সকাল ৭টা.......... অফিস যাবার - TopicsExpress



          

সকাল ৭টা.......... অফিস যাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছি । লোকাল বাসগুলোও আজকাল সকালবেলা অনেক জামপ্যাক্ট থাকে । অনেকসময় তো সিটও পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায় । তো অনেকগুলো টেনশন মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । হঠাৎ আমার বাম হাতের মধ্যাঙ্গুলিতে কিছু একটার স্পর্শ পেলাম । মনে হল আঙ্গুলটাকে কিছু একটা আঁকড়ে ধরে রেখেছে । অনেকটা বিষ্ময় নিয়ে নিচের দিকে তাকালাম......... দেখলাম প্রায় দুই আড়াই বছরের কোন এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের একটা মেয়ে আমার হাত ধরে রেখেছে । মেয়েটা কোন সম্ভ্রান্ত ঘরের , বুঝলাম তার পোশাক-আশাক দেখে । দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনরকম হাটতে পারে বাচ্চাটা । . . আমি ওর দিকে তাকাতেই ,ও আমাকে বলল , “বাব্বা কোলে ” বলেই হাতদুটো বাড়িয়ে দিল আমার দিকে । আমি স্বভাবতই ছোট বাচ্চাদের প্রতি একটু দুর্বল । আর বাচ্চাটাও একটু বেশিই কিঊট । তাই কোলে তুলে নিলাম । স্বভাবতই ছোট ছোট গালগুলোতে একটা চুমু দিলাম । কি আশ্চর্য! সেও আমার গালে একটা হামি খেল । আমি তো অবাক । এই কিউট পিচ্চিটাকে কে ছেড়ে দিল । আমি হলে তো বুক থেকে সরাতামই না । অবাক হয়ে আশপাশে তাকাতে লাগলাম । অপেক্ষা করতে থাকলাম , এখনই হয়ত অর মা-বাবা দৌড়ে আসবে । . . প্রায় পনের মিনিট ওকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । কিন্তু ওর মা-বাবার তো কোন খোঁজ-খবরই নেই । অকে কিছু জিজ্ঞেস করাটাও বোকামি । বাচ্চা মেয়ে , নামটাও মনে হয় জানে না । এদিকে আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে । কিছু একটা তো করা দরকার । বাধ্য হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম , “তোমার নাম কি ? ” আমকে অবাক করে দিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলল , “তুনি” বুঝে নিলাম ওর নাম তুলি । কিন্তু তুনি নামটা অনেক আদুরে । ভাল লাগল । কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আর কোন তথ্য সে দিতে পারল না । এদিকে আমি পড়লাম বিপাকে । এতটুকু মেয়েকে এখানে একা রেখে যাওয়া সম্ভব না । আবার বাসায় গেলে অফিসে দেরি হয়ে যাবে । বাধ্য হয়ে ওকে নিয়েই বাসে উঠে গেলাম । সোজা অফিসে এনে আমার টেবিলের উপর বসিয়ে দিলাম । কলিকরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল । একজন তো বলেই ফেললেন , “অমিত ভাই বিয়ে তো এক সপ্তাহ পর । এর আগেই বাচ্চা নিয়ে চলে এলেন ?” সঙ্গে সঙ্গে হাসির রোল পড়ে গেল । আর আমি নির্বোধ বালকের মত সব সহ্য করলাম । হঠাৎ তুনির দিকে তাকিয়ে দেখালাম সেও হাসছে । এটা পিচ্চিদের আকটা বৈশিষ্ট্য ,যে কাউকে হাসতে দেখলে হাসে । কিন্তু আমি অবাক হলাম । মাকে ছাড়া এতটুকু বাচ্চা এখনও আছে কিভাবে ? তাও আবার অপরিচিত পরিবেশে ! . . পিয়নকে ডেকে তুনির জন্য জুস আর চিপস নিয়ে আসলাম । চিপস খেল না । অনেক কষ্ট করে কোলে নিয়ে জুসটা খাওয়ালাম । খাওয়ানোর পর টেবিলে বসিয়ে বললাম , “মামনি, এখানে চুপটি করে বস । বাব্বা কাজ করি । কেমন?” সেও মাথা নেড়ে সাই দিল । তাকে সামনে রেখে কাজ শুরু করলাম । কলিকরা অনেক কিছুই বলল । পরে সব বুঝিয়ে দিতেই চুপ হল । মেয়ে কলিক গুলো কিছুক্ষন পর পর এসে তুনিকে আদর করে যাচ্ছে , গাল টেনে দিচ্ছে । কিছুই বলছে না সে । আমি তাকে যতই দেখছি ততই আশ্চর্য হচ্ছি । অফিসে প্রায় পাঁচ ঘন্টা হতে চলছে , এতক্ষন পর্যন্ত মেয়েটা একটা টু শব্দটিও করে নি । এটা তো ছোট বাচ্চাদের বৈশিষ্ট্য না । . . কাজ করতে করতেই হঠাৎ ওর দিকে তাকিয়ে দেখি কিছুক্ষন পর পর হাই তুলছে । তাও বসে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে । বুঝলাম এই মেয়ে সাধারণ মেয়ে না বাপু । কিন্তু ওকে তো ঘুমাতে দেয়া উচিত । হাত বাড়িয়ে কোলে নিলাম । কলে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তুনি ঘুমিয়ে পড়ল । এখন কি করি । এখানে তো কোন বিছানার ব্যবস্থা নেই । আর আমি কোলেও রাখতে পারব না । কিছু কাজ করতে হবে । হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল । তুনিকে টেবিলের উপর একটা টাওয়েল বিছিয়ে এর উপর শুইয়ে দিলাম । আর মাথার নিচে কিছু ফাইল দিয়ে বালিশ বানিয়ে দিলাম । ব্যাস আমি নিশ্চিন্ত । . . কিছুক্ষন পর পিয়ন এসে বলল ,এমডি স্যার মিটিং ডেকেছেন , কনফারেন্স মিটিং । শুধু আমার না অফিসের সবার কাছেই সবচেয়ে বোরিং মিটিং এটা । আবার তুনি ঘুমুচ্ছে । যাই হোক পিয়নকে বললাম , সে যেন তুনির দেখাশোনা করে । পিয়ন সায় দিল । আমিও মিটিংয়ে চলে এলাম । . . বোরিং মিটিং শুরু হল । মিটিংয়ের আগে সবাই মিলে আমকে অগ্রিম বিয়ের শুভকামনা জানালেন । তুনিকে নিয়েও কিছু কথা হল । এমডি স্যার আমার উপর একটু স্নেহপরায়ণ । তিনি কিছু কথা বললেন ,তারপর মিটিং শুরু করতে যাবেন ,ঠিক সেই সময় পিয়ন এসে জানাল , তুনি ঘুম থেকে উঠে আমাকে না পেয়ে খুব কান্নাকাটি করছে । আমি অবাক হয়ে গেলাম , যে মেয়ে মা-বাবাকে ছাড়া এতক্ষণ ছিল সেই মেয়েই আমকে এক নজর না দেখেই কান্না করছে । অদ্ভুদ! এমডি স্যারকে বুঝিয়ে বললাম , তুনিকে মিটিংয়ে আনলে তেমন সমস্যা হবে না । আমার কথা রাখলেন এমডি স্যার । তারপর আমি তুনির কাছে গেলাম । কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে । আমকে দেখেই কাঁদতে কাঁদতেই হাত বাড়িয়ে দিল সে । আমি কোলে নিতেই কান্না থামল । একটু আদর করে মিটিংয়ে নিয়ে আসলাম । আসার আগেই অবশ্য ওকে বলে দিয়েছি ,সে যেন কোন শব্দ না করে । আমার বিশ্বাস ছিল , তুনি কোন সমস্যা করবে না । ঠিকই সারা মিটিং সে আমার কোলে চুপটি করে বসে থাকল । একটা টু শব্দও করেনি । যাই হোক আজকের মিটিং টা সবার ভালই গেল । কারণ এই তুনিই ..................... . . আজ আবার আমার হবু বৌ ঐন্দ্রিলার সাথে বিয়ের আগের শেষ ডেট করার কথা । বিকাল পাঁচটায় । তুনিকে নিয়েই পার্কে চলে গেলাম । ওকে একটা ললিপপ ধরিয়ে দিলাম । আর আমি কিছু বাদাম কিনে নিলাম । তারপর আমরা বাপ-বেটি একটা বেঞ্চে বসে ঐন্দ্রিলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । কথায় আছে অপেক্ষার প্রহর অনেক কষ্টদায়ক । কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিল অপেক্ষার প্রহর অনেক আনন্দের । কারণ এই তুনিটাই । কিছুক্ষণ পর পর ওর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেই । সেও মুখ থেকে ললিপপটা বের করে আমকে একটা হাসি ফেরত দেয় । এভাবে সুন্দর কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত করতে লাগলাম । . . অনেকক্ষণ পর ঐন্দ্রিলা এল । আমি ঠাট্টা করে তুনিকে বললাম , এইত মাম্মি । তুনিও খুব সুন্দর করে “মাম্মি কোলে” বলে ঐন্দ্রিলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল । কিন্তু ঐন্দ্রিলা কোলে নিল না । ও বলল , -কিসের মাম্মি , কিসের বাপি ? -এইত তুমি মাম্মি আর আমি বাপি । -এই তোমাকে না বলেছি কতবার আমার সাথে রহস্য করে কথা বলবা না । -আচ্ছা আচ্ছা বাবা । তারপর ঐন্দ্রিলাকে সকালের সব ঘটনা বললাম । কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ঐন্দ্রিলা খুবই রিএক্ট করল । ও মনে করল তুনি আমার কোন পাপেরই ফসল । হাজার বার বোঝানোর পরও ঐন্দ্রিলা বুঝতেই চেষ্টা করল না । আমাকে কিছুক্ষণ যাচ্ছে তাই বলে চলে গেল । আমি কিছুই বললাম না । শুধু মুখ বুজে সব শুনলাম । তারপর পিছন থেকে ওর পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম । এতক্ষন তুনির দিকে একবারও তাকাই নি । চোখ পড়তেই দেখি , ললিপপটা হাতে নিয়ে বসে আছে মেয়েটা । ও কি কিছু বুঝেছে ? অবশ্য বোঝার কথাও না । কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে দিল আমার দিকে । তারপর ওকে কোলে নিয়ে আমি বাসার দিকে রওয়ানা হলাম. ২ তুনিকে নিয়ে প্রথমে থানায় গেলাম । তারপর যাবতীয় কাজ কর্ম করলাম । থানা জিনিসটাই আমার কাছে চরম বিরক্তিকর । থানায় অনেক ঝামেলা । মানুষ আর আসামি মিলে একেবারে ভরপুর । তো যাই হোক , কাজ সেরে থানা থকে বের হবার সময় ওসি সাহেব আমাকে থামিয়ে বললেন , “মিস্টার অমিত , আপনার এই মেয়েটা খুবই শান্ত । থানার মত জায়গায় কোন শব্দ না করেও এখন পর্যন্ত আছে ।” কথাটা গতকাল বললেও অবাক হতাম । কিন্তু আজ সারাদিন তুনির এই অনন্য স্বভাবটা দেখতে দেখতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি । তাই আমি খুব একটা আশ্চর্য হলাম না । ওসি সাহেবকে ধন্যবাদ দিয়ে তুনিকে নিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হলাম । . . দরজা খুলল আমার ছোট বোন নিতু । খুলেই বলল , -কিরে এই পিচ্চিটা কার ? এমা ! কি কিউট ! বুঝলাম এখন হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে । কিন্তু আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে নিতু তুনিকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল । আমি ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই নিতু বলল , -কিরে বন্ধ করছিস কেন ? -তো কি করব ? -ওর বাবা-মা কই ? -জানি না । -জানি না মানে ? কার মেয়ে একটা চুরি করে নিয়ে আসলি ? -ধেৎ যা এখান থেকে । নিতু তুনিকে নিয়ে রান্নাঘরে মায়ের কাছে গেল । আমি চুপ করে আমার রুমে এসে চেঞ্জ করতে লাগলাম । তারপর বসে বসে ভাবতে লাগলাম , মায়ের প্রশ্নের প্রাথমিক মোকাবেলা কি হতে পারে ...... . . কিছুক্ষণ পর মা আসল । কোলে তুনি । খুব হাসছে মেয়েটা । মনে মনে বললাম , “হাস হাস , তোর তো এখন হাসার সময় । আর আমি কাঁদি.........” মা খুব স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলেন , -কিরে এই পিচ্চি পরীটাকে কোত্থেকে আনলি ? -কই আনলাম ? আনি নাই তো । -আচ্ছা পুরো ঘটনাটা বল দেখি............ ............বুঝলাম মাকে মনে হয় তুনি আমাদের দলে নিয়ে এসেছে । তারপর সব ঘটনা বললাম । সব শুনে মা বললেন , -এখন কি করবি ? -কি করব তো বুঝতে পারছি না । -কিছু একটা তো করতে হবে , নাকি ? -কি করব ? থানায় খবর দিয়েছি । -ও আচ্ছা দিয়েছিস । তাহলে ঠিক আছে । তারপর তুনিকে নিয়েই মা আর নিতু চলে গেল । এখন আরেকটা বিরাট পাহাড় সমান ঝামেলা হল বাবাকে বোঝানো । কিন্তু কিভাবে যেন মা বুঝিয়ে শুনিয়ে বাবকেও ঠিক করে ফেলল । যাক আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফাললাম , ঘর সামলানো গেল । কিন্তু বাইরের কি হবে............ . . ব্যাপারটা কেমন যেন একটু দ্রুতই ঘটে গেল । অনেকটা স্বপ্নের মত......... কিছুক্ষণ পর ঐন্দ্রিলার বাসা থেকে ফোন এল । ফোনটা মার মোবাইলে আসল । স্বভাবিকভাবেই মা লাউড স্পিকারে আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলা শুরু করলেন । . আমার হবু শাশুরি অনেক কথা বললেন । যদি একটা ছুড়ি দিয়েও কেটে দিতেন তাহলেও মনে হয় এতটা খারাপ লাগত না । তার সব কথার মূল কথা হল আমরা তাদের ঠকাতে চেয়েছিলাম । ভাগ্যিস তুনি মেয়েটা এল । নাহলে তো তার মেয়ে ঐন্দ্রিলার জীবনটা তছনছ হয়ে যেত । মায়ের কোন কথাই তিনি শুনলেন না । না না মাকে তো তিনি কথাই বলতে দেন নি । নিজেই ফোন করে নিজেই বলে আবার নিজেই খট করে মোবাইল রেখে দিলেন । . . কয়েকঘন্টা আমদের ঘরটা যমপুরীর মত নিস্তব্ধ ছিল । নিরবতা ভাঙল আমার ফোনের রিংটোনে । থানা থেকে ফোন এসেছে । ওসি সাহেব জানালেন যে , তুনি কোন ঘর থেকে হারায় নি । “স্বপ্নচাতক” নামক এক এতিমখানা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল তুনি । অতএব আগামীকাল সকালে আমার প্রথম কাজ দাড়াল তুনিকে ফেরত দিয়ে আসা । . . এখন মোটামুটি ঘরে একটু শান্তি বিরাজ করছে । বলাই বাহুল্য , এর কারণ তুনিই । আমাদের ঘরে কোন ছোট বাচ্চা কাচ্চা নেই । সুতরাং বাচ্চা কাচ্চা আসলে যা করে আর কি , দৌড়াদৌড়ি , লাফালাফি , জিনিসপত্র আগোছালো করা , এসমস্ত কাজ গুলো আমাদের ঘরে অনেকদিন হয় না । আমরা মনে করলাম তুনি আবার সেই সতেজতা ফিরিয়ে আনবে । কিন্তু তুনি এসব কিছুই করল না , কিন্তু সতেজতা ঠিকই ফিরিয়ে আনল । ওর খেলা হল , একপাশে মা আর আরেকপাশে নিতু থাকবে । তুনি দৌড়ে একবার মার কাছে যাবে , আরেকবার যাবে নিতুর কাছে । তেমন ভালভাবে হাটতে পারে না তুনি । যেটুকু হাটতে পারে ওটুকু দিয়েই সবাইকে মাতিয়ে রাখছে । এমনকি বাবাকেও......... বাবা সোফায় বসে কি যেন পড়ছিল , তুনির হাটার পথে একবার গিয়ে বাবার পা ধরে বসে থাকল । বাবা কোলে নিতেই তুনি বাবার গোঁফ ধরে ঠুশ করে দিল এক টান । সঙ্গে সঙ্গে আমরা হাসতে হাসতে শেষ । বাবাও হাসছেন । এই কয়েকঘন্টায় তুনি সবাইকে অনেক আপন করে ফেলল ............ . . সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেড়ে তুনিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ওর আসল ঠিকানার উদ্দেশ্যে......... কোনরকমে খুঁজে বের করলাম এতিমখানা টা । অনেক হাই ফাই টাইপ এতিম খানা । এতিমখানা সম্বন্ধে তেমন আইডিয়া আমার নেই । কিন্তু এই এতিমখানাটা আসলেই অন্যরকম । . . যাই হোক অফিসে খোঁজ নিতেই তারা তুনিকে চিনে ফেলল । ওরা ওকে ভেতরে নিয়ে গেল । এই পরিসরে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলার একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম । কিন্তু উনি জানালেন তুনির ব্যাপারটা ক্লাসিফাইড । উনি যতটুকু জানেন তাই বললেন । আর ওই অতটুকু শুনেই আমার মাঝে একাধারে রাগ আর দুঃখ জমাট বাধতে লাগল ............ তুনির বাবা এই শহরের একজন নামকরা ব্যাবসায়ি । কোটিপতি যাকে বলে । কয়েক মাস আগে ওর মা একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান । আর এই পরিসরে তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য বিয়ে করতে যাচ্ছেন । তাই পথের কাঁটা তুনিকে এই এতিমখানায় রেখে গেছে । . . আমি কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলাম না.................. অনেকক্ষন পর........ তুনিকে শেষ বিদায় দিতে হবে । ওকে যখন আমার সামনে আনা হল তখন আমার গলাটা কেমন যেন ধরে এল । কথা বলতে পারছি না আমি । ওখানকার একটা মহিলার কোলে তুনি । ওকে দেখে বুকের বাম পাশে একটা চিনচিনে ব্যাথা করতে লাগল । নাহ ওর অসহায়ত্বের জন্য নয়......আমার নিজের অসহায়ত্বের জন্য....... এটা ভেবে যে আমি কি কাপুরুষ......... ! একটা বাচ্চা মেয়েকে আশ্রয় দিতে পারলাম না ! ওকে কোলে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম । তুনিও আমার বুকে পরম আস্থায় ঘাপটি মেরে থাকল । ও কি জানে , আমার মনে কি ঝড় বইছে ?............ . . তারপর এল সেইক্ষন ...... কিছুতেই যেন ছাড়তে ইচ্ছে করছে না । আমি জানি , তুনিকে আমি যদি এখন রেখেও যাই তারপরও ও এখানে থাকবে না । তাই বুক থেকে সামনে এনে বললাম , “মামনি , কিছুক্ষণ থাক এখানে । বাব্বা আবার এসে নিয়ে যাব তোমায় ।” কথাটা মিথ্যা । আমার এই কথাটাতে তুনি কখনো কিছুই বলে নি । কিন্তু আজ যেন সেও বুঝতে পারছে আমি আর ফিরে আসব না । আমাকে ছাড়তেই চাচ্ছে না । আমিও যেন আর পারছি না । পা দুটো জড় হয়ে আছে । নড়তেই পারছি না । আমদের বাবা-মেয়ের ক্ষনিক অভিনয় টা হয়ত কর্তৃপক্ষের কাছে ভাল লাগছিল না । জোর করেই ওরা আমার কোল থেকে তুনিকে নিয়ে গেল । কেমন যেন মনে হল তুনিকে না আমার কলিজাটাই নিয়ে গেল ওরা......... . . আমি হাটার চেষ্টা করলাম । হাটতে পারছি না । পা গুলো অবশ হয়ে আছে যেন । অফিসে গেলাম না । বাসায় ফিরে এলাম । আমার মুখ দেখেই মা সব বুঝে ফেললেন । কিছু বললেন না । আমিও আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম । লক্ষ্য করলাম ঘরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । মা-বাবা-নিতু সবাই কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে । ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করলাম । চোখ বন্ধ করলেই শুধু তুনির কথাই মনে পড়ে ,ভেসে উঠে সেই নিষ্পাপ আদুরে মুখটা....... . . প্রায় দুই-তিন ঘন্টা এভাবে চলল । আমার কানের মধ্যে শুধু একটা ধ্বনি বাজছে ............বাব্বা............বাব্বা...............কোলে...... . . নাহ আর পারলাম না । মাকে ডেকে সব কথা খুলে বললাম । ভেবেছিলাম মা আমাকে কোন প্রবোধ দেবেন । কিন্তু মা আমাকে যা বললেন তাতে আমি কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না । মা বললেন , “তুই এখন যদি মেয়েটাকে না নিয়ে আসিস তাহলে আর বাসায় আসবি না ...............” . . কিছুক্ষন পর.......... হাটছি আমি । না না আসলে দৌড়াচ্ছি । নাহ উড়ছি । আসলে কি করছি আমি নিজেই জানি না । গন্তব্য “স্বপ্নচাতক” ............ কিসের উপর দিয়ে যে এলাম নিজেই জানি না । আমি পৌঁছাতেই ওখানকার লোকটা বলল , -আরে ভাই আসছেন ? আমি তো ভাবছিলাম আপনাকে ফোন করে আনব । -কেন? কি হয়েছে ? -আপনি যাবার পর থেকে তুলি তো কোন খাবার খায়ই নি বরং ননস্টপ কান্না করে যাচ্ছে । -বলেন কি ? -হ্যা । এই কিছুক্ষণ আগে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়েছে । -আচ্ছা ওকে কি আমি নিয়ে যেতে পারি না ? -হ্যা অবশ্যই পারেন । একচুয়েলি আপনাকে সেজন্যই ফোন দিতে চাচ্ছিলাম । যদি আপনার আপত্তি না থাকে আর কি ........... .. আমার আপত্তি ? আশ্চর্য ! আমি তো এসেছিই তুনিকে নিতে ..................... . . কিছুসময় পর ,,,,, আমি এখন বাসায় । আর আমার কোলে ছোট্ট একটা ডানাকাটা পরী ঘুমুচ্ছে । কিছুক্ষণ পর মা এলেন । বললেন , -কিরে কিছু খেতে দিবি না মেয়েটাকে ? -হ্যা অবশ্যই । ঘুম থেকে উঠুক আগে ।তারপর -আচ্ছা একটা কথা বলি ? -হুম বল । -তোর বিয়েটা তো অনিশ্চিত হয়ে গেল রে । আমি একটা রহস্যময় হাসি দিলাম । তারপর বললাম , “ যার এমন একটা পরীর মত ছোট্ট মেয়ে আছে , তার কি কোন বউয়ের প্রয়োজন আছে ..................? . . [এখানেই আপাতত শেষ । যদি ইচ্ছা হয় তবে আবার লিখব । ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ । ] . . By n!$pAp h@rAm!
Posted on: Sun, 28 Sep 2014 16:58:29 +0000

Recently Viewed Topics




© 2015