শীতের সকাল, বাস টার্মিনাল দাড়িয়ে আছে অনিক।অপেক্ষা জুথির জন্য। লেট!এই মেয়ে always লেট। কোনদিন সময় মত কোথাও পৌচেছে বলে আমার জানা নেই।আজীবন আমাকে অপেক্ষার সাগরে ডুবিয়েছে। তীবর্ শীতের সকাল,কনকনে ঠান্ডা হাওয়া,ওুফফ মনে হয় বরফ হয়ে যাব!তেমন মোটা জামা কাপড় ও পরি নি! ঠান্ডায় কাপন চুটে গেছে।কিছুক্ষণ বসে,কিছুক্ষণ দাড়িয়ে,অপেক্ষা ঐ পাগলীর জন্য। নাহ আর সহ্য হচ্ছে না,এবার চলেই যেতে ইচ্ছে করছে। বাট চলে গেলে তো হবে না!আজ তাদের বিয়ে!পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।অনিক না নিলে ও,জুথি নিয়েছে।জুথির বিশ্বাস অনিকের ফ্যামিলি কখনো ওদের ভালবাসা মেনে নিবে না।অনিক অনেক বুঝিয়েছে,বাট জুথি কি শুনে অনিকের কথা। সকাল টা খুবই নীরব,চারপাশ কেমন নিজর্ন দেখাচ্ছে, কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে আছে। কিছু দূরে একটা টিনের ছালের চা দোকান দেখা যাচ্ছে, হাটতে হাটতে দোকানের কাছে গেলাম,দোকানদার বুড়ো বয়সী এক চাচা! as salamu alykum:চাচা এক কাপ চা দেন তো! সালামের উওর নিয়ে লোকটি আমার দিকে মুখ তুলে মুচকি হেসে ask করল! :চিনি কম না বেশী দিমু বাজান! জ্বী চাচা চিনি কম! হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো,হুমম স্কীনে চোখ পড়তেই ভয় পেয়ে গেলাম,আম্মু ফোন দিয়েছে! কিছু আবার জেনে ফেললো নাতো! হুমম আম্মু বল! ::আব্বু তুমি কোথাই! ::এইতো স্যারের বাসা থেকে বের হলাম। ::ওকে তাড়াতাড়ি এসো,খাওয়ার টেবিলে বসে আছি সবাই,এক সাথে খাব। ওকে আসছি,বলে ফোনটা রেখে দিলাম। মনের অজান্তে চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে গেলো।বুক ফেটে কান্নারা ভীড় করছে। বুঝতে পারছি না কি করবো!! হঠাৎ দোকানের চাচা বলে উঠলো মায়ের ফোন বাজান! যান তাড়াতাড়ি বাসায় যান,মায়ের মন তো ছেলের পথো চেয়ে থাকে। কথাগুলো আমি শুনছিলাম আর মনে হচ্ছিলো চারদিক থেকে সব বাধা আমাকে আকড়ে ধরছে! কেউ একজন আমার কাধে শক্ত করে চেপে ধরলো,পিছন ফিরে তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম। জুথি কে দেখে চমকে উঠার কারন নেই,বাট আমি চমকে উঠলাম। ভয় হচ্ছে, কারন এই কাজটি খুবই কঠিন আমার জন্য। একদিক থেকে আমার মা-বাবা আমার সমস্ত পৃথিবী,তাদের কাদাতে পারবো না। অন্য দিক থেকে জুথি আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে,তাকে hurt করতে পারবো না।যে মেয়েটি আমাকে তার জীবনের থেকেও বেশী ভালবাসে, তাকে আমি কেমন করে বলি,আমি তোমার হবো না! অনিকের চারপাশ হতাশায় আকড়ে ধরেছে। জুথিকে আজ বেশ লাগছে,একদম রুপবতী।চোখ গুলো সবসময় আমায় আকৃষ্ট করে।কাজল কালো চোখ গুলো আজো কাজল কালিতে একাকার হয়ে আছে। ওর চোখের দিকে তাকালে আমি সব কিছু ভুলে যাই,ভাবতেই পারি না,এই পাগলী টাকে ছাড়া এক মুহুত্বে বাচবো। কথাগুলো ওর চোখে চোখ রেখেই ভাবছিলাম মনের অজান্তে। কখন যে আমার বুকে ও মাথাটা রেখে জড়িয়ে ধরলো,বুঝতেই পারলাম না। মেয়েটার চোখ গুলো আবার ভিজে গেছে,আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলে এই মেয়ে প্রতিবার চোখ ভেজাবে। মনে হয় পরম সুখে এই মেয়ে,এই কাজটি করে। দুজন পাশাপাশি হাটছে।অনিকের হাতে জুথির হাত খুব শক্ত করে বাধা,কেউ কোন কথা বলছে না।একটি গাছের ছায়ার নিচে দুজন বসলো। অনিক বলল,জুথি শুন আমি বলতে চাচ্ছি,আম্মু আব্বুকে এই ভাবে hurt করা ঠিক হবে না,আমরা happy হতে পারবো না। দেখ জুথি তুমি বাসায় যাও,আমি উনাদের ম্যানেজ করে তোমার বাসায় পাঠাবো।আমি তোমাকে কখনো অন্যের হতে দিব না। দেখ মা বাবার blessing ছাড়া কখনো আমাদের সুখ হবে না। জুথির উওর তোমাকে ঘিরেই আমার সব সুখ,তোমার বুকে থাকলেই আমি সুখি। বাট মা বাবার দোয়া নিয়ে সুখে থাকাটা আরো সুখময় নয় কি্!! দেখ লক্ষি পাগলামি করো না। জুথি কোন কথা বলছে না, অঝোর ধারায় কাদছে,অনিকের ও চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে গেছে। আমি জুথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বললাম,বাসায় যাও আমি আসবো। জুথি শুধু হুমম জবাব দিল। ::আজ জুথি অনেক হ্যাপি,একা দরজা বন্ধ করে অনেক কেদেছে।মানুষ তখনি খুব বেশী কাদে যখন দুঃখের পরিমান বেশী হয়,আর সেই দুঃখ থেকে বেরিয়ে সুখের দেখা পায়। তাই ইচ্ছে মত কেদে লাল হয়ে আছে, আর আয়নার সামনে বসে একা একাই হাসছে। এই মেয়ে হাসলে কেন এত মিষ্টি লাগে!আর অনিকের খুব পছন্দের জিণনস জুথির মিষ্টি হাসি। বন্দ একটি রুমে জুথি অনিকের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ তাদের সেই প্রতিক্ষার দিন শেষ হল,পরম আপন করে পাবে জুথি তার জীবনে অনিক কে! কারন আজ তাদের শুভ বিবাহ।আর অনিক যেন জুথির কাছে যেতে পারলেই বাচে। জুথির কাছে তো আর নিজ থেকে যেতে পারি না,মানুষ কি বলবে! চারদিকে সবার হৈ চৈ, বারান্দাটা খালি আছে,আমার মিষ্টি ছোট বোনটা একা একা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। কি করছ! দেখ ভাইয়া আকাশে অনেক তারা বাট দুটো তারা খুব কাছাকাছি কেন? কারন ওরা দুজন দুজন কে খুব ভালবাসে। ঠিক তেমার আর জুথি ভাবির মত! হুমম সোনামনি আমার আর জুথির মত। কতই না কষ্ট হলো ফ্যামিলি কে ম্যানেজ করতে। আজ আম্মু রাজি না হলে জুথিকে হারাতে হতো। আর মায়াবী এই মিষ্টি চেহারার মেয়েটাকে কার না পছন্দ হবে। কথা গুলো বারান্দায় দাড়িয়ে আনমনে হয়ে ভাবছিলাম,আর মনের অজান্তে দীঘর্শ্বাস ফেললাম। পিছন থেকে কে যেন চুল টেনে ধরল! ওভাবি তুমি,ছাড় লাগছে! কি আর সহ্য হচ্ছে না বুঝি! মানে কি,তোমাদের জ্বালায় তো এখানে এসে লুকিয়েছি। চলো নেকামি করতে হবে না, জুথির কাছে নিয়ে যাই! আসলে মনে মনে চাচ্ছিলাম সেটা,বাট মুখে তো আর বলা যায় না। যাও!কোথাই!ঐ রুমটার ভিতরে,বাবুটা কি লজ্জা পাচ্ছে। ওফফ এত বেশী করে এই ভাবিটা!! সমস্ত রুম খালি কাওকেই তো দেখা যাচ্ছে না।বিছানা ফুলে ফুলে সাজানো ছাড়া আর কোন মানবী দেখতে পাচ্ছি না। বৌ কোথাই, তাহলে ওরা বৌ নিয়ে আমাকে খালি রুম দিয়েছে! ওফফ,রাগ হচ্ছে! হঠাৎ কনর্ারে জানালার সামনে চোখ পড়লো,জুথি জানালার গিরিল ধরে দাড়িয়ে আছে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, এই মেয়ে বৃষ্টির কণা গুলো হাতের মুঠোয় বন্দি করতে চাচ্ছে,আর জলকলি খেলছে।মেহেদী রাঙ্গানো হাতটা বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে আরো বেশী রঙ্গিন দেখা যাচ্ছে,আমি পিছন দিক থেকে দাড়িয়ে দেখছিলাম ওর দুষ্টুমি গুলো। সালাম দিতেই পিছন ফিরে তাকিয়ে মুচকি হেসে আমার পায়ে সালাম দিয়ে, তার প্রান প্রিয় স্বামির বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে এই প্রথম সুখ,সে আমাকে জড়িয়ে ধরে অনুভব করছে।আর ফিসফিস করে বলছে,পারবো না কখনো ছেড়ে থাকতে তোমাই! সত্যিই আজ আকাশের নীলচে দুটি তারা ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ব হয়েছে। যেখান থেকে এই দুটি প্রাণকে কখনো আলাদা করা যাবে না। কাছে আসার গল্পটা সবার জীবনে এমন করে উদয় হোক। সকল ভালবাসা ভাল থাকুক। Rony maroa
Posted on: Tue, 20 Jan 2015 07:35:38 +0000