভোগ নিয়ে মেতে থাকি । অথচ এই যে এক অশিক্ষিত ,দরিদ্র তীব্র একাকী এ মহিলা কীসের আশায় , ঠিক কোন স্বর্গসুখ প্রাপ্তির আশায় দিন নেই,রাত নেই যখন যেভাবে পারছে সব কিছুর ব্যবস্থা করে যাচ্ছে । কেউ কেউ বলে শেখার নাকি স্থান লাগে , পরিবেশ লাগে। লাগে কি ? শেখার জন্য মন লাগে । দিব্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে মানুশ কে, মানুষের জীবন ধারন কে দেখলেও বহু কিছু শিখে নেয়া যায় । এই যেমন এই বোকাসোকা মহিলা আমাকে শিখিয়ে দিলো অনেক কিছু । যে সুখের জন্য চারদিক এতো ঘুরে মরিয়া আমরা , এত এতো ত্যাগ ,এতো সব বাহানা .................. সে সুখ তো নিজের ভালবাসার মানুষের একটু খান সুস্থতার মাঝেও থাকতে পারে ।থাকেও বৈকি .........।। লিখেছেন -- ডাঃ ফারদিনা রহমান অমি। [দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ]
Posted on: Sun, 04 Jan 2015 18:09:07 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015