৬ ডিসেম্বর। আমাদের বিজয় - TopicsExpress



          

৬ ডিসেম্বর। আমাদের বিজয় দিবস। বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনেই যে পাকিস্তান সামরিক সরকার ও সেনাবাহিনী পরাজয় মেনে নেয়, যুদ্ধে হার মেনে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব মেনে নেয়। এখন বলতে পারবে, যে দলিলে স্বাক্ষর করে পাকিস্তানিরা হার মেনেছিল, তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন কে কে? সেই দলিলেই বা কী লেখা ছিল? হ্যাঁ, আজকে তোমাদেরকে সেই গল্প-ই শোনাবো। তার আগে, তোমাদের একটা পরীক্ষা হয়ে যাক। আমাদের দেশের স্বাধীনতার গল্প তো তোমাদেরকে অনেক বার শুনিয়েছি। সেই গল্পটুকুই একদম সংক্ষেপে আরেকবার বলছি, দেখ তো, কার কতটুকু মনে আছে। পাকিস্তানের হার মেনে নেওয়া, আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করা-- এগুলো অবশ্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একদম শেষের গল্প। এর আগে কত্তোকিছু হয়েছে! সে সব গল্পের অনেকটুকুই তো তোমরা জানো। কেন, আগে না তোমাদেরকে সে সব গল্প বলেছি? আচ্ছা, অল্প করে আজকেও তোমাদেরকে সেই গল্প বলছি, শোনো। ইংরেজরা চলে যাওয়ার আগে, ভারতীয় উপমহাদেশটাকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়ে গেল-- ভারত আর পাকিস্তান। কিন্তু এ কে ফজলুল হক মূল যে প্রস্তাব করেছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন মুসলমানদের কয়েকটা দেশ হবে। এই প্রস্তাবটি পরিচিত লাহোর প্রস্তাব নামে। সেই প্রস্তাবটি অবশ্য মানা হয়নি; বদলে উপমহাদেশের পৃথক দুটো মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে একটি দেশ বানানো হল। আর তারই ফল হল, কিম্ভূত আকৃতির পাকিস্তান; যার এক অর্ধেক ভারতের একপাশে, অন্য অর্ধেক ভারতের অন্যপাশে! হ্যাঁ, এই পাকিস্তানের একটা অংশই ছিল আমাদের বাংলাদেশ। তখন আমাদের বাংলাদেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। তবে আসল গোল ছিল অন্য জায়গায়। ক্ষমতায় ছিল সব পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন। আরও স্পষ্ট করে বললে পাঞ্জাবরা। আর ওরা এমন খারাপ আর দুষ্টু ছিল! ওদের অত্যাচারের কথা তো শুনেছো-ই; ওরা এমনকি সরকারি চাকরি বা সেনাবাহিনীর চাকরিতেও বাঙালি লোকজনদেরকে বেশি উন্নতি করতে দিত না! সব মিলিয়ে, বাঙালিদের মধ্যে একটা প্রতিরোধ দানা বাঁধতে শুরু করে। আমাদের প্রথম জাতীয় আন্দোলন ছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। পশ্চিম পাকিস্তানিরা যখন জোর করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বানাতে চাইল, বাঙালিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। দেশের অধিকাংশ মানুষই বাংলায় কথা বলে, স্বাভাবিকভাবেই বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার কথা। অথচ, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে উল্টো বাঙালিদেরই তাজা তাজা প্রাণ ঝরাতে হলো। সে গল্প তো তোমাদেরকে শুনিয়েছি অনেক আগেই। এরকম দেখা যেতে লাগল সব ক্ষেত্রেই; পশ্চিম পাকিস্তানিরা সব ক্ষেত্রেই আমাদের বঞ্চিত করতে লাগলো, দমিয়ে রাখতে চাইলো। সব মিলিয়ে দুই পাকিস্তানে খুব ঠোকাঠুকি চলতে লাগলো। কিন্তু ওই যে বললাম, ক্ষমতা তো পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, লাহোরে পাকিস্তানের সবগুলো রাজনৈতিক দল নিয়ে একটা কনফারেন্স হল। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি ঘোষণা করলেন। এই ৬ দফা ছিল বাঙালির প্রাণের দাবি; ৬ দফা বাস্তবায়িত হলে দুই পাকিস্তানের মধ্যে এই বৈষম্য আর থাকতই না। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এই ৬ দফা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ৬ দফার পুরো গল্পই কিন্তু একবার তোমাদের বলেছিলাম। ভুলে গেছ? তারপর ’৭০-র নির্বাচন হল। পূর্ব পাকিস্তানে (মানে আমাদের বাংলাদেশে) বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের কাছে অন্য দলগুলো রীতিমতো উড়ে গেল। পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জিতল ১৬৭টি আসনে! দুই পাকিস্তান মিলিয়ে, আওয়ামী লীগ এককভাবেই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পেল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের দুষ্টু নেতারা কী আর তা হতে দেবে? নানা গড়িমসি আর হাজারো অজুহাত দেখিয়ে তারা আওয়ামী লীগের সরকার গঠন কেবলই পেছাতে লাগলো। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস, ৭ তারিখ। এইদিন রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) শেখ মুজিবুর রহমানের এক ভাষণ দিলেন। লক্ষ লক্ষ লোক জড়ো হয়েছিল সেই বক্তৃতা শুনতে। ভাবছো, বিজয়ের গল্প বলতে বসে সাধারণ একটা ভাষণের কথা কেন বলছি? ঐ যে, ভুলটা করে বসলে! ৭ মার্চের ভাষণ কোনো সাধারণ ভাষণ ছিল না। আমাদের ইতিহাসে সে ভাষণটা যে কী গৌরবোজ্জ্বল আসনে অভিষিক্ত হয়ে আছে! সে ভাষণের গল্প আবার বলতে গেলে, আজকের গল্পটা আর বলা হবে না। অবস্থা বেগতিক দেখে চাল পাল্টালো পশ্চিম পাকিস্তানিরা। তখন পাকিস্তানের তখ্তে আসীন, মানে দেশের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। তার নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানিরা এক দ্বিমুখী ষড়যন্ত্র শুরু করলো। একদিকে ইয়াহিয়া আর জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় এসে শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার নামে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাখল। অন্যদিকে, সেই সুযোগে, কুখ্যাত জেনারেল টিক্কা খান অস্ত্র- শস্ত্র, গোলা-বারুদ, ট্যাংক-বিমান, সব নিয়ে জড়ো করতে লাগলো পূর্ব পাকিস্তানের (মানে বাংলাদেশের) বিভিন্ন সেনাছাউনিতে। ২৫ মার্চ। ‘কসাই’ টিক্কা খানের হত্যাযজ্ঞের প্রস্তুতি শেষ। গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে ইয়াহিয়া হঠাৎ করেই চলে গেলেন। আর সেদিন রাতেই, টিক্কা খানের নেতৃত্বে, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনি, রাতের আঁধারে ঝাঁপিয়ে পড়লো ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপরে। বাঙালি পুলিশ-আনসারদের খুন করল, বিভিন্ন এলাকায় আগুন লাগিয়ে দিল বসত-বাড়িতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের হলে হলে গিয়ে খুঁজে খুঁজে ছাত্রদের খুন করল। ওরা আবার এই হত্যাযজ্ঞের একটা গালভরা নামও দিয়েছিল- অপারেশন সার্চলাইট! সে রাতেই পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনি গ্রেফতার করে স্বাধীন বাংলার স্থপতি, শেখ মুজিবুর রহমানকে। অবশ্য, গ্রেফতার হওয়ার আগেই, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। কিছুদিনের মধ্যেই, আনুষ্ঠানিকভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। খুব দ্রুত মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠল, খুব দ্রুত তারা সংগঠিতও হয়ে গেল। এপ্রিলে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হল। মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হল জেনারেল এম এ জি ওসমানীকে। জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনী সংগঠন সমাপ্ত হল। প্রধান এম এ জি ওসমানীকে মন্ত্রীর সমান ক্ষমতা দেওয়া হল। তার অধীনে মুক্তিবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ হলেন লে. কর্নেল আব্দুর রব, ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার, আর অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ অফ স্টাফ হলেন মেজর এ আর চৌধুরী। যুদ্ধের সুবিধার্থে পুরো দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হল; প্রত্যেক সেক্টরে পাকিস্তান আর্মি থেকে এসে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়া অফিসারদের থেকে একজনকে কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হলো। এর বাইরে গঠন করা হলো তিনটি ব্রিগেড। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী কতোগুলো কৌশল ঠিক করেছিল। তার মধ্যে প্রধান ছিল দেশে প্রচুর গেরিলা যোদ্ধা পাঠানো, আচমকা গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখা, অতর্কিত আক্রমণে কাবু করে ফেলা। গেরিলাদের মূল লক্ষ্যগুলো ছিল- পাকিস্তানি সেনাদের যতো বেশি সম্ভব রেইড ও অ্যাম্বুশ করা; পাওয়ার স্টেশন, রেললাইন, গুদাম নষ্ট করে পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম নষ্ট করা; ব্রিজ-কালভার্ট, তেল ডিপো, ট্রেন, লঞ্চ-জাহাজ ধ্বংস করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনির চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনি আর তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার- আল বদর- আল শামসদের ব্যতিব্যস্ত রেখেই, অক্টোবরে মুক্তিবাহিনী সম্মুখ সমরে নামলো। এবার তারা বিভিন্ন বর্ডার দিয়ে দেশে প্রবেশ করতে শুরু করল। বিভিন্ন যুদ্ধে পাকিস্তানিদের হারাতে শুরু করল। গেরিলা আক্রমণও আরো তীব্র হল। কামালপুরে, বিলোনিয়ায়, বয়রায়, গরিবপুরে, ধলাইয়ে, হিলিতে, কুষ্টিয়ায় ভীষণ সব যুদ্ধ হলো। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানিরা দুই দফায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আরো ১৩ ব্যাটালিয়ান সৈন্য আনালো। তাতেই বা কী এমন এসে গেল! আমরা যে বিজয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এমনিতেই সে সময় ভারত আমাদের পক্ষেই ছিল, তার উপর আবার পাকিস্তান আক্রমণ করে ভারতকে আরো চটিয়ে দিল। এবার ভারতের সেনাবাহিনিও আমাদের সাথে যুদ্ধে নেমে পড়লো। এবার তো পাকিস্তানি বাহিনি একেবারে গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এম আর আখতার মুকুল ‘চরমপত্র’ বলে একটা অনুষ্ঠান করতেন, খুব জনপ্রিয় ছিল অনুষ্ঠানটা। সেখানে তিনি প্রায়ই বলতেন- ‘মুক্তিবাহিনীর গাবুর মাইর খাইয়া পাকিরা এক্কেরে ক্যাদোর মইদ্যে হুইত্যা পড়ছে।’ আর এবার তো মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীও যোগ দিল। ফলাফল, ১৬ ডিসেম্বরেই পরাজয় মেনে নিল পাকিস্তানি বাহিনী। এবার আসা যাক আসল গল্পে। আজকে আমাদের আত্মসমর্পণের সেই ঐতিহাসিক দলিলের গল্প বলার কথা, তাই না? যে দলিলে স্বাক্ষর করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজয় মেনে নেয়, নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করে ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের এই ঐতিহাসিক দলিলটি স্বাক্ষরিত হয় রমনার রেসকোর্স ময়দানে, ৪টা ১ মিনিটে। রেসকোর্স ময়দান চিনতে পারছো না? চিনবে কী করে, এখন যে এর নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান! এবার চিনেছো তো? আর সেই দলিলে স্বাক্ষর করলেন বাংলাদেশ- ভারত যৌথ বাহিনীর পক্ষে কমান্ডার-ইন-চিফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, আর যুদ্ধরত পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী। ঐতিহাসিক সে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে সেখানে আরো কে কে ছিলেন? বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছিলেন তখনকার আমাদের বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার, ভারতের পক্ষে সে দেশের তখনকার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ লে. জেনারেল জ্যাকব রাফায়েল জ্যাকব, আর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় পাকিস্তানি নেভির কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শরীফ ও পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল প্যাট্রিক ডি কলাঘান। দলিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজী নিঃশর্তে পরাজয় মেনে নিলেন, বাংলাদেশও স্বাধীন হয়ে গেল। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে যুদ্ধ করতে থাকা ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধবন্দী হিসেবে স্বীকৃত হল। ওরা যদি বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, তবে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধবন্দীর সকল অধিকারই ওরা পাবে। পাকিস্তানি সকল সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী-ই যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা পাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একসঙ্গে এত সৈন্য আর কোথাও আত্মসমর্পণ করেনি। দলিলে স্বাক্ষর হয়ে গেলে, মানে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, ভারতের বেতার কেন্দ্র আকাশবাণীসহ পৃথিবীর নানা রেডিও- টেলিভিশনে সে খবর প্রচার হতে শুরু করল; বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, পাকিস্তান মুক্তিবাহিনী আর ভারতের সেনাদের যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়েছে। অবশ্য ভারতের সেনাবাহিনী বেশিদিন যুদ্ধ করার সুযোগই পায়নি। ওরা আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ১২ দিনের মাথায়-ই যে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করলো! কী, আত্মসমর্পণের সেই দলিলটা পড়ার জন্য আর তার সইছে না? আচ্ছা, তোমাদের জন্য পুরো ঐতিহাসিক দলিলটাই তুলে দিচ্ছি। তবে দলিলটা কিন্তু ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল; পাকিস্তানিরা কী আর বাংলা বুঝতো নাকি! তবে চিন্তা করো না, নিচে সে দলিলটির বাংলা অনুবাদও করে দিলাম। Instrument of Surrender The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all PAKISTAN Armed Forces in BANGLA DESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA, General Officer Commanding in Chief of the Indian and Bangladesh forces in the Eastern Theatre. This surrender includes all PAKISTAN land, air and naval forces as also all para-military forces and civil armed forces. These forces will lay down their arms and surrender at the places where they are currently located to the nearest regular troops under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA. The PAKISTAN Eastern Command shall come under the orders of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA as soon as the instrument has been signed. Disobedience of orders will be regarded as a breach of the surrender terms and will be dealt with in accordance with the accepted laws and usages of war. The decision of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA will be final, should any doubt arise as to the meaning of interpretation of the surrender terms. Lieutenant JAGJIT SINGH AURORA goves a solemn assurance that personnel who surrender shall be treated with dignity and respect that soldiers are entitled to in accordance with provisions of the GENEVA Convention and guarantees the safety and well-being of all PAKISTAN military and para-military forces who surrender. Protection will be provided to foreign nationals, ethnic minorities and personnel of WEST PAKISTANI origin by the forces under the command of Lieutenant- General JAGJIT SINGH AURORA. Signed by J.S. Aurora and A.A.K.Niazi. আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিলের বাংলা অনুবাদ পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশি যৌথ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে, পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে। এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে, তা আত্মসমর্পণের শর্তের লক্সঘন বলে গণ্য হবে, এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলির অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন, এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে। স্বাক্ষর স্বাক্ষর জগজিৎ সিং অরোরা আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি পূর্ব রণাঙ্গনে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী অধিনায়ক, পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড (পাকিস্তান) ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ #ADI
Posted on: Wed, 17 Dec 2014 17:28:22 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015