শহরে লোকাল বাসের মধ্যে - TopicsExpress



          

শহরে লোকাল বাসের মধ্যে বাদুর ঝোলা হয়ে ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করা, আর কন্টাকটারের লাগামহীন বেরেক শব্দটির সাথে নিশ্চই সবাই পরিচিত? মাত্র ৩৬০ স্কয়ার কিঃমিঃ আয়তনের ঢাকা শহরেই প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। আর প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আসে তাদের যাবতীয় কাজের জন্য। কিন্তু এই শহরের চলাচল ব্যবস্থা এতই খারাপ যে ভোগান্তি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। আর এই অবস্থায় আপনি যদি রাস্তায় চলাফেরা করতেই চান তবে আপনাকে ঝুলতেই হবে বাদুড় ঝোলা। আমার মতে কাজ না থাকলে ঢাকা শহরের মানুষ হয়তো বাসা থেকেই বের হতো না। ঢাকা শহরে বর্তমান যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর এই যানবাহনের জন্য ৪,১০৭ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের রাস্তা আছে মাত্র ১,৫৯৮ টি। রাস্তার সংখ্যা না বাড়লেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। তার সাথে বাড়ছে মানুষ.....তাহলে..এবার বুঝুন অবস্থা!! লোকাল বাস, সিটিং সার্ভিস, লেগুনা, টেম্পু, সি এন জি, ট্যাক্সি ক্যাব, রিক্সা.....মুলত এগুলোই ঢাকা শহরের যানবাহন। কিন্তু, আপনার দরকার যখন তখন আপনি এগুলি কিছুই পাবেন না। পাবেন শুধুই হয়রানি। লোকাল বাসে আপনি বসার জায়গা তো দূরের কথা দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত পাবেন না। কারন আপনি বাস ধরতে ধরতেই আরও মানুষ বাস এর মধ্যে বাদুর ঝোলা হয়ে ঝুলেছে। টেম্পুর স্ট্যান্ডে দেখবেন বিশাল লাইন দিয়ে মানুষ তালগাছের মত দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু টেম্পুর দেখাই নাই। আর CNG ওয়ালারাতো ২১ শতকের নবাব বংশের লোকজন। তাদের সাথে আছে রাজবংশীয় রিক্সাওয়ালারাও। তারা আপনার সাথে কথাই বলবে না। তারপরও দু একজন যদি দয়া করে কথা বলেও, ভাড়া এমন চাইবে যে ওই টাকা দিয়ে আপনার ২/৪ দিন চলার খরচ হয়ে যায়। অগতির গতি যখন আপনার সাথে উপহাস করছে তখন আপনাকে কোন একটা অপশন তো বেছে নিতেই হবে। কি আর করবেন সময় আপনার কাছে অনেক মূল্যবান। কারও ক্লাস আছে, আরও অফিস, কেউ তার দোকান খুলতে হবে, কেউ রোগী দেখতে যাবে, কারও ডাক্তার দেখাতে হবে। মানুষের প্রয়োজনের কোনো শেষ নেই। সো...যেতেই হবে। এইতো সেদিন, প্রচুর টেনশন নিয়ে মগবাজার থেকে গুলশান যাওয়ার উদ্দেশ্যে ওয়্যারলেস মোড়ে গেলাম। মগবাজার থেকে যদি আপনি মহাখালী বা উত্তরার দিকে যেতে চান তাহলে মোটামুটি আপনার খবর আছে। গুলশানের কথা না হয় বাদই দিলাম। অপেক্ষা করছিলাম বলাকার লোকাল বাসের জন্য, কোন একটাতে উঠতে পারলেই তো কেল্লা ফতে.....কিন্তু, ২ ঘন্টা চেষ্টা করেও কোনো উপায় না করতে পেরে সোজা হেঁটে সাত রাস্তা - সেখান থেকে রিক্সায় নাবিস্কো - আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটির সামনে গিয়ে জ্যামের মধ্যে আধা ঘন্টা - তারপর হেঁটে তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোডে - ঐখানে আধাঘন্টা বসে থেকে একটা রিক্সা নিয়েই যেতে হলো গুলশান..........সেখানে পৌছে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম..যাক বাবা অন্তত বাদুর ঝোলা থেকে রেহাই পাওয়া গেলো...... তারও আগে, মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবো ধানমন্ডির ইবনে সিনায়। মতিঝিল থেকে বিকেল ৩ টায় উঠলাম মৈত্রী বাসে। সেই চিরচেনা বাদুর ঝোলা...কি আর করা যেতেই হবে....মা প্রথমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও পরে সংরক্ষিত মহিলা আসনে বসার জায়গা পায়। কিন্তু অবলা পুরুষ হওয়াতে পুরো রাস্তা আমাকে ঝুলেই থাকতে হলো। বাসের ভেতর পা রাখার জায়গা নেই, কিন্তু কন্টাকটার একটু গেলেই..বেরেক বলে চেঁচিয়ে উঠে, আর অমনি ২ মিনিটের জন্য স্টপ বাস। ২/১ জন উঠে..... ঝুলন্ত অবস্থায় মনে মনে ভাবলাম যেই হারে গরম পড়তেছে, এভাবে এই বাস নামক খোয়াড়ের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ ঝুলে থাকলে আমার আত্মীয়-স্বজনেরা ৪০ দিন পর পেট ভরে এক বেলা খেতে পারবে। হঠাৎ একটি মেয়ে উঠে দাঁড়ালো আমার পাশে। এদের কোনো মানবতা নেই..জায়গা না থাকা স্বত্তেও মেয়েটিকে তুলেছে....পরে তার কাছ থেকেই জানলাম সে জোর করেই এই মরণ কূপে ঢুকেছে। বয়সে আমার বড় হলেও উচ্চতায় আমার থেকে অনেক ছোট। আর তাই বাসের উপরের হাতল নাগাল পাচ্ছিল না......হঠাৎ ব্রেক নামক সাইক্লোনের কথা ভেবে তাকে আমার হাত ধরেই শক্ত করে দাঁড়াতে বললাম। শাহবাগের ৪০ মিনিটের জ্যাম সহ সব মিলিয়ে সন্ধ্যা ৭ টায় ধানমন্ডি গিয়ে পৌছেছিলাম সেদিন। ________________ এই হল বর্তমানে শহরের অবস্থা। চলার পথে রাস্তায় প্রতিটা মূহুর্তে আপনার হাজার বার কান্না পাবে। মাঝে মাঝে মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করবেন, তুমি এই শহরটা ধংস করে দাও। রাস্তায় হাতে গোনা বাস হল ৫/৬ টা। মানুষ গুলা অসহায়ের মত রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কেউ উঠতে পারছে...কেউ পারছে না.....কেউ ঝুলে আছে......... চাকুরিজীবিদের দুর্ভোগের কথা তো বলে শেষ করা যাবেনা, কিন্তু যারা স্টুডেন্ট.....সকালে ক্লাসে যেতে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ১ ঘণ্টা। এরপর বাস স্ট্যান্ডে গেলে বাস থাকে না। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আরও ১ ঘণ্টা। ফলাফল স্বরূপ হয় ক্লাসে দেরি। কখনো ক্লাস কপালে জোটে আবার কখনো শিক্ষকের ঝাড়ি খেয়েই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে হয়.......... তবুও সবাই শহরমুখী.....লাল নীল বাতির শহরে যে কেমন দুর্ভোগ আর দুর্বিসহ জীবন তা শুধুমাত্র ভুক্তভুগীরাই বলতে পারবে...... Believe it or not- There is no difference between শহরের মানুষ and ব্রয়লারের মুরগী All Credit - Blogger Nil Shalu
Posted on: Sun, 14 Sep 2014 08:25:29 +0000

Trending Topics



Z
3.º Encontro com Escritores da Lusofonia A Associação de

Recently Viewed Topics




© 2015