৯৮/১০. সৃষ্টিকর্তা - TopicsExpress



          

৯৮/১০. সৃষ্টিকর্তা প্রসঙ্গঃ ‘কালা’ -------------------------------------- ৯৮/১০. সৃষ্টিকর্তা প্রসঙ্গঃ ‘কালা’ (১৬ পর্বের ১০ম পর্ব) (আধ্যাত্মিকবিদ্যা, আত্মতত্ত্ব, আত্মদর্শন, দেহতত্ত্ব, পরম্পরাতত্ত্ব, দিব্যজ্ঞান, স্বরূপদর্শন, নরত্বারোপ ও বলনদর্শন টীকা) ----------------------------------------------------------------------------------- কালা Melanin (মিলেনিন)/ ‘ميلانين’ (মিলেনিন) এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ব্যাপকপরিবারের অন্যতম একটি ‘চারিত্রিকপরিভাষা’। এর মূলকসদস্য ‘সৃষ্টিকর্তা’, রূপকপরিভাষা ‘কাঁই’, উপমানপরিভাষা ‘ঘি, নীর, পীযূষ, মধু, শস্য ও সূর্য’, অন্যান্য চারিত্রিকপরিভাষা ‘অসিত, কালু ও কৃষ্ণ’ এবং ছদ্মনামপরিভাষা ‘আদি, স্রষ্টা, স্বায়ম্ভু ও হর’। এ পরিভাষাটি রূপকসাহিত্যের ‘জীবনিশক্তি’ ও ‘সৃষ্টিকর্তা’ এ ২টি বৈক্তিক সদস্যেরই ব্যাপক পরিভাষারূপে ব্যবহার হয়ে থাকে। এ জন্য বর্ণনার ক্ষেত্র অনুযায়ী এর সঠিকমূলক উদ্ঘাটন করা একান্ত প্রয়োজন। ১. কালা (রূপ)বি কালো, কৃষ্ণবর্ণ, কলংকিত, melanin (মিলেনিন), ‘ميلانين’ (মিলেনিন), darkey (ডার্কি), ‘أسود’ (আসওয়াদ) (আবি)বি ১.অগ্নি, কাঁই, কাজলা, কালিয়া, কালু, কেলে, কৃষ্ণ, বিরিঞ্চি, ব্রহ্মা, শ্যাম, শ্যামল, শ্যামলা ২.ঈশ্বর, অনন্ত, প্রজাপতি, হিরণ্যগর্ভ, বিধাতা, বিবস্বান, স্বায়ম্ভু (ইদৈ)বি Lord (লর্ড), maker (মেকার), designer (ডিজাইনার) (আদৈ)বি আল্লাহ (আ.ﺍﻠﻠﻪ), ইসা (আ.ﻋﻴﺴﻰٰ), মসিহ (আ.ﻤﺴﻴﺢ), শাম (আ.ﺷﺄﻢ), শামস (আ.ﺸﻤﺲ), শিশ (আ.ﺸﻴﺶ) (দেপ্র) এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের ‘চারিত্রিকপরিভাষা’ ও রূপক সাহিত্যের একটি দৈবিকা বা প্রতীতি বিশেষ (সংজ্ঞা) ১.কালোবর্ণের সব কিছুকেই কালা বলা হয় ২.কালোবর্ণের অমৃত মানবজলকে কালা বলা হয় (ছনা)বি আদি, স্রষ্টা, স্বায়ম্ভু ও হর (চরি)বিণ অসিত, কালা, কালু ও কৃষ্ণ (উপ)বি ঘি, নীর, পীযূষ, মধু, শস্য ও সূর্য (রূ)বি কাঁই (দেত)বি সৃষ্টিকর্তা।২. কালা বিণ বধির, ঠোসা, শব্দ শোনে না এমন। ৩. কালা বিণ ঠাণ্ডা, শীতল, হিমেল, অত্যন্ত ঠাণ্ডা। Melanin [মিলেনিন] বি জীবের ত্বক ও চুলে প্রাপ্ত কালচে বাদামি বর্ণের রঞ্জক পদার্থ বিশেষ, ‘ميلانين’ (মিলেনিন), ‘الميلانين’ (আলমিলেনিন), ‘مادة الميلانين’ (মাদ্দা আলমিলেনিন) {ই. ভিয়েতনামীয়} ‘ميلانين’ [মিলেনিন] বি জীবের ত্বক ও চুলে প্রাপ্ত কালচে বাদামি বর্ণের রঞ্জক পদার্থ বিশেষ, সবষধহরহ (মিলেনিন) {আ. ভিয়েতনামীয়} Enzyme [অ্যানজাইম] বি উৎসেচক, দ্রাবক, জীবকোষে উৎপন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ, প্রাচীন জীবকোষ উৎপন্নকারী পদার্থ বিশেষ {ই} কালার কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি- ১ (Some highly important quotations of Melanin)- 1 ১. “আকাশে ঠিকানা দিয়ে, নিয়েছে ঠাঁই পাতালে গিয়ে, উত্তর কী দক্ষিণে বায়ে, কৃষ্ণকালা ভবের ব্রজ্যা” (বলন তত্ত্বাবলী)। ২. “আসবে আসবে বলে কালা, ফুরাইল যৌবনবেলা, দেখা দাও আসিয়ারে” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩)। ৩. “কী অপরূপ রূপেরকিরণ, কালা হয় জীবের জীবন, ঐ পিরিতে দিয়া নয়ন, প্রেমানলে পুইড়া মরি” (বলন তত্ত্বাবলী- ৭২)। ৪. “কী আগুন জ্বালাইয়া গেলিরে, জ্বালা সইতে না পারি, আমি একাকিনী রই কেমনে, কালার সঙ্গ ছাড়ি” (বলন তত্ত্বাবলী- ৭২)। ৫. “নিধুবনেই বসে কালা, বংশিটি বাজায় দোতালা, সকাল বিকাল দুই বেলা, তার দু’রঙ্গে আনাগোনা” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩)। ৬. “ভক্ত কবির জাতে জোলা, শুদ্ধভক্তি মাতোয়ালা, নাম ধরেছে ব্রজের কালা, শুনি সর্বত্র তাই” (পবিত্র লালন- ৭০৭/২)। ৭. “মানুষে মনস্কামনা, সিদ্ধি করো বর্তমানে, খেলছে খেলা বিনোদকালা, এ মানুষের তনভুবনে” (পবিত্র লালন- ৬০৯/২)। ৮. “মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন, লুকালে না পায় অন্বেষণ, কালারে হারিয়ে তেমন, ঐরূপ হেরি এ দর্পণে” (পবিত্র লালন- ৭৯১/৩)। ৯. “যে করবে কালার চরণের আশা, জানো নারে মন তার কী দুর্দশা, ভক্তবলি রাজা ছিল- সর্বস্ব তার নিলো, বামনরূপে প্রভু করে ছলনা” (পবিত্র লালন- ৭৩৩/২)। ১০. “রোজ নিশিতে মথুরাতে দুয়ার খুলিয়া, আসবে বলে শ্যামকালা থাকি বসিয়া, তোমার দর্শন পাবার আশে, চিত্ত যায় উড়িয়া” (বলন তত্ত্বাবলী)। ১১. “শতদল কমলে কালা, আসনশূন্য সিংহাসনে, চৌদ্দভুবন ফিরায় নিশান, ঝলক দিচ্ছে নয়ন কোণে” (পবিত্র লালন- ৬০৯/৩)। ১২. “সে কালাচাঁদ নদে এসেছে, সে বাজিয়ে বাঁশি ফিরছে সদায়, ব্রজঙ্গনার কুল নাশে” (পবিত্র লালন- ৯৫৯/১)। ------------------------------------------------------------------ কালার কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি- ২ (Some highly important quotations of Melanin)- 2 ১. “অনাদির আদি শ্রীকৃষ্ণ নিধি, তার কী আছে কভু গোষ্ঠখেলা, ব্রহ্মরূপে সে অটলে বসে, লীলাকারী তার অংশকলা। পূর্ণচন্দ্র কৃষ্ণ রসিক শিখরে, শক্তির উদয় যার শরীরে, শক্তিতে সৃজন মহাসংকর্ষণ, বেদ আগমে যারে কৃষ্ণ বলে। (পবিত্র লালন- ৫৯৩)। ২. “আজ পাশাখেলব রে শ্যাম, ও শ্যাম রে তোমার সনে, একেলা পেয়েছিরে শ্যাম, এ নিধুবনে” (মরমিগীতিকার রাধারমণ)। ৩. “এমন শ্যামল সুন্দর মুখ ওরে, আমি যেদিন হতে হেরি, আমার মনে লয় না, ঘর আর বাড়ি” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৪. “কাজলাকালো বন্ধু আমার, আসবি কবে বলরে কাজলা আসবি কবে বল। অনেকদিন গেছিস রে কাজলা আসবি কবে বল, দিবানিশি তোর জন্য মন করে টলমল” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৫. “কালা আমায় পাগল করেছেরে, ঘরে রই কেমনে” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৬. কোথায় রইলারে শ্যাম কালিয়া, পাগল বানাইয়া আমায় উদাসী করিয়া (গীতিকারঃ বলন কাঁইজি)। ৭. “চাতক প্রায় অহর্নিশি, চেয়ে থাকে কালোশশী, হব বলে চরণদাসী, তা হয় না কপাল গুণে” (পবিত্র লালন- ৭৯১/২)। ৮. “তোমার লাগিয়ারে সদায়, মন আমার কান্দে বন্ধুরে, প্রাণবন্ধু কালিয়ারে। হৃদয় নিষ্ঠুর রে বন্ধু, তুই তো কুলনাশা, আসি বলে ফাঁকি দিলিরে বন্ধু, না মিটালি আশা” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৯. “রজনী হোসনে অবসান, আজ নিশিতে আসতে পারে, বন্ধু কালাচাঁন” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ১০. শ্যাম কালিয়ারে কৃষ্ণ কালিয়া, কী সুখে রয়েছে রাধা, দেখে যাও আসিয়া (গীতিকারঃ বলন কাঁইজি)। ------------------------------------------------------------ কালার কয়েকটি সাধারণ উদ্ধৃতি (Some ordinary quotations of Melanin) ১. “আর তো কালার সে ভাব নাইকো সই, সে না ত্যেজিয়ে মদন, প্রেমপাথারে খেলছে সদায় প্রেমঝাঁপই” (পবিত্র লালন- ১৭৩/১)। ২. “আমি কেন এলাম যমুনা ঘাটে, ঐ কালারূপ দেখলাম তটে, আমার কাঙ্খের কলসি কাঙ্খে রইল, দু’নয়নের জলে, কলসি ভেসে গেল” (পবিত্র লালন- ৫৬৩/২)। ৩. “আমি যখন রাঁধতে বসি, কালা তখন বাজায় বাঁশি, নিকুঞ্জবনের কিনারে, আমার শাশুড়ী ননদী ঘরে, কেমন করে যাই তার তরে” (পবিত্র লালন- ৮৭৬/৩)। ৪. “এস গো দয়াল বন্ধু শ্যাম কালাচাঁন, মনের বনে ফুল ফুটেছে, প্রেমযমুনায় ভরা বান” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫৪)। ৫. “ও কালার ঊরু বাঁকা ভ্রূ বাঁকা, ময়ূরপঙ্খি নাও উড়ায় প্রাণসখা, তাতে আছে আমার নাম লেখা, আমি কেন পাই না দেখা, সখারে বলো” (পবিত্র লালন- ৫৬৩/৩)। ৬. “ও কালার কথা কেন বলো আজ আমায়, যার নাম শুনলে আগুন জ্বলে তাপিত অঙ্গ শীতল হয়” (পবিত্র লালন- ২৪১/১)। ৭. “ওপরে রবে ঝড়ের জ্বালা- চৌদিকে আগুনের লালা, জ্বলে পুড়ে হবে কালা- যারা রবে সাধনবিহীন, ভঙ্গ করে আপন সন্ধি- লাখে লাখে হবে বন্দী, সত্তরহাত শিকলে বান্ধি- করবে কত কারাধীন” (বলন তত্ত্বাবলী- ৪৮)। ৮. “কত শত মুনি ঋষি, যুগ যুগান্তর বনবাসী, পাব বলে সে কালশশী, বসে বসে তপে” (পবিত্র লালন- ৯৪৭/৩)। ৯. “কালা কালা বলে কেনো হয়েছ উতলা, গোপনে সে গাঁথা মালা প্রকাশিলে জ্বালা, ঐ কালা কালা নয় ঐ কালাতে কিবা হয়, কৃষ্ণ কালা বলে কেনো ভুলে রইছ ও ভোলা সে কালা” (পবিত্র লালন- ২৯০/১)। ১০. “কালা কী মন্ত্রে মন ভুলাল, এখন আমার ঘরে থাকা দায় হলো, সখী কী করিরে, লালন বলে তাইত রাধা, যাবে না ঘরে ফিরে” (পবিত্র লালন- ৮৭৬/৪)। ১১. “কালা মধুপুর বিজনে বসি, রোজ বাজায় বিষের বাঁশি, লীলার লোভে মাসে আসি, প্রেম জাগায় রাধার মনে” (বলন তত্ত্বাবলী)। ১২. “কালার গলে পরিয়ে মালা, জুড়াব মনের সকল জ্বালা (গো), বলন কয় মালা পরাও, দয়াল সাঁইয়ের গলাতে” (বলন তত্ত্বাবলী- ২০৯)। ১৩. “কালার রূপে নয়ন দিয়ে, প্রেমানলে মরলাম জ্বলে, ওরে বিধি একি হলো, আমার কাঁদতে কাঁদতে জনম গেল” (পবিত্র লালন- ১৪৪/২)। ১৪. “কালার সাথে প্রেম করে, জনম গেল কাঁদতে, জন্মাবধি অপরাধী, হলাম কালার পদেতে, দেহ করলাম সমর্পণ, পাইনি কালার মন, মান ভাঙতে মন ভেঙে যায়, লালন ভনে তাই” (পবিত্র লালন- ৬৯১/৪)। ১৫. “কালো কোকিলের ডাক, না শুনব কর্ণে, ঘ্যানর ঘ্যানর কথা, না শুনব শ্রবণে, যে কবে কালার কথা, তার সঙ্গে মোর নাই কথা, যে দিবে অন্তরে ব্যথা, সইবে না এ রাই” (পবিত্র লালন- ৬৯১/৩)। ১৬. “ছয়মাসে বালিকা বৃদ্ধা হয়ে হয় কালা ও সাদা, নাতি জন্মের নয়মাস পরে জন্ম হয় বড় দাদা, আটমাস আগে মরে বাবা, বেশ্যাবৃত্তি মেয়ের কাম” (বলন তত্ত্বাবলী- ৪৫)। ১৭. “তলার ওপরে তলা, তার ভিতরে চিকনকালা, দেখা দেয় সে দিনের বেলা, রসেতে ভেসে” (পবিত্র লালন- ৮৫৩/৩)। ১৮. “তুমি সাঁই করিমকালা হর, এক অংশে তিন করো আকার, কারে ভজে কারে পাব ভেবে, জনম গেল অকাতরে” (পবিত্র লালন- ২০৩/৩)। ১৯. “তেমন বলন হয় পোড়াহৃদয়, সাথী হারাইয়া কান্দে সদায়, ভুবনে কোথাও মিলে না-, হারাইয়া চিকনকালা, বুকের জ্বালে দারুণ জ্বালা, তারে ছাড়া বাঁচে না” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫০)। ২০. “তোমরা আর আমায় কালার কথা বলো না, ঠেকে শিখলাম গো, কালার রূপ আর ভুলব না” (পবিত্র লালন- ৪৯৬/১)। ২১. “দু’টি উরু কলারি বোল, সিঙ্গ মাজা দেখি কেবল, তাতে রয়েছে যুগল, আদির আদি অনাদি কালা” (পবিত্র লালন- ৫৪১/৩)। ২২. “দেবাধিদেব শিব ভোলা, তার গুরু ঐ চিকনকালা, তোরা বলিস চিরকাল- গোরা রাখাল, কেমন রাখাল জানগে বেদ পুরাণে” (পবিত্র লালন- ৪৮৫/৩)। ২৩. “নিঠাঁই ঘরের খুলে তালা, দেখো স্বরূপ রবি কালা, ঘুচবে যত ভবজ্বালা, ভেবে বলে বলন তাই” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৭৬)। ২৪. “নিধুবনেই বসে কালা, বংশিটি বাজায় দোতালা, সকাল বিকাল দুই বেলা, তার দু’রঙ্গে আনাগোনা” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩)। ২৫. “পঞ্চবাণে তাপন নিরূপণ করিবার ভেদ বিচার, ষোলকলার জানলে বিধি থাকবে না কভু বিমার, হলে পশ্চিমে সূর্য উদয়- জন্মমরণ দূরে পালায়, বলন কয় নাই ভয়- ধরা পড়ে শ্যামকালা” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৪০)। ২৬. “পরলাম কলংকের হার তবু তো ও কালার মন পেলাম না, ঘৃণায় মরে যাই এমন প্রেম আর করব না” (পবিত্র লালন- ৪৯৬/২)। ২৭. “পাকাও এক রাগের সুতা, ভাবের টোপ গেঁথে দাও সেথা, নিচে সাড়া পেলে উঠবে ভেসে, ব্রহ্মা কালা একেশ্বর” (পবিত্র লালন- ৬৪৬/২)। ২৮. “পূর্ণ করে ষোলকলা, ভেদ করে সপ্ততলা, তার ওপরে বসে কালা মধু খায়, ষটচক্র পর- আদিবিধান তার, সে জন মৃণাল ধরে উজান ধায়” (পবিত্র লালন- ৯৯৬/৩)। ২৯. “বলে বলুক কালা কালা, তার গলায় পরাব মালা, কালার প্রেমে এত জ্বালা, কেমনে সহ্য করি” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩)। ৩০. “বারিযোগে বারিতা’লা, বিনোদ কালা খেলছে খেলা হৃদকমলে, হলো না মোর সাধন ভজন, জাতি কুলের গ-গোলে” (পবিত্র লালন- ৬৮৭/১)। ৩১. “বিনোদকালা বংশীওয়ালা বংশিটি বন্ধ করিবে, তোমার সত্তরজন প্রধানেরা বিদায় হয়ে যাবে, বলন কয় অন্তিমকালে, মিটিবে সংসারের ভ্রম” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫৬)। ৩২. “বিরিঞ্চি বাঞ্ছিত সে ধন, মানুষরূপে এ বৃন্দাবন, জানে যত রসিক সুজন, সে কালার গুণ বাখানি” (পবিত্র লালন- ৪৫০/৩)। ৩৩. “ব্রজের কালার সনে (নিষ্ঠুর কালার সনে), সন্ধ্যাবেলা দেখা হলো মাধবী বনে” (বলন তত্ত্বাবলী)। ৩৪. “ভবে পিরিতির কী জ্বালা, বুঝে না নিষ্ঠুরকালা, শ্যাম যদি জান্ত জ্বালা, থাকত না সে নিরালায়” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৬৮)। ৩৫. “ভাণ্ড ব্রহ্মাণ্ড মাঝে, সাঁই বিনে কী খেলা আছে, লালন কয় নাম ধরেছে, কৃষ্ণ করিম কালা” (পবিত্র লালন- ৯৩২/৪)। ৩৬. “মথুরাতে কৃষ্ণকালা অর্জুনের শালা, সুভদ্রা ভগ্নী তাহার অভিমন্যু তাহার পোলা, দেখরে কেমন জ্বালা মিছে কেনো বলো কালা, কালার ঘরে বাতি জ্বলে অন্ধকারে উজালা সে কালা” (পবিত্র লালন- ২৯০/৪)। ৩৭. “যেমন রূপ কালো তেমনি মন কালো একি কালার ছলনা, বেড়ায় ব্যঞ্জন চেখে লজ্জা গণে না” (পবিত্র লালন- ৪৯৬/৩)। ৩৮. “যে যা ভাবে সেরূপ সে হয়, লর্ড ব্রহ্মা কৃষ্ণ কালা, এক আল্লাহ জগৎময়” (পবিত্র লালন- ৮৫২/১)। ৩৯. “সাধনপথে কী না হলো, বাদশার বাদশাই ছাড়ল, কুলবতির কুল গেল, কালারে ভেবে” (পবিত্র লালন- ৯৪৭/২)। ৪০. “রক্তিম সাদা কালা ধারা, অষ্টাঙ্গে মহাযোগ করা, বলন কয় পড় না ধরা, পাড়ি দিতে গিয়ে ত্রিবেণা” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৫৭)। ৪১. “রাধে লো তোরে করিরে মানা, কালার সঙ্গে কথা বলো না, লালন বলে সর্বাঙ্গ বেঁধে নিবে, তোরে ছাড়বে না” (পবিত্র লালন- ৪৫৩/৪)। ৪২. “শূন্যের পরে ছিলেন সাঁই, গুপ্ত জ্যোতির্ময়, কৃষ্ণকালা গৌরবালা ছিলেন কোথায়” (পবিত্র লালন- ৮৯৮/১)। ৪৩. “সবে বলে কালো কালো, কালো নয় সে চাঁদের আলো, সে যে কালাচাঁদ- নাই এমন চাঁদ, যে চাঁদের তুলনা তারি সনে” (পবিত্র লালন- ৪৮৫/২)। ৪৪. “সকাল বিকাল জোয়ার ভাটা ত্রিধারাসাগরে, রক্তিম সাদা পাড়ি দিয়া যাইও কালা ধারে, অমৃতসুধা দুগ্ধ মধু যত পারো খাইতে যাদু, বলন কয় সাবধানে সাধু প্রাণ ভরিয়া খাও” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫২)। ৪৫. “সাদা কালো ফুলের বাসর, পঞ্চরসে পেতেছি আসর- গো, নিধুবনে নাইকো দোসর, রাঙ্গা ঠোঁটী খাইয়া পান” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫৪)। ৪৬. “সাদা সুতা দেখে উপবাসনা, কালা সুতা দেখে কর ভোজনা, তবে হয় উপোস সাধনা, নতশিরে কয় বলন” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৯৭)। ৪৭. “সাধন পথে কী না হলো, বাদশার বাদশাহি গেল, কত কুলবতির কুল গেল, কালারে ভেবে” (পবিত্র লালন- ৯৪৭/২)। ৪৮. “সে কালার প্রেম করা সামান্যের কাজ নয়, ভালো হয় তো ভালোই ভালো, নইলে লেঠা হয়” (পবিত্র লালন- ৯৬০/১)। ৪৯. “সে কালা মোর চতুরালী, আবার ননিচোরা বনমালী, রসিক নাম ধরে, সে যে বাজায় মোহনবাঁশি, রাধার স্বরে গান করে” (পবিত্র লালন- ১৩৩/৩)। কালার ওপরে কয়েকটি পূর্ণ লালন (Some full Lolon on the Melanin) ১. “কালা বলে দিন ফুরাল, ডুবে এলো বেলা, সদায় বলো কালা। কালা কালা বলে কেন হয়েছ উতালা গোপনে সে গাঁথা মালা প্রকাশিলে জ্বালা ঐ কালা কালা নয়- ঐ কালাতে কিবা হয় ভুলে রইছ ও ভোলা সে কালা। এ কালা জন্ম নেয় নাই দৈবকির ঘরে ষোলশো গোপির সঙ্গে খেলা না করে থাকে বসে একেলা- চারযুগে তার খেলা কালা গুণমণি চৌদ্দতালা সে কালা। মথুরায় কৃষ্ণকালা অর্জুনের শালা সুভদ্রা ভগ্নী অভিমন্যু তার পোলা, দেখরে কেমন জ্বালা- মিছে কেন বলো কালা কালা অন্ধকারে উজালা সে কালা। লালন বলে মায়াজালে প্রাণ যায় চারযুগে দেখি কালা দয়াময়, সে নিঠুর কালা- নাই তার বিচ্ছেদ জ্বালা চক্ষু বুঁজে জপে মালা সে কালা।” (পবিত্র লালন- ২৯০)। ২. “কৃষ্ণপ্রেমের পোড়াদেহ, কী দিয়ে জুড়াই গো সখী, কে বুঝবে অন্তরের ব্যথা, কে মুছবে আঁখি। যে দেশে গেছে বন্ধু কালা, সে দেশে নিয়ে যাব ফুলের মালা, আমি ঘুরব নগর যোগিনী বেশে, সুখ নাই যে মনে গো সখী। তোরা যদি দেখিস কালারে, বলে দে খবর আমারে, নইলে আমি প্রাণ ত্যাজিব যমুনার জলে কালার আশায় জীবন গেল একাকী। কালাচাঁদকে হারিয়ে হলাম যোগিনী দিবানিশি না জুড়ায় পরানি, লালন কয় কালার চরণ পেলাম না এখন কেঁদে হবে কী।” (পবিত্র লালন- ৩২৪)। ৩. “তোমরা আর আমায়, কালার কথা বলো না, ঠেকে শিখলাম গো, কালার রূপ আর ভুলব না। পরলাম কলংকের হার, তবু তো ও কালার, মন পেলাম না, ঘৃণায় মরে যাই- কী করি উপায়, এমন প্রেম আর করব না। যেমনি রূপ কালো, তেমনি মন কালো, একি কালার ছলনা, একি প্রেমের শিক্ষে- বেড়াও ব্যঞ্জন চেখে লজ্জা করে না। এক মন কয় জায়গায় বিকায়, লজ্জায় মরে যাই, বলা যায় না, মন নিয়ে কালা- খেলছ খেলা, শেষে ভালো হবে না। যেমন দেখি চন্দ্রাবলী, তেমনি দেখি রাধার অলি, থাক সে দু’জনা, শুনে রাধার বোল- লালনের বোল আর চলে না।” (পবিত্র লালন- ৪৯৬)। ৪. “প্রেম করে বাড়ল দ্বিগুন জ্বালা, ছল করে মন হরে নিলো কালা। সখীরে আমি যখন রাঁধতে বসি, কালা তখন বাজায় বাঁশি, মন হয় যে উদাসী, কী করি ভেবে মরি, একি করল কালা। সখীরে আমার জন্য কালা, প্রেমের হাট বসাল কদমতলা, কদমতলায় করেছি কত লীলা, তাইত জীবন বরি হলো কালা। সখী শুইলে স্বপনে দেখি, শ্যাম এসে ধরে আঁখি, হেঁসে বলে চাঁদমুখী, লালন বলে রাই পরায়, শ্যামের গলে মালা।” (পবিত্র লালন- ৬৪২)। ৫. “সকালবেলা চিকনকালা, এলে কী মনে করে, এলে কেন নিশি জাগা রাধার দ্বারে। তোমার আশাতে ভাই, আমরা গোপিগণ সবাই, মনের সুখে বাসর-ঘর সাজাই, ওহে রাখালরাজা, মজালে কুলবধূ রাধারে। কে বুঝে শ্যাম তোমার লীলে, বলো গতনিশি কার কুঞ্জে ছিলে, বদনবিধ শুকিয়ে গেছে, কে তোমায় দিয়েছে দফা সেরে। পোহায়ে গেছে নিশি, শ্যাম তুমি হয়েছ দোষী, বাজাইও না বিষের বাঁশি, লালন কয় কিশোরী আছে মান করে।” (পবিত্র লালন- ৯০২)। ৬. “সে কালাচাঁদ নদে এসেছে, সে বাজিয়ে বাঁশি ফিরছে সদায়, ব্রজঙ্গনার কুলনাশে। মজবি যদি কালার পিরিতি, আগে জানগে তার কেমন রীতি, উত্তম প্রেম করা নয় প্রাণে মরা, অনুমানে বুঝিয়েছে। যদি রাজ্যপদ ঐপদে কেউ দেয়, তবুও কালার মন না পাওয়া যায়, রাধা ব’লে বাজে বাঁশি, এখন তারে কত কাঁদিয়েছে। ও না ব্রজে ছিল জলদ কালো, না জানি কী সাধনে গৌর হলো, ফকির লালন বলে চিহৃ কেবল, দু’নয়নে বাঁকা আছে।” (পবিত্র লালন- ৯৫৯)। কালার ওপরে কয়েকটি পূর্ণ বলন (Some full Bolon on the Melanin) ১. “যার ভাবে এ কোপনি মজা শ্বেত বসনে সাধু সাজা জাতি কুল সব ত্যাজিয়ে সেজেছে সে পথের রাজা। আকাশে ঠিকানা দিয়ে নিয়েছে ঠাঁই পাতালে গিয়ে উত্তর কী দক্ষিণে বায়ে কৃষ্ণকালা ভবের ব্রজ্যা। কুল ত্যেজে গিয়ে অকুলে বসে রয় সে সিদ্ধিমূলে ক্ষণেক ভাঁসে শুভ্রজলে উত্তরে উড়িয়ে ধ্বজা। করঙ্গ ও কোপনি বালা সব হারায় পারের বেলা বলন কয় পেতে কালা আগে হও অটলবীর্যা।” (বলন তত্ত্বাবলী)। ২. “কোথায় রইলারে শ্যাম কালিয়া পাগল বানাইয়া আমায় উদাসী করিয়ারে (শ্যাম কালিয়া)। পাশাখেলতে ফুলবনে নিত্য আসো নিধুবনে লালবাতি জ্বালাইয়ারে। আসবে আসবে বলে কালা ফুরাইল যৌবনবেলা দেখা দাও আসিয়ারে। বান্ধব নাইরে শ্যাম বিনে বলন কাঁন্দে ব্রজধামে দিবস জাগিয়ারে।” (বলন তত্ত্বাবলী)। ৩. “কী আগুন জ্বালাইয়া গেলিরে জ্বালা সইতে না পারি আমি একাকিনী রই কেমনে কালার সঙ্গ ছাড়ি। কী অপরূপ রূপের কিরণ কালা হয় জীবের জীবন ঐ পিরিতে দিয়া নয়ন প্রেমানলে পুইড়া মরি। বলে বলুক কালা কালা তার গলায় পরাব মালা কালার প্রেমে এত জ্বালা কেমনে সহ্য করি। বলন কয় কালাকালে থাকে করণবিন্দু নালে পাইলে তারে কোনকালে হৃদয়ে রাখব ভরি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৭২)। ৪. “বুকে আসন দিব কারেরে কালা বিনে জ্বালা বুঝবে কে কালারে আনিয়া দে লো আমার বান্ধবরে আনিয়া দে। বংশিওয়ালা বিনোদকালা আমার গলার মালা তারে না দেখলে আমার বুকে বাড়ে জ্বালা প্রেমানলে হৃদকমলে জ্বালা ধিকিধিকি জ্বলে। নিদারূণ ফাগুন মনের আগুন ভরা যৌবনে হৃদয় পুড়ার জ্বালা আমার কালা নাহি জানে ও তার বিরহ বেদনা জ্বলে দাউ দাউ করে। বলন কাঁইজি ভিক্ষার ঝুলি বান্ধিয়া গলায় বুকের মাণিক কালাচাঁদরে খুঁজিয়া বেড়ায় না পাইলে কালার দর্শন ভেকবসনে কী শোভা আছে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২১৫)। সাধারণ বয়রা অর্থে ‘কালা’ পরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology Melanin sense ordinary the deaf) ১. “তিল পরিমাণ জায়গা সে যে, শতরঙ তারি মাঝে, কালায় শুনে অন্ধে দেখে, নাংড়ার নাচনা” (পবিত্র লালন- ৩৪০/৩)। ২. “ত্রিবেণীর পিছনঘাটে, বিনে হাওয়ায় মৌজ ছোটে, বোবায় কথা কয়- কালায় শুনতে পায়, আন্ধেলায় পরখ করে সে না” (পবিত্র লালন- ৫২৭/৩)। সাধারণ কালোবর্ণ অর্থে ‘কালা’ পরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology Melanin sense ordinary for black) ১. “ধলা কী কালা বরণ, বাস করে সে কোন্ ভুবন, কোন দিন এ নয়নে, তারে দেখলাম না” (পবিত্র লালন- ৬৭৮/৩)। ২. “সাদাভাব তার সাদাকরণ, নাইরে কালামালা ধারণ, সে পঞ্চক্রিয়া সাঙ্গ করে, ঘরে রাত্রদিন নিহারা” (পবিত্র লালন- ৮০৬/২)। কালার সংজ্ঞা (Definition of Melanin) পিতৃহীন কাননে উৎপন্ন সন্তানকেই কালা বলে। কালার আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theosophical definition of Melanin) সর্ব প্রকার জীবনিশক্তিকেই কালা বলে। কালার প্রকারভেদ (Classification of Melanin) কালা দুই প্রকার। যথা- ১.উপমান কালা ও ২.উপমিত কালা। ১. উপমান কালা (Analogical Melanin)সর্ব প্রকার অংকুরকেই উপমান কালা বলে। ২. উপমিত কালা (Compared Melanin)রূপকসাহিত্যে কেবল জীবনিশক্তিকেই উপমিত কালা বলে। কালার পরিচয় (Identity of Melanin) এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের অধীন একটি ‘ছদ্মনামপরিভাষা’ বিশেষ। সারাবিশ্বের সর্ব প্রকার শাস্ত্রীয় ও পারম্পরিক গ্রন্থ-গ্রন্থিকায় এর ন্যূনাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে এ পরিভাষাটি একেক গ্রন্থে একেক ভাষায় ব্যবহার হওয়ার কারণে সাধারণ পাঠক-পাঠিকা ও শ্রোতাদের তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না। জীবনিশক্তি জীবদেহে আপনাপনিই উৎপত্তি হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ এ শক্তিকেই স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা বলে থাকেন। কিন্তু বিশ্বের সবকিছু সৃষ্টির মূলেই রয়েছে তাপ, চাপ ও চুম্বক। জীবনিশক্তি, তাপ, চাপ ও চুম্বকের বাইরে আর অন্য কোন সত্তার অস্তিত্ব নেই। এবার যদি আমরা প্রশ্ন করতে পারি যে, কে এই কালা? বাংলা মরমী সাহিত্যে কালাকে নিয়ে এত লেখালেখি কেন? আমাদের উদ্ধৃতির বাইরেও কালা, কালু, কাজলা, কালিয়া, কেলে, কালোমাণিক, কেলেসোনা, কালোশশী, কালোভ্রমর ও কালছিপিয়া নিয়ে আরো অসংখ্য মরমী বাণী রয়েছে। বাংভারতীয় (বাংলাদেশ ও ভারত) উপমহাদেশ ফর্সাপ্রিয় অঞ্চল Bangindian (Bangladesh & India) subcontinent is fairness favorite region পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চল কালোপ্রিয়, কোন কোন অঞ্চল ফর্সাপ্রিয়, কোন কোন অঞ্চল বেঁটেপ্রিয়, আবার কোন কোন অঞ্চল মোটাপ্রিয়। যেমন জাপান ছোট পা-প্রিয়। আফ্রিকার অনেক দেশ কালোপ্রিয়। আফ্রিকার কিছু কিছু দেশ মোটা মহিলাপ্রিয়। তেমন আমাদের বাংভারত ফর্সাপ্রিয়। অবাক হবার বিষয় হলো ফর্সা প্রিয়ে-প্রিয়া কিংবা ফর্সা প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে একটি মরমী বাণীও আমাদের বাংভারতে পাওয়া যায় না। যেহেতু ফর্সা প্রেমিক নিয়ে একটি বাণীও পাওয়া যায় না। আবার এ উপমহাদেশ ফর্সাপ্রিয়। তবে প্রেমিক, প্রেমিকা, মনেরমানুষ, উপাস্যবস্তু ও সাধনার ধন এসব বুঝাতে কোন কালার কথা বাঙালী রূপকার, গীতিকার, কবি, সাহিত্যিক, মরমী ও মহাজনরা আবহমানকাল হতে প্রকাশ করে আসছেন? সে ছয়সহস্র বছর পূর্ব হতে কৃষ্ণ, কালা ও কালিয়া এরূপ কৃষ্ণবর্ণপ্রবণ পরিভাষা দ্বারা কাকেইবা সাধকরা বুঝিয়ে আসছেন? ওপরোক্ত বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, জীবদেহে চুল, দাড়ি ও তিলককে কালোবর্ণ প্রদানকারী এক প্রকার রস রয়েছে। যাদের চুল, দাড়ি ও তিলক সাদা তাদের দেহেও এ রসটির অস্তিত্ব রয়েছে। ইংরেজি ভাষায় একে melanin (মিলেনিন) এবং আরবি ভাষাতেও ‘ميلانين’ (মিলেফিন) বলা হয়। পূর্বকালের যোগীরা যোগবলে এ রস আহরণ করতেন। এ রসের উপকার অনেক। একে প্রায়ই মধুর সাথে তুলনা করা হয়। এ রসকে কেন্দ্র করেই রূপকসাহিত্যের গোড়াপত্তন করা হয়। বিশ্ববিখ্যাত শাস্ত্রীয় গ্রন্থ বেদ, ত্রিপিটক, তৌরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কুরান, লালন ও বলন এসব গ্রন্থের মূল আলোচনাই হলো এ কালো রস। রূপকসাহিত্যে একে সৃষ্টিকতা বলা হয়। অধিকাংশ আত্মতাত্ত্বিক দার্শনিকের মতে জীব সৃষ্টিক্রিয়ার প্রত্যক্ষ অনুঘটক বলেই একে সৃষ্টিকর্তা বলা হয়। একেই পারস্য Mythology (মিথোলোজি) তে ‘ﺍﻠﻠﻪ’ (আল্লাহ) ও গ্রিক Mythology (মিথোলোজি) তে Lord (লর্ড) বলা হয়। প্রকৃত আত্মদর্শন বা মরমীবাদে এখনও একে জীবদেহের এক প্রকার রসই বলা হয়। তবে রূপকসাহিত্যে এর আলোচনা সর্ব ক্ষেত্রে কেবল রূপকে রূপকে করা হয়। রূপকসাহিত্যকে অশালিনতা ও অশ্লিলতার হাত হতে রক্ষা করার জন্যই রূপক আলোচনার উদ্ভাবন করা হয়। একটা বাস্তব বিষয় রূপকে আলোচনা করতে গিয়েই বর্তমানকালে প্রচলিত এ শাস্ত্রীয় বা সাম্প্রদায়িক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পূর্বকালের রূপকারগণ যেসব রূপক উপমা প্রদান করে গেছেন, সেই উপমান বিষয়াদি নিয়েই আরম্ভ হয় প্রতীকী আত্মদর্শন। এক সময় অধিকাংশ মানুষই যখন প্রতীকী আত্মদর্শন নির্ভর হয়ে পড়ে তখনই উদ্ভব হয় প্রতীকী আত্মদর্শন নির্ভর শাস্ত্রীয় মতবাদ। বড় উদ্বেগের বিষয় হলো প্রায় এক সহস্র খ্রিস্টপূর্বাব্দে অর্থাৎ আজ হতে প্রায় তিনসহস্র বছর পূর্বে আত্মদর্শন বা আত্মতত্ত্ব দর্শন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তা হলো- ১.প্রকৃত আত্মদর্শন (Real theosophy) ও ২.প্রতীকী আত্মদর্শন (Symbolic theosophy)। তারপর প্রকৃত আত্মদর্শনের ধারাটি গুরু-পরম্পরার মাধ্যমে এবং প্রতীকী আত্মদর্শনের ধারাটি প্রায় আগ্রাসনের মাধ্যমে কালাতিপাত করতে আরম্ভ করে। প্রকৃত আত্মদর্শনের শাখা প্রশাখারূপে বলা যায়, বাউল, বৈষ্ণব, সহজিয়া, মরমী, আত্মতাত্ত্বিক, দেহতাত্ত্বিক এবং এরূপ আরো অনেক ইত্যাদি। আর যুগে যুগে যত মহামানব এরূপ তাত্ত্বিক ধারা হতেই আবির্ভূত হয়েছেন। যেমন বেদব্যাস, বাল্মীকি, শ্রীচরণ, হোমার, জারির তাবরি, লালন ও বলন প্রমুখ। প্রকৃত আত্মদর্শন দ্বারা বরাবরই পাপী-তাপী তারণ হয়ে থাকে। পাপীদেরও শুদ্ধ মানুষে পরিণত করার মাধ্যমই হলো এ প্রকৃত আত্মদর্শন। প্রকৃত আত্মদর্শন হতে ছিটকে পড়া ছিল শাস্ত্রীয়দের জন্য প্রথম বিচ্যুতি। প্রতীকী আত্মদর্শনের ফসল হলো সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ, আতংবাদ, আগ্রাসন ও একদল অন্যদলকে গালাগালি। এছাড়া এদের অন্যতম আবিষ্কার হলো কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা, আদিমানব, আদিমানবী, পাপ, পুণ্য, স্বর্গ, নরক, উপাসনা ও বর্থ্য। তাদের কাজই হলো কাল্পনিক ভাবে নির্মিত স্রষ্টার উপাসনার জন্য সাধারণ মানুষের উপর বল প্রয়োগ করা। স্বস্ব নির্মিত স্রষ্টার উপাসনা না করলে মানুষকে হত্যা, হনন, বধ ও বলি দেওয়া। একবার মন্দির ও মসজিদ গড়া। আরেকবার মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ এবং মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির গড়া। প্রতীকী আত্মদর্শনধারী শাস্ত্রীয়রা বা সাম্প্রদায়িকরা সম্পূর্ণই ছিন্নমূল। কারণ প্রতীকী আত্মদর্শনের মূল হলো প্রকৃত আত্মদর্শন। আর ছিন্নমূল হওয়ার কারণেই ক্রমেক্রমে এরা অসংখ্য দল উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের শাখা প্রশাখাগুলো হলো, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি, শিখ, জৈন, অরিয়া, কন্ফুসিয়াসি ও মুসলমান। এদের মধ্যে থেকেই উদ্ভব হয়েছিল হিটলার, হালাকুখান, মোসোলিনীয়, বাবর, আকবর, হুমায়ন, জাহাঙ্গির, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব ও বর্তমানকালে ওসামাবিন লাদেন। এদের বর্তমান শাখা প্রশাখা হলো নাইজেরিয়ার বোকোহারাম, মধ্যপ্রাচ্যের আলকায়দা, ভারতের শিবসেনা, বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামী ইত্যাদি। বর্তমানকালে আবার ওপরোক্ত উভয়দল হতে দ্বিতীয় বিচ্যুতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে তাবলিগ জামাত, পিরপূজারী, উরশপূজারী, মাজার পূজারী ও সুফিবাদী ইত্যাদি সম্প্রদায়। প্রকৃত আত্মদর্শন হতে বিচ্যুতির পর বিচ্যুতি দ্বারা সৃষ্ট এসব শাস্ত্রীয়রা মানুষের আকারী উপাস্যকে নিরাকারে পরিণত করেছে। নিরাকার উপাস্যের পূজা-আরাধনা করার জন্য প্রতীকী ভজনালয় মন্দির, মঠ, বেদি ও বিহার ইত্যাদি নির্মাণ করেছে। সুকৌশলে নির্মাণ করেছে স্বস্ব কল্পিত ও নিরাকার উপাস্যের পূজাবিধি। বর্তমানে শাস্ত্রীয়দের শাস্ত্রিক কার্যক্রম দেখে অনেক বুদ্ধিমান মানুষও তা অস্বীকার করতে সমর্থ হবেন না। কারণ শাস্ত্রীয়রা তাদের ‘সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা, আদিমানব, আদিমানবী, বিচার, পাপ, পুণ্য, স্বর্গ, নরক, উপাসনা ও বর্থ্য’ এর নামধাম, আসন-বসন, আহার-বিহার, শয়ন-বয়ন, তপ-জপ ও তন্ত্র-মন্ত্র পর্যন্ত আবিষ্কার করে সেরেছে। আমাদের বঙ্গদেশের বর্তমান শাস্ত্রীয় ও পারম্পরিক পণ্ডিত, বক্তা, বৈখ্যিক, টৈকিক, অনুবাদক ও অভিধানবেত্তারা এখনো জানেন না যে, আবহমানকাল হতে রূপকসাহিত্যে বর্ণিত সেই কালা-ই আমাদের শাস্ত্রীয় সৃষ্টিকর্তা। শাস্ত্রীয়দের সৃষ্টিকর্তাগুলো হলো, ‘কাঁই’, ‘ঈশ্বর’, ‘ব্রহ্মা’, ‘Lord (লর্ড)’, ‘ﺍﻠﻠﻪ’ (আল্লাহ), ‘কারাতারা’, ‘খামিসামা’ ও ‘মারাংবুরু’ ইত্যাদি। তাদের নিকট যদি বলা হয় রূপকসাহিত্যে বর্ণিত সেই কালা-ই আমাদের বাঙালী সৃষ্টিকর্তা। তবে মার বা গাল না দিলেও অন্তত নির্বুদ্ধতার একটা হাসি যে দিবে তাতে ভুল নেই। এসব কারণে ‘কালা’ পরিভাষাটির অভিধা আমাদের সৃষ্টিকর্তা হয়েও নিজগৃহেই পরবাসী হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। আমাদের বাংভারতের রূপকসাহিত্যে বর্ণিত ‘কালা’ পরিভাষাটির ভাবার্থ বা মর্মার্থ যে সৃষ্টিকর্তা তা অনেকেই জানেন না। নিরপেক্ষ চিত্তে কালা, কালিয়া, কাজলা, কৃষ্ণ, কালু, কেলে, শ্যাম, শ্যামল, শ্যামলা, শ্যামলা-কালছিপিয়া এসব পরিভাষা দ্বারা নির্মিত ঐশীবাণীগুলো পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। এ বিষয়টি ভাববার জন্য আরো অনুরোধ রইল, এসব পরিভাষা দ্বারা কাকে ডাকা হয়েছে ও কার কাছে জানানো হয়েছে বুকচিরা এত আর্তনাদ? (সংক্ষিপ্ত সংকলন) তথ্যসূত্রঃ আত্মতত্ত্ব ভেদ (৬ষ্ঠ খণ্ড) লেখকঃ বলন কাঁইজি --------------------------------------------------------------------- ৯৮/১. সৃষ্টিকর্তা প্রসঙ্গঃ ‘সৃষ্টিকর্ত’ (প্রথম অংশ) (১৬ পর্বের ১ম পর্ব বিশেষ) ৯৮/১. সৃষ্টিকর্তা প্রসঙ্গঃ ‘সৃষ্টিকর্তা’ (দ্বিতীয় অংশ) (১৬ পর্বের ১ম পর্ব বিশেষ) ৯৮/২. সৃষ্টিকর্তা প্রসঙ্গঃ ‘কাঁই’ (১৬ পর্বের ২য় পর্ব বিশেষ)
Posted on: Fri, 11 Jul 2014 16:07:56 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015